প্রবন্ধ: ‘শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর’ প্রচারে গ্রেটা থুনবার্‌গদের ব্যবহার করবেন না

বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলন হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের দাভোসশহরে।আছেন বিশ্বের একেবারে প্রথম সারির অর্থনীতির দেশের শীর্ষনেতারা, শীর্ষশিল্পপতিরা। গুরুগম্ভীর ভাষণ চলছে।সেখানে কি আপনি আপনার স্কুলে পড়া মেয়েকে ভাষণ শুনতে পাঠাবেন? অবশ্যই নয়।আপনি যদি প্রতিনিধি হিসেবে সেই সম্মেলনে নিমন্ত্রিত হন, সঙ্গে কিশোরী কন্যাও যেতে চেয়েছ, তবে আপনি যাবেন সভাগৃহে, মেয়েকে পাঠাবেন তখন সুইজারল্যান্ডের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া এই সম্মেলনের ছবিতে দেখতে পাবেন এক স্কুল ছাত্রী শ্রোতাকে, স্যুট টাই পড়া বয়স্কদের মাঝে একটি আসনে বসে থাকা এক কিশোরীকে। মেয়েটির জন্য খুব খারাপ লাগছিল।সে কোন রাজনীতিবিদ নয়, কোন অর্থনীতিজ্ঞ বিস্ময় শিশু নয় –তবে তার কৈশোরের সুন্দর দিনগুলি ধূসর করতে কারা তাকে এখানে বসিয়ে রেখেছে? এই কিশোরীটিই সাম্প্রতিক পরিবেশ আন্দোলনের পরিচিত মুখ -গ্রেটাথুনবার্‌গ।

সুইডেনেরমেয়েগ্রেটাথুনবারগের জন্ম ২০০৩ সালে। সাম্প্রতিক বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার বাবা জানাচ্ছেন যে ছোটবেলা থেকেই গ্রেটা মানসিক সমস্যায় ভুগছে। গ্রেটার মানসিক সমস্যাটি খুব অপরিচিত নয়, যাকে আমরা সাধারণ ভাবে বলি অটিজম। এতে শিশুটিঅন্যান্যদের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না, কম কথা বলে, কিছু বিশেষ বিষয় নিয়েই বারংবার কথা বলে বা উৎসাহ দেখায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই সেটা অনেকটাই কাটিয়ে উঠে সফল জীবন যাপনও করে। গ্রেটা কথা বলত খুব কম, ইস্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে। যখন তার বয়স বারো, চিকিৎসক তার রোগটি এক ধরণের অটিজম বলে সনাক্ত করেন। গ্রেটার অটিজমের সমস্যার কথা তার মা ২০১৫ সালেই অনেককে জানিয়েছিলেন যাতে অন্য মা-বাবারাও এ বিষয়ে জানতে পারেন। এ সময় থেকেই গ্রেটার মাথায় চাপে জলবায়ু (Climate) পরিবর্তনেভবিষ্যত পৃথিবীর বিপন্নতার ভয়। সে বাড়িতেই তার বাবা মাকে তাদের জীবনযাত্রা পরিবেশ সম্মত করবার জন্য চাপ দিতে থাকে, তাদের প্লেনে চড়তে নিষেধ করে, তাদের কার্বন পদচিহ্ন কমানোর পরামর্শ দেয়, তাদের সম্পূর্ণ নিরামিশাষী (ভেগান) হতে বলে।সে বলে তার বাবা-মা’র জীবনযাত্রার ধরণের জন্য তার ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।ওরবাবা-মাজানিয়েছেনযেমানসিকসমস্যায়আক্রান্তমেয়েকেকিছুটাস্বস্তিদিতেমেয়েরপছন্দেরপরিবেশকর্মকেওনারামেনেনিতেবাধ্যহয়েছিলেন।বিবিসিকেদেওয়া সাক্ষাৎকারে তার বাবা সেভান্ত থুনবারগ বলেন যে পরিবেশের জন্য নয়, নিজেদের মেয়ের ভালোর জন্য বাবা-মা দুজনেই মেয়ের অনেক কথা মেনে নিয়েছেন। বলেছেন – আমার দুই মেয়ে, তাদের ভালো থাকাটাই আমার সব। বছর চারেকের এইসব সমস্যার পর একদিন গ্রেটা শুরু করল তার ‘জলবায়ুর জন্য ইস্কুল ধর্মঘট”।  ২০ আগস্ট ২০১৮ তে ইস্কুলে না গিয়ে সে এই শ্লোগানটির একটি পোস্টার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সুইডেনের সংসদ ভবনের সামনে। তার দাবী সুইডেন সরকার কার্বন উদ্গীরণ কমাক। তিন সপ্তাহ পর সুইডেনের জাতীয় নির্বাচন, সে ইস্কুলে না গিয়ে রোজ সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ জানাবে। গ্রেটার এই একক প্রতিবাদের সাহস নিশ্চয়ই প্রশংসাযোগ্য। তারপর যা হল তাইতিহাসবাইতিহাসগড়েতোলাহল।

