২০১৪ সালের মতো ২০১৯ সালেও সারদাকাণ্ড হয়ে উঠল লোকসভা নির্বাচনের ইস্যু। সেবার তৃণমূল কংগ্রেসকে সামলাতে হয়েছিল বিরোধীদের সমালোচনা। মমতা বন্দযোপাধ্যায়ের পাশে ছিলেন মুকুল রায়। এবার মুকুল রায় বিরোধী শিবিরের অন্যতম প্রধান মুখ। আর তাই লড়াই আরও জমে উঠল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা প্রশ্নের উত্তরে মুকুল রায় টেনে আনলেন বহু আলোচিত ডেলো বৈঠকের প্রসঙ্গ। বললেন, ডেলোর বাংলোয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যেই সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর।
রবিবার কোচবিহারে জনসভা করে চিটফান্ড ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গোটা দেশ মা সারদাকে পুজো করে, বাংলায় সেই সারদাকে কেলেঙ্কারির নাম দিয়েছেন দিদি। গোটা দেশ ‘রোজ’ বলতে ফুল দেওয়া নেওয়া করে, এ রাজ্যে ‘রোজ’ হলো কেলেঙ্কারির কাঁটা। নারদ বলতে নারদ মুনি ত্রিলোকে পুজিত হন, সেই নারদকে বাংলায় কেলেঙ্কারিতে নামিয়ে এনেছেন দিদি।”
এর এক ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ওই ইস্যুতে পাল্টা আক্রমণ করেন মমতা। মুকুল রায়কে সঙ্গী করা নিয়ে তিনি বলেন, “সারদা, নারদা নিয়ে বড় বড় কথা বলেছেন, কিন্তু যে লোকটা আপনার পাশে দাঁড়িয়ে মিটিং পরিচালনা করছে সে তো সারদা, নারদা দুই কেলেঙ্কারিতেই অভিযুক্ত।” এখানেই শেষ নয়, বক্তৃতার মধ্যে মুকুল রায় হাওলাকাণ্ডে অভিযুক্ত বলেও মন্তব্য করেন তৃণমূলনেত্রী।
জবাব দিতে দেরি করলেন না মুকুল রায়ও। কোচবিহার থেকে কলকাতায় ফিরেই সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি। বিজেপি রাজ্য অফিসে তিনি বলেন, “সারদা মামলায় আমার বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে অভিযোগ করেছেন তা সর্বৈব মিথ্যা।” মুকুল রায়ের কথায় তিনি সুদীপ্ত সেনকে চিনতেনই না। তাঁদের মধ্যে দু’বারই দেখা হয়েছিল। একবার ডেলোর বাংলোয়। আর একবার কলকাতায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যেই সেই প্রথমবার ও শেষবার দেখা হয়েছিল।
নারদা প্রসঙ্গেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন মুকুল রায়। তিনি বলেন, “নারদাকাণ্ডের ফুটেজে তাঁকে টাকা নিতে দেখা যায়নি। যাঁদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁদের সকলকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন। আর হওয়ালাকান্ডের অভিযোগ করেছেন মমতা। সেটা কী আমি জানিই না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সেটা বলতে পারবেন।”
রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন বিজেপি কার্যত দুর্নীতি ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেনে আনল। এতদিন পর্যন্ত তৃণমূলনেত্রী রাজ্যের উন্নয়ন ইস্যু তুলে ধরা ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বিরোধিতা করার মধ্য দিয়েই ভোট প্রচার সারছিলেন। কৌশল করেই প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে সারদা-নারদা ইস্যুতে মুখ খুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রতিক্রিয়া দিতে বাধ্য করলেন। আর সেই ফাঁদেই পা দিয়ে ফেললেন তৃণমূলনেত্রী। এখন মুকুল রায় সেই প্রতিক্রিয়ার পাল্টা জবাব দিয়ে আরও জমিয়ে দিলেন বঙ্গ রাজনীতি। লোকসভা নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে উঠল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ।
কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা বর্তমানে এডিজি (সিআইডি) রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে অনুমতি চেয়েছে সিবিআই। চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্তে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে। ৮ এপ্রিল সোমবার সেই মামলার শুনানি। ঠিক তার আগের দিন চিটফান্ড ইস্যুকে কৌশলে রাজ্যের ভোট রাজনীতির প্রধান ইস্যু করে তোলায় বিজেপি সফল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে।