অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র: বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত এনজিও পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর জরিপ করেছে, দায়িত্বজ্ঞানহীন মিডিয়া যাচাই না করেই তা প্রচার করছে

এর আগে গবেষণার কোনো রেকর্ড নেই এমন একটা এনজিও ভারতের (India) নির্মাণ শ্রমিকদের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন মূলধারার সংবাদমাধ্যম সেই গল্পটিকে নানা দিকে ছড়িয়ে দেয়।

মিডিয়া হাউজ গুলো কি প্রতিবেদটি যাচাই করেছে? না।

প্রতিবেদনটি কি সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে? হ্যাঁ

উপসংহার: এদের আচরণ প্রশ্ন তুলছে।

জন সাহস” নামে মধ্যপ্রদেশের একটি এনজিও সম্প্রতি এই সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের নিজেদের কথা অনুযায়ী এই এনজিও সামাজিকভাবে বঞ্চিত সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করে

এখন আমরা এদের সম্পর্কে বিশদে জানার চেষ্টা করি।

জন সাহসের অর্থের উৎস

অবাক করার বিষয় হলো জন সাহস এনজিওটি (NGO) বেশ মোটা পরিমাণে বিদেশী সাহায্য পায়। আপনারা এখানে সেটা যাচাই করতে পারেন (https://jansahasindia.org/f-c-receipts/)

এরা বছরের পর বছর ধরে কীভাবে বিদেশী অর্থ সাহায্য পেয়েছে তা এখানে দেওয়া হলো। এটা দেখার পর তো এদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেন এই “জন সাহসএনজিও (NGO) “খ্রিস্টান এইড” (Christian Aid) আর “ক্যারিটাস” (Caritas) -এর মতো সংগঠনের থেকে অর্থ পাচ্ছে? বিশেষত যেখানে এই সংগঠনগুলোর ধর্মান্তরকরণ ও খ্রিস্টান মিশনারি কাজকর্ম সবার কাছে সুপরিচিত?

পরিযায়ী নির্মাণ শ্রমিকদের উপর প্রতিবেদন

এই এনজিও এই প্রথম কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর আগেই বলা হয়েছিল মূলধারার মিডিয়া মুহূর্তের মধ্যেই এই গল্প সারা ভারতে ছড়িয়ে দেয়

৪২% শ্রমিকদের কাছে এক দিনের মতোও রেশন নেই: সমীক্ষা

হিন্দুতে প্রকাশিত খবর –

https://www.thehindu.com/news/national/42-of-labourers-dont-have-even-a-days-worth-rations-left-survey/article31273252.ece

প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের রেশন কার্ড নেই। তাদের মধ্যে ৯২.৫ % লকডাউনের (Lockdown) মধ্যে কাজ হারিয়েছে। :সমীক্ষা

নিউজ১৮.কম এ প্রকাশিত খবর

https://www.news18.com/news/india/four-out-of-ten-workers-have-no-ration-left-even-for-the-day-92-5-of-them-lost-work-survey-2566655.html

মিডিয়া হাউসগুলির এই আকস্মিক অতি সক্রিয়তার ফলে নিউজ ভারতী এই প্রতিবেদনটিকে যাচাই করে দেখতে চায়আর সেখানে তারা কী পেলো? না‚ এই প্রতিবেদনটি ছিলো নানা অসঙ্গতিতে ভর্তি। এই প্রতিবেদন বলছে যে লকডাউনের ফলে নির্মাণ শ্রমিকরা খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সমীক্ষার মতে ৪২% শ্রমিকদের কাছে এক দিনের মতোও রেশন নেই এবং তারা নিজেদের বাড়িতে আবার ফিরে যেতে বাধ্য হয়

প্রতিবেদন অনুসারে এই পুরো কাজটি চলে শ্রমিকদের সাথে দূরভাষের মাধ্যমে কথাবার্তায়। জন সাহসের কাছে ৬০‚০০০ জন শ্রমিকের তথ্য ছিলো। যার মধ্যে তারা নমুনা রূপে ৫০০০ জনকে বেছে নেয় ও শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩১৯৬ জনের কাছে তারা পৌঁছাতে পারে। (পৃ. ৮)

প্রতিবেদনটি পড়ার সময় আমরা এতে কিছু অনিয়ম দেখতে পাই‚ যা দিয়েই এই সম্পূর্ণ প্রকল্পেরর উদ্দেশ্য সবার সামনে পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে

প্রথমেই শুরু করা যাক যে এই ৬০‚০০০ কর্মীর তথ্য কোথা থেকে এসেছে? তারা এটা কীভাবে সংগ্রহ করলো? কখন করলো? প্রতিবেদন অনুযায়ী‚ সেই তথ্যতে নাম এবং চলভাষ নম্বর ছিলো। যেহেতু এই কর্মীরা অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকে এসেছে‚ সেক্ষেত্রে এই ধরনের তথ্য পেতে গেলে নিশ্চয়ই কোনো উৎস থেকে পেতে হবে। আর প্রশ্নটা হলো এই ধরনের উৎস থেকে তথ্য নিয়ে গবেষণা চালানো কি ঠিক হয়েছে? সেক্ষেত্রে অনেক ধরনের সম্ভাবনা থেকে যায়‚ যেমন শ্রমিকরা হয়তো নিজেদের বাড়ি ফিরে গেছে। কিংবা হয়তো কৃষিক্ষেত্র বা অন্য কোথাও কাজ করতে চলে গেছে।