অটিজমের সমস্যাক্রান্ত শিশুরা একটি বিষয় নিয়েই বারংবারকথাবলে, কোনএকটাবিষয়মাথায়ঢুকেগেলেতানিয়েমগ্নহয়েথাকে।১১বছরেরগ্রেটারমাথায়ঢুকলোপরিবেশদূষণেপৃথিবীশেষহবারভয়, অনেকটা‘শেষেরসেদিনভয়ংকর’গোছের’।সরাসরিসেরকমপরিবেশদূষণেরসমস্যাসুইডেনেরমতদেশেএকেবারেইনেই, গ্রেটাকোনদূষণেআক্রান্তওনয়।কিন্তুভয়ব্যাপারটাএকটুঅন্যরকম।আমরাভয়পাই, ভয়পেতেভালোবাসি, ভয়দেখাতেও।নইলেভূতেরগল্পেরবই, চলচ্চিত্রএতচলতনা।অর্থাৎভয়েরবাজারআছে।ভয়হয়বিপদেরচিন্তায়।কিন্তুবিপদমানেইকিভয়? ২০১৮ সালে ভারতে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের, গড়ে রোজ ৪১০ জন। তাহলে কি আমরা পথে বেরোব না?বিপদকে আমরা মাপি যে গাণিতিকমানদণ্ডে তাকে বলে ঝুঁকি (Risk)। সেইঝুঁকি কম হলে বিপদে আমি না যেন করি ভয়। কিন্তু জীবন অত গাণিতিক হিসাবে চলে না ফলে বিপদের গল্প বলে ভয় দেখানো এক শিল্প, আর্ট এবং ইন্ডাস্ট্রি। আর জনজীবনে সেই ভয় দেখানোর ফর্মুলা হচ্ছে ভয় = বিপদ + হৈচৈ । ভূতের থেকে ভবিষ্যতের ভয় কম নয়। প্রথম রেলগাড়ি, প্রথম বৈদ্যুতিক আলো – সব কিছুতেই মানুষকে ভয় দেখিয়েছে বিভিন্ন জনে, সংবাদমাধ্যমরাও। এখন চলছে পরিবেশের ভয়। যে দেশের ছেলেমেয়েরা কোনদিন বিশুদ্ধ জল খেয়ে দেখে নি, নোংরা পুকুর ছাড়া কোনদিন স্নান করে নি, ধোঁওয়া ছাড়া রান্নাঘর দেখে নি, তারাও ইস্কুলে বিশ্ব উষ্ঞায়নের ভয়ানক সব ভবিষ্যৎবাণী শুনে নতুন একপরিবেশেরভয়ে ভোগে।

এই ভয় থেকেই মানসিক সমস্যাক্রান্ত গ্রেটা তার বাবা-মাকে বলেছে পরিবেশ সম্মত জীবন যাপন করতে, কম শক্তি খরচ করতে, বিমানে না চড়তে। বিশ্বউষ্‌ঞায়নের ভয়ের বাজারে বড় প্রচারক আমেরিকার প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি পরিবেশের কাজে নোবেল জয়ী আল গোর। কিন্তু তাঁর নিজের বাড়ির বিদ্যুৎ খরচ গড় আমেরিকানের ২১ গুণ। আরেক মহা প্রচারক হলিউডের মহানায়ক ডিক্যাপ্রিও।  নিজের ব্যক্তিগত ভ্রমণে ব্যবহার করেন নিজের বিমান, যার মানে বাণিজ্যিক বিমানে (যা সবাই চড়েন) ভ্রমণের থেকে ৩৭গুণ বেশী কার্বন উদ্গীরণ, আছে কয়েকটি বিশাল প্রাসাদ যার বিদ্যুৎ খরচ অনেক। এগুলি গ্রেটাকে কেউ বলে নি।ফলে গ্রেটা তার বাবা-মাকে বলেছে পরিবেশ সম্মত জীবন যাপন করতে, কম শক্তি খরচ করতে, বিমানে না চড়তে। যারা পরিবেশের ভয়ের বাজারে লাভজনক ব্যবসা চান তারা লুফে নিলেন গ্রেটাকে।

