এই নেমেছে চাঁদের হাসি

এইখানে আয় মিলবি আসি,

বীণার তারে তারণ-মন্ত্র

শিখে নে তোর কবির কাছে।

আমি নটরাজের চেলা

চিত্তাকাশে দেখছি খেলা,

বাঁধন খোলার শিখছি সাধন

মহাকালের বিপুল নাচে।

দেখছি, ও যার অসীম বিত্ত

সুন্দর তার ত্যাগের নৃত্য,

আপনাকে তার হারিয়ে প্রকাশ

আপনাতে যার আপনি আছে।

যে-নটরাজ নাচের খেলায়

ভিতরকে তার বাইরে ফেলায়,

কবির বাণী অবাক মানি’

তারি নাচের প্রসাদ যাচে।

ব্রহ্মা নাট্যবেদ মর্তে প্রয়োগের জন্য ভরত মুনি কে নির্দেশ দেন। ব্রহ্মার আদেশ অনুসারে ভরত মুনি তাঁর শত পুত্রকে ভারতীয় সাত্ত্বতী আরভটি বৃত্তিতে শিক্ষা দেন। তারপরে ব্রহ্মা কৈশিকী বৃত্তিতে এর প্রয়োগ করতে বলায় মুনি জানান যে নারী ব্যতীত কেবল মাত্র পুরুষ দ্বারা এর প্রয়োগ অসম্ভব। তখন ব্রহ্মারমানসে অপ্সরাদের সৃষ্টি হয় ।


অপ্সরা সৃষ্টি হলে ভরত মুনি তখন গন্ধর্ব এবং অপ্সরাদের মাধ্যমে নাট্যবেদের সাহায্যে নাট্য ,নৃত্ত এবং নৃত্য প্রয়োগ করলেন। সেখানে সেই সময় উপস্থিত হন মহাদেব শম্ভু। তিনি সকল কলায় ,সকল সৃষ্টি শৈলীতে পরম জ্ঞানী। দেবরাজ ইন্দ্র মহাদেবকে অনুরোধ করলেন নৃত্যের পরম ব্রহ্ম শিক্ষাদান করার জন্য। মহেশ্বর শিব তখন নিজ ভক্ত তন্ডুর তান্ডব নৃত্যের শিক্ষা প্রদান করলেন ভরত মুনিকে।  গান এবং ভান্ড বাদ্যের তালে তালে তন্ডু তান্ডব নৃত্য প্রদর্শন করেছিলেন।

” Natraj ” ( Lord Shiva as Dancer ). Virupaksha Temple. Pattadakal. Chalukya Dynasty. 8th Century CE. Karnataka, India.


 নাট্যশাস্ত্র  মতে তান্ডব  শৃঙ্গার রস থেকে সৃষ্ট এবং প্রয়োগ সুকুমার এবং ললায়িত গতিবিশিষ্ট । শিব এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি এবং লয়ের কর্তা। তিনি কঠোর তপস্বী তাই তিনি যজ্ঞেশ্বর , তিনি স্বর্গীয় সঙ্গীতজ্ঞ তাই তিনি বীণাধর,  তিনি ভিক্ষা জীবী সকল ইন্দ্রিয় জয়ী তাই তিনি পরম ভিক্ষুক,  তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নর্তক তাই তিনি নটরাজ, বাংলায় তাঁর অপর নাম নর্তেশ্বর, তিনি সকল পশুদের দেবতা তাই তিনি পশুপতি।  তিনি সংহার রূপে রুদ্র , অনুগ্রহ রূপে মহেশ্বর, তিরোভাব রূপে সদাশিব।

সত সৃষ্টি  তান্ডব রচয়িতা

নটরাজ রাজ নমো নমঃ…

হেআদ্য গুরু শংকর পিতা

নটরাজ রাজ নমো নমঃ…

Brihadeshwara Temple is an ancient tmple at Thanjavur in Tamil Nadu. The tmple is dedicated to Lord Shiv in his dancing pose known as the Nataraj.The temple is also knwn as Rajeswara Temple

চোল রাজাদের সময়কালীন নটরাজ মূর্তিটি ভারতীয়নৃত্যের দার্শনিক ব্যাখ্যার প্রতীক । নটরাজ হলেন নটের রাজ।

Ancient engineering is just breath taking  with it’s marvellous structures and fine design as well. Nataraj temple in chidambaram TN.

