‘দ্য ক্যাট ইজ আউট অফ দ্য ব্যাগ!’
অতি পুরাতন একটি প্রবাদ বাক্য। সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রবাদ বাক্যটি বেদবাক্যের মতোই সত্য। সেই সত্য এবার প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। হ্যা, দিল্লির দাঙ্গা তথা ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনার নেপথ্য কুশীলবদের পরিচয় প্রকাশ্যে আসছে একের পর এক। পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে চিত্রটা প্রতিদিন— নৃশংস হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, পেট্রোল বোমা এবং পাথর বাজির আস্ফালনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের শিকড় কত গভীরে। দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনগুলি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। অঙ্কের মতো মিলে যাচ্ছে দু’মাস আগের ঘটে যাওয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রক্তচক্ষু রঞ্জিত রেললাইন ওপড়ানোর আন্দোলনও কোনও সাময়িক ঘটনা ছিল না। কোনোটাই ছিল না দুর্ঘটনা এবং প্রতিটি ঘটনার পিছনেই ছিল একটা রাজনৈতিক শক্তি যারা বহু বছর আগেই সন্ত্রাসকে মূলধন করে অর্থগৃধু রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরেছিল অস্তিত্ব বজায় রাখার তাগিদে। তারা নিজেদের মেরুদণ্ড বিকিয়ে দিয়েছিল অর্থের কাছে নিজেদের মস্তিষ্কগুলোকে বন্ধক দিয়ে। আর পশ্চিমবঙ্গে ডেকে এনেছিল এক কালান্তক রাজনীতিকে যার শিকড় আজ গোটা দেশ তো বটেই, রেহাই দেয়নি রাজধানী দিল্লিকেও।
এরা কারা? কী এদের পরিচয় উদ্দেশ্যই বা কী?
সে কথায় যাবার আগে আসুন দেখে নিই কতকগুলো তথ্য যা সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে প্রকাশিত হয়ে চলেছে একের পর এক। লোকের হাতে হাতে মোবাইলের স্ক্রিনে ফুটে উঠছে সেই ভয়ংকর সত্য এবং মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে সেই প্রবাদবাক্য— ‘দ্য ক্যাট ইজ আউট অব দ্য ব্যাগ।অনেকেই রসিকতা করে বলছেন, ক্যাট নয়। ওটা আসলে র্যাট। অর্থাৎ দ্য র্যাট ইজ আউট অব দ্য ব্যাগ। বলছেন, কারণ দিল্লির ভয়াবহ দাঙ্গার নকশা যাঁরা করেছিলেন তারা ক্যাট হতে পারেন না। বেড়াল যত ছোটোই হোক না কেন, বাঘের পরিবারভুক্ত। দাঙ্গা যারা করেছে, যারা একটা মানুষকে মারতে চারশোবার ছোরা চালিয়েছে তাদের বাঘের পরিবারভুক্ত বলে সম্মান জানালে তা হবে হাস্যকর। আসলে ওই নপুংসকের দল ইদুরের মতোই। অন্ধকার জগতের জীব। মাঝে মাঝে গর্ত থেকে উঁকি মেরে মানুষের সর্বনাশ করে ফের লুকোয় গর্তে। কারা এরা? আসুন দেখি :
সত্য : ১। কিছুদিন আগেই টেলিভিশনের কল্যাণে গোটা দেশ চিনে গিয়েছিল এক দেশদ্রোহিনীকে। তার নাম অমূল্য লিওনা নরনহা। কর্ণাটকে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসমিলি নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসির নাগরিকত্ব আইন বিরোধী এক জনসমাবেশে কেরল নিবাসিনী ওই মহিলা অমূল্য স্লোগান তুলেছিলেন, পাকিস্তান জিন্দাবাদ। তার হাত থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে নিজেকে নির্ভেজাল ভারতীয় প্রমাণ করার নাটক করেছিলেন আসাদুদ্দিন। অমূল্যও পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু না, বাঁচেননি। পুলিশি হেফাজতে তিনি কী জবানবন্দি দিয়েছেন?