একটি ইস্কুল ছাত্রী সংসদ ভবনের সামনেএকটি পোস্টার নিয়ে দাঁড়ালেই কি একটি আন্দোলন তৈরী হয়ে যায়? মাত্র চার মাস পরেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশ সম্মেলন, পোলান্ডে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রসঙ্ঘের ২৪তম জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে সেই ইস্কুল ছাত্রী গ্রেটা থুনবারগ হয়ে গেল অন্যতম বক্তা। নিশ্চয়ই ব্যাপারটা এত সহজে হয় নি। ২০ আগস্ট ২০১৮ তে যখন গ্রেটা থুনবারগসুইডেনের সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে তা নজর পড়লো ইঙ্গমার রেন্টঝোগের (Ingmar Rentzhog )। উনি হচ্ছেন সুইডিশ সংস্থা WeDontHaveTime –  (WDHT – আমাদের হাতে সময় নেই) – এর কর্ণধার। WDHTএকটিসুইডেনেনথিভুক্তপরিবেশসংক্রান্তসোশ্যালনেটওয়ার্ককোম্পানি।এটিরশেয়ারবাজারেছাড়াহয়েছে।এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিষয়ের বাজারে WDHTএকটিপ্রতিষ্ঠিতসংস্থা।WDHTবিশেষবাণিজ্যিক সাফল্যেরজন্যACQআন্তর্জাতিক পুরস্কার ২০১৮ পেয়েছে। ফেসবুকের অনুগামীসংখ্যা অনুযায়ী এই নতুন WDHTসংস্থারপরিবেশসংক্রান্তসংস্থাগুলিরমধ্যেষষ্ঠ।এহেনপরিবেশেরপ্রচারওবাণিজ্য সংস্থাWDHT২০আগস্ট ২০১৮ তারিখেইতাদেরফেসবুকেএইএকাকীগ্রেটারছবিদিয়েপ্রচারশুরুকরেদিল।চব্বিশ ঘন্টায় কুড়ি হাজার লোকের নেট সমর্থন (লাইক) পাওয়া গেল, পরদিন সংসদ ভবনের সামনে জুটে গেল গ্রেটার আরো কিছু সমব্যাথী। এক সপ্তাহেই ৬টি সুইডিশ দৈনিক সংবাদপত্র বড় খবর ছাপিয়ে দিল, এল টেলিভিশন। WDHT তৈরী করে ফেলল নতুন পরিবেশ আন্দোলনের মুখ, এমনকি গ্রেটা হয়ে গেল সেই কোম্পানির এক উপদেষ্টা (পরে সমালোচনার জন্য পদত্যাগ করে)। লন্ডনেরটাইমসপত্রিকার একটি লেখায় (১৮ আগস্ট, ২০১৯) এখন জানা যাচ্ছে যে গ্রেটার মায়ের সঙ্গে ইঙ্গমার রেন্টঝোগের আগেই দেখা হয়েছিল এবং অপেরা গায়িকা গ্রেটার মা জানিয়েছেন যে এই ধর্মঘটের এক সপ্তাহ আগেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তারপরইতিহাসবাইতিহাসগড়েতোলাহল।

প্রচারের ঝড়ে গ্রেটা পৌঁছে গেল রাষ্ট্রসঙ্ঘের সম্মেলন থেকে পশ্চিমইউরোপের দেশে দেশে, সম্বর্ধিত হলো বেশ কয়েকটি দেশের সংসদে, পোপ থেকে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রনেতা তার সঙ্গে দেখা করেছেন। এই কিশোরীর সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযান হল বিশেষ নৌকায় আমেরিকা গমন। কার্বন উদ্গীরণ কমাতে গ্রেটা বাবা-মাকে প্লেনে চড়তে দেন না, ফলে ৬জন সঙ্গী নিয়ে গ্রেটা আমেরিকাচললো অতলান্তিক মহাসাগর পেরিয়ে সৌরশক্তি চালিত নৌকায়। এর জন্য অবশ্য মোট কার্বন উদ্গীরণ হল অনেক বেশী, কারণ যারা এই নৌকা চালিয়ে আমেরিকা নিয়ে গেলেন তারা সবাই ফিরলেন প্লেনে। গত দেড় বছরে গোটা দশেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার এখন গ্রেটা থুনবারগের ঝোলায়। কিন্তু এত ভ্রমণের অর্থের যোগান নিয়ে রহস্য রয়েই গেছে।

