আজ রামনবমীর পুন্য অবসর। পুরো দেশ আজ এক অদ্ভুত বাতারবনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আজ ভারত তথা সমগ্র বিশ্বে অশুভ শক্তি জাগরিত হয়েছে এবং তা মানব সমাজকে ধ্বংস করতে উদ্ধত হয়েছে। ভগবান শ্ৰী রাম , অশুভ শক্তির বিনাশ করে মানব সমাজ তথা সমগ্র প্রাণী কুলকে রক্ষা করেছিলেন। সারা বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসের ভয়ে ভয়গ্রস্থ হয়ে উঠেছে। উক্ত ভাইরাস এবং তার থেকে হওয়া রোগ একটি সংক্রমিত রোগ। চিকিৎসক দ্বারা দেখানো পথ , নিয়ম এবং স্বচ্ছতাই একমাত্র নিরাময় পাওয়ার উপায়।

পুরো পৃথিবী আজ করোনা ভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও এত দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি যা আজ করোনার কারণে হয়েছে। গত দুমাস ধরে দেশের নাগরিকরা সারা বিশ্বের ঘটনা দেখেছেন। এখানেও এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আপ্রাণ লড়াই করছেন সবাই।  খুব জরুরি না থাকলে বাড়ি থেকে বের হবেন না। যতটা পারবেন বাড়ি থেকেই কাজ করবেন। কোনও কারণে বাইরে বের হলে ভিড় এড়িয়ে চলুন।

সংযম ও সংকল্পের মাধ্যমে এই মারণ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে হবে আমাদের সবাইকে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি যে নির্দেশ দিচ্ছে তা মেনে চলতে হবে। আমরা নিজেদের যেমন সংক্রমিত হওয়া থেকে বাঁচাব। তেমনি অন্যদের মধ্যেও এই রোগ কোনও ভাবে যাতে সংক্রমিত না হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। জরুরি পরিবেষার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের বাইরে বের হতেই হবে। কিন্তু, তার বাইরে থাকা অন্যদের কাছে বাইরে বের না হতে অনুরোধ করব। কারণ, জনবহুল এলাকায় বেরোব আর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হবে না তা হতে পারে না। তাই এই ধরনের জায়গাগুলি এড়িয়ে যেতে হবে।

ভগবান রামচন্দ্র শুধুমাত্র একজন মর্যাদাপুরুষোত্তম রাজা ছিলেন তা নয়, তিনি হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা বিষ্ণুর অবতার। কিন্তু আপনারা কি জানেন যে, একবার একটি ছোট কাঠবিড়ালী ভগবান রামকে সাহায্য করেছিল? কিভাবে?

লঙ্কায় পৌছাতে হলে বিশাল সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে, তাই বহু আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হল যে, এই বিশাল মহাসমুদ্রের উপর সেতু নির্মাণ করা হবে। বানর এবং ভালুকের বিশাল বাহিনীকে বলা হল নুড়ি পাথর এনে সমুদ্রতীরে সমবেত করার জন্য, যাতে সেগুলো দিয়ে একটি বিশাল সেতু তৈরি করা যায়। ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের সেবা করার এমন সুযোগ পেয়ে বানরদল বড় বড় পাথরের অংশ সংগ্রহে এদিক ওদিক দৌড়াতে লাগল। বানরেরা ছিল খুবই শক্তিশালী, তাঁরা বড় বড় পাথর এমনকি আস্ত পাহাড় তাদের কাঁধে বহন করে সেই মহাসমুদ্রে নিক্ষেপ করছিল।

অন্যান্য প্রাণীরাও ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের সেবা করার অভিলাষ করেছিল। তখন মহাসমুদ্রের মাছ এবং অন্যান্য জন্তুরা নিক্ষেপ করা পাথরগুলো সঠিক স্থানে বসানোর কাজে লেগে গেল। অন্যদিকে পাখিরা ছোট ছোট নুড়িপাথর নিয়ে আকাশে উড়ে পাথরের মাঝে ফাঁকা স্থানগুলো পূরণ করতে লাগল। একটি ছোট কাঠবিড়ালী এই বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে নিজেও ভগবান রামকে সহায়তা করতে চাইল। সে কিছুক্ষণ ভাবল এবং ছোট ছোট নুড়ি সংগ্রহ করে জলে ফেলতে লাগল। কিছুক্ষণ পর সে এতই ক্লান্ত হয়ে গেল যে সে আর নিজের শক্তিতে সেই নুড়িগুলো বহন করতে সক্ষম হল না।

