একটা লাঠিতে ভর দিয়ে চলতেন মহারাজ,
শুধু বয়েসের ভার নয়, আরও অনেক কিছু ছিল তাতে;
এত মানুষের দুঃখ, কষ্ট, পাপ, ক্রোধ শুষে নেওয়ার হাত নীচের থেকে আরও নীচে…
‘যেথায় থাকে সবার অধম, দীনের থেকে দীন,’
শহরে, গ্রামে, মঠে মঠে…ছড়িয়ে যাওয়া সেই হাত। সেইদিন
একটা হাত শক্ত করে ধরেছিল৷ মৃত্যুভয় নয়, সে তো কবেই জিতে নিয়েছেন মহারাজ…
সন্ন্যাসীকে ত্যাগী হতে হয়। স্মৃতি, দ্বেষ, ঘৃণা, জন্ম, মন্ত্র, বেদ…
তাও মহারাজ শক্ত করে ধরেছিলেন একটা হাত, আইনের হাত নাকি অনেক লম্বা…
এই হিংস্র উন্মত্তদের কি থামিয়ে দেবেনা আইনের হাত, শাসনের?
ভেদাভেদ করেননি মহারাজ,
‘অহঙ্কার তো পায়না নাগাল যেথায় তুমি থাকো,’
শুধু হাতটা শক্ত করে ধরেছিলেন, আইনের পোশাক পরা সেই হাত,
যখন ছুঁড়ে ফেলল মহারাজকে পিশাচদের মাঝে,
একবার প্রত্যাঘাত করার চেষ্টাও করেননি মহারাজ…
কিছুক্ষণ পরে, যখন
লোকজন আস্তে আস্তে ফাঁকা হয়ে গেছে।
রাস্তায় পড়ে থাকা রক্ত কালচে হচ্ছে আস্তে আস্তে,
মহারাজ উঠে দাঁড়ালেন, লাঠি ছাড়াই…
ব্যথা অনুভূত হচ্ছেনা তাঁর আর,
‘দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল আলো‘
আস্তে আস্তে তাঁর মাথা ছুঁয়ে ফেলতে লাগল জঙ্গলের বড় বড় গাছের মাথা, পেরিয়ে যেতে থাকল মেঘের স্তর,
ক্রমশঃ তারার আলোর খুব কাছাকাছি গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন নীচে ফেলে আসা কৃশ শরীর টুকু…
একবার আওয়াজ দিয়ে বললেন- সবই ছেড়েছি, দিয়ে গেলাম শরীর টুকুও,
হে সন্তানসম দেশবাসী
তোমাদের চক্ষু উন্মীলিত হোক।
কৌশিক পাল (Kaushik Pal)