  
 . “Because You love the Burning-ground, I have made a Burning-ground of my heart — That You, Dark One, hunter of the Burning-ground, May dance Your eternal dance.”

Ellora Kailash temple Nataraj painted panel

মহাদেব নটরাজ রূপে অপস্মর নামে এক অসুরকে দমন করেছিলেন । অপস্মর ছিল এক অদ্ভুত মায়াজালের অধিকারী। সে ত্রিলোকের সকল প্রাণীর স্মৃতি বিভ্রান্ত করতে সক্ষম ছিল। শিবে নটরাজ রূপে সেই অশুভ শক্তিকে বিনষ্ট করে জীবকুলকে রক্ষা করেছিলেন।

  
নটরাজ রূপে তিনি বরাভয় দান করছেন দক্ষিণ হস্তে, বাম হস্তে  প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ড , মুক্ত জটাজাল ধ্বংসের প্রতীক, বাম পদ উচ্চে উত্থিত  ও অঙ্গুলির অগ্র ভাগ নমিত। এর অর্থ তিনি অনুগ্রহ করছেন। ডান হাতে তিনি ডমরু বাজিয়ে আহত ও অনাহত পাদের সৃষ্টি করেন । কখনো তাঁর তান্ডব রূপ ,  কখনো তাঁর সংহার রূপ , কখনো তার শান্ত রূপ। তাঁর এই রূপের ছটা মহামায়া প্রকৃতির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের নটরাজ মূর্তি আনন্দ তাণ্ডব নৃত্যের প্রতিমূর্তি। বাংলা তথা সারা উত্তরভারতে পাই বীণাধর নটরাজের মূর্তি। বাংলায় এই নটরাজের নামই নর্তেশ্বর। এই রূপমূর্তির দশটি বা বারোটি হাত থাকে।  বারো হাতের দুই হাত মাথার উপরে তুলে তাল রাখছেন তিনি,  নিচে নন্দী ষাঁড়। নন্দীর পৃষ্ঠের উপর তিনি তান্ডব নৃত্য করছেন। এই তান্ডব নৃত্যটি ললিত আনন্দ তান্ডব ভঙ্গিমা যুক্ত। 

Gajasamharamurti, slaying the Elephant Demon, Kailasha temple in Ellora

নম নম নম নম

তুমি সুন্দরতম।

দূর হইল দৈন্যদ্বন্দ্ব,

ছিন্ন হইল দুঃখবন্ধ

উৎসবপতি মহানন্দ

তুমি সুন্দরতম।

লুকানো রহে না বিপুল মহিমা

বিঘ্ন হয়েছে চূর্ণ,

আপনি রচিলে আপনার সীমা

আপনি করিলে পূর্ণ।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিজিক্স ল্যাব The European Organization for Nuclear Research (CERN)। এখানে রয়েছে  মহাদেব শিবের একটি মূর্তি। এটিকে বলা হয় নটরাজ শিব। ভারত এই প্রতিমাটি উপহার দেয়। ২ মিটার উঁচু এই প্রতিমাটি ২০০৪ সালের ১৮ জুন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিজিক্স ল্যাবে উন্মোচন করা  হয়

কেন রাখা হয়েছে নটরাজ মূর্তি, একটি ফলকে লেখা রয়েছে তার ব্যাখ্যা। রয়েছে পদার্থবিদ ফ্রিৎজো ক্যাপ্রার বক্তব্য। তিনি বলেছেন, ‘কয়েক’শ বছর আগে কোনও ভারতীয় শিল্পী শিবের নৃত্যরত ছবি এঁকেছিলেন। আর সৃষ্টির নৃত্য বোঝাতে আমরা প্রযুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করি। আর এই সৃষ্টির ব্যাখ্যাই রয়েছে পুরাণে। এটাই একদিকে ধর্মীয় শিল্প আবার একদিকে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান।’

