‌দাঙ্গার সময় কেজরিকে ছবার ফোন করেছিলেন তাহির‌

দিল্লিতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলী দিল্লির সাধারণ জনতা মনে হয় এখনো ভুলে যায়নি, হয়তো সেই কারণেই তাহির হোসেনের উপর আইনের পাঞ্জা ধীরে ধীরে এঁটে বসছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী ?
• এন.কে. সুদ :একটি বিষয় এতদিনে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, দিল্লির দাঙ্গা পূর্বপরিকল্পিত ছিল, তাতে আই এস আই এবং তাদের স্লিপার সেলগুলির সরাসরি হাত ছিল, স্লিপার সেলের সদস্যরা অবস্থানকারীদের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। দাঙ্গার সময়টা লক্ষ্য করুন। তা ঘটানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের মাঝে, ২৪ ফেব্রুয়ারি। আরও কিছুদিন পিছনে গেলে দেখা যাবে এই ঘটনার পরিকল্পনা আরও কয়েকমাসের পুরোনো। যখন আম আদমি পার্টির এমএলএ আমানাতুল্লা খানের নেতৃত্বে পুরোনো দিল্লিতে একটি মন্দির ভেঙে ফেলা হয় এবং দিল্লির তৎকালীন পুলিশকর্তা কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে ঘটনাটিকে চেপে দেওয়ার দিকে বেশি আগ্রহ দেখান। এরপর শাহিনবাগের জমায়েত শুরু হয় এবং গণ্ডগোলের মাঝে এই পরিকল্পনা করতে আরও দু-মাস সময় পেয়ে যায় দাঙ্গাকারীরা। এদের পরিকল্পনার চরম মুহূর্ত এসে উপস্থিত হয় যখন আপ বিপুল ব্যবধানে জিতে দিল্লিতে আবার ক্ষমতা দখল করে। আমার মতে পাকিস্তানে এখন যাঁরা শাসন ক্ষমতায় আছেন তাঁরা এবং এখানকার বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি চায়নি দিল্লিতে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার গঠিত হোক। তারাও এই জয়ে প্রচ্ছন্ন মদত জুগিয়েছেন। ১১ মার্চ ভোটের ফলাফল আসার সঙ্গে সঙ্গে এই দাঙ্গার পরিকল্পনায় সিলমোহর পড়ে। কারণ যখন নিজেদেরই সরকার তখন আর কীসের ভয়! আমি আগেই বলেছি এই দাঙ্গায় পাকিস্তানের আইএসআই তাদের স্লিপার সেল এবং আম আদমি পার্টির নেতাদের সরাসরি সংযোগ ছিল। তবে একে দিল্লি আইবি-র পক্ষেও এক বিশাল ধাক্কা বলা যায়। কারণ তাহির হোসেনের বাড়িতে পাঁচশোর বেশি বহিরাগতের জমায়েত হলো, অস্ত্রশস্ত্র, অ্যাসিড, পাথর ও বোমা জমাকরাহলো, দাঙ্গার পর তাহির হোসেন পালিয়ে গেলো— এই ঘটনাক্রমের কোনো আঁচ তারা পায়নি। এই খামতির দায় দিল্লি পুলিশকর্তা শ্রী পট্টনায়েকের উপর বর্তায়।
একজন দিল্লিবাসী হিসেবে আমি বলছি, তাহির হুসেনের উপর এফআইআর করে এখন আর কোনো লাভ নেই। দিল্লিবাসীর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে, এখন তারা এমন কড়া অ্যাকশান। দেখতে চায়, যাতে দিল্লির বুকে ভবিষ্যতে আর কোনো দাঙ্গা না হয়। আপের সর্বধর্ম সমন্বয়ের নাম যদি জেহাদি মুসলমানদের আস্ফালন হয়, তাহলে বরং সেনাবাহিনীর হাতে আইনশৃঙ্খলার ভার তুলে দেওয়া হোক। তাতে অন্তত পনেরো কোটি—একশো কোটির গল্প রোজ শুনতে হয় না।
আরেকটি বিষয়, এই তাহির হুসেন দাঙ্গার কদিন আমানাতুল্লা খানকে ছাপান্নবার, মনীশ সিসোদিরাকে দশবার এবং কেজরিওয়ালকে ছয়বার ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে, যা আম আদমি পার্টির এই ঘটনাকে প্রত্যক্ষভাবে মদত দেওয়ার দিকে আঙ্গুল তুলে ধরে। আজ কেজরিওয়াল মৃতের পরিবারপরিজনের মুখ। টাকা দিয়ে বন্ধ করতে চাইছেন, কিন্তু দিল্লিবাসী এতে ভুলবে না।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীঅমিত শাহকেও আমি বলতে চাই, দিল্লির জনগণ সেইদিন আপনাদের দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করবেন যেদিন আপনারা এইসব অপরাধী এবং তাদের পিতৃস্থানীয়, যারা পাকিস্তানে বসে আছে তাদের উপর কোনো কড়া কদম ওঠাতে পারবেন।