কিন্তু তারপরও সে সেবা করেই যেতে চাইল। এবার সে জলের উপরিভাগে কিছুদূর গিয়ে আবার তীরে এসে গড়াগড়ি দিল এবং আবার জলে গিয়ে ধূয়ে আবার নুড়িতে গড়াগড়ি দিচ্ছিল। এভাবে যত বেশি সম্ভব গায়ে বালি লাগিয়ে সমুদ্রে ফেলতে চেষ্টা করল কাঠবিড়ালীটি। কিন্তু এই ক্ষুদ্র বালির কণাগুলো এই বড় বিশাল নির্মাণযজ্ঞে কতটুকুই বা সহায়তা করতে পারে? কিন্তু এই ছোট কাঠবিড়ালীটির প্রচেষ্টার কারনে সে বড় বড় পাথর বহনকারী বানরদের পথের সম্মুখে এসে তাদের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে লাগল। বানরগণ চিৎকার করে তাকে পথ থেকে সরে যেতে বলল। তখন ছোট কাঠবিড়ালীটি তাদের বলল, “ হে ভ্রাতাগণ, আমিও আপনাদের সাহায্য করতে চাই।

আমি এই সেতু নির্মাণের অংশ হিসেবে কিছু বালি নিক্ষেপ করছি। কৃপা করে আমাকে ভৎর্সনা করবেন না।” তখন বানরগণ উচ্চস্বরে হেঁসে বলল, “এই ছোট ছোট বালুকণাগুলো কি কাজেই বা লাগবে? আমাদের বহন করা এই বিশাল পাথরের তুলনায় নুড়িগুলোর কোন মূল্যই নেই।” কিন্তু কাঠবিড়ালীটি তার সেবা না কমিয়ে নীরবে সেবা চালিয়ে যেতে লাগল। অবশেষে বিরক্ত হয়ে একটি বানর সেই কাঠবিড়ালীটিকে ধরে জলে নিক্ষেপ করলেন। ভগবান রামচন্দ্র যিনি এই ঘটনাগুলো দেখছিলেন তিনি জলে পড়ার আগেই কাঠবিড়ালীটিকে ধরলেন এবং তাকে যত্মের সাথে বসালেন। তারপর তিনি বানর বাহিনীকে ডেকে বললেন, “ হে বানরগণ, তোমরা খুব সাহসী এবং শক্তিশালী। তোমরা অনেক বড় বড় পাথর বোঝাই করে সমুদ্রে ফেলে দারুন কাজ করছ। কিন্তু তোমরা লক্ষ্য করনি যে এই কাঠবিড়ালীর মত ছোট ছোট জীবেরা পাথরের মাঝামাঝি স্থানগুলো ভরাট করছে। তোমরা কি বুঝতে পারছ না যে এই ছোট ছোট নুড়ি পাতরগুলো সমগ্র নির্মাণকাজগুলো আবদ্ধ করছে এবং এটিকে আরো শক্তিশালী করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তোমরা এই ক্ষুদ্র জীবের উপর ক্ষুব্ধ হচ্ছ।”

ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের এই কথা শ্রবণ করে বানরগণ খুবই লজ্জিত হলেন এবং মাথা নীচু করলেন। রামচন্দ্র বললেন, “সবর্দা স্মরণ রাখবে, ছোট কাজ হলেও প্রতিটি কাজই গুরুত্বপূর্ণ। কোন একটি মহান কার্য কখনো প্রধান কর্তাব্যক্তিদের দ্বারা একাকী সুসম্পন্ন হয় না। তাদের সকলের সহযোগীতার প্রয়োজন হয়, তাই যেকোন কাজ তা ছোট হলেও তা গ্রহণ বা অনুমোদন করা উচিত।” তারপর ভগবান সেই কাঠবিড়ালীটিকে বললেন, “ হে আমার প্রিয় ভক্ত কাঠবিড়ালী, আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে আমার সৈন্যদের দ্বারা তুমি আঘাত প্রাপ্ত হয়েছ এবং তোমার সেবা অত্যন্ত আনন্দিতভাবে সাধন কর।” এরপর ভগবান রামচন্দ্র কাঠবিড়ালীটির পিঠে হাত দিয়ে আচঁড় দিলেন এবং ভগবান যেখানে স্পর্শ করেছিলেন সেখানে তিনটি খাঁড়া দাগের সৃষ্টি হল। এভাবেই কাঠবিড়ালী প্রজাতি তাদের পিঠে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের আর্শীবাদস্বরূপ তিনটি দাগ লাভ করল। এখনও কাঠবিড়ালীর পিঠে তিনটি সাদা দাগ দর্শন করা যায়, যদিও তাদের পূর্বপুরুষ সেই কাঠবিড়ালীটি একটি ক্ষুদ্রসেবার মাধ্যমে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের সেবা করার মাধ্যমে এই আর্শিবাদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাই ভগবানের উদ্দেশ্য সম্পাদনকারী যেকোন ক্ষুদ্র কাজকে ও সেবা হিসেবে গ্রহন করা উচিত। করোনা মোকাবিলায় আমাদের ত্যাগ , আমাদের ঘরে থাকা এই ক্ষুদ্র কাজই তাই ভেঙে দিতে পারে করোনার সিস্টেমকে । 

ভালো থাকুন, স্বচ্ছ থাকুন, সুস্থ থাকুন, #জয়_শ্ৰীরাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.