‘করোনা মোকাবিলায় গোটা বিশ্বকে একজোট হতে হবে’, আহ্বান শেখ হাসিনার

 করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় গোটা বিশ্বকে একজোট হতে হবে। পাঁচদফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে এই মন্তব্যই করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোভিড-১৯ (Covid-19) সংক্রান্ত বিষয়ে আয়োজিত আঞ্চলিক ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে দিয়ে তিনি বলেন, এই বিশ্ব ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যুদ্ধরত। এখন করোনা ভাইরাস জীবজগতের অস্তিত্বের প্রতিই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বে কোনও একটি দেশকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয় এবং বিচ্ছিন্নকরণ নীতিও আর কাজে আসবে না। সম্ভবত গত ১০০ বছরের মধ্যে সব থেকে বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছে বিশ্ব। তাই একজোট হয়েই আমাদের এই সংকটের মোকাবিলা করা প্রয়োজন। আমাদের প্রতিটি সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব এবং অংশীদারিত্বের জন্য একটি পদ্ধতির প্রয়োজন।’

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (WEF) ‘দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা ভাইরাস এবং অর্থনীতিতে এই সংক্রান্ত প্রভাব মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এই ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করেছিল। গণভবন থেকে ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের আঞ্চলিক স্থিতিস্থাপকতা বিনির্মাণ’ সংক্রান্ত বিষয়ে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। সেসময় বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রায় করোনা ভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপগুলি তুলে ধরেন তিনি। ডব্লিউইএফের প্রেসিডেন্ট বোর্গে ব্রেন্ডে সম্মেলনে স্বাগত ভাষণ দেন। তারপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জানি না এই মহামারি কতদিন থাকবে। তবে ইতিমধ্যেই এটি অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সমাজকে সঠিক পথে আনতে হবে। এই ক্ষত এবং ভয় থেকে জনগণকে বেরিয়ে আসায় সহযোগিতা করতে হবে এবং সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলির পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে।’

বিশ্ব যে জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার মোকাবিলায় তিন পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করছেন। জানিয়েছেন যে এই ধরনের মহামারির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগের প্রয়োজন পড়বে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বে মানব কল্যাণের জন্য নতুন চিন্তার প্রয়োজন পড়বে, অসমতা মোকাবিলা, গরিবদের সহযোগিতা এবং আমাদের অর্থনীতিকে কোভিড-১৯ পূববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কেন না এই মহামারির দরুণ সমাজে দারিদ্র এবং অসমতা দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। আমাদের জি-৭, জি-২০ এবং ওইসিডি থেকেও শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রয়োজন। জাতিসংঘের নেতৃত্বে বহুমুখী ব্যবস্থাটিকে এগিয়ে আসতে হবে।’

তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান কৌশল ও কৌশলগত সাহায্যের জন ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। কেন না বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা, কর্ম ও উৎপাদন ব্যবস্থার রূপান্তর প্রত্যক্ষ করছে। তাঁর চতুর্থ প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অভিবাসী শ্রমিকদের বোঝা ও দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী একটি অর্থবহ কৌশল অবলম্বন করা উচিত। পরিযায়ী শ্রমিকরা খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চাকরিহীনতা যেটা দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকেও ঝুঁকির মুখে ফেলছে।’ পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতে আরও ভাল প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী সমাধান প্রণয়নের আহ্বান জানান। বলেন ‘এই মহামারি চলাকালীন আমরা বিভিন্ন ডিজিটাল যন্ত্রাংশ এবং প্রযুক্তিকে কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়েছি। যার মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সংক্রমণ খুঁজে বের করা। যাতে করে ভবিষ্যতের জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়, আমরা বিভিন্ন উদ্ভাবনীমূলক সমাধানও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.