ঘটিতোলা কাজ ছিল পাত্কোয় পড়ে যাওয়া নানান জিনিস তুলে আনা।মূল্য নির্ধারণ হত তুলে আনা জিনিস ঠিক কতটা মূল্যবান তার উপর। সেই পুরোনো দিনে , মানে সেই পুরোনো দিন যা আমি দেখিনি বা যে কচি বয়সে আমি যা দেখেছি , সেই সময় জল কেন্দ্রিক কাজকর্মের একটি বৃহৎ অংশ আবর্তিত হত এই কুয়ো এবং কুয়োতলাকে ঘিরে। একান্নবর্তী পরিবার হোক বা হাজার লোকের ভাড়াটে বাড়ি অথবা পাড়ার বা গাঁয়ের কুয়োতলা – কূটকাচালি, ঝগড়া, পরনিন্দা , আড্ডা একসময় ওই কুয়োকে ঘিরেই হত। কুয়োর জল খাওয়া থেকে স্নান সবতেই ছিল অমৃত সমান, বিশেষ করে শহুরে মানুষের নিকট। ফলত, আংটি , দড়ি ছিঁড়ে বালতি, ঘটি, বাটি, কুয়োয় পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। সে সব বস্তু তোলার জন্য ডাক পড়ত ডাক পড়ত ঘটিতোলার। ঘটিতোলাওয়ালা প্রথমে এসে বড় কুয়োর কাঁটা ( মজবুত লোহার শিকলের মুখে বাঁধা চারমুখো কাঁটা) দিয়ে চেষ্টা করত। না হলে ঘুপ করে কুয়ো বা ইঁদারার গভীর জলে ঝাঁপ ….তারপর জল উথাল পাথাল হয়ে জিনিসপত্র উঠে আসত। তারপর দিন বদল হল। মানুষ শহুরে থেকে আধুনিক , আধুনিক থেকে অতিআধুনিক হল …কুয়ো ,ইঁদারা ইত্যাদি লুপ্ত হল , তার সঙ্গে ঘটিতোলা হারিয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.