এআইটি এবং ভাষাতত্ত্বের বিজ্ঞান

২০১৮ সালের ২রা মে অনলাইন ম্যাগাজিন স্বতন্ত্র তেপি.আই.ই. নাকি মিথ্যে : কেন ভাষাতত্ত্ব কোনো বিজ্ঞান নয়?‘ নামে সার্জন ডাঃ শিবসঙ্কর শাস্ত্রীর (Dr. Shivasankar Shastri) লেখা একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে। কেউ যদি নিজস্ব বিষয়ের বাইরে অন্য কিছু নিয়ে লিখতে চায় তবে আমার কিছুই বলার নেই। তবে তারা যেন সেটা পেশাদারিত্বের সাথে করে সেটাই কাম্য। তবে এখানে সেটা হয়না। ভারতে তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাতাত্ত্বিক পাওয়া কঠিন। ফলে বাইরের লোকেরা পেশাদার পেশাদারদের কাছেই এই সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে বলে।

এরপরে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে এরমধ্যেই প্রথমে আমরা যে দাবিটি পেলাম ত হলো ‘পিতা শব্দটি লাতিন শব্দ প্যাটার থেকে উৎপন্ন হয়েছে’। যেসব ভাষাতত্ত্ববিদ নিয়ম জানেন তিনি তক্ষুনি বলবেন যে‚ প্যাটার এবং ফাদার দুটোই এসেছে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় অঞ্চলের একটি সাধারণ উৎস থেকে‚’ কিন্তু একটা আরেকটার থেকে উৎপন্ন হয়নি। আমরা এখন এই বিতর্কের মধ্যে এই জাতীয় শব্দগুলোর মধ্যে আসল সম্পর্ক দেখবো।

বিভিন্ন ভাষায় কত শব্দ একটি অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, তিনি তা বর্ণনা করেছেন। তবে এর সাথে এটাও যোগ করেছেন যে “যতদিন না ইউরোপীয়রা ভারতে এসে সংস্কৃত ভাষা discover (আবিষ্কার) করেছে‚ ততদিন তারা এগুলো জানতে পারেনি“!

এখানে discover শব্দটা ব্যবহারে কোনো অসুবিধা থাকার কারণ নেই। discover শব্দটা সেখানেই ব্যবহার করা যায় যখন কিছু আগে থেকেই ছিলো‚ কিন্তু কেউ প্রথমবারের মতো তাকে মানুষের সামনে নিয়ে আসে। যেমন বলা যায় সংস্কৃত ভাষা আগে থেকেই ছিলো। কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলো। তার মানে এই নয় যে কলম্বাসই সবার প্রথমে আমেরিকায় পা রেখেছিলো‚ বরং এটাই যে আমেরিকা তার ও তার সঙ্গীদের কাছে আগে অজানা ছিলো। একইভাবে কোনো যুবক যুবতী যৌন জীবন discover করে‚ যেখানে কিনা তার আগের প্রজন্মের সবাই এই সম্পর্কে জানে। বাক্যটা ব্যবহারের এটাই অর্থ যে‚ ঔপনিবেশিক ইউরোপীয়রা ভারত থেকে জ্ঞান চুরি করেছিল, ঠিক যেভাবে কলম্বাস আমেরিকা discover করার সময় আমেরিকা আক্রমণ করে

তবে সামগ্রিকভাবে বিবৃতিটি অবশ্য সত্যি নয়। তারা বিভিন্ন ভাষার শব্দের মধ্যে সাদৃশ্য সম্পর্কে জানত এবং তৎকালীন ভারতীয়রা এই বিষয়ে না ভাবলেও তারা এই সম্পর্কে একটি ব্যাখ্যাও তৈরি করে। সেই কারণেই ১৭-১৮ শতকে তারা ইউরালিক পরিবারের মানচিত্র বানিয়ে ফেলে। অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ ভাষা ফিনিশ এবং এস্তোনিয়ান আপাত সাদৃশ্যহীন হাঙ্গেরিয়ান, কোমি, উদমুর্ট এবং আরও এক ডজন ভাষার মধ্যে সংযোগ বের বের তারা এটা করে। এগুলোকে তারা জ্ঞান হিসাবেই গণ্য করতো ও একটি বংশবৃত্তীয় গাছ তৈরী করে যা তাদের সকলের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সম্পর্ককে নির্দেশ করতো।

বর্ণবাদের সাথেও এর কোন যোগসূত্র ছিল না। ১৯ শতকের শেষের দিকের সময় ছিলো জাতি-তত্ত্বগুলির জন্য স্বর্ণযুগ। যেটা কিনা ছিলো সমস্ত সাদা ইউরালিক পরিবার পুনর্গঠনের এমনকি ইন্দো-ইউরোপীয় আত্মীয়তার তত্ত্বটি চালু হওয়ার অনেক পরে।

লোক ব্যুৎপত্তি

বিপরীতে ইন্দো-ইউরোপীয় (Indo-European) পরিবারটির আন্তঃসংযোগের উপলব্ধির জন্য প্রকৃতপক্ষে মূলত সংস্কৃতের প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই ভারতে আসা কয়েকজন ইউরোপীয় ভ্রমণকারী আধুনিক ইন্দো-আর্য ভাষাগুলি শুনে তার সাথে তাদের নিজেদের ভাষার মিল খুঁজে পায়। ব্যবসায়ীরা সাধারণত সংস্কৃতের মতো পুঁথিভিত্তিক শাস্ত্রীয় ভাষা শিখতন না। তবে সরকারি ভাবে এসবের সূচনা হয়েছিল ১৭৮৬ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গলকে দেওয়া উইলিয়াম জোন্স এর দেওয়া ভাষনে

সুতরাং‚ ডাঃশাস্ত্রীর প্রবন্ধের (Dr. Shastri’s essay) এই অংশটি যথেষ্ট সত্যি : সংস্কৃত সেই হারানো সংযোগ সূত্র সরবরাহ করেছিলো যার দ্বারা মানুষ ভারত থেকে ইউরোপ পর্যন্ত কথা বলা বিশাল এক ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পেরেছিলো। সংস্কৃত‚ বিশেষত পুরনো বৈদিক সংস্কৃতর সাথে বেশিরভাগ ইউরোপীয় ভাষার এত মিল রয়েছে‚ তা গ্রীক এবং লাতিন সহ অন্য যে কোন ভাষায় নেই(…) উইলিয়াম জোন্স নামে একজন ব্রিটন একট বহুল প্রচলিত বক্তৃতায় বলেছিলেন যে সংস্কৃত, গ্রীক এবং লাতিন অবশ্যই একটি সাধারণ মূল ভাষা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। তুলনামূলক ভাষাতত্ব সেই ভাষাটিকে নতুন করে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছিল। ”

তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব (যাকে তিনি এবং অন্যান্য হিন্দুরা একটি ‘ছদ্মবিজ্ঞান’ বলে থাকেন) “শুরুতে বিভিন্ন ভাষায় একই রকম শুনতে সদৃশ অর্থযুক্ত শব্দগুলো থেকে শুরু হয়েছিলো (সমগোত্রীয় নামে পরিচিত)। এটা অনেকটাই সত্যি‚ তবে এটা শুধুমাত্র সূচনা ছিলো। শুরুর দিকে অনেক শব্দকে কগনেট হিসাবে গ্রহণ করা হয়, অর্থাৎ একই শব্দ থেকে উৎপন্ন‚ বাস্তবে তাদের উচ্চারণ সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলো। এইভাবে‚ পার্সীয়ান শব্দ বদ ( বদ অর্থে পার্সীয়ান-উর্দু বদমাশ‚ বদমান) এর মতো একই উচ্চারণ ইংলিশ ব্যাড ( Bad ) আর ব্যতিক্রমীভাবে উভয়ের অর্থই সমান। সুতরাং সাধারণ মানুষ ভেবে নেবে যে তারা সমগোত্রীয় শব্দের নিখুঁত উদাহরণ‚ কিন্তুক বাস্তবে তা নয়। (এখানে দেখুন https://www.etymonline.com/word/bad) বা ফরাসি feu, মানে আগুন আবার জার্মান feuer মানেও আগুন। তাই একই শব্দ বলে মনে হয়। কিন্তু প্রথমটা এসেছে ল্যাটিন hearth আর দ্বিতীয়টা গ্রীক শব্দ পুর বা আগুনের সমগোত্রীয় শব্দ। (যার থেকে ইংলিশে এসেছে ‘pyre বা pyromaniac শব্দগুলো )

পি এন ওকের লোক ব্যুৎপত্তি থেকে ছোটোবেলা থেকেই হিন্দুদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা জনপ্রিয় থাকে। যেমন ভ্যাটিকান হলো সংস্কৃত ভাটিকার ( জায়গা) মিল আছে। এর থেকে ওক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে‚ ক্যাথলিক চার্চের সদর দফতরটি মূলত একটি বৈদিক কেন্দ্র, একটি বেদ-ভাটিকা। ( বেদের উদাহরণটি একেবারেই ভিত্তিহীন। ওকের পদ্ধতিগত গুরুত্বের অভাবের আর একটি সাক্ষ্য মাত্র) ! বাস্তবে ভ্যাটিকান এসেছে ভেটস‚ অনুপ্রাণিত কবি, শুদ্ধ-কথক’ থেকে। একইভাবে ভাষাতত্ত্বে দিক থেকে জার্মান ভাষায় উপাস্য এর সমগোত্রীয় শব্দ ইংলিশে আছে উডেন‚ স্ক্যান্ডেনেভিয়ানে ওডিন‚ এবং ডাচ ভাষায় ওডেন বা রেগে যাওয়া। কিন্তু ভাটিকার সাথে ভ্যাটিকানের কোনো সম্পর্কই নেই। তা এসেছে অনুপ্রাণিত কবির থেকেই। (ভাষাতত্ত্ববিদরা যেহেতু ওকের মতো সবজান্তা আত্মবিশ্বাসী নয়‚ তাই তারা এর সাথে এট্রুস্কান সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনাটিও খোলা রেখেছে )

একইভাবে, হিন্দু ধর্ম সম্পর্কিত একটি ব্রিটিশ-ভারতীয় পাঠ্যপুস্তকে, দাবি করা হয়েছিল যে রামের সাথে তিব্বতী শব্দ লামার (যেমন দলাই লামা) যোগ আছে। ( প্রসঙ্গত মোঙ্গলিয়ানে দলাই মানে সমুদ্র ) বাস্তবে লামা এসেছে bLA থেকে। যেমন bLA-dakh‚ অর্থাৎ লাদাখ‚ উচ্চ গিরিপথ। কমবেশি যা খ্রিস্টান শব্দ শ্রেয় পিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কিন্তু সংস্কৃত রামের সাথে না।

এইসব ক্ষেত্রে হিন্দুরা সাধারণত আমায় ঔপনিবেশিকতাবাদী বলে আক্রমণ করে। যে আমি ইউরোপীয়দের পরিণত ভাবি আর ভারতীয়দের শিশু। না এই শৈশবকাল ইউরোপেও ছিলো‚ আর সব ভাষাতত্ত্ববিদ দেরই সেই সম্পর্কে জানতে হয়। পাশ্চাত্য দর্শনের ইমারত হিসাবে বিবেচিত প্লেটো তার
ক্র্যাটিলাস গ্রন্থে বেশ কয়েকটি লোক ব্যুৎপত্তি তৈরি করেছিলেন। তিনি মহান ছিলেন‚ আমরা তাকে সম্মান করি। কিন্তু আমরা কিছুক্ষেত্রে যে শৈশবকালীন ভুল করেছিলেন তা যেন না এড়িয়ে যাই। Amicus Plato‚ sed magis amica veritas‚ অর্থাৎ প্লেটো আমাদের বন্ধু। কিন্তু সত্য আরো বড় বন্ধু। বহু হিন্দুই “নোংরা বিদেশী আধুনিকতা” এর বিরোধিতা হিসাবে “সত্যিকারের জাতীয়” হতে গিয়ে এই শৈশবকালীন ভুল গুলিকেই গ্রহণ করে বসে।

সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে অ্যান্টওয়ার্প থেকে আসা গোরোপিয়াস বেকানাস ডাচদের অ্যান্টওয়ার্প উপভাষা থেকে সমস্ত ভাষা সম্পর্কে ধারণা পেতে চেষ্টা করেছিলেন, যেমন‚ হিব্রু অ্যাডাম (পুরুষ) এসেছে ডাচ আর্দমানের বা আর্থ ম্যানের থেকে। (কাকতালীয়ভাবে অ্যাডামের সাথে বাস্তব সংযোগ আছে অ্যাডামাহ বা পৃথিবীর‚ ঠিক যেমন ল্যাটিন হোমো বা মানুষ বা পৃথিবীর অধিষ্ঠাতার সাথে সমগোত্রীয় হলো হিউমাস বা মাটি) এছাড়াও হিব্রু Hawwah বা জীবন এসেছে ডাচ শব্দ eeuwvat বা কাল পাত্র থেকে। এইভাবেই তিনি আবিষ্কার করেছিলেন‚ এন্টওয়ার্পিশ স্বর্গোদ্যানে কথিত ছিল। তিনি ছিলেন আমাদের নিজেদের পিএন ওক। এবং তিনি যেখানে থাকতেন আমি তার কাছেই থাকতাম। কিন্তু আমরা এই শৈশবকালীন অবস্থাকে ইতিহাসের একটি অংশ হিসাবে বিবেচনা করেই খুশি হয়েছি‚ যাকে আমরা ছাড়িয়ে এসেছি ও আর সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

আসল সম্পর্ক খোঁজা। মিথ্যে সম্পর্কের মুখোশ খুলে দেওয়া।

ডাঃ শাস্ত্রীর মতে বেশিরভাগ হিন্দু মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আমাদের দশকের পর দশক ধরে আমাদের টাকা দিয়ে যাচ্ছে মানুষকে বোকা বানানোর জন্য। “নিয়ম তৈরী করা হয়‚ এবং যখন সেই নিয়মগুলো কার্যকর হয়না তখন তারা নিজেদের কাজের জন্য নতুন নিয়ম তৈরী করে আর তারা এখনো প্রচুর নিয়ম খুঁজেই চলেছে মাতৃভাষায় ইপ্সিত বস্তুর জন্য সমস্ত ভাষাকে একত্রিত করে। কিন্তু এর কোনও প্রমাণ নেই যে তারা ভাষাতত্ত্বের জন্য অন্তত একবারও
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিল।”

