গাছ বোঝাই ট্রাক্টর উল্টে মৃত্যু হল দুই স্কুল ছাত্রের, আহত আরো চার। তৃণমূল(tmc) নেতার চোরাই কাঠের ব্যবসার জেরেই ছেলেদের মৃত্যু, অভিযোগ মৃতের পরিবারের সদস্যদের। শুক্রবার সকালে এই ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় দক্ষিন দিনাজপুরের হরিরামপুর ব্লকের বৈরাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিডোবা এলাকায়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দুই ছাত্রের নাম দীপক মাহাত (১৭) এবং চন্দন মাহাত (১৫)। মৃত ও আহতরা সকলেই পাটন এলাকার বাসিন্দা। আহত ছাত্ররা বর্তমানে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসা ধীন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক রয়েছে। মৃত দীপক মাহাত এবারে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী, বাকীরা সকলেই মহিন্দ্র হাইস্কুলেরই ছাত্র। সকালে ঘটনার পরেই এলাকায় পৌঁছয় হরিরামপুর থানার পুলিশ। চোরাই গাছগুলি সহ ঘাতক ট্রাক্টরটিকেও আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার বাসিন্দা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি আনসার আলী এবং ভজন মাহাতো মাছ ধরার নাম করে বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় ৯ জন কিশোরকে ডেকে নিয়ে যায়। অভিযোগ রাতভর বোগলাহার এলাকায় সরকারি গাছ কেটে চোরাই ভাবে সেগুলি সকালে ট্রাক্টরে করে আনা হচ্ছিল পাটন এলাকায়। পথে হাতিডোবা এলাকায় একটি ফরেস্টের কাছে বাঁক নিতেই দ্রুত গতিতে থাকা ট্রাক্টরটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সাথে ধাক্কা মারলে উল্টে যায়। যেখানেই গাছের গুঁড়ির নীচে চাপা পড়ে যায় ওই ছাত্ররা। একই সাথে সেখানে ভেঙ্গে পড়ে একটি মৌমাছির চাকও। বিষয়টি দেখেই স্থানীয়রা ছুটে এসে প্রথমে আগুন জ্বালিয়ে মৌমাছিদের তাড়ায়। আর তারপরেই গাছের গুঁড়ির নীচে চাপা পড়ে যাওয়া ওই কিশোরদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। ঘটনা স্থলেই মৃত্যু হয় দীপক মাহাতর। বাকিদের তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। যেখানেই মৃত্যু হয় অপর স্কুল ছাত্র চন্দন মাহাতোর।
বৈরাট্টার পাটন এলাকার বাসিন্দা ভবেশ মাহাতোর একমাত্র ছেলে দীপক। পরিবারের শেষ সম্বল হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ভবেশবাবু। দীপকের মা সাবিত্রী মাহাতও ছেলের কথা মনে করে মাঝে মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠছেন। এমন ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা আনসার আলী এবং ভজন মাহাতর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন তাঁরা।
মৃত চন্দন মাহাতোর মা বেলা মাহাতোও একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। নাবালক ছেলেদের কাজে লাগিয়ে ওই অভিযুক্তদের এমন চোরাই কারবার বন্ধের পাশাপাশি তাদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন প্রায় সকলেই।
মৃত ছাত্রদের মা বেলা মাহাতো, সাবিত্রী মাহাতো এবং ভবেশ মাহাতোরা বলেন, তাদের দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে ওই অভিযুক্তরা নাবালক ছেলেদের দিয়ে অন্যায় কাজ করাত। তাদের উপযুক্ত শাস্তি চান তারা।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য জয়ন্তী মাহাতো জানিয়েছেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। পুলিশ প্রশাসনকে এই বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ করতে হবে। অভিযুক্তরা যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে।