সারা ভারত যখন করোনা মহামারীর সাথে লড়াইতে ব্যস্ত, তখন পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে কি নতুন করে বোনা হচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদের পটভূমি ?
সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এরাজ্যে আশানুরূপ ফল করলেও, উত্তর বঙ্গে বিজেপির সাফল্য আশাতীত। একমাত্র একটি আসন ছাড়া উত্তর বঙ্গের সবকটি লোকসভা আসনই বিজেপির ঝুলিতে। রাজ্যে মোট ১৮ আসনে জয়লাভ করে বিজেপি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
বিশেষ করে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্লজ্জ সংখ্যালঘু তোষণ পুরো রাজ্য এর সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষের মনে যে হতাশার সৃষ্টি করেছে তা থেকে উত্তরণের আশায় মানুষ বিজেপি কে আঁকড়ে ধরতে চাইছে এবং হিন্দুত্বের যে চোরাস্রোত পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মনে বইছে, তাতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে যে তা সুনামী হয়ে তৃণমূলের ভরাডুবির কারণ হবে, তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে।
বসে নেই মাননীয়া মমতা ব্যানার্জি। যেমন ডেকে আনা হয়েছে পলিটিক্যাল স্ট্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরকে। হিন্দু আর অহিন্দু ভোটের এই বিভাজন কে বানচাল করতে হিন্দু ভোট ভাগের খেলায় নেমেছে তৃণমূল। আসরে নামানো হয়েছে কয়েকজন কুশীলবকে।
প্রথমজন, অধ্যাপক গর্গ চ্যাটার্জি ও তার সংগঠন বাংলাপক্ষ। দেশভাগ তথা বামপন্থী জমানায় পুঁজিপতি বিরোধীতা প্রভৃতি কারণে বাঙ্গালী ক্রমাগত বাণিজ্যবিমুখ হয়েছে আর অর্থনৈতিক সূত্র মেনেই সে স্থান পূরণ করেছে অবাঙ্গালী ব্যবসায়ীরা। একেই ইস্যু করে তুলছে গর্গ চ্যাটার্জির বাংলাপক্ষ। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিভিন্ন ছুতোয় বাঙ্গালী অবাঙ্গালী বিভেদ প্রখর করে তুলছে।
প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং শাসকদল ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন চ্যানেলে তার বক্তব্য কিছু মানুষ কে বিপথে চালনা করছে, ফলে প্রখর হচ্ছে বাঙ্গালী অবাঙ্গালী বিভেদ। এ রাজ্যে আগে থেকেই অবাঙ্গালী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজেপির প্রভাব থাকায় তারা এও প্রচার করছে যে এ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে আখেরে লাভবান হবে ঐ অবাঙ্গালী ব্যবসায়ীরা এবং বাঙ্গালীর অবস্থা শোচনীয় হবে। প্রচারের আতিশয্যে চা দোকানের আড্ডায় তৃণমূলের বদলে বিজেপি চাই এ আলোচনা চললেও , আলোচনার শেষে স্থান পাচ্ছে ঐ অবাঙ্গালী ব্যবসায়ীদের বাড়বাড়ন্ত এর গর্গীয় ত্বত্ত। কলকাতা, হাওড়া, আসানসোল, দূর্গাপুর প্রভৃতি এলাকায় এই প্রচার একটু একটু করে হাওয়া পেতে শুরু করেছে ।
সর্বভারতীয় প্রায় প্রতিটি চ্যানেলেই আজকাল তৃণমূল অনুপ্রাণিত হিসেবে গর্গ চ্যাটার্জি কে দেখতে পাওয়া যায়। তিনি রাজ্য ব্যাপী একজোট হওয়া হিন্দু ভোট ভাগাভাগির খেলায় তৃণমূলের অন্যতম ভরসা হিসেবেও ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন। বিভিন্ন সভা , সমিতিতে তার বক্তব্যে তিনি সেটা প্রমাণও করে থাকেন।
রাজ্যে কয়েকপুরুষ ধরে বসবাসরত মারোয়াড়ি আর গুজরাটি সমাজই তার আক্রমণের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে। গত মঙ্গলবার, রিপাবলিক টিভি চ্যানেলের একটি লাইভ বিতর্ক চলাকালীন তিনি খোলাখুলি ভাবেই মারোয়াড়ি সম্প্রদায়কে অসৎ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন মারোয়াড়ি সম্প্রদায় স্বভাবতঃই অসৎ এবং কালোবাজারি করেই তারা মুনাফা অর্জন করেন। এই বিতর্কসভা শেষ হতেই সারা ভারতে এই বিতর্কের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় এবং দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।
ক্রমাগত তা ব্যাপক আকার ধারণ করে ফেসবুক, ট্যুইটার ও অন্যান্য সোশাল নেটওয়ার্কিং মাধ্যমে। বাংলার বাইরেও এক বিরাট সংখ্যক বাঙ্গালী বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত আছেন। এমতাবস্থায় তৃণমূলের অন্দরমহলেই এ নিয়ে প্রচন্ড সমালোচনা শুরু হয় এবং শেষে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামানো হয় মহুয়া মৈত্রকে।
মাননীয়া সাংসদ ট্যুইটার এ ব্যাপারে রিপাবলিক টিভিকেই একহাত নেন এবং বলেন গর্গ চ্যাটার্জি তাদের প্রবক্তা নন এবং রিপাবলিক টিভি অন্যায়ভাবে গর্গ চ্যাটার্জির বক্তব্য কে অপব্যাখ্যা করেছে।
ইতিমধ্যে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও ট্যুইট করে বলেন এ বক্তব্য তৃণমূল সমর্থন করে না । কিন্তু এই পদক্ষেপের পরেও সারা ভারত তথা বিশ্বের মানুষের কাছে বাঙ্গালীর যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলো তার দায় কিন্তু এই গর্গ চ্যাটার্জির মতো লোকদের যে বা যারা প্রশয় দেয় তাদের ওপরেই পড়বে। এই বঙ্গ কবিগুরুর, বিবেকানন্দের। ভারতাত্মার প্রকৃত সন্ধান তারাই পেয়েছিলেন। “দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবেযাবে না ফিরে-এই ভারতের, মহামানবের সাগরতীরে।”
https://www.opindia.com/2020/04/tmc-marwari-debate-republic-garga-chatterjee/amp/#click=https://t.co/ZXNkWWtxK1