কিন্তু গ্রেটা কী বললো বা করলো যার জন্য এত পুরস্কার? গ্রেটা কোন বিষ্ময় শিশু নয় যে ১৫ বছর বয়সেই জলবায়ু বিজ্ঞান নিয়ে নতুন কিছু বলছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে বিজ্ঞানীরা প্রায় একমত হলেও এর কারণ, প্রভাব, ব্যাপ্তি ইত্যাদি নিয়ে এখনও অনেক বিতর্ক, অনুসন্ধান চলছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কোন দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ একদিনের কোন সদিচ্ছার ব্যপার নয়, তার সঙ্গে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতি জড়িত। এরকম একটি জটিল সমস্যা বোঝার বয়স এখনো গ্রেটার হয়নি, সে এসব নিয়ে কিছু বলেও না। সে কেবল বলে চলেছে তার ভয়ের প্রচারকদের টেলিভিশনে, কাগজে বলা ভয় দেখানো কথামালা – শেষের দিন এগিয়ে এসেছে, সেজন্য দায়ী সব দেশের রাষ্ট্র নায়কেরা, আমাদের শৈশব, কৈশোর ধবংস করছো বড়োরা। অবশ্যই এসব নিয়ে মেতেছে পশ্চিম ইউরোপের আর আমেরিকার ‘লিবারেল’ মিডিয়া, বাকি দুনিয়ার কাছে পরিবেশ নিয়ে মাতামাতি এখনো অনেকটাই পশ্চিমি বিলাস। পূর্ব ইউরোপ, চীন, রাশিয়া, ট্রাম্প, পুতিন মায় এঞ্জেলা মার্কেল পর্যন্ত এই কিশোরীকে তার পরিবেশ নিয়ে উদ্যোগের প্রশংসা করেও মনে করেছেযে এই কিশোরীকে একদল মানুষ ব্যবহার করছে।

শিশুদেরব্যবহার করেমানুষেরভাবাবেগকেনিজস্বার্থেব্যাবহারনতুনকিছুনয়, বিভিন্নপেশায়প্রায়শঃইতাদেখাযায়।এখনএরআন্তর্জাতিকপ্রয়োগশুরুহয়েছে।২ সেপ্টেম্বর ২০১৫তে এলান কুর্দি নামের একটি ৩ বছরের শিশুর তুরস্কের সমুদ্র তটে মৃত অবস্থার ছবি প্রকাশ হয়। এই ছবি পশ্চিম ইউরোপীয় ভাবাবেগকে একেবারে উত্তাল করে দেয়। একটি শিশু মৃত্যুর এই ছবি দেখে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, জার্মানির অনেকেই মধ্য প্রাচ্যের শরণার্থীদের জন্য ইউরোপের সীমান্ত খুলে দেবার কথা বলা শুরু করেন এবং ইউরোপের  শরণার্থী ও সন্ত্রাসের সমস্যা আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে । যদিও পরে অভিযোগ আসে যে এই ছেলেটির বাবা একজন মানব পাচারকারী এজেন্ট এবং অতিরিক্ত লোকের বোঝায় তাদের নৌকাটি ডুবে যায়। এটিও অভিযোগ যে পরে মৃত ছেলেটির ছবি সাজিয়ে তোলা হয়। গ্রেটা থুনবার্‌গের পরিশ্রম, সাহসিকতার প্রশংসা করেই বলা দরকার, যে শিশুদের এভাবে ব্যবহার করা বন্ধ হোক। নইলে পৃথিবী জুড়ে আরো অনেক গ্রেটার শৈশব নষ্ট করবে ভয়ের ব্যবসায়ীরা। গ্রেটারা আরেকটু বড় হয়ে,পরিবেশ নিয়ে আরো অনেক কিছু পড়ে, জেনে আগামী দিনের পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় নিশ্চয়ই অগ্রণী ভূমিকা নেবে।

মোহিত রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.