#সজনি_সজিনা_শোভাঞ্জন

চরক সংহিতায় বলা হয়েছে –
যস্য যদ্দেশ জন্ম তজ্জং তস্য ভেষজম্।


স্থান কাল পাত্র ভেদে প্রকৃতি বিচারে দেহে রোগ যেমন হয় তেমন তার প্রতিষেধকও প্রকৃতি সৃষ্টি করে আশেপাশে। যাহার জন্ম যেখানে , তাহার ভেষজ সেখানে জন্মগ্রহণ করে। তাই বলা হয় #যাই_অসম্ভব_তাই_সম্ভব।  প্রাচীনমতে অসম্ভব অর্থ ভয়, অর্থাৎ ভয় যেখানে থাকে ভয়ের নিবারণও সেখানে থাকে। যেকোনো প্রকার ভয় নিবারকতাই ভেষজ। ভেষ + জি + ড  ( ঋক্ বেদ)..
ভয় ও নিবারণ যমজ হয়েই জন্মায় , সুখ দুঃখের মত। অর্থাৎ ভয়ের নিকট নির্ভয়কারীও থাকেন। এই জন্য কুষ্ঠরোগের প্রাকপ্রসঙ্গে আমরা এই রোগের ঔষধগুলির মধ্যে অন্যতম ঔষধ হিসাবে দেখতে পাই ভল্লাতকের ব্যবহার ভীষন অধিক। এই ভল্লাতকের প্রচলিত না ভেলা। ভল্লাতকের বৈজ্ঞানিক নাম হল Semecarpus anacardium Linn.  এই ভল্লাতক বা ভেলা গাছ সব থেকে অধিক দেখা যায় মেদিনীপুর , বাঁকুড়া , পুরুলিয়া , বীরভূম এবং তন্নিকটবর্তী জেলাগুলিতে। এসব অঞ্চলে একসময় এই রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ছিল। 


ব্ল্যাক ওয়াটার ফিভার একসময় আসামের একটি ভয়াবহ রোগ ছিল।  এই রোগে নিশ্চিন্ত কার্যকরী বনৌষধিও ওই অঞ্চলে আবিষ্কৃত হয়েছিল  যার স্থানীয় নাম ছিল আলুই।  ঠিক কাল সম্পর্কে এমনই একটি কথা বলা চলে । বসন্তকাল , যাকে মধুমাস বলা হয়, কবিরা যাকে রোম্যান্টিক ভাবে নাম দিয়েছেন প্রেমের ঋতু, সেই ঋতুরাজের প্রভাবে শরীরের পিত্তশ্লেষ্মার যেমন উপদ্রব হয় – তেমনি আবার বায়ু ও পার্থিবশক্তির প্রাধান্যজনিত কালধর্ম ব্যাধিও আবির্ভূত হয় – এই সময় আসে হাম , বসন্ত ইত্যাদি জ্বর ও চর্ম রোগ। আবার এই সময়ই দেশের ভেষজ সব্জী সজিনা ফুল, সজিনা ডাঁটা , এঁচোর বা কচি কাঁঠাল , উচ্ছে ইত্যাদিও প্রকৃতি প্রসব করায় , পাতাঝরা নিমগাছে আবার নতুন করে পাতা আসে। এসব ভেষজ হল কালোদ্ভূত রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক। আয়ুর্বেদমতে এগুলি কফপিত্তের আধিক্য দূর করে। এইসব দ্রব্য ওষধিজ্ঞানেই এই এসময় খাওয়া উচিত।  মানব  শরীরে ঋতুকাল প্রসূত দ্রব্যের অনুকূল প্রয়োজন সর্বদাই থাকে এবং ভালোও লাগে।


অনেকেই রোগা লোক দেখলে  বলে , #লোকটা_যেন_সজনে_কাঠ।  হ্যাঁ , সঠিক  সজনে গাছের কথাই বলছি। এই গাছ যতই প্রাচীন ও বিশাল হোক না কেন, গাছে এতটুকুও সার হয় না; তথাপি তার আভিজাত্য বৈদিক সাহিত্যের সূক্তে বিধৃত হয়েছে –
অয়ং স্ব অগ্নিঃ আক্ষীব দধে জঠরে  বাবশানঃ সসবানঃ স্তূয়সে জাতবেদ শৈশিরেণ । 
এই সূক্তটির মহীধর ভাষ্য করেছেন  – হে আক্ষীব ! যার নাম শিগ্রু বা সজিনা বৃক্ষ । তুমি শিশিরে প্রাণবান হও। তোমার শক্তি অগ্নিবৎ । জঠরে প্রবেশ করে অগ্নি প্রকাশ কর। তোমাকে স্তব করি। 


এছাড়াও অথর্ববেদেও একে বলা হয়েছে – 
এই সজিনা দেহজ শত্রু বিনাশ সাধন করে, সে শত্রু অর্শ ও ক্রিমি। 
ভাষ্যকারের আক্ষীব শব্দের আর একটি অর্থ #মাতাল। এটি যাস্কের অভিমত। ক্ষীব ও আক্ষীব দুইই মত্ততাবোধক শব্দ। 


সুপ্রাচীন ভারতে বৈদিক মুনি ঋষি , রাজা মহারাজা ব্যতীত যে সকল জনজাতি, বনবাসী, গুহাবাসী মানুষরা বাস করতেন এবং এখনো যাঁরা বাস করেন ,তাঁরা অদ্যাবধি সজিনার রসে মদ্য প্রস্তুত করেন। এই সজিনা ছালের রস দ্বারা প্রস্তুত মদ সাঁওতাল , কোল, ভীল ,মুন্ডা, লোধা প্রভৃতি খুব আগ্রহের সঙ্গে পান করেন। 


এই মদ তৈরি করতে সজিনা ছাল , অনন্তমূল, শতমূল, শিমূলমূল  ও মুথা – এই পাঁচটি মাত্রা প্রথমটি তিনসের , বাকিগুলি আধসের করে নেয়; মাত্র কুড়ি দিন পচায়।তারপর শুকনো মহুয়া এবং গুড় মিশিয়ে প্রয়োজন মাফিক জল এবং দেশীয় পদ্ধতিতে চুঁইয়ে নিয়ে মদ প্রস্তুত করে, তাঁকে বলে #হাঁড়িয়া_খেরী। এই মাদক এইসকল উক্ত জনজাতির নিকট পবিত্র এবং মূল্যবান । বিশুদ্ধ ভেষজ মিশ্রণ এতে থাকে তাই এই মাদক হল আক্ষীব।


বৈদিক গ্রন্থ গুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় – অসুরদের মধ্যে সজিনা রসের মদ্যটি গৃহীত হয়েছে। তবে বৈদিক ঋষিগণ সজিনা মধ্যে মদ্যশক্তি ছাড়াও এর পাতা , ফুল, ফল, বীজ এবং মূলের ও গাছের ছালেরও যে বিশেষ গুণ-বীর্য আছে – সে সম্বন্ধেও তাঁরা গবেষনা করে দেখেছেন। 
তাঁদের সেইসব সূক্তের অনুসরণ করেই পরবর্তীকালের সংহিতাকারগণের ব্যবহারগত পরীক্ষা নিরীক্ষা। সুপ্রাচীন ভারতবর্ষের সময়কালে , এমনকি আজও এই সজিনা বৃক্ষের ছাল দিয়ে বাহ্য অর্বুদকে বা টিউমারকে পাকায়, ফাটায় এবং পরে তাতে নিসিন্দা বা  Vitex nigundo পাতার গুঁড়ো দিয়ে সেই ঘা শুকানো হয়। 


ওই বৈদিক সূক্ত দুটির সূত্র ধরে চরকে , সুশ্রুতে যেমনি , তেমনি বাগভট্ , চক্রদত্ত , বঙ্গসনেও এই গাছটির বিভিন্নাংশ বহু দুরূহ রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার উপদেশ দিয়েছেন । এই গাছের মূলের রস যে অন্তর্বিদ্রধি বা শরীরাভ্যন্তরস্থ দুষ্ট ব্রণ নাশক। এই তথ্যটি নব্য বৈজ্ঞানিকগণ কর্তৃক সমর্থিত। সে সমীক্ষাটির দ্রষ্টা কিন্তু মহামতি বাগভট্ এবং চক্রদত্ত ।  এই শিগ্রু নামের অর্থই হল – #প্রবেশ_করে_বিদীর্ণ_করা। তার উপর বিভিন্ন প্রদেশের লৌকিক ব্যবহার – এসব তো আছেই; আমার সীমিত বক্তব্যে কেবলমাত্র সাধারণের জ্ঞাতব্য কয়েকটি তথ্য এখানে প্রকাশ করছি। 


বৈদিকযুগে এক প্রকার সজিনারই উল্লেখ দেখা যায়। পরবর্তীযুগে শ্বেত , রক্ত, নীল পুষ্প – বর্ণভেদে আরও তিন প্রকার সজিনার উল্লেখ দেখা যায়। তবে নীলফুলের সজিনাবৃক্ষ বর্তমানে দুর্লভ। সাদাফুলের সজিনাগাছই সর্বত্র। বারোমাস যেটি পাওয়া যায় তাকে #নাজনা বলে। কিন্তু এরা প্রজাতিতে একই।  রক্তপুষ্প সজিনা বঙ্গের মালদহ পাওয়া যেতো , কিন্তু বতর্মানে সেটা পাওয়া যায় কিনা জানি না। 