সেইসঙ্গে তিনি বিশ্লেষণ করে বলেছেন, ‘শিবের নৃত্য বিশ্বের সব অস্তিত্বের প্রতীকএকই সঙ্গে শিবই বুঝিয়ে দেন, বিশ্বের কোনও সৃষ্টিই স্থিতিশীল নয়, বরং সবসময় পরিবর্তনশীল আর আপেক্ষিকও বটে। আর আধুনিক পদার্থবিদ্যা বলে, শুধু জন্ম আর মৃত্যু দিয়েই সৃষ্টি আর ধ্বংস চিহ্নিত হয় না। অনেক অজৈব বিষয়ও জড়িয়ে থাকে।’ তিনি আরও লিখেছেন, শিবের নৃত্য আসলে একটি অতিপারমাণবিক বিষয়। সব অস্তিত্বের ভিত্তি আর সব প্রাকৃতিক বিষয়ের ইতিই বোঝায় এই নৃত্য।

CERN-এর এক গবেষকের ব্যাখ্যা হল, শিবের এই নৃত্য আসলে মনে করিয়ে দেয়, জগতে সবকিছুই পরিবর্তনশীল। কোনও কিছুর স্থিতি নেই। শিবের তাণ্ডব নৃত্যের মূর্তি রয়েছে ওই গবেষণাগারে। এক বিজ্ঞানী কার্ল সাগানও এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘হিন্দু ধর্ম হল বিশ্বের অন্যতম এক প্রাচীন ধর্ম যারা বিশ্বাস করে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে জন্মও মৃত্যুর সাইকেল চলছে।’

নাট্যশাস্ত্রে আছে শিব তন্ডুকে বলেছেন তান্ডব পূর্বক গীতকে আশ্রয় করে এই নৃত্য হোক । তান্ডব নৃত্য দেবস্তুতি আশ্রিত হওয়া চাই। শৃঙ্গার রস সম্ভবা হলে সুকুমার প্রয়োগ চাই , সুতরাং ভরতের মতে তাণ্ডবে যে সব  উদ্ধিত অঙ্গহার হবে এর কোন মানে নেই। তান্ডব নৃত্যে  বর্ধমানক  অর্থাৎ  – কলা , লয় , অক্ষর বৃদ্ধি এবং আসারিত অর্থাৎ – সংগীতের তাল রক্ষা , নৃত্য প্রয়োগ হবে।  শুদ্ধ প্রহারে আনদ্ধ বাদ্যের প্ৰয়োগ হবে। 

12th-century Nataraja at Shaivism Hindu temple Hoysaleswara arts Halebidu Karnataka India.


সন্ন্যাসী যে জাগিল ঐ, জাগিল ঐ, জাগিল।

হাস্যভরা দখিনবায়ে

অঙ্গ হতে দিল উড়ায়ে

শ্মশানচিতাভস্মরাশি, ভাগিল কোথা, ভাগিল। 

মানাসলোকে শুভ্র আলো

চূর্ণ হয়ে রঙ জাগাল,

মদির রাগ লাগিল তারে,

হৃদয়ে তার লাগিল।

আয় রে তোরা, আয় রে তোরা, আয় রে।

12th-century Nataraja on elephant head, Nandi at Shaivism Hindu temple Hoysaleswara arts Halebidu Karnataka India.

