স্বামী দাপুটে তৃণমূল নেতা। ভাসুর রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। চাইলে নায়িকা না হোন, সহনায়িকা হতে পারতেন। এ সবের চেয়েও বেশি পরিচয় ‘কাজের মেয়ে, কাছের মেয়ে’। ওই তকমটাই যেন ৮১ ওয়ার্ডের তারকা পুরমাতা জুঁই বিশ্বাসের কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে গুরুদায়িত্ব। থাকেন নিউ আলিপুরে দূর্গাপুর কলোনিতে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের পাশে। এমনই সময়ে রোজ সকাল ১০টা থেকে সাড়ে বারোটা ‘ওয়ার্ড ভিজিট’। ছোট মেয়ে আর্শিয়ার বয়স ৩। এ বছর ভর্তি হয়েছে মডার্নে। বড় মেয়ে ছ’বছরের আরুশ্রীও পড়ে ওখানে। ওদের স্কুল থেকে বাড়িতে এনে ঝটপট খেয়ে ১টায় ওয়ার্ড অফিস। সেখানে প্রায় আড়াইটে পর্যন্ত। এর পর কমবেশি মিটিং। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টা পার্টি অফিস। তার পর ফের পরিবার— এটাই জুঁইয়ের দিনলিপি।বিশ্রামের অবকাশ একেবারেই নেই। বই পড়া আর আঁকায় আগ্রহ বেশি। কিন্ত দলের কাজের চাপে এই সব সুকুমারবৃত্তি চর্চার অবকাশ উবে যাওয়ার যোগাড়। এর মধ্যেই এল করোনার ঝাপটা। এলাকার কারও ছেলে বিদেশে, কারও মেয়ে বিবাহিতা বা কর্মসূত্রে দূরবাসিনী। জিনিসপত্র কেনার জন্য ভরসা পরিচারক বা পরিচারিকা। কিন্তু করোনায় ওরাও অমিল। কে দেখবেন ওই বয়স্কদের? এ রকম বাড়তি এবং জটিল দায়িত্ব এসে পড়েছে জুঁইয়ের ওপর। তাঁর কথায়, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অক্লান্ত খেটে যাচ্ছেন। তাঁর কাছে দিন আর রাত সমান।” এই সময়ে আমরা যদি সৈনিক হিসাবে তাঁর পাশে যথাযোগ্য দায়িত্ব পালন না করতে পারি, কী করে চলবে বলুন— প্রশ্ন করলেন জুঁই। এই প্রতিবেদককে তিনি জানালেন, “আমার এলাকার প্রবীণ মানুষদের বলেছি, ১৫ দিন বাড়ি থেকে বেরোনোর কোনও দরকার নেই। যদি কোনও জিনিস কেনার প্রয়োজন হয়, সকাল সাতটা থেকে নটার মধ্যে এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়ে দিন। আমাদের দলের ছেলেরাই বাড়িতে জিনিসপত্র পৌঁছে দেবে। চাল-তেল-আলু-পেঁয়াজ- দুধ-ওষুধ এগুলির যে সব তাঁদের প্রয়োজন অথচ পাচ্ছেন না, আমরা তাঁদের বাড়িতে দিয়ে আসছি।লকডাউন ঘোষণার পরই নিউ আলিপুর এই পুরো এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জুঁই প্রবীনদের পাশে দাঁড়াতে বিশেষ ফোন পরিষেবা চালু করেছেন। নিজের ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেওয়ার পাশাপাশি নিউ আলিপুর এলাকায় প্রবীনদের যে গোষ্ঠী আছে সেখানেও জানিয়ে দেন এই নাগরিক পরিষেবার কথা। ওয়ার্ডে তাঁর চালু করা নানা পরিষেবা ও প্রবীনদের খাবার মেডিসিন এসব পৌঁছে দিচ্ছেন।আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার কাছে ‘কাজের মেয়ে, কাছের মেয়ে’ হিসেবে পরিচিত। এ কারণেই ফোন আসছে খাওয়া-দাওয়ার জিনিস থেকে নানা নিত্য সামগ্রী চেয়ে। ফোন আসছে ডাক্তার বা হাসপাতালে ভর্তির আর্জি জানিয়েও। এই রকম পরিস্থিতিতে কাজটা কঠিন হলেও সমাধানের চেষ্টা করতে হচ্ছে।
নিউ আলিপুরের এফ ব্লকের প্রদীপ ঘোষ, জি ব্লকের পৃথ্বীশ রায়, ও ব্লকের মৃদুলা লোহিয়া— আজ ওঁরা নিশ্চিন্ত জুঁই আছে। আর পুরমাতার নিজের কথায়, “এই নিশ্চিন্তিই আমাকে লকডাউনে ফেলে দিয়েছে এক অগ্নিপরীক্ষার মুখে।”
2020-03-29