দোলের রাতে কেন্দ্রীয় বিজেপি প্রথম কিস্তির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল কোচবিহার। গেরুয়া শিবিরের একাংশের কর্মী কিছুতেই প্রার্থী হিসেবে মানতে চাননি তৃণমূল ত্যাগী নিশীথ প্রামাণিককে। বুধবার তাঁর সমর্থনে জনসভা করতে গিয়েই কেন নিশীথকে প্রার্থী করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
মাথাভাঙার জনসভা থেকে তৃণমূলের দাঁতের গোড়া ভাঙার হুঁশিয়ারি দিলেন দিলীপ। খড়্গপুরের বিধায়ক বলেন, “আমরা কেন নিশীথকে প্রার্থী করেছি? কারণ ও তৃণমূলে থেকেও রবি ঘোষের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। আর তৃণমূলের বাইরে এসেও রবি ঘোষের বিরুদ্ধেই লড়াই করছে।” এর পরেই বাংলা প্রবাদ উচ্চারণ করে দিলীপবাবু বলেন, “তোমারই শিল, তোমারই নোড়া, তোমারই ভাঙব দাঁতের গোড়া।”
তাঁর এই বক্তৃতা নিয়ে বিতর্ক উঠতে পারে, তা এক প্রকার ধরেই নেন দিলীপ ঘোষ। এর পরেই তিনি বলেন, “যদি মনে করেন আমার বলা কথা নিয়ে কমিশনে যাবেন, তা হলে যেতে পারেন। কিন্তু জমি ছাড়ব না।” উত্তরবঙ্গের সব আসনে এ বার পদ্মফুল ফুটবে বলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়ে দেন দিলীপ ঘোষ।
এক সময়ে নিশীথ ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-ঘনিষ্ঠ নেতা। কোচবিহারে মাদার-যুবর কোন্দল নিয়ে যত ঘটনা গত কয়েক বছরে ঘটেছে, সবেতেই সামনে এসেছিল এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ যুবনেতার নাম। সেই নিশীথকে মাস তিনেক আগে বহিষ্কার করে তৃণমূল। কিছু দিন চুপ করে থাকার পর মুকুল রায়ের হাত ধরে কয়েকশো কর্মী নিয়ে মুকুল রায়ের হাত ধরে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন নিশীথ। তার পরে তাঁকে প্রার্থীও করে বিজেপি।
কিন্তু যে নিশীথের নামে এত দিন গলা ফাটিয়েছেন নিচু স্তরের বিজেপি কর্মীরা, তাঁরা মানবেন কী ভাবে? তাই জেলা দফতরে চলে ভাঙচুর। আটকে দেওয়া হয় জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা রায়ের গাড়ি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায় যে, মালতীদেবীকে বলতে বাধ্য হতে হয় প্রার্থী পাল্টাতে হবে। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের স্পষ্ট কথা ছিল, শৃঙ্খলা মেনে দল করতে হলে করো, না হলে অন্য রাস্তা দেখো।
এক দিন পরেই ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা নিয়ে কোচবিহারে পা রাখেন নিশীথ। গেরুয়া আবিরে রেঙে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়েই জানিয়ে দেন, জয় লেখা হয়ে গিয়েছে।
তৃণমূল এ বার এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে একদা ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা তথা বামফ্রন্ট সরকারের খাদ্যমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে। ফলে, দুই দলত্যাগীর নতুন জার্সি গায়ে লড়াই এই আসনে। যদিও দিলীপের হুঙ্কারে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছে না শাসক দল। তাঁদের কথায়, “নিশীথ নেতা হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিটা দেখিয়ে। ওটা বাদ দিলে যে ও শূন্য, সেটা ২৩ মে বিকেল বেলাতেই টের পেয়ে যাবে।”