করোনা ভাইরাসে গোটা বিশ্বকে আক্রান্ত করে প্রায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্হিতি তৈরি করার জন্য গোটা বিশ্ব যখন একমাত্র তথাকথিত কমিউনিস্ট রাস্ট্রের দিকে তর্জনী তুলে ধরছে তখন স্মরণ করতে বাধ্য হচ্ছি পঁচানব্বই বছর আগে একটি জাপানী পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয় প্রবন্ধের একটি অনুচ্ছেদ। সেটি প্রকাশের উপলক্ষ্য ছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) জাপান ভ্রমণ প্রসঙ্গে। সেখানে লেখা হয়েছিল – “পশ্চিমী এমনকি সমস্ত পৃথিবী আজ রক্তলাল মেঘে এবংঈর্ষার ঘুর্ণীঝড়ে আবর্তিত।প্রত্যেক জাতি, প্রত্যেক দেশ, প্রত্যেক রাজনৈতিক দল পরস্পরেরে দিকে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে, পরুষকন্ঠে প্রতিহিংসার গান গাইছে, লোহা আর বন্দুকের সুরের সঙ্গে মত্ত হয়ে নাচছে। শুধু রবীন্দ্রনাথ এক বিরাট পুরুষের মত হিমালয় ও আল্পসের চূড়ায় ভোরের শান্ত উজ্জ্বল আলোয় দাঁড়িয় বজ্রকন্ঠে মানুষের কাছে শান্তি ও প্রেমের বাণী উচ্চারণ করছেন।”
দুঃখের কথা জাপান যখন বিশ্বকবিকে শান্তির দূত হিসেবে আবাহন করছে, তখনই কমিউনিস্ট চীনে উনিশশো চব্বিশ সালের এপ্রিল-মে মাসে তাঁর উনপঞ্চাশ দিনের ভ্রমণকালে তিনি যখন বিশ্ব শান্তির সপক্ষে আধ্যাত্মিকতা ও ঈশ্বরের নির্দেশ মেনে চলার বাণী প্রচার করতে চেয়েছেন তখন তাঁকে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। শান্তির অন্তর্নিহিত আদর্শের প্রয়োজনীয়তা এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সামগ্রিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ তোলায় চীনা ছাত্রদের সম্মিলিত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মোকাবিলা করতে হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্ররা হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে বিলি করেছে। সেই হ্যান্ডবিলে প্রচার করা হয়েছে – “ভারতীয় কবি চীনকে নির্মমভাবে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের কৃষি চাষীর ক্ষুধা নিবারণে অসমর্থ। আমাদের শিল্প কুঠির শিল্প মাত্র। আমাদের নৌকা ও যানবাহন দিনে কয়েক মাইলের বেশি যেতে অক্ষম। আমাদের পথঘাট, আমাদের শৌচাগার, আমাদের রন্ধনশালা হাস্যকর। রবীন্দ্রনাথ বস্তুসভ্যতার আধিক্যের জন্য আমাদের তিরস্কার করেছেন। তিনি ব্রম্ভের কথা, আত্মার মুক্তির কথা বলেছেন। এই অকর্মন্য তত্ত্বের বিরুদ্ধে আমাদের তীব্র আপত্তি জানাচ্ছি।”
এমনকি চীনে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রথম যুগের নায়ক মাও জে দঙও লিখেছিলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে যে উপহার আমরা আশা করি তা আধ্যাত্মিক জীবন সাধনা নয়, বরং সেই বেদনা ও উৎসাহ জাগানো ‘একলা চলো রে’ -র অনুপ্রেরণা।”
চীনের সেই “একলা চলো রে” নীতি এখন চরম গোপনীয় এক বিদেশ নীতির অনুষঙ্গ যা গোটা বিশ্বের আকাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে অসহিষ্ঞুতার রক্তলাল মেঘকে। নাভিশ্বাস উঠেছে গোটা বিশ্ববাসীর। আমরা গর্বিত আমাদের রবীন্দ্রনাথ কতদিন আগে এই দিন আসবে জেনেই চীনকে (China) তাই আধ্যাত্মিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। বিশ্বশান্তির দোসর করে তুলতে চেয়েছিলেন চীনকে। চীন (China) সেদিন সে বাণীকে অগ্রিহ্য করেছে। অস্বীকার করেছে। আজ চীন এসে দাঁড়িয়েছে খাদের কিনারায়। গোটা বিশ্বের লক্ষ্যভূমি চীন। এখন তার বাঁচার একমাত্র ভরসা রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বশান্তির প্রতীক রবীন্দ্রনাথ। বিশ্ব আধ্যাত্মিকতার জাগ্রত আত্মা রবীন্দ্রনাথ।