২২ মার্চ বিশ্ব জন কারফিউয়ের দিন মহানগরীকে এরচেয়ে ভালো উপহার হয়তো আর দিতে পারতেন না কলকাতাবাসী।
করোনা ভাইরাসকে আটকানোর জন্য সারা দেশজুড়ে জনতা কার্ফুর ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে কতটা লাভ হয়েছে, তা বোঝা যাবে হয়তো আরো কিছুদিন পরে। কিন্তু এই প্রচেষ্টার ফলে কলকাতার দূষণ এক ধাক্কায় কমে অর্ধেক হয়ে গেল, এমনটাই দাবি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। তথ্য দিয়ে তারা সেটাই তুলে ধরেছেন সকলের সামনে।
দেশের অন্যান্য মহানগরীর মত সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দূষণ বাড়ছিল কলকাতাতেও। দূষণ মাত্রায় সম্প্রতি দিল্লিকে ছাড়িয়ে শীর্ষ স্থানে পৌঁছে যায় কলকাতা। শীতকালেও দূষণ মাত্রা খুব একটা বেশি কমেনি আর ফের গরমকালে দূষণ মাত্রা বাড়ার আশঙ্কা করেছিলেন পরিবেশবিদরা।
করোনার আতঙ্কের আবহে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত ১৪ ঘণ্টার জনতা কারফিউ যেন প্রকৃত পক্ষে শাপে বর হয়ে উঠল কলকাতার পরিবেশ। জনতা কারফিউয়ের ফলে একদিনেই মহানগরীর দূষণ মাত্রা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধেক। বায়ু দূষণ এবং শব্দ দূষণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে মুখে হাসি ফুটেছে পরিবেশপ্রেমীদের।
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, এই সময় সাধারণত শহর কলকাতার বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে থাকে অন্তত ১৫০ থেকে ১৭০ মাইক্রো গ্রাম। শীতকালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০০ মাইক্রোগ্রামে। আবার বর্ষাকালে কিছুটা কমে যায়।রবিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শহরের বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে মাত্র ৭০ মাইক্রোগ্রাম। যা অন্য দিনের তুলনায় কার্যত অর্ধেক। সবাই আতঙ্কে ঘরবন্দি থাকায় যেন কার্যত মুখে হাসি ফুটেছে পরিবেশের।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর কোন শহরকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে হলে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ২৫-৩০ মাইক্রো গ্রাম থাকা দরকার। পৃথিবীর উন্নত শহরগুলিতে এই মাত্রা রীতিমতো নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সেই মাত্রার অনেকটা বেশি গেলেও পরিবেশবিদদের দাবি, একদিনে এই মাত্রা এতটা নিচে নামলে ৯ দিনের লকডাউনে তা অনেকটাই নীচে নেমে আসবে।
,মাত্রা প্রায় কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে শব্দ দূষণের ক্ষেত্রেও। রাস্তায় শব্দ দূষণের মাত্রা থাকে প্রায় ৯০ থেকে ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত। সেখানে কাল কলকাতার কোথাও ৪০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা ছাড়ায়নি। বিশ্বের উন্নত শহর গুলির মত কার্যত যেন সাইলেন্ট সিটি হয়ে গিয়েছিল রবিবারের কলকাতা। করোনা আতঙ্ক কেটে গেলেও শহরের পরিবেশ যেন ফিরে ভাবে খুলে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে, নিজেদের স্বার্থেই সেটা দেখা এই শহরের প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য বলে দাবি পরিবেশবিদদের।