পরের যে জিনিসটি আরও সন্দেহজনক‚ তা হলো তারা এই ৫০০০ জনকে বেছে নিলো কীভাবে? কেন নিলো? বাকিদের কি সমস্যা ছিলো? তথ্যকে হঠাৎ এইভাবে ভাগ করে নেওয়ার কারণ কি? লিঙ্গ, বয়স, ভৌগোলিক অবস্থান? বা অন্যকিছু? একমাত্র যে উত্তর পাওয়া যাচ্ছে তা হলো এরা উত্তরপ্রদেশ‚ মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের শ্রমিক। এখানেই রয়েছে যথাযথ উপস্থাপনের প্রশ্ন‚ এই তথ্য যার উত্তর দিতে ব্যর্থ! এই তিনটে মাত্র রাজ্য সম্পূর্ণ ভারত তো দূরের কথা‚ শুধু মধ্যভারতকেও কখনোই উপস্থাপন করতে পারে না। উত্তরদাতাদের বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা বড়সড় ত্রুটি।

এই সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে এটি সাড়ে পাঁচ কোটি শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব করেছে(পৃ. ১৬)। আর এখানেই আছে বৈপরীত্য! তারা মাত্র ৩১৯৬ জনের তথ্য এক জায়গায় করেছেঅর্থাৎ কিনা মাত্র ০.০০৫৮%! এই পদ্ধতিটি যদি সন্দেহের উদ্রেক না করে তো কোন তথ্য করবে?

এই প্রতিবেদনটিতে দেওয়া অনুসন্ধান এবং পরামর্শ যথেষ্টই বৈপরীত্যপূর্ণ।

(১) বিশদে গেলে দেখা যাচ্ছে যে (১) প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে ৯৯.২% শ্রমিকের আধার কার্ড আছে৮৬.৭% এর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে (অথবা প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা অ্যাকাউন্ট আছে)। ৬১.৭% এর রেশন কার্ড‚ ২৭.৩%এর বিপিএল কার্ড২৬.৯% এর মনরেগা কার্ড‚ ১৮.৮% এর বিওসিডাব্লিউ কার্ড ৪.৩% এর অন্ত্যোদয় কার্ড রয়েছে (পৃষ্ঠা ১৭)। কিন্তু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে হয় তাদের এই সুবিধাগুলো নেই অথবা তারা এই সম্পর্কে জানে না।

(২) এখন প্রতিবেদনের অন্য এক জায়গায় দেখা যাচ্ছে যে (২) সেখানে দাবি করা হয়েছে যে সরকার ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা ঘোষণা করেছে। এই ত্রাণের লক্ষ্য হলো পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের (পিডিএস) মাধ্যমে রেশন দিয়ে তাদের সাহায্য করা। এর ফলে সব মিলিয়ে ৮০ কোটি মানুষ সুবিধা পাবে। উপকারভোগীরা ৩ টাকা/কেজি দরে চাল‚ ২ টাকা/কেজি দরে গম ও ১ টাকা/কেজি দরে শস্য হিসাবে প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য পাবে।

আমরা যদি (১) ও (২) যোগ করি তাহলে আমরা দেখছি যে ৬১.৭% রেশন কার্ডধারী ও ২৭.৩ % বিপিএল কার্ডধারী রয়েছেন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে হচ্ছে ৮৯%। মানে মোট সুবিধাভোগী হচ্ছেন ৮৯% মানুষ।

(৩) আবার বিওসিডব্লিউএর ক্ষেত্রেও একই কথা। দ্য বিল্ডিং অ্যান্ড আদার কন্সট্রাকশন ওয়েলফেয়ার ফান্ড (বিওসিডব্লিউ) এর মাধ্যমে এখানে ৩২‚০০০ কোটি টাকার সুবিধা (৩) ঘোষণা করা হয়েছে। (ভূমিকার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ)

এখানে দেখা যাচ্ছে যে (১) এবং (৩) এর মাধ্যমে ১৮.৮% বিওসিডব্লিউ হোল্ডার ৩২‚০০০ কোটি টাকার সুবিধা পাবে।

(৩) এখানে দেখা যাচ্ছে যে কোনো না কোনো ভাবে ৫৫ মিলিয়ন মানুষ প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা বা বিওসিডব্লিউ বা রেশন কার্ড বা বিপিএল কার্ড অথবা মনরেগার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন। কেন গবেষকরা এগুলো খুঁটিয়ে দেখে না? কেন তাদের সুপারিশগুলো এত বৈপরীত্যে ভরা? এটা তো পরিষ্কার যে যদি কোনো শ্রমিক একটি পরিষেবা না পায়, অপরগুলো তার জন্যে আছেই। সরকার (রাজ্য ও কেন্দ্র) নিশ্চিত করেছে যে কেউই যেন উপকৃত হওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়।

উপরে অল্প কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো মাত্র। আপনি যদি বিশদে যান তবে দেখতে পাবেন এই প্রতিবেদনটি এই জাতীয় অসংখ্য অসঙ্গতিতে পরিপূর্ণ। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের জালে জড়িয়ে গেছে। এখন ভুল ধরিয়ে দেওয়া আমাদের কাজ‚ উত্তর দেওয়া বা না দেওয়া তাদের ব্যাপার। তবে এগুলো কিন্তু এই প্রতিবেদনের সত্যতা সম্পর্কে বড়সড় প্রশ্ন তুলে ধরে।

অমল পাওয়ার

(প্রতিবেদনটি ভারতী নিউজে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল )

https://www.newsbharati.com/Encyc/2020/4/11/jan-sahas-survey-full-of-misinformation.html

https://www.organiser.org/Encyc/2020/4/11/Foreign-Funded-NGO-spreads-myths-through-surveys-full-of-anomalies.html

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.