লকডাউনে থেমে গিয়েছে বাঙালি-খাসিয়া দ্বৈরথ : তথাগত রায়

বাড়ি ফিরেই নোটবই খুলল অমিত রায়(Amit Roy)। নোটবইয়ের পাতায় খসখস করে লিখল—“পথ আজ হঠাৎ এ কী পাগলামি করলে! দু’জনকে দু’-জায়গা থেকে ছিঁড়ে এনে আজ থেকে হয়তো এক রাস্তায় চালান করে দিলে।” শিলংয়ের পাহাড় শুনলেই মনে ভেসে ওঠে শেষের কবিতার এই সব কথা। জানেন কি, যেখানে পথের চড়াই-উৎরাই মাঝে মাঝে পাগলামি করে, পথের কোথাও কোথাও পাকদণ্ডী দেখলে গা শিউরে ওঠে, অমিত-লাবন্যর সেই শিলংয়ের পাহাড়ি এলাকায় স্থানীয় খাসিয়া উপজাতিদের দৌরাত্ম্যের জন্য ক‘দিন আগে বাঙালিরা চরম সঙ্কটে পড়েছিলেন? মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে বললেন, “বুঝতেই পারছ, ভোটের রাজনীতি। আমি রাজ্যপাল হিসাবে সরকারকে এ ব্যাপারে কড়া হাতে হাল ধরার নির্দেশ দিয়েছিলাম। এই লকডাউনে (lockdown) এখন সমস্যাটা দূর হয়েছে।”সেন্ট লরেন্স হাই স্কুল, শিবপুর বিই কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইন) প্রাক্তনী তথাগত বাবু দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি পেয়েছেন। পেয়েছিলেন জেবিএনএসটিএস বৃত্তি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন ২০ বছর। ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস পরীক্ষার অন্যতম স্থানাধিকারী হয়ে ১৯৬৬ থেকে চাকরি করেন রেলের বিভিন্ন মর্যাদার পদে। তাঁর লেখা কিছু বই সমাদৃত হয়েছে পাঠকমহলে। ২০১৫-তে ত্রিপুরার রাজ্যপাল এবং ২০১৮-তে মেঘালয়ের রাজ্যপাল হন তথাগতবাবু। তিনি জানালেন, “আগের মতই প্রায় চার কিলোমিটার রোজ সকালে হাঁটি। লকডাউনে বাড়ির কাজের লোক না আসা বা খাদ্যসঙ্কটের সমস্যাটা আমাকে স্পর্শ করেনি। শিলংয়ের রাজভবনে প্রচুর লোক লস্কর। তবে, কিছু পরিবর্তন তো হয়েছেই।”লকডাউনের আগে পাঁচ-ছ’টা দৈনিক আসত। এখন আসছে দুটি। তাও একটু পাতলা হয়ে গিয়েছে। এমনিতে প্রতিদিন দু-একটা করে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে যেতে হত। দিল্লা-কলকাতা বা অন্যত্র যেতে হত। এখন সে সব করতে হচ্ছে না। সাক্ষাৎপ্রার্থীরা আসছেন না। সুতরাং বাড়তি কিছু সময় পাচ্ছি। বরাবরই পড়ি। এখন আরও বেশি পড়ছি। সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘মুসাফির‘, ভারতীয় রাজনীতি নিয়ে ক্রিস্টফ জাফলোর গবেষণামূলক বই এগুলি পড়ছি। আত্মজীবনী লিখছি।“এই সঙ্গে আছে গান শোনা।” কী ধরণের গান বেশি পছন্দ করেন? তথাগতবাবুর জবাব, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত, রজনীকান্তের গান।“ বিশাল রাজভবনে পরিবার বলতে স্ত্রী। দুই কন্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তথাগতবাবুর কথায়, “ওদের একজন থাকে নিউজার্সিতে। তার এক ছেলে এক মেয়ে। আর একজন কানেটিকাটে। তার একটি বাচ্চা। ওদের জন্য গভীর চিন্তা হয়। কারণ করোনার (corona)প্রকোপ ওখানে অনেক বেশি। দু’বেলা খোঁজ নিচ্ছি আমরা।” কী মনে হচ্ছে? কতদিন চলতে পারে? প্রভাবই বা কিরকম হবে? তথাগতবাবুর উত্তর, “এ সবের কিছুই বলতে পারছি না। তবে বেশ কিছুদিন ভোগাবে। আর প্রভাব সব ক্ষেত্রে অনেকটাই পড়বে। দেখা যাক! আগে রোগটা নিয়ন্ত্রণে আসুক!”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.