Moringa concanensis Nimmo  প্রজাতির এক প্রকার সজিনা রাজপুতনায়, সমগ্র দাক্ষিণাত্যে পাওয়া যায়। এর ফুল ও ফল বা ডাঁটা গুলি রক্তাভ । পুষ্পের বর্ণ ভেদে গাছের গুণেরও পার্থক্য আছে – একথাও প্রাচীন গ্রন্থে বলা হয়েছে। 
দেরাদুন ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে সজিনা গাছের চাষ করা হয়। বসন্তে গাছে ফুল এলেই বৃক্ষশাখাগুলি কেটে ফেলা হয়, তারপর ওই ফুল শুকিয়ে চালান করা হয়ে থাকে নানা আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ও ওষধি কেন্দ্রে। 


চলুন দেখে নি সজিনা বৃক্ষের বিভিন্ন অংশের কি কি ব্যবহার হয় – 
পাতা : সজিনা পাতা শাকের মতো রান্না করে ( ভাজা নয়) আহারের সময় অল্পপরিমানে খেলে অগ্নিবল বৃদ্ধি পায় ও আহারে প্রবৃত্তি নিয়ে আসে। তবে পেটরোগাদের ঝোল করে অল্প খাওয়া ভাল।  একটা কথা বলি, সজিনা পাতা আমাদের মতো গরিবের খাদ্য। বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় পাওয়া গেছে – এর মধ্যে ভিটামিন এ , বি, সি , নিকোটিনিক এসিড , প্রোটিন চর্বিজাতীয় পদার্থ ,কার্বোহাইড্রেট এবং শরীরের পোষণ উপযোগী আরো নানা প্রয়োজনীয় উপাদান আছে। সুদীর্ঘকাল ধরে রাঢ় অঞ্চলের কোল, ভীল, মুন্ডা প্রভৃতি জনজাতিরা নিত্য প্রিয় ভোজ্য শাক হিসাবে ব্যবহার করেন। কিন্তু গুণ জেনে খাচ্ছেন  না – প্রাচীন সংস্কারেই খায়। 


ফুল – শাকের মতো রান্না করে বসন্তকালে খাওয়া ভাল। এটা একটা বসন্ত প্রতিষেধক দ্রব্য। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এই সজিনার ফুল শুষ্ক করে সর্দিকাশির দোষে , শোথে , প্লীহা ও যকৃতের কার্যকারিত্ব  শক্তি কমে গেলে ক্রীমির আধিক্য থাকলে এবং টনিকের একটি অন্যতম উপাদান হিসাবে ব্যবহার হয়। 


ফল বা ডাঁটা –  #ধুকড়ির_মধ্যে_খাসা_চালের_মতো আমাদের দেশের সজিনা ডাঁটা । বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে পাতা এবং ফল বা ডাঁটা প্রায় সমগুণের অধিকারী হলেও ডাঁটাগুলি Amino acid সমৃদ্ধ ,যেটা দেহের সাময়িক প্রয়োজন মেটায়। সর্বক্ষেত্রে সব দ্রব্যেরই ব্যবহার করা উচিত পরিমিত ও সীমিত । আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের অনেকের মতে – বাতব্যাধি রোগগ্রস্থ ব্যক্তিদের ও যাঁরা শিরাগত বাতে কাতর , তাঁদের আহার্যের সংগে এটি ব্যবহার করা ভালো। 


বীজ – আমাদের দেশে সজিনা বীজের তেল ব্যবহার হয় না । তাই তেমন একটা পরীক্ষার অবকাশ আমাদের হয় নি। তাছাড়া আমাদের দেশের সজিনা ডাঁটার বীজে খুব একটা তেল পাওয়াও যায় না।  একধরনের সজিনার বীজের তেল আফ্রিকা থেকে আমদানী হয়। এর নাম #বেন_অয়েল।। ঘড়ি মেরামতের কাজে লাগে, বাতের ব্যাথায়ও মালিশে নাকি ভালো কাজ হয়। এছাড়াও গাছের ও মূলের ছাল বা ত্বকের গুণের অন্ত নেই। এই বৃক্ষের গুণ নিয়ে লিখতে বসলে মহাভারতের ন্যায় সুবিশাল গ্রন্থ রচিত হয়ে যাবে।


রোগ নিরাময়ে সজিনা বৃক্ষ নানা ভাবে ব্যবহৃত হয়। বার্মিজ চিকিৎসকগণের মতে সজিনা বৃক্ষের পাকা পাতার টাটকা রস ( জলে বেটে নিংড়ে নিয়ে) দুই বেলা আহারের ঠিক অব্যাহতি পূর্বে ২ বা ৩ চা চামচ করার খেলে উচ্চরক্ত চাপ  কমে যায়। তবে যাঁদের সুগার বা অতি শর্করা রোগ আছে তাঁদের এসব খাওয়া নিষেধ। 


অর্বুদ রোগ বা ফোঁড়া বা টিউমারে এই বৃক্ষের পাতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধন্বন্তরীর ন্যায় কাজ করে। ফোঁড়ার প্রথমাবস্থায় গ্রন্থিস্ফীতি অথবা আঘাত জনিত ব্যাথায় ও ফোলায় – পাতা বেটে অল্প গরম করে লাগলে ফোঁড়া বা টিউমার বহুক্ষেত্রে  মিলিয়ে যায় এবং ব্যাথা ও ফোলায় উপশম হয়। 
সাময়িক জ্বর বা জ্বরভাবে এবং তার সঙ্গে প্রবল সর্দি থাকলে অল্প দুটো পাতার ঝোল করে বা শাক রান্না করে খেলে উপশম হয়। 


হিক্কা হতে থাকলে পাতার রস ২ – ৫ ফোঁটা করে দুধের সঙ্গে ২- ৩ বার খেলে , হিক্কা সমস্যার উপশম হয়। 
চরক সংহিতা অনুসারে, অর্শ আছে ,যন্ত্রনা হয় কিন্তু রক্তপাত হয় না – সেইরকম ক্ষেত্রে নিম্নাঙ্গে তিলতৈল লাগিয়ে পাতা সিদ্ধ ক্বাথ দ্বারা সিক্ত করতে হবে।


বাগভটের রচনায় উল্লেখ আছে -সন্নিপাত জন্য চোখে ব্যাথা , জল  বা পিচুটি পড়া ইত্যাদি সমস্যায় সজিনা পাতা সিদ্ধ জল সেচন করলে উপকার পাওয়া যায়। 


শ্লেষ্মাঘটিত কারণে দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে পাতার ক্বাথ মুখে ধারণ করলে উপশম হয়। 
কুষ্ঠের প্রথম অবস্থায় সজিনা বীজের তৈল ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়। সুশ্রুতে মতে , তেলের অভাবে বীজ বেটে কুষ্ঠের ক্ষতের উপর প্রলেপ দিলেও চলে।


সুশ্রুতের মতে অপচী রোগে সজিনা বীজ চূর্ণ করে নস্য নিতে হয়। 
দাদ , ঘায়ে সজিনা মূলের ছালের প্রলেপ লাগলে ক্ষত তাড়াতাড়ি কমে যায়। তবে এটা প্রত্যহ ব্যবহার করা ঠিক নয়।


নব্য বৈজ্ঞানিকদের কাছে যদি এসব তথ্য অকেজো জিনিসকে আঁকড়ে রাখা পাগলামি মনে হয়। তবু সময় অবসরে দ্রব্যের মৌল বিচারের তথ্য বিশ্লেষণের পর নতুন তত্ত্ব উদ্ঘাটনে অগ্রসর হলে পুরাতন তথ্যের বনিয়াদের উপর নতুন হর্ম‍্য‍ গড়া যেতেই পারে। কারণ তাদের মৌলিক গঠনপদ্ধতির বৈচিত্রে ক্ষিতি , অপ, তেজ , মরুৎ ও ব্যোম এই পঞ্চভৌতিক উপাদানের যে স্বাভাবিক তথ্য দেওয়া আছে । তাদের থেকেই তো মধুর , অম্ল, লবণ, কটু, তিক্ত এবং কষায় – এই ৬ টি রসের উদ্ভব হয়  এটি আজও সর্ববাদিসম্মত সত্য। তাছাড়া এইসব রসই তো জীবনের হ্রাস – বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে এবং এদের মধ্যে রোগকারিত্ব ও রোগনাশিত্ব শক্তিও নিহিত আছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দ্রব্য প্রকৃতি বিচার করলেই তাদের প্রকৃত স্বধর্ম জানা যাবে। সুতরাং এদের বুঝতে বা কাজে লাগাতে হলে মতো ও পথের একটা নূতন সমীক্ষা হয়তো অনুকূলই হবে।

 
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ ১. চিরঞ্জীব বনৌষধি   

      ২. আয়ুর্বেদোক্ত উদ্ভিদ সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.