একসময় কমেডি বাংলা সিনেমাকে এক অপূর্ব সৌকর্যে উন্নীত করেছিল। সেই উৎকর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন দুই অভিনেতা। হরিধন মুখোপাধ্যায়, এবং তুলসী চক্রবর্তী।
হরিধন মুখোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৭ সালের ৭ নভেম্বর। তার আসল নাম দীনবন্ধু। তিনি কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে কাজ করতেন। অভিনেতা ছাড়াও তিনি ছিলেন অসাধারণ গায়ক। বিশেষত, তার দক্ষতা ছিল। উচ্চাঙ্গ সংগীতে। ভক্তিমূলক, আধ্যাত্মিক সংগীতও তিনি গাইতেন। লোকমুখে তিনি হরিধন নামেই পরিচিত ছিলেন এবং চলচ্চিত্রেও এই নামটিই ব্যবহার করতেন।
চলচ্চিত্র, সংগীত ও মঞ্চে অভিনয়ের জন্য। তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। অন্নপূর্ণা বোর্ডিং হাউস, হীরক রাজার দেশে, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী ইত্যাদি ছবিতে তার কৌতুক অভিনয় লোকের মন। জয় করেছিল। সত্যজিৎ রায়ের পরিচলনায় তিনি কাঞ্চনজঙ্ঘায় অভিনয় করেছিলেন। শ্রীমান । পৃথ্বীরাজ, ধন্যি মেয়ে, ফুলেশ্বরী ও মহাপুরুষ তার অভিনীত ছবি। সত্যজিৎ রায় হরিধন মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে বলেছিলেন, তিনি যদি আমেরিকায় জন্মাতেন তাহলে নিশ্চয়ই অস্কার পুরস্কার পেতেন।
তুলসী চক্রবর্তী ১৮৯৯ সালের ৩ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আশুতোষ চক্রবর্তী ভারতীয় রেলপথের কর্মচারী ছিলেন এবং সেই সূত্রে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করেছেন। তাই তুলসী কলকাতায় তার জ্যাঠার কাছে। থাকতেন। তিনি একসময় যাত্রার নেপথ্যগায়ক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন জীবিকার মধ্যে দিয়ে। গিয়েছেন। উত্তর কলকাতার হোটেলের কর্মচারী থেকে ব্রহ্মদেশের সার্কাস পার্টির ক্লাউন পর্যন্ত সব জীবিকাতেই তিনি ছিলেন সমান স্বচ্ছন্দ। সিরিয়াস ফিল্মের অভিনেতাও ছিলেন। তিনি। তুলসী কখনও মেকআপ ব্যবহার করতেন না। তার সাদা। ধুতি ও পৈতে পরা চেহারাটাই দর্শকের মনে চিরন্তন হয়ে আছে।
উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেন অভিনীত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এ তাঁর উল্লেখযোগ্য অভিনয়। ওই দুজনের সঙ্গে তিনি একটি রাত’ ও ‘চাওয়া পাওয়া’তেও অভিনয় করেছিলেন। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত পথের । পাঁচালিতে তাঁর অভিনয়। চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯৬১ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।
শেষজীবনে তিনি দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পর একটি টিভি অনুষ্ঠানে তার স্ত্রীকে দেখে দর্শকদের মনে হয়েছিল প্রকৃতই তিনি অত্যন্ত দারিদ্রের মধ্যে আছেন। দারিদ্রের জন্যই তুলসীকে তালতলা থেকে তার কর্মস্থল। শিবপুর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে হতো। তার অভিনীত ‘বিপাশা (১৯৬২) চলচ্চিত্রটি তার মৃত্যুর পর মুক্তি পায়। ‘কেরী সাহেবের মুন্সী’ (১৯৬১), ‘মায়ামৃগ’ (১৯৬০), “দীপ জ্বেলে যাই’ (১৯৫৯), “অযান্ত্রিক’, পরশপাথর ইত্যাদি তার অভিনীত চলচ্চিত্র।
এই ভাবে হরিধন ও তুলসী চক্রবর্তী এই দুই অভিনেতা জীবনেরই উপাদান। সিরিয়াস ও কমেডিকে একই সঙ্গে মিলিয়ে অসাধারণ সিরিও কমেডি অভিনয়ে উত্তীর্ণ করেছিলেন।
রূপশ্রী দত্ত