নিশ্চিত হওয়ার জন্য, আমরা বুঝতে পারি যে যখন কোনও সার্জন (যিনি নিয়মিতভাবে প্রকৃতির আইন সম্পর্কে জ্ঞান দ্বারা প্রযুক্তির উদ্ভাবনী প্রয়োগের সাহায্যে আমাদের জীবন বাঁচান) সমাজ বিজ্ঞানের বিভাগের দ্বারা বন্ধ করে দেওয়া সবার জন্য বিনামূল্যে আদর্শিক অপবিজ্ঞানের কথা শোনেন তখন তিনি মানবিকতার সংশয়বাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

তবুও যখন ঐতিহাসিক ও তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের কথা আসে তখন আমি তার সাথে কিছু রোগীকে পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করব। প্রকৃতপক্ষে, এটি বুদ্ধিদীপ্ত ও সম্পূর্ণরূপে পরীক্ষিত নিয়মকানুন নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান নয়, তবে এটি কেবলমাত্র কোনও বিবৃতির থেকে অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক। তবে এবারের একটু দেখা যাক।

শব্দের সাথে মিল রয়েছে যা মূলত সম্পর্কিত নয়, যাতে কোনও সাধারণ মানুষ ডায়াক্রোনিক মাত্রা সম্পর্কে অনিচ্ছাকৃত, অর্থাৎ কিনা পরিবর্তনের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে, পড়াশোনার মাধ্যমে একইরূপে পৌঁছে যেতে পারে যেখানে আসলে পার্থক্য রয়েছে। এইভাবে ইংরেজিতে একই উচ্চারণের শব্দগুলো হলো wether (ভেড়া) আর weather ( আবহাওয়া ) আর whether (অথবা) ! সৌভাগ্যক্রমে আমাদের জন্যে, ইংরেজিতে একটি রক্ষণশীল বানানবিধি রয়েছে যা এখনও শব্দগুলিকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করছে যা আগে শব্দের থেকে আলাদা হতো। তবে হিন্দি জাতীয় ফোনেটিক ভাষায় এগুলি মিলে যায়। যেমন ডাচ ভাষায় হয়। যেখানে শব্দগুলো সঠিকভাবে উচ্চারিত হয়। যেটা আধুনিক যুগে হয়েছে অনেক ছোট হয়ে গেছে। (ল্যাটিনে man বা সংস্কৃততে বীর. ‚ অর্থাৎ werewolf‚ werewolf‚ বিরুদ্ধে‚ জার্মানে wider‚ যেমন weerstand‚ resistance এবং anew তে আছে। জার্মান wieder অর্থাৎ in tot weerziens‚ আবার তোমার সাথে দেখা হবে ) এইসব ক্ষেত্রে ছয়েরও বেশি শব্দের মধ্যে মিল আছে।

এই কাকতালীয়ভাবে মিলে যাওয়া শব্দগুলোর শুধু যে অর্থই আলাদা হয় তাই না‚ বিপরীত অর্থও হতে পারে। যেমন ইংলিশে let মানে অনুমতি দেওয়া‚ তবে without let বা hindrance এর অর্থ বিপরীত: ‘ভেটো, প্রতিরোধ’। এখানে ডায়াক্রোনিক বা ঐতিহাসিক মাত্রা আমাদের সাহায্য করতে পারে। বর্তমান ডাচ ভাষার মতো প্রাচীন ইংলিশে এই দুটো শব্দ আলাদা। laten মানে অনুমতি চাওয়া বা দেওয়া । আর be-let-ten মানে আটকানো‚ অনুমতি না দেওয়া।

বিপরীতভাবে, যে শব্দগুলি অনেক দূরে সরে গেছে‚ এমনকি যাদের চেনাই যায়না‚ তারা একই উৎস থেকে আসতে পারে আর একই বা সম্পর্কযুক্ত অর্থ প্রকাশ করতে পারে। যেমন ফরাসি huit ( সাধারণ উচ্চারণ wit) এদের ল্যাটিন শব্দ Octo থেকে। তবে আমরা এটি সম্পর্কে বেশ নিশ্চিত, এর উৎস‚ শেষ পরিণতি ও কিছু মধ্যবর্তী অবস্থা ভালোভাবেই প্রমাণ করা গেছে।

তুলনামূলক এবং ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্বের পদ্ধতি হলো চেনা ভাষায় পরিলক্ষিত বিবর্তনের অতীতকে বাড়িয়ে দেখার উপর ভিত্তি করে। এটিকে বলা হয় তাদের অভিজ্ঞতামূলক ভিত্তি। তাই বেশিরভাগ পশ্চিমা ভাষাতত্ত্ববিদই ল্যাটিন এবং ফরাসী ভাষার সাথে পরিচিত ছিলেন এবং রোমান্স এবং প্রাচীর ফরাসীর মধ্যবর্তী পর্যায়ের সম্পর্কে কিছু জানতেন। একইভাবে ভারতে, পণ্ডিতরা সংস্কৃত এবং হিন্দি উভয় এবং কিছুটা মধ্যবর্তী পর্যায়ের যেমন পালি এবং অপভ্রংশের সাথে পরিচিত ছিলেন। এইভাবে তারা বুঝতে পেরেছিলেন কিভাবে ল্যাটিন eradicare বা উপড়ে ফেলা ফরাসিতে হয়েছে arracher; বা কিভাবে সংস্কৃত গুরুগ্রাম বা শিক্ষকদের গ্রাম হিন্দিতে হয়েছে গুরুগাঁও

যেহেতু উভয় ক্ষেত্রেই আধুনিক ভাষাভাষীদের মধ্যে অভিজাতরা প্রাচীন ভাষাও জানত, তারা প্রায়শই একই শব্দের বিকশিত রূপের পাশাপাশি আধুনিক ভাষায় ব্যবহার করার জন্য প্রাচীন শব্দও নিয়ে নিতেন। ঠিক যেভাবে দিল্লির দক্ষিণ শহরতলির নামকরণ করা হয়েছে গুরুগ্রাম। যা এখন কথোপকথনের সময় গুরুগাঁও এর সাথে প্রথাগত প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়। এবং ল্যাটিন-অনুপ্রাণিত নবজাগরণের কারণে ফরাসিতে চলিত শব্দ arracher এর পাশাপাশি éradiquer ও ব্যবহৃত হয়। (এই ধরনের শব্দকে সংস্কৃততে তৎসম বলা হয়। আর বিবর্তিত রূপকে বলা হয় তদ্ভব)

যখন আমরা ভাষার এই বিবর্তনকে পর্যবেক্ষণ করি‚ তখন আমাদের জ্ঞান সত্য বলে প্রমানিত ক্ষেত্রের বাইরেও আমাদের তাকাতে বাধ্য করে। তাই আমরা মূল গঠন “kwetwor” কে দেখলে পাবো‚ যা অবশ্যই বেশ কয়েকটি পারস্পরিক অপরিবর্তনীয় দিকে বিবর্তিত হয়েছে, যেমন ডাচ-জার্মান শব্দ Vier , গ্রীক tettar-, সংস্কৃত ক্যাটভার বা সর্বনামের মধ্যে‚ *ego হয়েছে সংস্কৃত অহমল্যাটিন গ্রীকে ego‚ ফরাসীতে že(ie লেখা হয়)‚ স্প্যানিশে yo‚ ইংলিশে ai ( I লেখা হয়) ! যদি আপনি শব্দগুলোর বর্তমান চেহারা দেখেন‚ স্বাভাবিকভাবেই আপনি সংযোগ গুলো ধরতে পারবেন না। ভাগ্যক্রমে, লাতিন, গ্রীক এবং সংস্কৃতের মতো ভাষায় সুদীর্ঘ সাহিত্যিক ঐতিহ্য রয়েছে যার দ্বারা আপনি শব্দের বিবর্তন বুঝতে পারবেন।