শুনুন তাহলে। ১৪ দিনের জেল হেফাজতে থাকা ওই দেশবিরোধী মহিলা কবুল করেছেন, নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে দু’লক্ষ টাকা দিয়েছে ওই আইনের বিরুদ্ধে একটি টিম তৈরি করতে। ওই সংগঠনগুলিই তার এবং তার দলের সঙ্গীদের যাবতীয় খরচের দায়ভার বহন করে। ওইসব সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানগুলিই জনসমাবেশে কী বলতে হবে, কীভাবে উস্কানি দিতে হবে, কীভাবে ভুল বোঝাতে হবে তার প্রশিক্ষণ দেয় এবং জনসমাবেশে বলার জন্য ভাষাও লিখে দেয়। অমূল্য ফাঁস করে দিয়েছে, ভাষণ, বক্তব্য, স্লোগান ইত্যাদি লেখার জন্য একদল দক্ষ কনটেন্ট রাইটার রয়েছেন যাঁরা সকলেই বামপন্থী এবং অতিবামপন্থী দলভুক্ত। এরা কেউ উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করে, কেউ ভাষণের খসড়া তৈরি করে, কেউ মাঠে ময়দানে ঘুরে খবরাখবর সংগ্রহ করে। তাদের অধীনস্থ হিসেবে তিনি এবং তার টিমের সদস্যরা জনমত সংগঠিত করে এবং এই কাজে তার নিজের বাবা-মাও যুক্ত রয়েছেন। উল্লেখ্য, অমূল্যকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর তার বাবা বিবৃতি দিয়েছেন, অমূল্য একটি ইসলামি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। অনেক বারণ করা সত্ত্বেও অমূল্য নাকি তাদের কথা শোনেননি। কিন্তু অমূল্যর বক্তব্য প্রমাণ করে, তার বাবাও মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছেন। এবং এঁরা সকলেই বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
২। দিল্লির শাহিনবাগে প্রায় গত তিনমাস ধরে দীর্ঘ পথ অবরোধ করে যারা বসে আছেন সেই নারী-পুরুষ সকলেই কেন এই কষ্টসাধন করছেন? বেশ কয়েকটি ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন মিডিয়ার সাক্ষাৎকারে তারা স্বীকার করেছেন, তাঁর শাহিনবাগে ধরনার জন্য টাকা পাচ্ছেন। প্রতিদিন বিরিয়ানির প্যাকেট পাচ্ছেন। প্রতিদিন কেউ রোজগার করছেন ৫০০ টাকা। কেউ ৮০০ টাকা। কেউ ১২০০ টাকা। কে জোগাচ্ছে টাকা। অশিক্ষিত নিরুপায় সংখ্যালঘু মানুষগুলো জানে না, এত টাকা কোথা থেকে আসছে। তাদের হাতে প্রতিদিন লাইন করে যারা টাকা তুলে দিচ্ছেন, তারা বলেছেন, টাকা জোগাচ্ছেন আল্লা। কোনো ইনসান টাকা জোগাচ্ছে না। এই সব আল্লাও নাকি বামপন্থী আল্লা এবং এরা সকলেই মুসলমান। এদের হাতে প্রতিদিন কোনো এক সুড়ঙ্গপথে পৌঁছে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। নগদে যা তারা প্রতিদিন বিলি করে যাচ্ছেন ধরনাকারীদের মধ্যে।
৩। দিল্লির দাঙ্গার পিছনে মূল কালো হাতটি যার বলে অভিযোগ সেই আম আদমি পার্টি নেতা তাহির হুসেইন দাঙ্গার দিন প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তার বাড়ি কে বা কারা দখল করেছিল, তা তিনি জানেন না। ঘটনার সময় তিনি বাড়িতেও ছিলেন না। কিন্তু প্রকাশ্যে চলে আসা ভিডিয়ো ক্লিপিংসে দেখা যাচ্ছে, তার উপস্থিতিতেই তার বাড়ির ছাদ থেকে পাথর ছোঁড়া হচ্ছে। খোলা রাস্তায় আমজনতার ওপর ছোঁড়া হচ্ছে পেট্রোল বোমা। পুলিশের তদন্ত চলাকালীন দেখা যাচ্ছে, ছাদময় ছড়িয়ে পেট্রোল বোমা ভর্তি একাধিক ক্রেট। অজস্র ইট এবং পাথরের টুকরো। আর সমস্ত আক্রমণটি পরিচালনা করছেন একটি লাঠি হাতে নিয়ে তাহির হুসেইন স্বয়ং। বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র অভিযোগ করেছেন, আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মাকে খুন করেছেন তাহির হুসেইনই। এছাড়া আরও তিনজনকে খুন করেছেন তাহির অত্যন্ত নৃশংসভাবে। তাঁকে সাহায্য করেছেন বেশ কয়েকজন জেহাদি যুবক যারা সকলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত।
