আফগানিস্তান (Afghanistan) আজ পরদেশ হলেও একসময় তা ছিল ভারতবর্ষের অংশ। খ্রিস্ট পূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে পারস্যের সাসানীয় রাজবংশ বর্তমান হিন্দুকুশ পর্বতের (Hindukush Mountains) উত্তরে বলখ বা বাদাকশান এলাকায় অবস্থিত ব্যাকট্রিয়াকে ভারতের অঞ্চল বলেই জানতেন। শুধু তাই নয়, অক্সাস নদীকে (আমুদরিয়া ) তাঁরা মনে করতেন বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণদের নদী। গ্রীক লেখকরাও ব্যাকট্রিয়াকে মনে করতেন ভারতীয় প্রদেশ। এখানে কয়েক হাজার বৌদ্ধ শ্রমণের বাস ছিল। হিউয়েন সাঙের লেখায় এ তথ্য রয়েছে। এরপর ভারতের মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য আলেকজাণ্ডারের সেনাপতি সেলুকাসকে পরাজিত করে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে কাবুল, আরাকোশিয়া (কান্দাহার), আসিয়া (হীরাট) ও জেভ্রোসিয়া (বেলুচিস্তান) পুনরুদ্ধার করেছিলেন ।
সম্রাট অশোকের সময় হিন্দুকুশ পর্বত (Hindukush Mountains) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল মৌর্য সাম্রাজ্য। তার প্রমাণ হিসেবে হিন্দুকুশ পর্বতের পাদদেশে কপিসা নগরীতে প্রাকৃত ভাষায় লেখা অশোকের বাণীর একটি স্তম্ভ পাওয়া গেছে। এ থেকে আরও বলা যায়, এই এলাকায় তখন প্রাকৃত ভাষা চালু ছিল। ২০৬ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ নাগাদ সময়ে হিন্দুকুশ পর্বতের দক্ষিণে রাজত্ব করতেন ভারতের সুভগসেনা। সে সময় গ্রীকরা পুনরায় ভারতবর্ষ আক্রমণ করে এবং কাবুল ও আরাকোশিয়ার পর দখল করে নেয় পাঞ্জাবের কিছু অঞ্চল। তবে গ্রীকরাজ ডিমেট্রিয়াস নিজেকে ভারতের রাজা বলেই প্রচার করতেন। ডিমেট্রিয়াস ও তাঁর পরবর্তী গ্রীক রাজাদের মুদ্রার এক পিঠে গ্রীক এবং অন্য পিঠে ভারতীয় নিদর্শণ আছে। ব্যাকট্রিয়ার গ্রীকরাজা দ্বিতীয় কদফিসেস (মহারাজা গোজান) এবং তাঁর পুত্র বাসুদেবের মুদ্রার এক পিঠে নিজেদের রাজমূর্তি ও অপর পিঠে শিব মূর্তি আঁকা আছে। আর সমগ্র আফগানিস্তান জুড়ে ছিল বৌদ্ধধর্ম ।
আফগানিস্তানের (Afghanistan) জালালাবাদ শহরের আগে নাম ছিল “নগরহার।” এই নগরহারের মাত্র ৫ মাইল দূরে হাড্ডাতে সমাধিস্থ ছিল বুদ্ধদেবের মাথার হাড়। বৌদ্ধ নগরীর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে কোহিস্থানে। হিউয়েন সাঙের সময়ে বাহ্লিক (বলখ) এলাকায় ছিল একশো বৌদ্ধ বিহার এবং তিন হাজারেরও বেশি বৌদ্ধ ভিক্ষু সেখানে থাকতেন। আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত কুনভুজ এলাকায় ব্যাপকভাবে ছিল বৌদ্ধ প্রভাব। বাহ্লিকের (বলখ) রাজধানী ছিল হিউয়েন সাঙের ভাষায় “দ্বিতীয় রাজগৃহ।” এছাড়াও গাজা, বামিয়ান, কপিসা নগরী ছিল প্রকৃতপক্ষেই বৌদ্ধ নগরী। বৌদ্ধদের পাশাপাশি হিন্দুরাও এখানে বসবাস করতেন। মহাভারতের যুগের গান্ধার দেশের রাজকন্যা ছিলেন দু্র্যোধন-জননী গান্ধারী। আফগানিস্থানের নাম তখন ছিল “গান্ধার।” পরবর্তীকালে হিন্দুকুশ থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিশাল এলাকা ছিল একসময় অখণ্ড ভারতবর্ষের অংশ ।