ধাঁচ সম্পর্কে জ্ঞান” হলো ধারণা করার জন্য ভুল ক্ষেত্র। প্রাগৈতিহাসিক ব্যক্তিরা গাছের পাতায় মৃদু আওয়াজ শুনে থাকতে পারত‚ বাঘের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করে যুদ্ধের জন্য তৈরী হতো এবং তারপর বুঝতে পারতো যে এটা বাতাসের কাজ। ধরণ. বিভ্রান্তিকর হতে পারে, এইভাবে কিছু সন্দেহের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তবু পরেরবার পাতার শব্দ বাঘের উপস্থিতি নির্দেশ করেছিলো ও অসাবধানে সন্দেহবাদীকে হত্যা করেছিলো। ধরণ কে স্বীকৃতি দেওয়া নিখুঁত নয়, তবে তা ভিত্তিহীনও নয়।

সৌভাগ্যক্রমে, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা (Indo-European language) পরিবারের ক্ষেত্রে‚ এটি বিস্তৃত হয়েছে‚ এবং তার ফলে কিছু বিলুপ্তপ্রায় ভাষা সহ অনেকগুলো ভাষায় বিভক্ত হয়েছে। কিছু বহুকাল ধরে অজানা ছিলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেনা গেছে। আমাদের এই নিয়ে অনেক পরীক্ষাও করতে হয়েছে। অনুমানটি আঠারো শতকেও ছিল, তবুও ১৯ ও ২০ শতকে নতুন নতুন আবিষ্কার অনুমানটিকে পরিমার্জন করা হলেও নিশ্চিত করেছে। আবিষ্কার গুলি হলো মূলত আনাতোলিয়ান (হিট্টাইট), তোচারিয়ান এবং প্রোটো-বাঙ্গানির আবিষ্কার এবং সামাজিকভাবে প্রান্তিক এবং ঐতিহাসিক মৃত সমস্ত স্থানীয় ভাষার শব্দভান্ডার যাচাই বাছাই করা। এটা সবসময় প্রয়োজন হয়না। যেমন সান (বুশম্যান) এর জন্য, আমাদের কাছে কেবল কয়েকটি বিদ্যমান ভাষা রয়েছে যা বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত যাদের কথা জানাই যায়নি। যা
চার সহস্রাব্দ ধরে সাহিত্যে সংরক্ষিত কয়েক হাজার মাইল জুড়ে কয়েক ডজন ফর্মে ছড়িয়ে পড়া ভাষার চেয়ে কম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়।

ডাঃ শাস্ত্রীর মতে যা প্রশিক্ষণহীন সাধারণ মানুষের কাছে যা অযৌক্তিক‚ জটিল‚ এলোমেলো ও সামলানোর জন্য সহজ মনে হবে। ভাষাতত্ত্ববিদরা কয়েক ডজন ইউরোপীয় ভাষা বেছে নিয়েছে এবং শব্দ এবং ব্যাকরণগত কাঠামোর অংশগুলির সন্ধান করে যা সাদৃশ্যপূর্ণ! কখনো কখনো সাদৃশ্যপূর্ণ শব্দকেও তারা ধার করা বলে বাদ দিয়ে দেয় আবার মিল না থাকা শব্দকেও সমগোত্রীয় বলে ধরে নেয়।

হ্যাঁ, প্রিয় ডাক্তার, এভাবেই। তবে আপনার নিজের বুঝতে পারার অভাবের জন্য এই ধারণা করার কোনও কারণ নেই যে এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে যুক্তি বা বাস্তব ভিত্তির অভাব রয়েছে। তাদের খুঁত ধরার থেকে আপনার বরং এইপর্যন্ত যেমন করেছেন তার থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তুলনামূলক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাতত্ত্ব (Indo-European linguistics) অধ্যয়ন করা উচিৎ!

অতীতের পুনর্গঠন

অতীতের ভাষা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার সাথে সাথে মানুষ পুরনো গঠন ব্যবহার করতে পছন্দ করছে। যেমন ২ য় সহস্রাব্দে, আক্কাদিয়ান এবং হিট্টাইটরা সুমেরীয়কে ভাষাকে একটি শাস্ত্রীয় ভাষা হিসাবে বিবেচনা করতো‚ এর থেকে আক্ষরিক অর্থে উদ্ধৃত শব্দ বা সুমেরীয় লিপিকে নিজেদের সাথে একীভূত করে। তবে আমরা যদি অতীতের গভীরে ফিরে যাই, আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যাবো যেখানে কোনও ভাষা প্রথম অব্যবহৃত হয়ে পড়েছিলো‚ হয় লিখে বা স্মরণে রেখে তাকে মনে রাখা হতো এবং পরবর্তীতে এর কোনো স্মৃতিই থাকতোনা।
তাদের ক্ষেত্রে, সমস্ত শব্দ হয় তদ্ভব, কোনো প্রাচীন ভাষার শব্দের বিবর্তিত রূপ অথবা পুরনো ভাষায় না থাকা‚ বিদেশী ভাষা থেকে নেওয়া শব্দ ( ফরাসি nord/est/sud/ouest এসেছে ডাচ ‘north/east/south/west’, থেকে বা বৈদিক-উত্তর সংস্কৃতর মিনা অর্থাৎ মাছ‚ কানা অর্থাৎ একচক্ষু এসেছে দ্রাবিড় থেকে

সংস্কৃত, লাতিন এবং গ্রীক, পাশাপাশি ওল্ড চার্চ স্লাভোনিক এবং জার্মানিক, সেলটিক এবং অন্যান্য ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলির প্রাথমিক চেনা রূপগুলির মধ্যে শুধুমাত্র শব্দগুলি বিকশিত হয়েছে এবং তাদের পৈত্রিক ভাষা থেকে পৃথক হয়েছে। এই দ্বিতীয় বিভাগটি আমাদের কিছু শেখাতে পারেনা‚ এগুলোর সাহায্যে পুরনো দিনের খুব অল্প তথ্যই পাওয়া যায়। যখন আমরা

যখন আমরা ভারতে বা ইউরোপে শাস্ত্রীয় হয়ে প্রাচীন ভাষাগুলির ভাষক সম্প্রদায়ের দিকে তাকাই‚ আমরা আর আগের ভাষা নিয়ে কোনও সচেতনতা দেখতে পাই না। তবুও তাদের পৈত্রিক ভাষার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতাশাজনক নয়