তান্ডব নৃত্যে করন , অঙ্গহার ইত্যাদি প্রয়োগ হয়। সংগীত রত্নাকরের মতে তাণ্ডবের তিনটি ভেদ  –  বিষম , বিকট এবং লঘু।  ঋজু ভ্রমনাদিকে তিনি বলেছেন বিষম। বিরুদ্ধ রূপবেশ অবয়ব ক্রিয়াদি যুক্ত হলে বিকট হয় ।অল্প করণমুক্ত হলে লঘু হয়।  শারদাতনয় বলেছেন তান্ডবের অঙ্গহার করণ উদ্ধত , বৃত্তি আরভটী। লাস্যের অঙ্গহার কোমল ও সুকুমার , বৃত্তি কৈশিকী । শারদাতনয়ের মতে মধুর ও উদ্ধত ভেদে লাস্য এবং তান্ডবের ভেদ নির্নীত হয়। 

Natraj   ( Lord Shiva Dancing )
Cave No. 1 at Badami, 6th Century CE


শিব হলেন স্বয়ং তান্ডব এবং শক্তি হলেন স্বয়ং লাস্য। লাস্য যখন তান্ডবে পরিণত হয় তখন আসে মহাপ্রল। আর তান্ডব যখন লাস্যে পরিনত হয় তখন হয় প্ৰারম্ভ। এই দুইয়ের মিলন যখন হয় তখন হয় সৃষ্টি সুখের উল্লাস ….তৈরি হয় মনের মধ্যে থাকা লয়ের থাকে তাল।


শারদাতনয়ের মতে তাণ্ডব ত্রিবিধ এবং লাস্য চতুর্বিধ । চন্ড, প্রচন্ড, উচ্চন্ড হচ্ছে তান্ডব । লতা , পিন্ডী, ভেদ্যক ও শৃঙ্খল হচ্ছে লাস্য । পন্ডিত শুভঙ্কর রচিত সঙ্গীত দামোদরের মতে তান্ডব হল দুই প্রকার – পেবলি এবং বহুরূপ।  পেবলি হল শূন্য অঙ্গবিক্ষেপ। বহুরূপে থাকে উদ্ধত ভাবের প্রকাশ। সঙ্গীত দামোদরের লাস্য দুই প্রকার স্ফুরিত ও যৌবত। নায়িকার ভিতরে ভাব রসের বিকাশকে স্ফুরিত বলা হয়। নর্তক নর্তকীর লীলাময় মধুর নৃত্য যৌবত বলে অভিহিত হয়। 

“Lord Shiva and Goddess Parvati. ” Virupaksha Temple. Pattadakal. Chalukya Dynasty. 8th Century CE. Karnataka, India.

তবে অনেক শাস্ত্রকারদের মতে তান্ডব সপ্ত প্রকার – আনন্দ, ত্রিপুরা, সন্ধ্যা , গৌরী , কালিকা , ঊর্ধ্ব ও সংহার। 

Temple shivaïte de Brihadishvara, Gangaikondacholapuram (Tamil Nadu), vers 1025 : détail d’une niche décorant la base du sanctuaire, Shiva Nataraja


তামিল সংগীত গ্রন্থ নটনাদীবাদ্যরঞ্জনম গ্রন্থে বারো রকম তান্ডবের উল্লেখ করা আছে। আনন্দ, সন্ধ্যা, শৃঙ্গার , উর্ধ , মণি , সংহার, উগ্র, ভূত , প্রলয় ,ভূজঙ্গ, শুদ্ধ।

Nataraja and Guru lineage are carved into stone above the doorway to the sanctum of Iraivan….

প্রলয়-নাচন নাচলে যখন আপন ভুলে

হে নটরাজ, জটার বাঁধন পড়ল খুলে॥

        জাহ্নবী তাই মুক্তধারায়    উন্মাদিনী দিশা হারায়,

            সঙ্গীতে তার তরঙ্গদল উঠল দুলে॥

    রবির আলো সাড়া দিল আকাশ-পারে।

শুনিয়ে দিল অভয়বাণী ঘর-ছাড়ারে।

        আপন স্রোতে আপনি মাতে,    সাথি হল আপন-সাথে,

            সব-হারা সে সব পেল তার কূলে কূলে॥

Ancient Khmer bas relief sculpture showing the god Shiva Nataraja, known as the Lord of Dance Preah Khan Temple, Angkor, Cambodia


