মিলিন্দ সোমন তাঁর আত্মকথা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ (Made in India) নামে প্রকাশ করেছেন। মিলিন্দ (Milind) ফ্যাশন জগতের এক উজ্জ্বল ঝলমলে তারকা। সেই জগতের গজদন্ত মিনারে বসা এক অভিনেতা একটি অন্যরকম কথা বলেছেন। মিলিন্দ (Milind) ছোটবেলায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শাখায় আসতেন। তাঁরা মুম্বাই শহরের শিবাজি পার্ক (Shivaji Park) এলাকায় থাকতেন। মিলিন্দের বাবা সঙ্ঘের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্যকর্তা ছিলেন। সাধারণ ভাবে প্রচারমাধ্যম আরএসএসের (RSS) বিষয়ে যেসব ভয়ানক কথা বলে, মিলিন্দের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সঙ্গে তা মেলে না। বরং শাখায় দেশভক্ত দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়ার প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়।
এদেশের লেফট লিবার্যাল (Left Liberals) সংবাদ জগতের কাছে এটা একটা বড়সড় ঝটকা। বহু যত্ন করে সংবাদ মাধ্যমের একটি অংশ আরএসএসের এক দানবীয় ছবি তৈরি করেছে। দাঙ্গার আগুনের সামনে গেরুয়া ফেট্টি বাঁধা লাঠি হাতে উগ্র সাম্প্রদায়িক যুবক, অসহিষ্ণু মধ্যযুগীয় ভাবনার কিছু হাফপ্যান্ট পরিহিত বয়স্ক মানুষ আর যুক্তিহীন গোঁয়ার একদল অশিক্ষিত লোক এই ভাবমূর্তি তৈরি করতে প্রায় ছয় সাত দশক লেগে গেছে ঐ তথাকথিত প্রগতিশীল ব্রিগেডের। তাই প্রথমেই তাঁদের মনে হয়েছে, “ভুল শুনলাম না তো?” বরখা দত্ত (Barkha Datt) একটা সাক্ষাৎকারই নিয়ে ফেললেন মিলিন্দের (Milind)। সাক্ষাৎকারে একেবারে স্পষ্ট ভাষায় মিলিন্দ জানালেন তাঁর সঙ্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার কথা। কীভাবে বিকেলে শাখা থেকে তিনি একজন সফল ক্রীড়াবিদ হয়ে ওঠার প্রেরণা পেয়েছেন। কৈশোরে তাঁরা আরএসএসের ক্যাম্পে যেতেন, শতশত ছেলে একসঙ্গে থেকে স্বনির্ভর হওয়ার, সুনাগরিক হওয়ার প্রশিক্ষণ পেতেন। আরএসএস শাখায় রাজনীতির একটি শব্দও তাঁদের শেখানো হতো না, কেবল দেশভক্তির কথাই বলা হত। কোনরকম রাখঢাক না করে বরখা দত্তের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মিলিন্দ সোমন।
মিলিন্দ (Milind) সোমনের বয়স পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। কিন্তু আজকের ১৪ থেকে ৩৫ বছরের ছেলেমেয়েদের রোল মডেল মিলিন্দ (Milind) । দীর্ঘ সময় ধরে সুপারমডেল এই নামকরা ক্রীড়াবিদ। অভিনেতা হিসাবেও যথেষ্ট সফল তিনি। ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস (Valley of Flowers) বা দ্য ফ্ল্যাগের (The Flag) মতো ইংরেজি ভাষার চলচিত্রেও অভিনয় করেছেন। সাঁতার হিসাবে আন্তর্জাতিক একাধিক প্রতিযোগিতায় ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৫ ঘণ্টা ১৯ মিনিটে আয়রনম্যান চালেঞ্জ (Ironman Challenge) পূর্ণ করেন এই ভারতীয় ক্রীড়াবিদ। এই আয়রনম্যান চ্যালেঞ্জে (Ironman Challenge) ট্রাইয়াথলন থাকে, যেখানে ৩.৮ কিলোমিটার সাঁতার, ১৮০.২ কিমি সাইকেল চালনা আর ৪২.২ কিমি দৌড় সম্পূর্ণ করতে হয়। এমনই আরেকটি প্রতিযোগিতা হল ফ্লোরিডার ইউরাথন, মিলিন্দই (Milind) প্রথম ব্যক্তি যিনি খালি পায়ে এই চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন।
স্বাভাবিক কারনেই কিশোর আর তরুণ প্রজন্মের পছন্দের ব্যাক্তিত্ব মিলিন্দ (Milind) । জনপ্রিয় কল্পবিজ্ঞানের টিভি সিরিয়াল “ক্যাপ্টেন ব্যোম” বা অ্যাডভেঞ্চার ধারাবাহিক “সি হক”-এ তাঁর অভিনয় নতুন প্রজন্মকে টেনেছিল।