৪। দাঙ্গায় ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মুস্তফাবাদ, করাবল নগর, চমন পার্ক, শিববিহারের মতো এলাকাগুলির বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের বাড়িতে ট্রাক্টরে করে ইট বয়ে আনা হচ্ছিল বিভিন্ন ইটভাটা থেকে। প্রকাশ্যে বলা হচ্ছিল, নির্মাণকাজের জন্যই ইট আনা হয়েছিল। কিন্তু দাঙ্গার সময় লক্ষ্য করা গেছে, বিভিন্ন বাড়ির ছাদে সংগৃহীত ওই ইটগুলিকেই ব্যবহার করা হয়েছিল দাঙ্গায় বিরোধীপক্ষের ওপর আক্রমণ হানতে।ইটের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন বা গুরুতর আহত হয়েছেন বহু মানুষ যাঁদের বেশিরভাগই অমুসলমান। এদের কয়েকজনের অবস্থা সংকটজনক।
৫। আউটলুক ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত জীবনপ্রকাশ শর্মার একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে, দাঙ্গার অনন্ত মাসখানেক আগে থেকেই ‘পিঞ্জরা তোড়’ বা ‘খাঁচা ভাঙা’নামে একটি ছাত্রী সংগঠন দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিল, ধরনার আয়োজন। করেছিল। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে ১২ জানুয়ারি ২০২০-র মধ্যে সংগঠনটি বেশ কয়েকটি মোমবাতি মিছিলও বার করে। জানুয়ারি মাসেই তারা সিলমপুর, খাজৌরী খাস, কদমপুরী, চঁাদবাগসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সাময়িকভাবে হলেও শাহিনবাগের কায়দায় মুসলমান মহিলাদের ধরনা অবস্থানে বসিয়ে দিয়েছিল। এই পিঞ্জরা তোড় নামক সংগঠনটি বিভিন্ন এলাকায় এমন অশান্তি সৃষ্টি করছিল যে সংখ্যাগুরু হিন্দুরাও ভীত এবং সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল। স্থানীয় এক মুসলমান মহিলাও বিবৃতি দিয়েছেন, সংগঠনটির সদস্যারা কেউ স্থানীয় বাসিন্দা নন। এরা সকলেই একটি অতি বাম সংগঠনের সদস্যা যারা স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভারত সরকার, বিজেপি এবং হিন্দু বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছিল। ওই মহিলার স্পষ্ট বক্তব্য, ১৯৯২ সালে বাবরি ধাঁচা ধ্বংসের পর হিন্দুমুসলমান সংঘাত হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবার পুরনো সম্পর্ক ফিরে এসেছিল। সেই সুস্থ পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে পিঞ্জরা তোড় নামক সংগঠনের অতিবাম সদস্যরাই। এদের উদ্যোগেই দাঙ্গার দিনগুলোতে সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুদের ওপর অবিরাম হামলা চালিয়ে গেছে।