দিল্লির জনতা তো কোনো সদর্থক পদক্ষেপ দেখতে চাইছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত যদি দেখা যায় তো কিছু এফআইআর করা ছাড়া আর কিছুই হয়নি…
• এন.কে. সুদ : দেখুন পুলিশের কিছু কিছু কার্যপদ্ধতি আছে, তারা চট করে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না, কিন্তু জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তো আক্রান্ত জায়গাগুলিতে ঘুরে গিয়েছেন। উনি মুসলমান সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের সাহস জুগিয়েছেন, খুব ভালো কথা। পাশাপাশি উনি আক্রান্ত হিন্দুদের সঙ্গেও একই রকমভাবে কথা বলেছেন। বিজেপির তরফ থেকে যদি কোনো নেতার নাম করতে হয় তাহলে আমি শ্রীকপিল মিশ্রের নাম করব। আমার মতে শ্রী মদনলাল খুরানার পর বোধ হয় এই প্রথম দিল্লি বিজেপিতে একজন বলিষ্ঠ এবং রাষ্ট্রবাদী নেতার আগমন ঘটেছে।
অমিত শাহজীর উপর আমি এখনো ভরসা রাখি, কিন্তু মনে হয় একটু দেরি হয়ে গেছে।
D দেখুন বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারকে তো মূলত হিন্দুদের স্বার্থরক্ষাকারী সরকার বলা যায়, তবে তাদের তরফ থেকেও তেমন কোনো সদর্থক পদক্ষেপ তো আসেনি?
•এন.কে. সুদ : প্রধানমন্ত্রী শ্রীনরেন্দ্র মোদী গত কয়েকবছর অনেক ভালো কাজ করেছেন, রাজনীতিতে তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আর এই দাঙ্গা রুখতে ব্যর্থতার দায় আমি অন্তত তার উপর চাপাতে চাই না। তবে দেশের এইসব অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা দমন করতে গিয়ে যদি সরকার আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে তার কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে সেই চিন্তা করে কিংবা ভারতের সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা.., তাহলে কোনোদিন এইসব সমস্যাকে নির্মূল করা সম্ভব নয়। সরকারকে সদর্থক পদক্ষেপ নিতে হবে, এইসব দাঙ্গাবাজদের যে বা যারা উসকানি দিচ্ছে তাদের কড়া হাতে দমন করতে হবে। পাকিস্তানে বসে থাকা এদের কর্তাদের দুনিয়ার সামনে উলঙ্গ করতে হবে। আজকের দিনে আমি কেজরিওয়ালজীকেও সতর্ক করতে চাই। কারণ যতদিন আপ সরকার ক্ষমতায় থাকবে, এরকম দাঙ্গা-ফ্যাসাদ হতেই থাকবে, কারণ আপ সরকারের নেতারা এইসব ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আর আপ সরকারের হাত-পা বাঁধা। আর যাঁরা এবার পরিকল্পনা করে দিল্লিতে বিজেপিকে হারিয়েছেন, তাদেরও এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার দায়ভার নিতে হবে। সঙ্ঘের সক্রিয়তা খুব চোখে পড়েছে। সদ্য সর্বপ্রথম হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি এবং হিন্দুদের স্বার্থরক্ষাই সঙ্ঘের প্রাথমিক কাজ। আমার মনে হয়েছে, দিল্লির ঘটনায় সঙ্ঘের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। আর কেন্দ্রীয় সরকার যদি দিল্লিতে কোনো পদক্ষেপ না চায়, তবে তারা পাকিস্তানের উপর কিছু পদক্ষেপ নিক। তাতেও কাজ হবে।
খবরে প্রকাশ যে এফবিআই, আইএসআই-এর মতো বিদেশি এজেন্সিগুলির এই ঘটনায় সরাসরি মদত আছে, এটা কি আমাদের গোয়েন্দাদের ব্যার্থতা নয় ?