আরএসএস (RSS) সম্পর্কে মিলিন্দের মতামত তাঁর ‘ম্যাচো’ ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে মনে করছেন কতিপয় ভক্ত। একজন একান্ত অনুরাগিনী তো বলেই ফেললেন, “এই ঘটনা স্বপ্নভঙ্গের মত। আমার সঙ্গেই খালি কেন এমন হয়?” তবে অনেক অনুগামী অবশ্য মিলিন্দের ম্যানলি বক্তব্যের প্রশংসা করেছেন আপ্লুত হয়ে। যাঁরা মিলিন্দের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিরূপ মত প্রকাশ করেছেন, দোষটা ঠিক তাঁদের নয়। বহুদিন ধরে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশ একটু একটু করে ভুল ন্যারেটিভ দিয়েছেন। দশকের পর দশকের প্রচেষ্টা আজকের সঙ্ঘ বিরোধী ‘ডিস্কোর্স’ তৈরি হয়েছে। আরএসএসের (RSS) জন্মের শুরুটা কলকাতাতেই। কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার নামে একটি গরীব মারাঠি ছেলে কলকাতায় পড়তে আসে। তখন অরবিন্দ ঘোষ ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন বেঙ্গলের কর্ণধার। ন্যাশনাল কাউন্সিল যে মেডিকেল কলেজ শুরু করেছিল তার প্রথম ব্যাচের ডাক্তারি স্নাতক ছিলেন হেডগেওয়ার। কিন্তু হেডগেওয়ারের কলকাতার ডাক্তারি পড়তে আসাটা ছুতো ছিল, আসলে এই শহরটা তখন ছিল বিপ্লবী আন্দোলনের তীর্থভূমি। কেশব অনুশীলন সমিতিতে যুক্ত হলেন। পরবর্তীকালে দেখা যায়, সঙ্ঘের শারীরিক বা বৌদ্ধিক অনুশীলনের কাঠামোটা পুলিনবিহারী দাশের সমিতি থেকেই নেওয়া হয়েছিল। সে যুগটা রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের ভাব-আন্দোলনের কাল। বেলুড় মঠ হয়ে উঠছে ভারতের জাগরণের কেন্দ্রবিন্দু। দামোদরের বন্যায় বেলুর মঠ ব্যাপক জনসেবা, ত্রাণকাজ করেছিল। ডা. কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার (Dr. Keshab Baliram Hedgewar) দিন রাত এক করে মিশনের সঙ্গে সেবাকাজ করেছিলেন। অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু তাঁর বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ বইতে এক দক্ষিণ ভারতীয় ভক্তের বর্ণনা অনুসারে ডা. হেডগেওয়ারের নিষ্ঠার বিবরণ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘ চালক ছিলেন মাধব সদাশিব গোলবলকর। তাঁরও প্রেরণার কেন্দ্র ছিল বাংলা। তিনি সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য রামকৃষ্ণ মিশনের স্মরণেই এসেছিলেন। মুর্শিদাবাদের সারগাছিতে স্বামীজির গুরুভাই স্বামী অখণ্ডানন্দ একেবারে অনগ্রসর মানুষদের সেবার জন্য আশ্রম তৈরি করেছেন। স্বামী অখণ্ডানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম ছিল গঙ্গাধর। বিবেকানন্দ তাই তাঁকে গাঙ্গেস মানে গঙ্গা বলে ডাকতেন। গঙ্গাধর মহারাজের ইহলোকে থাকা পর্যন্ত মাধব সদাশিব গোলবলকর সারগাছিতেই ছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda) তাঁর প্রিয় শিষ্য আলাসিঙ্গা পেরুমলকে (Alasinga Perumal) এক পত্রে লিখেছিলেন এক সামাজিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা। আর সংগঠনের শুরুটা মধ্যভারত থেকেই হওয়া প্রয়োজন। স্বামীজির এই ভবিষ্যৎবাণীর বছর পঞ্চাশেক পরেই ডা. হেডগেওয়ার নাগপুরে সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা করলেন। মজার ব্যাপার হল নাগপুর শহরটা একেবারে ভারতের মধ্যবিন্দুতে। ভারতবর্ষের “জিরো মাইল স্টোনটি” নাগপুর শহরেই।