দেখা যায় যে ভাষাতাত্ত্বিক ইতিহাস রাজনৈতিক ইতিহাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ! উভয়ক্ষেত্রেই আমাদের অতীতের জ্ঞানের খোঁজ করতে হয়। তবে যে উৎসগুলি এটি দিতে পারে তা ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ! এবং সাধারণভাবে অতীতকে আরও গভীরভাবে অনুধাবন করার জন্যে এটি আরও খারাপ। পদার্থবিজ্ঞানের আইনের মতো পরীক্ষামূলক প্রমাণ ও পুনরুৎপাদনযোগ্য পথে একে পরিবেশন করা যায়না। ঐতিহাসিক নিয়মে আমরা (১) প্রাসঙ্গিক উৎসগুলি থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে অতীতের ঘটনাসমূহ সম্পর্কে উপসংহার টানতে পারি, আবার সদ্য-আবিষ্কৃত উৎসগুলি এতদিন ধরে চলে আসা ধারণাকে পালটে দিতে পারে। (২)উৎসগুলি থেকে কেবলমাত্র আপাত সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে‚ শুধুমাত্র যেগুলোকে সঠিক বলে মনে হয়। কারণ উৎসগুলি সীমিত জ্ঞান বা ইচ্ছাকৃত জালিয়াতি দ্বারা ত্রুটিযুক্ত হতে পারে। (৩) আসলেই কি ঘটেছিলো তা সম্পর্কে অনুমান চলতে পারে।

বুদ্ধ, লাওজি, চাণক্য, যীশু বা মোহাম্মদ আসলেই ছিলেন কিনা তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। এগুলি সম্পর্কে উৎস অবশ্যই রয়েছে, তবে হয় খুব সীমাবদ্ধ (লাওজি, চাণক্য), বা অনেক বেশি সম্পাদিত ও আদর্শে মোড়া (যীশু)। সাম্প্রতিক চরিত্র গুলো নিয়েও এই জাতীয় বিতর্ক চলতে পারে। নেপোলিয়ন কি আসলেই
ছিলেন ?
তার অস্তিত্বের সপক্ষে আমাদের কাছে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। তার নামে
অনেক সরকারী স্থান এবং প্রতিষ্ঠান রয়েছে‚ যাতে তার অস্তিত্বের জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়। তার ফলে অতীতের কয়েকটি চরিত্রকে সত্যি ভাবা অনেক জোরালো হয়। তবুও‚ এটাও বলা যেতে পারে যে একটি বড়সড় প্রচার যন্ত্রের দ্বারা তৈরী চরিত্র হলেও হতে পারেন।

নেপোলিয়ন বা অতীতের যেকোন জিনিস এমনকি ডাইনোসর সম্পর্কেও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনা। আমরা কেবল সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারি। এইভাবে আমরা অতীতের পথে এগিয়ে যেতে পারি কিন্তু কখনোই পুরোপুরি পৌঁছতে পারবোনা। তাদের কারও কারও পক্ষে এতবেশি প্রমাণ পাওয়া গেছে যে তাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্নের তোলা বাহুল্যমাত্র। আর যদি কেউ তা করে ( যেমন বাইবেলের সৃষ্টিবাদীরা ডাইনোসরের অস্তিত্বের কার্যকর প্রমাণ হিসেবে জীবাশ্মকে সন্দেহ করে) সে সামাজিকভাবে উপহাসের পাত্র হওয়ার দিকেই এগোয়; তবুও যুক্তির খাতিরে বলা যায় যে তাদেরও একদিন ঠিক প্রমাণিত হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে।
একইভাবে, প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার অস্তিত্ব অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, এখন পর্যন্ত, কেউ এই সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে নিজের সময় নষ্ট করবেনা। তবুও, প্রকৃত পণ্ডিতরা সর্বদা তাদের সিদ্ধান্তের ভ্রান্তি এবং অস্থায়ী প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন থাকেন।

আমি জানি যে সংকীর্ণমনা মানুষেরা এই ঐতিহাসিক নিয়মগুলোর মতো এই আনুমানিক সিদ্ধান্ত গুলিকেও বিজ্ঞানসম্মত
বলে ভাবতে পারেনা! ভাল কথা, কেউ যদি এ অনিশ্চয়তা পছন্দ না করে তবে এই শাখা থেকে দূরে থাকুক। আপনি যদি কতটা তাপ তাপ প্রয়োজন তা ঠিক করতে না পারেন তবে আপনার রান্নাঘর থেকে দূরে থাকাই ভালো। দুনিয়াতে করার জন্য অনেক কিছু আছে।

গাছ মডেল

শাস্ত্রীর মতানুসারে:

“সর্বাধিক প্রচলিত মত হলো যে সমস্ত আধুনিক ভাষা অবশ্যই একটি মাতৃভাষা থেকে বৃক্ষ আকারে নেমে এসেছে। এর অর্থ বৃক্ষটি শাখা, ছোট শাখা এবং পাতায় বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু আসলেই ব্যাপারটি তেমন নয়। বাস্তবে একটি মূল মাতৃভাষা থাকতেই পারে যার থেকে দুহিতা ভাষার সৃষ্টি হয়েছে‚ তবে পারে যা কন্যা ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল তবে সেই শাখাগুলি সত্যিকারের গাছের শাখাগুলির চেয়ে আলাদা হয়ে একটি শাখা তৈরি করেছিল এবং তারপরে আবার শাখা তৈরী হবে

বাস্তবে, গাছ মডেল (স্ট্যাম্বামাউথিয়ারি)
আগস্ট শ্লেইচার সিএ ১৮৭০ এ তরঙ্গ মডেলের সমালোচনা করে তার পরিপূরক হিসাবে উপস্থাপন করেন। ভাষার শিক্ষার সবথেকে স্বাভাবিক পদ্ধতি হলো বাবা মায়ের কাছ থেকে শুনেছেন একই ভাষায় কথা বলা। একে খেয়ালখুশি মতো উপস্থাপন না করে আপনি এটি নিজের জীবনে পরীক্ষা করতে পারেন। আপনি এবং আপনার কোনো প্রতিবেশী ভিন্ন পরিবেশে ও ভিন্ন পরিস্থিতিতে বড় হলেও উভয়ের মাতৃভাষা একই। কারণ উভয়ই একই ভাষা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। সেইকারণে
পিতা-মাতার কাছ থেকে উল্লম্ব অভ্যন্তরীণ প্রভাবের গাছের দৃশ্যটি প্রাথমিক, পরিবেশ থেকে প্রভাবের তরঙ্গ দৃশ্যটি গৌণ। ইতিমধ্যে ১৭ শতাব্দীতে ইউরালিক আত্মীয়তার আবিষ্কার এবং এই তাত্ত্বিক ধারণা ছাড়াও, উভয় পদ্ধতিই ইউরালিক ‘ট্রি’ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল।

শাস্ত্রী আরও বলেন
: “অন্যান্য সম্ভাবনা বিবেচনা না করে অজানাটিকে ব্যাখ্যা করার জন্য কেবলমাত্র একটি অপ্রতিরোধ্য তত্ত্ব থাকা
যেকোনো গবেষণার জন্যই অবৈজ্ঞানিক।

বাস্তবে, সবসময় প্রতিযোগিতামূলক অনুমান ছিল যে ভারতীয়দের জন্য ভারতীয়দের আলাদা আলাদা হোমল্যান্ড ছিলো। খুব সম্প্রতি, এআইটি বিশ্বাসীদের মধ্যেও আনাতোলিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়াকে নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক হয়েছিল এবং এর আগেও আরও অনেককে নিয়ে তদন্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ভারতও ছিলো‚ যা ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর শৈশবকালেই খারিজ হয়ে যায়। যেহেতু সংস্কৃত প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার পূর্বসূরী নয়‚ (পিআইই‚ যদিও অনেক ঘনিষ্ঠ)‚ তাই ভারত হোমল্যান্ড হতে পারে না । এখন যেহেতু আমাদের এই প্রক্রিয়াগুলি অনেক বাস্তবসম্মত হয়েছে‚ তাই এই অনুমানটি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।

