“যেখানে কাজ করতাম সেখানে খাবার না পেয়ে মরতে হতো অথবা এই যে বাড়ি যাচ্ছি পায়ে হেঁটে সেখানে গিয়েও বুঝি অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।” কোয়ারেন্টাইন এর সিল হাতে নিয়ে শিলিগুড়ির সালুগারা থেকে বালুরঘাট যাওয়ার উদ্দেশ্যে একদল শ্রমিক হাঁটতে হাঁটতে বুধবার এসে পৌছালো ইসলামপুরে। এখানে এসে সাংবাদিকদের কাছে এমনই অনুভূতির কথা তুলে ধরল ওরা। জানালো, এই অসময়ে ঠিকাদাররাও তাদেরকে দেখছেন না ।
একদিকে তীব্র রোদ আর অন্যদিকে পেটে খাবারের দানা নেই। প্রায় অভূক্ত অবস্থাতেই বেশ কয়েকদিন ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে ওরা। বুধবার দুপুরে ইসলামপুর পেরিয়ে গেল ঠিকাদারি সংস্থার অধীনে কর্মরত শ্রমিকেরা। বালুরঘাট এবং ওই জেলা সংলগ্ন এলাকায় ওদের ঠিকানা ।
তাদের শারীরিক এবং মানসিক কোন অবস্থাই ভালো নয়। কয়েকদিন থেকে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত ।বাড়ি এখনো বহু ক্রোশ দূরে। পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে সেখানে পৌঁছে আদৌ বেঁচে থাকবেন কি না তা জানা নেই। তবুও মৃত্যু হলে তাদের বাড়িতেই হোক। এমনটাই জানিয়েছেন এদিন শ্রমিকরা ।
কারণ তাদের মা-বাবা এবং স্ত্রী পুত্ররা দুশ্চিন্তা নিয়ে অপেক্ষা করেছেন তাদের জন্যই। পথে ঘাটে গাড়ি বা বাস নেই তখন পায়ে হাঁটা ছাড়া অন্য কোন রাস্তা খোলা নেই তাদের। কিন্তু হাতে কোয়ারেন্টাইন এর সিল লাগিয়ে শ্রমিকগুলো এলাকা পেরিয়ে যাচ্ছে।এবিষয়ে ওদের দিকে দৃষ্টিপাত করছে না পুলিশ প্রশাসনের কেউই ।
এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এলাকায়। যাদের চৌদ্দ দিনের জন্য হোম কোয়ারান্টিনে থাকার কথা বলা হয়েছিল তারা এখন হেঁটে হেঁটে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছে। এই যাত্রা আদৌ কি ঝুঁকিপূর্ণ নয়? এলাকার মানুষরা পুলিশ ও প্রশাসর কাছে জানতে চেয়েছেন এর উত্তর ।
সমাজকর্মী মহম্মদ মনসুর জানান, তারা এ দিন প্রতিদিনের মতন পেট্রোল পাম্পে আটকে থাকা বিভিন্ন গাড়ির চালকদের খাবার সরবরাহ করতে এসেছিলেন। এখানে এসে শুনতে পান ঘটনা। অভুক্ত শ্রমিকদের মধ্যে জল ও প্রয়োজনীয় খাবার এদিন তারা তুলে দেন। ইসলামপুরের ভারপ্রাপ্ত মহকুমা শাসক খুরশিদ আলম জানান, এই ধরনের ঘটনা তার জানা নেই। খোঁজ পেলে খতিয়ে দেখা হবে ।