৬। দাঙ্গা শুরু হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকে বিভিন্ন ইসলামিক ধর্মগুরু এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উস্কানিমূলক বিবৃতি দিচ্ছিলেন। এসবের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামিক ধর্মীয় নেতারা এমনকী বেশ কিছু সাহিত্যপ্রেমী মুসলমান তরুণ-তরুণীও ফেসবুক এবং টুইটারের মাধ্যমে হিন্দু-বিরোধী প্রচার চালাচ্ছিল তীব্র গতিতে। কখনও তা লাইভ অডিয়ো-ভিস্যুয়াল মাধ্যমে, কখনও বা কবিতা ও ছড়ায়। এই সমস্ত প্রচারগুলিই প্রমাণ করছে, দাঙ্গা পূর্ববর্তী পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করতে একটি সঙ্ঘবদ্ধ প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই, যার ফলাফল দিল্লির নৃশংস দাঙ্গা এবং কমবেশি ৫০ জনের মৃত্যু। অজস্র মানুষ আহত এবং নিখোঁজ। হয়তো বা মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে আরও কিছুদিন। তারপরও চলবে চোরাগোপ্তা হত্যালীলা।
এই কয়েকটি সত্য একথা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, দেশের অভ্যন্তরে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দাবার বোর্ডের ‘বোড়ে’ হিসেবে ব্যবহার করেছে কিছু বামশক্তি এবং কিছু ইসলামিক ধর্মীয় সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ। বামপন্থিদের অবদানই বেশি, কারণ বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলি এখন ভুগছে অস্তিত্বের সংকটে। আর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে মাওবাদী নেতা কিষেনজীর মৃত্যুর পর গোটা ভারতবর্ষের অতি বামপন্থীদের ‘টাকা আদায়’-এর ব্যবসাটা বেশ বড়ো রকমে ধাক্কা খেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মাওবাদী দলগুলিতে নাম লেখানো তরুণ-তরুণীদের অনেকেই এখন শুধুমাত্র পেটভাতায় কাজ খুঁজতেও নেমে পড়েছে। এরকম একটা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরের সন্ত্রাসবাদী মুসলমান সংগঠনগুলি যারা পাকিস্তানে মদতে যে কোনো পথে ভারতের সর্বনাশ করতে উদ্যত। এরাই বামপন্থী ও অতি বামপন্থী সংগঠনগুলির হাতে মুঠো মুঠো টাকা তুলে দিচ্ছে। এরকম ঘটনা যে এই প্রথম ঘটছে তা নয়। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা থেকে বামপন্থীদের হঠাতে দেশি বিদেশি অর্থের জোগানদারদের মদতে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছিল। কৃষকরা নয়, সিঙ্গুরের আন্দোলনে কৃষকের মুখোশ ছিল এই মাওবাদীরাই। নন্দীগ্রামের জনঅভ্যুত্থানের নেপথ্য কারিগরও ছিল মাওবাদীরাই। এরাই গোটা জঙ্গলমহলকে তুলে দিয়েছিল বাম-বিরোধী মূল রাজনৈতিক শক্তি তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে।
কিষেনজীর মৃত্যুর পর মনে হয়েছিল, মাওবাদীরা হয়তো নিঃশেষ হয়ে গেছে। কিন্তু না রক্তবীজদের আয়ু এত সহজে শেষ হয় না। যেই ‘৭১ সাল থেকে নকশালবাদীদের উত্থান থেকে শুরু করে আজকের ‘পিঞ্জরা তোড়’সংগঠন অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসবাদমানবতাবাদের মুখোশ পরে। বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠনও হয়তো মিলেমিশে রয়েছে ওদের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গই এদের পোলট্রি ফার্ম। এখান থেকেই শক্তি সঞ্চয় করে এরা গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং নাগরিকত্ব আইন চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এরা সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করতে নেমে পড়েছে। কারণ সংখ্যালঘু সংগঠনগুলির হাতে রয়েছে প্রচুর কাচা টাকা। সাম্প্রতিককালে