ডা. হেডগেওয়ার জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হিসাবে বাল গঙ্গাধর তিলকের খুবই প্রিয়পাত্র ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়ে বহুবার কারান্তরালে ছিলেন তিনি। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে একান্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তাঁর। সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পরে নেতাজি নিজে দুবার ডাক্তার হেডগেওয়ারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। একবার ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীকে পাঠিয়েছিলেন। শেষবার নাগপুরে দেখা করতে যাওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন রামভাউ রুইকর।
মহাত্মা গান্ধী মৃত্যুর মাত্র মাস তিনেক আগে দিল্লীতে আরএসএসের একটি সমাবেশে ভাষণ দেন। ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে দিল্লীর ভাঙ্গি কলোনিতে প্রায় পাঁচশ স্বয়ংসেবকের সামনে বাপুজি এক অসাধারণ হৃদয়স্পর্শী বক্তব্য রাখেন। জাতপাতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সঙ্ঘের সাফল্যের তিনি মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধাতে একটি সঙ্ঘশিবিরে গিয়েছিলেন। সেখানে জাতিভেদমুক্ত ব্যবস্থা তাঁর মনে দাগ কেটেছিল। সেদিন বাপুজি তাঁর ওয়ার্ধার অভিজ্ঞতার কথাও বলেছিলেন।
১৯৬২ সালে চীনের কাছে ভারতের পরাজয় মানুষের মনে গভীর ক্ষত তৈরী করেছিল। জাতিকে আবার আত্মবিশ্বাসে ফিরিয়ে আনতে কী করা উচিত সে নিয়ে অনেকেই ভাবছিলেন। একনাথ রানাডে তখন আরএসএসের সরকার্যবাহ বা অল ইন্ডিয়া জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি কলকাতায় এসে ন্যাশনাল লাইব্রেরি ও বেলুড় মঠে বহুদিন অধ্যয়ন করেছিলেন। সেদিন একনাথ রানাডের মনে হয়েছিল যে স্বামী বিবেকানন্দের ভাবনাই আবার জাতিকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় কন্যাকুমারীর ঐ শিলাখণ্ডের উপর তৈরী হল অপূর্ব সমুদ্রমন্দির। প্রতিষ্ঠিত হল ‘বিবেকানন্দ কেন্দ্র‘ (Vivekananda Kendra)।
১৯৬২ সালে চীনের যুদ্ধের সময় সীমান্তবর্তী ক্ষেত্রে আরএসএসের স্বয়ংসেবকরা ভারতীয় সেনাকে সহযোগিতা করেছিলেন, যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ত্রাণ করেছিলেন। তাই ১৯৬৩ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জহরলাল নেহরু (Jawaharlal Nehru) আরএসএসকে (RSS) অংশ নেবার আহ্বান করেছিলেন। সেদিন ৩০০০ জন স্বয়ংসেবক দিল্লীতে প্রথাগত গণবেশে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তখন দিল্লী, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ আর জম্মু-কাশ্মীরকে নিয়ে সঙ্ঘের ভাষায় দিল্লী সম্ভাগ বলা হত। তৎকালীন সম্ভাগ প্রচারক সোহন সিংহের কাছে পণ্ডিতজীর আমন্ত্রণ এসেছিল প্রজাতন্ত্র দিবসের।
রায়গঞ্জের চকরামপুর গ্রামের এক সাঁওতাল পরিবারের ছেলে ছিল চূড়কা মুর্মু। গ্রামের আরএসএস (RSS) শাখার সে ছিল মুখ্যশিক্ষক। ১৯৭১ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় বিএসএফকে খবর দিতে গিয়েছিল চূড়কা। বিএসএফ ক্যাম্প থেকে রসদ সে তার গ্রামের মধ্যে থাকা সামান্য কয়েকজন জওয়ানের জন্য নিয়ে এসেছিল। সেদিন পাকসেনার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল বাংলার সেই স্বয়ংসেবক চূড়কা মুর্মু।