ফ্লোজিস্টন

ডাঃ শাস্ত্রী তারপরে পিআইইর পুনর্গঠনকে ১৭-১৮ শতাব্দীর ফ্লোজিস্টন হাইপোথিসিসের সাথে তুলনা করেছেন যা জ্বলনের ঘটনাটি ব্যাখ্যা করার জন্য একটি পৃথক পদার্থের কল্পনা করেছিলো। এটা ছিলো মিথ্যে যা খুব শিগগিরই পরিত্যক্ত হয়।
এটা ছিলো নবজাতক পদার্থবিজ্ঞানের একটি শৈশব রোগ। বাস্তবে অনুমানের চেষ্টা করা এবং তারপরে পরীক্ষায় যারা ভুল প্রমানিত হয় তাদের বাদ দেওয়াই বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রক্রিয়ার মূল সারমর্ম, তাই ফ্লোজিস্টন হাইপোথিসিসটি সত্যিই কোনও ভুল বা হাস্যকর কিছু ছিল না। কিন্তু তারপরেও এটা একটা ভুল অনুমান। এবং ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার পরিবারের ক্ষেত্রেও এমন ভুল হাইপোথিসিস হতে পারে‚ আর যখন প্রয়োজন দেখা যায় তখন এর মূল্যায়নও করা উচিত।

দ্য ফ্লোজিস্টন হাইপোথিসিসটি যখন টিকে ছিলো‚ তখন অনেকেই এর পক্ষে ছিলোডাঃশাস্ত্রীর মতে – “তাৎপর্যপূর্ণভাবে একইসাথে
ভাষাতত্ত্ববিদরা অসঙ্গতিগুলি সমাধান করার জন্য কোনও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করেননি এবং ধরে নিয়েছেন যে যেখানেই পথ আটকাবে‚ যতক্ষণ না নিয়ম বানাতে পারছে সেখানেই সমগোত্রীয় শব্দের সাহায্যে পুরানো, অজানা ভাষার পুনর্গঠন করে যাবে। ‘

তবুও, তাঁর মতে একজন আসল বিজ্ঞানী একটি মডেল তৈরি করবেন এবং তার বাস্তবতা পরীক্ষা করবেন, কিন্তু:

ভাষাতত্ত্ববিদরা যে এমন করে তার কোনো প্রমাণ নেই (…) ভাষাতত্ত্ববিদরা ছুটে এসে এমনভাবে অজানা ভাষাগুলি পুনর্গঠন করেন যেন ব্যবহৃত সমস্ত পদ্ধতিগুলি বৈধ এবং সঠিক

ভালো কথা‚ বক্তব্যটি থেকে অনুমান করা যায় যে, ডাঃ শাস্ত্রীর মতো ইন্দো ইউরোপীয় বাদী কেউ বৈজ্ঞানিক‘ মান সম্পর্কে এতটা সোচ্চার! এটা জেনে‚ আমি দেখতে পাচ্ছি যে তিনি কখনও তা করেন নি, যেমন তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন‚ “তারা কেবলমাত্র পরিচিত পুরনো পৈত্রিক ভাষার সাথে তিন বা চারটি আধুনিক ভাষা নিতে পারে এবং তারপরে আধুনিক ভাষাগুলি থেকে সেই পুরানো ভাষাটিকে পুনর্গঠন করার চেষ্টা করতে পারে।”

তিনি যা বোঝাচ্ছেন তার বিপরীতে গিয়ে, এটি আসলেই করা হয়েছে, বিশেষত উল্লেখযোগ্য রোম্যান্স ভাষাগুলিকে তাদের দূরবর্তী মা ল্যাটিন ভাষার পুননির্মাণের ভিত্তি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে ( উদাহরণস্বরুপ – গ্লোটোক্রোনোলজির দাবির পরীক্ষায়‚ যে দাবি মতে ভাষার পরিবর্তনের হারটি
জ্ঞাত সময় পার্থক্যের সাথে মিলে যায়। ফলে ল্যাটিনের সময়কাল রোম্যান্স ভাষাগুলির পরিবর্তনের হার থেকে পাওয়া যেতে পারে। )
তবুও তিনি মনে করেন: “এটি কখনও হয় নি।

এই বিষয়গুলিতে তাঁর অদক্ষতার আর একটি নমুনা হ’ল: “এর একটি উদাহরণ হলো আবেস্তান, একটি কাল্পনিক ভাষা যা পার্সীরা ১০০০ খ্রীস্টপূর্বে বলতো। আবেস্তানকে পুনর্গঠিত করা হয়েছে সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করা পাহলাভি ভাষার পাঠ থেকে মৌখিকভাবে মনে রাখা মূল গাথার খন্ড থেকে

না, আবেস্তান সত্যিই একটি বাস্তব ভাষা। তাকে পুনর্গঠিত করার প্রয়োজন পড়েনি। এর বেঁচে থাকা সাহিত্য, আবেস্তাকে তাদের ‘কল্পিত’ সংস্কৃততে ঠিক বেদের মতোই মুখে মুখে চালু রাখা হয়েছিল। সংস্কৃতের সাথে ঘনিষ্ঠতা এবং দুহিতা ভাষা পাহলভীর সাথে ঘনিষ্ঠতার কারণে ব্যাপারটি আরও পরিষ্কার , সুতরাং আমাদের এটি বুঝতে সমস্যা হয় না;
মধ্যবর্তী শতাব্দীতে , পার্সিয়ানদের এটি বুঝতে কোনও সমস্যা হয়নি। অষ্টম শতাব্দীতে, জোরাথ্রুস্ট্রিয়ান পুরোহিতরা যখন ইসলামের প্রভাবের কারণে তাদের ধর্ম টিকে থাকবে কিনা সেই ভয় পেয়েছিল, তখন তারা একটি ফোনেটিক বর্ণমালা তৈরি করেছিলেন এবং তাদের আবেস্তান গ্রন্থগুলিকে লেখার কথা চিন্তা করে। এখানে সাদা বা খ্রিস্টান বা ঔপনিবেশিক বা অন্য কোনো শক্তির কোনো চিহ্ন নেই

আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এই ব্যক্তি এমন একটি বিষয় নিয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন যা নিয়ে তিনি পড়াশোনা করননি

হোমল্যান্ডের প্রত্নতত্ত্ব

ডাঃ শাস্ত্রীর দাবি হিসাবে ভাষাতত্ত্ববিদদের পদ্ধতি কোনো কাজের না। যদিও তার সিদ্ধান্তগুলি সঠিক হতে পারে। সিদ্ধান্ত সঠিক হওয়ার জন্যে কারও উদাহরণ সঠিক নাও হতে পারে। যদিও তা অবশ্যই সাহায্য করে। কেউ কখনো সখনো ভুল করেও সত্যিটাকে আবিষ্কার করে ফেলে। এই পয়েন্টটি প্রকৃতপক্ষে ডাঃ শাস্ত্রী নিজেই তুলে ধরেছেন।

পিআইই পুনর্গঠনের ইতিহাস এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ভুল বুঝতে পারার করার পরেও তিনি তার ভুল দেখতে পাননি। তিনি বলেছিলেন‚

“এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্যে পিআইই
এর পতন ঘটেছে স্বর্গ থেকে মান্নার মতো
। সেইসব প্রত্নতাত্ত্বিকরা‚ যারা পিআইআইকে খুব সুন্দরভাবে এমন জায়গায় এনেছে যেখানে রাশিয়ার স্টেপ ভাষার কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই – সমতুল্য ভূমির মাঝখানে সবদিক থেকেই একটা সুবিধাজনক অঞ্চল‚ যাতে মনে হয় যে ভাষাটি সেখান থেকে যে কোনও জায়গায় যেতে পারত কারণ সেই জায়গা থেকে কোনও স্থানকে “অতিরিক্ত দূরে” হিসাবে ঘোষণা করা যায় না। “অতিরিক্ত দূরে” কথাটা প্রকৃতপক্ষে সম্ভাব্য অন্যান্য স্থানগুলি শাসনের অজুহাত হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে ”

তার ভাষাবিজ্ঞানে প্রত্নতত্বের ভূমিকা নিয়ে তার বিবরণ সঠিক নয়। তবে এটি সত্য যে আনতোলিয়া এবং ভারতের মতো শিক্ষার প্রাচীন কেন্দ্রগুলির বিপরীতে কয়েক শতাব্দী পূর্বে অবৈধ স্টেপ হোমল্যান্ডের পক্ষে ভাষার কোনও ইতিহাস ছিল না।
এই অঞ্চলটি শিক্ষিত হওয়ার পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ইউরালিক এবং পিআইই পরিবার উভয়ের শাখাগুলির একটি বিশদ ইতিহাস দেওয়া দেখলে এটি বেশ হাস্যকর হয়ে ওঠে
হ্যাঁ, ইন্দো-ইউরোপীয়দের প্রতিষ্ঠা নিয়ে কিছু বাড়াবাড়ি হয়েছে‚ মধ্যে কেউ কেউ বেশ বাড়াবাড়ি করেছে‚ তবে তুলনামূলক এবং ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্ব এর চেয়ে ভাল আশা করে।

এছাড়াও শাস্ত্রী নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে রাশিয়ান স্টেপ সমতুল্য ভূমির মাঝখানে সবদিক থেকেই একটা সুবিধাজনক অঞ্চল‚ যাতে মনে হয় যে ভাষাটি সেখান থেকে যে কোনও জায়গায় যেতে পারত কারণ সেই জায়গা থেকে কোনও স্থানকে “অতিরিক্ত দূরে” হিসাবে ঘোষণা করা যায় না। “অতিরিক্ত দূরে” কথাটা প্রকৃতপক্ষে সম্ভাব্য অন্যান্য স্থানগুলি শাসনের অজুহাত হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে ”

যদিও ব্যাক্ট্রিয়া এবং জার্মানির মতো স্থানগুলিকে হোমল্যান্ড হিসাবে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে, স্টেপের হয়ে পক্ষপাতিত্ব করার জন্য তারা প্রচুর মিথ্যে বলেছে। আপনি যখন ভারতকে হোমল্যান্ড হিসাবে প্রস্তাব দেবেন, তখন এই যুক্তিটি উপস্থিত হবে যে এটি কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে। এবং রাশিয়া কেন্দ্রের অনেক কাছে। তর্ক বিতর্কে যাওয়ার আগে‚ এটি অনুভূতিটি দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। যে কেন্দ্রীয় অবস্থানটি আরও বেশি রুচিকর। তবুও, যে ভাষাগুলি প্রসারিত হয়েছিল, তাদের পরবর্তী প্রসারের সময় অনেক দূরেই গিয়েছিলো
রাশিয়ান কিয়েভ থেকে পূর্ব দিকে, আরবের উত্তর-পশ্চিম থেকে আরবি, পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বান্টু। সুতরাং, ভারতের পক্ষে এমন হওয়া অসম্ভব কিছুনা।

আউট-অফ-ইন্ডিয়া মতবাদ

রাশিয়ার বিকল্প হিসাবে, হোমল্যান্ড হিসেবে সম্প্রতি ভারতের নাম উঠে আসছে। অনেকের বিশ্বাস যে এটি একটি হিন্দুত্ববাদী চেষ্টা, একটা মিথ্যে গল্প। বাস্তবে, আউট-অফ-ইন্ডিয়া থিওরি (ওআইটি) আঠারো শতকের ইউরোপ থেকে এসেছে এবং পঞ্চাশ বা তারও বেশি সময় ধরে প্রাধান্য পেয়েছে। অর্থাৎ এটি কোনো হিন্দুত্ববাদী অভিসন্ধি নয়। তারা কেবল আর্য আক্রমণের তত্ত্বের (এআইটি) বিরোধিতা করে, যার মতে ভারতের বাইরে একটি পিআইই হোমল্যান্ড থেকে ভারত আক্রমণ করে। তাদের কাছে কোনো বিকল্প ধারণা নেই যে ভারতীয় এবং ইউরোপীয়রা কীভাবে
ভারত থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম দিকে প্রসারিত একই পরিবারের অন্তর্গত ভাষাগুলিতে কথা বলতো। তাদের দৃষ্টি খাইবার পাসের চেয়ে বেশি দূরে যায় না, বাইরের ভাষার ইতিহাস তাদের বিশ্বদর্শনের হিসাবে আসে না

ওআইটি হ’ল মুষ্টিমেয় ভারতীয়, ভারতে এসে ভারতীয় হয়ে যাওয়া ও পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের কাজ। পরে এটি হিন্দু সমাজের একটি বৃহৎ অংশ অনুসরণ করে। যারা বুঝেছিলো যে পিআইইয়ের ঐক্যকে অস্বীকার করা যায় না‚ ফলে ভারতের উপস্তিতির জন্যে হয় ভারতীয় হোমল্যান্ড অথবা বাইরে থেকে আক্রমণ প্রয়োজন; এবং যাদের অস্পষ্ট ধারণা আছে যে কথিত মুষ্টিমেয় পণ্ডিতরা জানেন তারা কী করছে। কিন্তু কেউ কেউ ( সঠিক সংখ্যা বলা সম্ভব না ) পিআইইয়ের জন্যে কিছু করতে চান না এবং ফলে ওআইআইটি কেও এআইটির মতো প্রত্যাখ্যান করবে।

আমাদের ডাঃ শাস্ত্রী তাদের মধ্যে একজন
” বলাই বাহুল্য, যে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানগুলি ভারতকে কাল্পনিক পিআইইর সেই কল্পনাপ্রসূত স্থানের সাথে সংযুক্ত করতে ঘটানো হয়েছে।”

অবশ্যই, যদি পিআইই না থাকে তবে পিআইই হোমল্যান্ড থাকার দরকার নেই। তবে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি বোঝানোর জন্য “ঘটানো হয়েছে ” শব্দটি খেয়াল করুন। এই দাবি হাজার বার শোনার পরেও এই বিশাল ষড়যন্ত্রের পক্ষে আমাদের কোনও প্রমাণ কখনও হাজির করা হয়নি, কিন্তু তা এখনও জনপ্রিয় রয়েছে। এটি ভারতে অত্যন্ত বিস্তৃত: একসময় কিছু ব্রিটিশ প্রশাসক ভেবেছিলেন যে কীভাবে হিন্দুদের বশে আনা যায়। তারপরে তারা এআইটি-র কল্পনা করেন। এটি আবার তুলনামূলক এবং ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্বের প্রকৃত ইতিহাস এবং এটি কীভাবে পিআইই এবং বিভিন্ন হোমল্যান্ড তত্ত্ব সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করেছিল তা সম্পর্কে অজ্ঞতার চিহ্ন

