দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে যখন লিয়াকত আলি-সুরাবর্দি-নাজিমুদ্দিনদের রাষ্ট্রের উদ্যোগে বাঙালীদের জবাই করা হচ্ছিল, তখন জওহর জল্লাদের ধর্মনিরপেক্ষ কেন্দ্রীয় সরকার চোখ বুজে থেকেছে। বরিশাল-যশোর-খুলনা-ফরিদপুরে ইসলামী ঘাতকের অস্ত্রের নিচে আর শিয়ালদা-কাশীপুর কলোনি-কুপার্স ক্যাম্পে খিদে আর রোগব্যাধিতে কুকুরবেড়ালের মত মরতে দিয়েছে। নেহরু-লিয়াকত চুক্তি করে প্রতিক্রিয়ার সামান্য আশঙ্কাটুকুও লোপ করে পূর্ব পাকিস্তানের কসাইদের ফ্রি হ্যাণ্ড পেতে দিয়েছে। পাঞ্জাবী উদ্বাস্তুদের পাঞ্জাব ও দিল্লির পরিচিত পরিবেশে একের পর টাউনশিপ তৈরি করে আশ্রয় দিলেও বাঙালীদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে দণ্ডকারণ্যের জঙ্গলে। ফিরে আসতে চাইলে মরিচঝাঁপি হয়েছে, তার কৃতিত্ব অবশ্য অন্য আরেক পক্ষের।
ভারত ভাগ হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিম এবং অমুসলিমদের জন্য দুটি ভাগে। ক্যাব মোতাবেক, একটি নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিমের দুটি ইসলামী বধ্যভূমি থেকে নির্যাতিত সংখ্যালঘু হিন্দুশিখবৌদ্ধপার্সিজৈনখ্রিষ্টানরা ভারতে আশ্রয় নিতে চাইলে, তাদের নাগরিকত্ব মঞ্জুর করা হবে। তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো যাবে না বা ডিপোর্ট করা যাবে না (এই মুহূর্তে অসমে ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘু’ বাঙালীদের ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢোকানো হচ্ছে)। আমরা জানি, ক্যাব কেন দরকার। অসম চুক্তির সীমারেখা ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের পরেও সোনার বাংলায় উপজাতি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কী পরিণতি হয়েছে তার অজস্র নিদর্শন চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে অবশ্য দাঙ্গা হয় না বিশেষ, একতরফা নরমেধ যজ্ঞ হয়।
১৯৯২ সালের নির্যাতনের দলিল তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ এবং ২০০১ সালের ঘটনার দলিল হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ ইন্টারনেটে লভ্য, আগ্রহীরা দেখতে পারেন (বিধিসম্মত সতর্কীকরণ: দুর্বলচিত্ত ভালোমানুষ হলে পরেরটা থেকে একশো মাইল দূরে থাকবেন)। এমনকি এই গতমাসে সিন্ধুর সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কী হয়েছে বা গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংখ্যালঘু উপাসনাস্থল কীভাবে আক্রান্ত হয়েছে, আমরা জানি।
ইতিমধ্যে পারিবারিক ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রেখে ক্ষমতায় এলে ক্যাব খারিজ করে দেবেন বলে জানালেন জওহর জল্লাদের নাতির ছেলে। জাতিবর্ণপার্টি নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালী মানুষ ক্যাবের পক্ষে দাঁড়ান।
সোহম পাল