জাতিভেদ এদেশের হিন্দুসমাজের মধ্যে ক্যান্সারের মত ব্যাধি। বাবাসাহেব আম্বেদকর সারা জীবন ভারতীয় সমাজের এই ব্যাধির উপশমের চেষ্টা করেছিলেন। নাসিকের কালারাম মন্দির বহু পুরাতন এক ধর্মস্থান। বিগ্রহ কষ্টিপাথরের রামচন্দ্র, তাই কালারাম। সেযুগে মহারাষ্ট্রে যে মন্দিরগুলিতে তথাকথিত নিচু জাতির প্রবেশ ছিল না তার মধ্যে কালারাম মন্দির অন্যতম। ১৯৩০ সালের ২ মার্চ বাবাসাহেব আম্বেদকর এই মন্দিরে সকলের প্রবেশের জন্য সত্যাগ্রহ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত মন্দিরের পাণ্ডারা বাবাসাহেবের অনুগামীদের পিটিয়ে ভাগিয়ে দেয়। এই ঘটনা ড. আম্বেদকরের মনকে ভেঙে দিয়েছিল। ২০০৫ সাল ছিল সেই লজ্জাজনক ঘটনার ৭৫ বর্ষপূর্তি। সে বছর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকরা কালারাম মন্দিরের কর্তৃপক্ষকে প্রায়শ্চিত্তের জন্য রাজি করান। তথাকথিত অন্ত্যজদের পা ধুইয়ে মন্দিরে তোলেন বর্তমান প্রজন্মের পাণ্ডারা, সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন সরকার্যবাহ এবং বর্তমান সরসঙ্ঘচালক মোহনরাও ভাগবত।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী নাগপুরে সঙ্ঘের সভায় আতিথ্যগ্রহণে অনেকে অনেক প্রশ্ন তুলেছিলেন। আসলে যাঁরা সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকদের কাছাকাছি এসেছেন তাঁরা যে মতাদর্শেরই হন, বুঝেছেন যে আরএসএস আসলে ভয়ানক কিছু নয়। হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন, তখন সিপিআই নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তীকালে তিনি পর পর পাঁচবার উত্তর কলকাতা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদে যান। তাঁর তরী হতে তীর বইটি যে কোন মতবাদে বিশ্বাসী মানুষের শ্রদ্ধা কেড়ে নেয়। এরকম একজন বামপন্থী কার্যসূত্রে দুজন বিখ্যাত আরএসএস স্বয়ংসেবকের কাছাকাছি এসেছিলেন। তাঁরা দুজনেই সঙ্ঘের প্রচারক ছিলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং শ্রমিক আন্দোলনের নেতা ও চিন্তাবিদ দত্তোপন্থ ঠেংড়ী-দুজনকেই হীরেনবাবু কাছ থেকে দেখেছিলেন। এঁদের সম্পর্কে হীরেনবাবুর বক্তব্য একাধিক প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। একজন কমিউনিস্ট চোখে সঙ্ঘের কার্যকর্তা মানবিক গুণের কথা সত্যি মনে রাখার মতো।
সঙ্ঘ নিজকে হিন্দু সংগঠন বলে। অনেকের আপত্তির জায়গাটা এখানেই। আদতে এই হিন্দুত্ব কথাটি আধুনিক কালে প্রথম ব্যবহার করেন এক বাঙালি লেখক, চন্দ্রনাথ বসু। ১৮৯২ সালে তাঁর লেখা “হিন্দুত্ব : হিন্দুর প্রকৃত ইতিহাস,” প্রকাশিত হয়। ১৮৯৩ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে স্বামী বিবেকানন্দ এই হিন্দুত্বেরই জয়গান করে এলেন। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর আনন্দময়ীর আগমনে কবিতায় বা এস ওয়াজেদ আলি তাঁর ভারতবর্ষ প্রবন্ধে এই হিন্দুত্বেরই খোঁজ করেছিলেন। এই হিন্দুত্ব কোন উপাসনা পদ্ধতি, কোন ধর্মীয় গোঁড়ামি নয়, ভারতবর্ষের পরম্পরাগত উত্তরাধিকার।
একটি সংগঠন চড়াই-উতরাই পথ ধরেই চলে। সব সিদ্ধান্ত সঠিক নাও হতে পারে। সংশোধন পরিমার্জনের মাধ্যমেই সত্যের পথ ঠিক হয়। কিন্তু সত্যের প্রতি সৎ আর অবিচল নিষ্ঠা একটি সংগঠনকে কালজয়ী করে তোলে। গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানী দিল্লীতে তিন দিন ধরে প্রবুদ্ধ মানুষদের একটি সম্মেলন হয়েছিল। সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত এই কথাই বলেছেন, হিন্দু সমাজ বা আরএসএস কোনোটাই ক্লোজড সিস্টেম নয়, একটি সতত প্রবহমান জীবনধারা।
মিলিন্দ (Milind) সোমনের ঘটনাটি হয়ত ছোট বিষয়। কিন্তু প্রশ্নটা বড়। প্রচার মাধ্যমের ধ্বনিবর্ধক যন্ত্রটি যাঁদের হাতে আছে, তাঁরা অবিরত যা জানাচ্ছেন সেটাই ভারতবর্ষ নয়।
জিষ্ণু বসু (Jishu Basu)