বাস্তবে, কিছু জার্মান গ্রন্থাগারের চেয়ারে বসে কাজ করা পণ্ডিতদের দ্বারা এআইটি কল্পিত হয়েছিল এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা এর ব্যবহারযোগ্যতা দেখে একে লুফে নেয়।

বর্তমান বিতর্ক

হোমল্যান্ড সম্পর্কিত বিতর্কে, আমি এটা বলার জন্য দুঃখিত কিন্তু হিন্দুরা তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা যুদ্ধক্ষেত্র বা বিরোধীদের অবস্থান অধ্যয়নের জন্য কোনও প্রয়োজন দেখেনি। যারা ভাষা পরিবারকে বাস্তব হিসাবে স্বীকার করেন তারা দাবি করে যে বিতর্কটি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে এবং ওআইটি জিতে গেছে। বাইরের দুনিয়ার সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। সেই “আর্যরা স্টেপ থেকে এসে ভারত আক্রমণ করে” তত্বেই তারা আটকে আছে।

আর একটা হ’ল পুরোপুরি ইন্দো-ইউরোপীয় পরিবারের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা। কখনও কখনও আমি দেখি এআইটি এর দাবিদাররা ইন্টারনেট ফোরামে মিথ্যা দাবি করে যে তারা ওআইটি অস্বীকার করেছে। এআইটির পক্ষে এবং ওআইটির বিরুদ্ধে ভাষাতাত্ত্বিক প্রমাণ হিসাবে আর কিছুই নেই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আপনি যদি জিজ্ঞাসা করেই যান তারা বলবে যে তারা ওআইটিকে ভুল প্রমাণ করেনি তবে হিন্দুত্ববাদীদের ভুল প্রমান করেছে। ওআইটির পক্ষে খুব কমই যুক্তি দেবে তবে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার, অর্থাৎ ভারতীয় ভাষা এবং পশ্চিমা ঘৃণিত দেশগুলির মধ্যে আত্মীয়তার বিরুদ্ধে তারা তর্ক করেই যাবে। হোমল্যান্ড বিতর্কের সাথে জড়িত বেশিরভাগ অ-ভারতীয়রা এই ধারণাটি পেয়েছে যে এআইটির বিরোধীরা একবারে ইন্দো-ইউরোপীয় ধারণার বিরোধী; এবং সেই অবস্থান সাপেক্ষে, তারা এটিকে ভুল প্রমাণ করার জন্য সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী।

ইন্দো-ইউরোপীয় পরিবারকে অস্বীকার করা কেবল প্রমাণের বিরুদ্ধে নয়, যেমন সংস্কৃত ও তামিলের চেয়ে সংস্কৃত এবং ইংরেজি (এমনকি সমকালীন রূপে) এর মধ্যে সর্বনাম বা সংখ্যার তুলনারও বিরুদ্ধে। সংস্কৃত এবং চীনা ভাষার কথা বাদ দেওয়া যাক। হোমল্যান্ড বিতর্কে হিন্দুরা খারাপ অবস্থায় আছে। তারা শিল্পের অবস্থা সম্পর্কে পরিচিত না হয়েই প্রথমে চলমান বিতর্কে ঢুকে পড়ছে।

এর ফলাফল আমি ইন্দো-ইউরোপীয়ান সম্মেলনে দেখেছি। নন-এআইটি শিবিরের
আমিই একমাত্র সেখানে গিয়েছিলাম।

মূল সমস্যাটি হলো, যেখানে আমি ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত এআইটি শিবিবের দৃঢ় বিশ্বাসে কয়েকটি ফাটল ধরাতে পেরেছি। তাদের বলা হয়েছে যে এআইটির সমালোচকরা অবশ্যই হিন্দু জাতীয়তাবাদী, যারা সবসময় বোকাবোকা কথা বলে। এই হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের যে কিছু বলেছে তা অবশ্যই হাস্যকর‚ এদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতোনা। এই বিশ্বাসের ফলে তারা ইন্টারনেটে এআইটি বিরোধী উগ্রব্যক্তিদের টার্গেট হয়ে যায়। তারা মূল বিষয়ে ফিরে গিয়ে পড়াশোনা করে সময় নষ্ট করতে চায়না। আমি বলছি যে এই মানসিকতার সাথে মানিয়ে নেওয়া কঠিন।
আমি বিনীতভাবে সেই মূর্খ কিন্তু বিতর্কপ্রিয় হিন্দুদের তৈরি জঞ্জাল পরিষ্কার করার চেষ্টা করি।

একটি বাধা হ’ল তাদের জাতীয় আত্ম-সংস্কার। ডাঃ শিবশঙ্কর শাস্ত্রীকে ‘একজন দুরারোগ্য দেশপ্রেমিক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এবং এটাই হলো সমস্যা। অল-বিরুনি যেমন এক হাজার বছর আগে
বলে গেছেন‚ “ভারতীয়রা মনে করে যে তাদের মতো কোনও দেশ নেই, পুরনো পৃথিবীতে ভারতীয় নেতৃত্বের মনে একটা সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স কাজ করতো। এক হাজার বছর ধরে মুসলিম ও ব্রিটিশ শাসনে থাকার পরে, হিন্দুরা মধ্যে হীনমন্যতা এসেছে। যার ফলে পুরনো দিনের সবকিছুকেই সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স মনে করে‚ বাকি পৃথিবী‚ যেমন ইন্দো ইউরোপীয়দের অভারতী অংশ‚ যাদের
ভাষাগত অস্তিত্ব একটি ব্যাখ্যা দাবি করে‚ তাদের সম্পর্কে ভাবেনা।
তেমনি, তারা পিআইই বিরোধী যুক্তিগুলির গুণমান সম্পর্কে অ-ভারতীয়দের মতামতকেও গুরুত্ব দেয় না। ঠিক যেমন প্রাচীন ভারতে হেলিকপ্টার বা পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রর ব্যাপারে বাকি পৃথিবী কি ভাবছে তাও তারা আমলে নেয়না। তাদের ধারণা এই
বিদেশী অবিশ্বাস অবশ্যই ঔপনিবেশিক-মিশনারি-বর্ণবাদী ষড়যন্ত্রের কারণেই ঘটছে।

আমি সবসময়ই ভারতের পক্ষে, এর ঐক্য ও
কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে
; অবশ্যই আমাদের বর্বরতার বিরুদ্ধে থাকতে হবে। তবে তারজন্য স্ফীত-উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রয়োজন নেই। স্যামুয়েল জনসন যেমন বলেছিলেন: ‘দেশপ্রেমই এই দুবৃর্ত্তদের শেষ আশ্রয়। আর সবসময়ই ভারতের লক্ষ্য “সত্যমেব জয়তে” সত্যের জয় হোক। কিছু মানুষ ভাবে দেশপ্রেমের অর্থ সত্যকে আড়াল করা। যেকোনো মতবাদের ক্ষেত্রে তারা এটা জানতে চায়না এটা সত্যি কিনা‚ আগে জানতে চায় এর উৎপত্তি দেশে নাকি বিদেশে। আর সে কারণেই তারা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারে বিশ্বাস করে না।

প্রথম প্রকাশিত হয়েছে প্রজ্ঞাতায়

কোনরড এলস্ট (KOENRAAD ELST)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.