ভরত মুনি দশ রকম লাস্যাঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন যথা – গেয়পদ, স্থিতপাঠ্য, আসীন, পুষ্পগন্ডিকা, প্রচ্ছেদক, ত্রিমূঢ় , সৈন্ধব, দ্বিমূঢ়ক, উত্তমোত্তম , উক্তপ্ৰত্যুক্ত। উপবিষ্ট হয়ে গীত পরিবেশনকে গেয়পদ বলা হয়। স্থিতপাঠ্য হল প্রাকৃত ভাষায় আবৃত্তিমূলক গান হতে হবে। চারিটি পদ তালে তালে গীত হলে তা আসীন। পুষ্পগন্ডিকাতে কন্ঠ ও যন্ত্রসংগীতের সহযোগিতা থাকবে। সুন্দর অঙ্গহারে তা নিষ্পন্ন করতে হবে। প্রচ্ছেদকে নৃত্যই প্রধান। ত্রিমূঢ়কে সুন্দর ললিত শব্দযুক্ত গীত থাকবে। এতে অঙ্গহার থাকবে না। সৈন্ধবে কোনো সুচারু অঙ্গহার বা রেচক থাকবে না । তবে বাদ্যযন্ত্র থাকবে। দ্বিমূঢ়কে চঞ্চপুট তালে মুখ প্রতিমুখ থাকবে। উত্তমোত্তমে হেলার প্রয়োগ হবে। উক্তপ্ৰত্যুক্তে সুন্দর বাক্যালাপ থাকবে এবং ক্রোধ ও ক্রোধের প্রশমিত রূপ থাকবে।

ধনঞ্জয়ের কাব্যে সৃষ্টির সমস্ত পদ্ধতি বিবৃত আছে হর পার্বতীর তাণ্ডব ও লাস্য নৃত্যের বর্ণনায় । কালিদাসের বর্ণনায় শিব ও পার্বতীর নৃত্য উদ্ধত ও সুকুমার রূপে বর্ণিত । শিব ও পার্বতীর এই দুই নৃত্যের মিলনের ফলেই কার্তিকের উরজা সৃষ্টি হয়েছিল। হর পার্বতীর নৃত্যের  বাদ্য যন্ত্র হলো মৃদঙ্গ, পটহ , ভান্ড ,ভেরি, দার্দর ইত্যাদি। হর পার্বতীর তান্ডব লাস্য নৃত্য নৃত্য সাহিত্যে  অর্ধনারীশ্বর রূপে  বর্ণিত হয়েছে। যা বর্ণিত হয়  প্রকৃত ও  পুরুষ রূপে
গৌড়ীয় নৃত্যে তান্ডব – লাস্য উভয়ের প্রভাব গভীর। নৃত্যের বোলের মধ্যে তান্ডব এবং লাস্যের যুগপৎ প্রভাব রয়েছে । গৌড়ীয় নৃত্য বোলকে গুরু এবং লঘু দুই ভেদে বিভক্ত করা যায়।

Stone statue of Nataraja in dance pose at Nandish Temple in Nandi Hills near Bengaluru, Karnataka, India, Asia


 মহাপ্রাণ বর্ণ গুলি দিয়ে গুরু বোল গুলি হবে এবং অল্পপ্রাণ বর্ণ গুলি দিয়ে লঘু বোলগুলি হবে । যেমন – গুরুবোল – ঝা খি না , লঘুবোল – তা খি না