• এন.কে. সুদ : দেখুন গোয়েন্দা এজেন্সিগুলির কাজ হচ্ছে তারা বিভিন্ন সূত্র থেকে যেসব খবর পায় সেগুলি সম্পর্কে সরকারকে অবগত করা, এক্ষেত্রেও তারা তা করেছে, এর পরের পদক্ষেপ তো প্রশাসন বা পুলিশের নেওয়ার কথা। আমার কাছে তাহির হোসেন বা আমানাতুল্লা খানের ব্যাঙ্ক খাতাতে কত টাকা এসেছে তার খবর আছে, কিন্তু খবরের আদানপ্রদান ছাড়া আমরা আর কী করতে পারি ? পুলিশের উপর বন্দুক ও পাথর হাতে আক্রমণ হলে যদি তাদের গুলি চালানোর অর্ডার নেওয়ার দরকার হয় তার থেকে বড়ো রসিকতা আর কী হতে পারে ? খলিস্তানি সন্ত্রাসবাদীরা এতে যুক্ত ছিল, তারা শাহিনবাগে ধরনামঞ্চে খাবার পরিবেশন করেছে। অথচ ভজনপুরা অঞ্চলে যখন দাঙ্গা হলো, তখন দেখা গেল দাঙ্গাকারীরা শিখ ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে সবার আগে আগুন লাগিয়েছে। সবাই যদি ভাবে তাদের একমাত্র কাজ সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়া, এভাবে তো কাজ হয় না, কারণ মুসলমানরা আদৌ সংখ্যালঘু নয়। দিল্লি সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তা মেনে নেওয়া যায় না।
আমাদের মনে প্রশ্ন উঠছেশাহিনবাগের ধরনামঞ্চের বিক্ষোভকারীদের উপর যদি কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হতো তা হলে হয়তো ঘটনাবলী এতটা হাতের বাইরে চলে যেত না।
এন.কে. সুদ :সরকার হয়তো চায় না যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের ভাবমূর্তিখারাপ হোক, তাই হয়তো এই দূর্বলতা। তবে আর নয়, অনেক হয়েছে। এবার বলপ্রয়োগ করা দরকার, এদের এবার এখান থেকে উঠিয়ে দেওয়া উচিত। এরা মহিলাদের সামনে রেখেছে, আমাদেরও তো মহিলা পুলিশ রয়েছে। তাদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে কেন ? পরোনো দিনে মুসলমান। শাসকরাও হিন্দুসেনাবাহিনীর সামনে গোরুর পাল রেখে যুদ্ধ করত, সেরকমভাবে এরা লড়ছে। এখন চাণক্যনীতি বা অন্য কোনো শক্ত ধরনের নীতির প্রয়োগ প্রয়োজন। না হলে এই দন্দগে ঘা শরীরে থেকেই যাবে। এরা এখান থেকে উঠবে না, কারণ এরা টাকা-পয়সা পাচ্ছে, দিল্লি সরকারের মদত পাচ্ছে। এদের আন্দোলন সফল হলে দিল্লির খুব ক্ষতি হয়ে যাবে।
এন কে সুদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.