প্রথম দিন শিলিগুড়ি আর ব্রিগেডের সভায় একটু রয়েসয়ে বক্তৃতা করেছিলেন। কিন্তু রবিবার দ্বিতীয় দিনের ভোট প্রচারে বাংলায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঝাঁঝ বাড়িয়ে দিলেন বহুগুণ। একাধিক ইস্যু নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলোধনা করার সঙ্গে বললেন, “কমিউনিস্ট গুন্ডাদের নিজের দলে নিয়ে বাংলায় সরকার চালাচ্ছেন দিদি।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় রোজই নিয়ম করে তাঁর বক্তৃতায় অভিযোগ করেন, “বাংলায় বাম-রাম এক হয়ে গিয়েছে।” মোদী যেন দিদির অস্ত্রেই তাঁকে ঘায়েল করার কৌশল নিয়েছেন। ত্রিপুরার উদাহরণ টেনে বলেন, “ওখানেও বামেদের সরকার ছিল। কিন্তু মানুষ দিন গুনছিল গদি উল্টে দেওয়ার। তাকিয়ে দেখুন ত্রিপুরার দিকে। বামেদের গুন্ডামি থামিয়ে দিয়ে ওখানে এখন শুধু বিকাশ আর বিকাশ।” এরপরই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলায় কমিউনিস্টদের সরকার পতনের পর সবাই ভেবেছিলেন এখানে গুন্ডারাজ খতম হলো। কিন্তু কোথায় কী! সব গুন্ডাদের নিজের দলে টেনে নিলেন দিদি।”

পর্যবেক্ষকদের মতে, ত্রিপুরায় যেভাবে মেরুকরণের রাজনীতিকে তীব্র করেছিল বিজেপি, বাংলাতেও একই পথে হাঁটতে চাইছে গেরুয়া শিবির। বাংলায় যাই হোক, দিল্লিতে সনিয়া-রাহুলদের সঙ্গে মমতার দহরমমহরম রয়েছে। তাঁদের মতে, মোদী আসলে বোঝাতে চাইলেন, তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস সব একদিকে, বিপরীতে শুধু তিনি এবং তাঁর দল বিজেপি। অন্যদিকে কোচবিহারে তৃণমূল প্রর্থী করেছে, প্রাক্তন ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা তথা একদা বামফ্রন্ট সরকারের খাদ্যমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে। ঘুরিয়ে তাঁকেও নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বোঝাতে চেয়েছেন, তাহলে তৃণমূল আর বামেদের ফারাক কোথায়?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন প্রতি জনসভা থেকেই বলছেন, আসলে তিনিই প্রার্থী, দিদির বিরুদ্ধে একই অস্ত্র প্রয়োগ করলেন মোদীও। তাঁর কথায়, “এখানে একটা করে ভোট পদ্মফুলে দিন, ভোট পাবে মোদী।” রবিবারের জনসভায় জন জোয়ার বয়েছে কোচবিহারের রাসমেলা মাঠে। মানুষের উপস্থিতি দেখে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা এখানে মোদী মোদী চিৎকার করছেন, আর ওই দিকে স্পিড ব্রেকার দিদির ঘুম উড়ে যাচ্ছে।”

গত বুধবার শিলিগুড়ি আর ব্রিগেডের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা শুনে অনেকেই বলেছিলেন, তেমন জমল না। কিন্তু পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই বক্তব্য ছিল, লম্বা ইনিংস খেলতে গেলে শুরু থেকেই চার-ছয় মারলে হয় না। এ দিন মোদী বুঝিয়ে দিলেন যত দিন এগোবে তত ঝাঁঝ বাড়াবেন তিনি।

যদিও তৃণমূল নেতারা বলছেন, “গুন্ডা, তোলাবাজদের দলে নিচ্ছেন মোদী নিজে। নিশীথ প্রামাণিককে আমরা ছুড়ে ফেলেছি, আর মোদীবাবুর দল কুড়িয়ে নিয়ে প্রার্থী করেছে। “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.