স্তম্ভিত তমিস্রপুঞ্জ কম্পিত করিয়া অকস্মাৎ

          অর্ধরাত্রে উঠেছে উচ্ছ্বাসি

সদ্যস্ফুট ব্রহ্মমন্ত্র আন্দোলিত ঋষিকণ্ঠ হতে

          আন্দোলিয়া ঘন তন্দ্রারাশি।

পীড়িত ভুবন লাগি মহাযোগী করুণাকাতর,

          চকিতে বিদ্যুৎরেখাবৎ

তোমার নিখিললুপ্ত অন্ধকারে দাঁড়ায়ে একাকী

          দেখেছে বিশ্বের মুক্তিপথ।

তান্ডবাঙ্গের নৃত্যগুলির ক্ষেত্রে সাধারণত বিশাখ, মন্ডল ইত্যাদি স্থানকের প্রয়োগ হয় এবং লাস্যাঙ্গের ক্ষেত্রে আভঙ্গ – ত্রিভঙ্গ। এছাড়া এক পার্শ্বগত , বৈতান, জানুবর্তিতক ইত্যাদি স্থানক প্রয়োগ অধিক হয়। তান্ডবাঙ্গের অধিক উৎপ্লাবন যুক্ত এবং চৌক ভ্রমরী , আকাশ ভ্রমরী ইত্যাদির প্রয়োগ বেশি হয়।তান্ডব এবং লাস্যভেদে হস্ত – দৃষ্টি ইত্যাদি সবই বিবিধ প্রকার হয়। এই তান্ডব লাস্যের ভেদ বাঙ্গালার টেরাকোটা মন্দির ভাস্কর্যগুলিতেও ধরা পড়েছে। 

in a village near Adhiveeraramapattinam in Tamilnadu. This three feet tall bronze was retrieved while digging a soak pit in the village for draining waste water.


গৌড়ীয় নৃত্যের শাস্ত্রগ্রন্থ সংগীত দামোদরে তান্ডব লাস্য বর্ণিত আছে। 
সংগীত দামোদরে ১০৮ প্রকার করণ এবং ৩২ প্রকার অঙ্গহারের কথা জানা যায়।সংগীত দামোদরে করণ বিষ্ণুকরণ । গৌড়ীয় নৃত্যে তান্ডবাঙ্গের নৃত্যের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ – শিব নামাবলী, লাস্যাঙ্গের প্রকৃষ্ট উদাহরণ – অভিসারিকা নায়িকা , তান্ডব লাস্যের যুগপৎ উদাহরণ – অর্ধনারীশ্বর , দশমহাবিদ্যা ইত্যাদি।

[15/04, 02:08] Sree.paul4: Ardhanarishvara, 6th century; Government Museum, Jhalawar, Rajasthan, India.



তান্ডব দীপ আরাধনা বা আরতি নৃত্য বঙ্গের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় নৃত্য। মূলত প্রধান পুরোহিত এটি পালন করেন।প্রাচীন বঙ্গে পূজার অন্যতম অঙ্গ এই তান্ডব দীপ আরাধনা তান্ডবনৃত্যের সঙ্গে হত । এখনো ক্ষয়িষ্ণু ভাবে সেটি টিকে আছে। বাদ্য যন্ত্র হিসাবে শাক্ত – শৈব ক্ষেত্রে ঢাক, ঢোল , শঙ্খ ,মন্দিরা, কাঁসর ,ঘন্টা এবং বৈষ্ণব ক্ষেত্রে শ্ৰীখোল এবং মৃদঙ্গ ব্যবহৃত হয়। দুর্গা পূজা , শ্যামা পূজা , জগতধাত্রী পূজা  বা যেকোনো শক্তি পূজার সময় সাড়ম্বরে ঢাকের তালে আরতি করা হয়। আরতির সময় প্রতি ক্ষেত্রের বোল অত্যন্ত জটিল ও পৃথক পৃথক। বতর্মানে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে উক্ত আরতি নৃত্য হারিয়ে যাচ্ছে। 

জাগো হে রুদ্র, জাগো–

সুপ্তিজড়িত তিমিরজাল সহে না, সহে না গো ॥

          এসো নিরুদ্ধ দ্বারে,      বিমুক্ত করো তারে,

তনুমনপ্রাণ ধনজনমান, হে মহাভিক্ষু, মাগো ॥

©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ গৌড়ীয় নৃত্য – প্রাচীন বাংলার শাস্ত্রীয় নৃত্যধারা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.