বিজেপি ও তৃণমূলকর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল তুফানগঞ্জ। শনিবার সন্ধে বেলা এই ঘটনায় আহত হয়েছেন দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন। কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী তথা একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ যুব নেতা নিশীথ প্রামাণিকের অভিযোগ, তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। কিন্তু অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন।
যদিও কোচবিহারের পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তা জানিয়েছেন, “দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।” তবে গুলি চালানোর ঘটনার কথা স্বীকার করেনি পুলিশ।
শনিবার তুফানগঞ্জ এলাকায় প্রচার সারেন বিজেপি প্রর্থী নিশীথ। প্রচুর গাড়ি এবং কয়েকশো বাইক নিয়ে এ দিন রোড শো করেন একদা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ এই নেতা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সকালে নিশীথকে কালো পতাকা দেখানোর চেষ্টা করেন একদল তৃণমূলকর্মী। তবে নিশীথের মিছিলের জমায়েত দেখিয়ে যান তাঁরা। সন্ধেবেলা নিশীথের কনভয় যখন ফিরছিল তখনই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানা গিয়েছে, সেই সময় তুফানগঞ্জের ধলপল গ্রামে তৃণমূলের একটি মিছিল চলছিল। নিশীথের কনভয় আর তৃণমূলের মিছিল মুখোমুখি হতেই সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
বিজেপি-র অভিযোগ, তাদের মিছিলে বিপুল জমায়েত দেখেই, শাসক দল হামলা চালিয়েছে। নিশীথ বলেন, “গুলি করে, হামলা করে, আমায় আটকানো যাবে না।” সব অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করেছে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “নিশীথ প্রামাণিক প্রচুর গাড়ি নিয়ে ধলপল এলাকায় ঢুকে আতঙ্ক তৈরি করেছেন।”
জেলার পুলিশ সুপার অবশ্য জানিয়েছেন, ধলপল এলাকায় নিশীথের যাওয়ার অনুমতি ছিল না। পাল্টা নিশীথ বলেন, তিনি ওই এলাকায় কোনও কর্মসূচিতে যাননি। কর্মসূচি শেষই করে ফিরছিলেন।
দোলের দিন সন্ধেবেলা কেন্দ্রীয় বিজেপি দফতর থেকে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়েছে কী হয়নি, ওমনি ময়দানে নেমে পড়েছিলেন কোচবিহারের বিজেপি কর্মীদের একাংশ। দলের জেলা দফতরে ভাঙচুর করে, জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা রায়ের গাড়ি আটকে দিয়ে সে কী কাণ্ড! দাবি কী? ‘তৃণমূল খেদানো’ নিশীথ প্রামাণিককে প্রার্থী করা যাবে না। কিন্তু পরের দিন নিশীথ জেলায় পা রাখতেই বদলে যায় ছবি। গেরুয়া আবিরে রেঙে, কর্মী সমর্থকদের মিছিলে ভেসেই নিশীথ যান রাসমেলা মাঠে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিতে। সঙ্গে জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা রায়। তারপর থেকেই প্রচারে নেমে পড়েছেন তরুণ এই নেতা। কারণ কোচবিহারে ভোট আর বেশিদিন নেই।
গত মাসের ২৮ তারিখ দলবল নিয়ে দিল্লিতে গিয়ে মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপি-তে যোগ দেন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নিশীথ। তারপর থেকে নিজের শহরে ফেরেননি। ছিলেন দিল্লিতেই। বিজেপি নেতাদের আশঙ্কা ছিল, বাংলায় ফিরলেই নিশীথকে কেস দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে পারে পুলিশ। তাই দিল্লিতেই রেখে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পরও ফেরেননি। একেবারে প্রার্থী হয়ে জেলায় পা রাখেন তিনি। তবে এ দিনের ঘটনার পর থমথমে পরিস্থিতি গোটা ধলপল গ্রাম এবং তুফানগঞ্জ এলাকায়।