এখন পর্যন্ত ১৩ টি রাজ্য সরকার এই মহামারী আইন বলবৎ করেছে৷ নবান্নে জরুরী বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন,আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম এই আইন লাগু করব না৷ কিন্তু আইসোলেশনে থাকা কিছু রোগীরা যে ভাবে জেলা শাসকদের বিরক্ত করেছেন এবং চিকিৎসা না করিয়ে চলে যেতে চেয়েছেন,তারপর এই আইন লাগু করতে বাধ্য হচ্ছি৷
সম্প্রতি ক্যাবিনেট সচিবদের একটি বৈঠক হয়৷ সেখানেই স্থির করা হয়ে যে, সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে ১৮৯৭ সালের মহামারী সম্পর্কিত আইনের ২ নম্বর ধারা প্রয়োগ করা হবে৷ যাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশাবলী কার্যকর করা যায়৷
উল্লেখ্য, ১৮৯০-এ পূর্বতন বোম্বে প্রেসিডেন্সিতে বিউবোনিক প্লেগের মহামারী আটকাতে এই আইন প্রবর্তন করেছিল তৎকালীন ঔপনিবেশিক সরকার৷ এই আইনের দ্বিতীয় ধারায় রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিধি তৈরির অধিকার দেওয়া হয়েছে৷
এই আইনের ধারা অনুাযায়ী,রাজ্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে যেমন,যে কোন ভ্রমনকারী ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা৷ হাসপাতালে বা অস্থায়ী আবাসে বিচ্ছিন্ন করে রাখা৷ আর এই সব বিধিনিষেধ না মানলে ভারতীয় দন্ডবিধি অনুযায়ী, সেই ব্যক্তির ৬ মাসের কারাদন্ড বা এক হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তিই হতে পারে৷
সোমবার নবান্নে জরুরী বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে করোনার ভাইরাস মোকাবিলায় ২০০ কোটি টাকার তহবিল গড়া হয়েছে৷ করোনা মোকাবিলায় যারা কাজ করবেন, সেই সব কর্মীদের জন্য ৫ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত বিমা দেওয়া হবে৷ এই বিমার আওতায় ১০ লক্ষ মানুষ রয়েছে৷ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য ২ লক্ষ পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) কেনা হচ্ছে৷ এছাড়া কেনা হচ্ছে ২ লক্ষ এন-৯৫ মাস্ক৷ এবং আরও থার্মাল গান৷ এদিকে স্কুল কলেজসহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার৷ এবার সেই ছুটি বাড়িয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে৷ ছুটি থাকবে আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিও।আইসিডিএস বাচ্চাদের জন্য ঘরে পাঠানো হবে চাল-ডাল৷
ইতিমধ্যেই রাজ্যের ৩ লক্ষ ২৪ হাজার মানুষের স্ক্রিনিং করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এরই পাশাপাশি আরও ৫ হাজার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে করোনা মোকাবিলায় ২০০ কোটি টাকার তহবিল গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার করোনা নিয়ে নবান্নে বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অযথা করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তবে গুজবে কান দেবেন না। আত্মসন্তুষ্টি থাকা ঠিক নয়।’ এদিন ইতালি, আমেরিকা-সহ একাধিক দেশের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খতিয়ান পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
করোনার সংক্রমণ রুখতে ইতিমধ্যেই কল সেন্টার চালু করেছে রাজ্য সরকার। কল সেন্টারে ইতিমধ্যেই ৫ হাজার ফোন এসেছে। করোনা নিয়ে কেউ জানতে চাইলে তাঁকে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। করোনার সংক্রমণ রুখতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকেও জমায়েত এড়াতে অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিনেমা হল, রিয়েলিটি শোগুলিও ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখতে আবেদন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।