পশ্চিমবঙ্গে ভয়ংকর সন্ত্রাসী চেহারা নেওয়া রাজ্যপাল বিরোধী ছাত্র আন্দোলনগুলিও যে ওই কাঁচা টাকায় মদতপুষ্ট তা বোধহয় বলার অবকাশ রাখে না। আগামীদিনে বামপন্থী, অতি বামপন্থী এবং সংখ্যালঘু সংগঠনগুলির সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাস হয়তো আরও ভয়াবহ চেহারা নেবে। দিল্লির মতো সন্ত্রাসী দাঙ্গার শিকার হবে আরও অন্যান্য রাজ্যও, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলের মতো রাজ্যগুলি যেখানে বামশক্তি একদা ক্ষমতার অলিন্দে দিনাতিপাত করেছে। সহজে সেই ক্ষমতার আস্বাদ ফিরে পাবার সুযোগ তারা হারাতে চাইবে না। দাঙ্গার নেপথ্য কারিগর হিসেবে বামপন্থীদের এই বিশ্বাসঘাতকতার ভূমিকা নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার আগে ও পরে, বিশেষ করে কাশ্মীরের রাজনীতিতে পাকিস্তানপন্থী মনোভাব নিয়ে বামপন্থীদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ইতিহাস আরও লেখা রয়েছে কালো অক্ষরে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের নিয়ে এমন রাজনীতি, তাও শুধু অর্থের লোভে, এর আগে দেখা যায়নি।
সামনে ঘন অন্ধকার। অতএব এখন থেকেই সার্বিক জনগণকে সাবধান হতে হবে। বুঝতে হবে, যতই সংখ্যালঘুরা দাবি করুক না কেন, দাঙ্গা হয়েছে বিজেপি তথা আর এস এসের প্রত্যক্ষ মদতে, বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে তা মেনে নেওয়া যাবে না। কারণ তা যদি সত্যিই হতো, তাহলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতো। হিন্দুদের মরতে হতো না। হাসপাতালে আহতের মধ্যে হিন্দুর সংখ্যা বেশি হতো না। যে পরিমাণ ভিডিয়ো চিত্র সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মিলেছে, তার একাংশও মেলেনি হিন্দু আক্রমণের। আক্রমণ হলে প্রতি আক্রমণ স্বাভাবিক। সেই প্রতি-আক্রমণ বা আত্মরক্ষার্থেই হিন্দুরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল সাময়িকভাবে। তাতে কিছু সংখ্যালঘুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নিশ্চয়ই। যে কোনো মানুষের মৃত্যুই দুঃখের। কোনো দাঙ্গাই মানুষের মঙ্গল করে না—এই বাস্তবোচিত ভাবনাগুলো এখন বেশি করে ভাবতে হবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে। বামপন্থী এবং অতি বামপন্থী রাজনীতির এই সন্ত্রাসী ভূমিকা নিন্দা করতে হবে সঙ্ঘবদ্ধভাবে এবং দেশের সংবিধান রক্ষার স্বার্থে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে দেশের হিন্দুবাদী ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে রাশিয়া এবং চীনের দালালদের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে ভারতবর্ষকে। এখন তো আবার ওই দলগুলি আইএসেরও দালালি করতে পথে নেমেছে। রাজনীতির এই সন্ত্রাসী রূপ থেকে ভারতকে রক্ষা করা একক ভাবে কোনো দল বা কোনো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষকে সত্য জেনে, সত্য বিশ্লেষণ করে দেশের স্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে। তবে জেহাদি শক্তির হাত থেকে বাঁচবে ভারত, বাঁচবে ভারতবর্ষ।
কেন্দ্র কেন চুপ করে ছিল? একটা প্রশ্ন বার বার উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে কেন্দ্র কেন চুপ করে ছিল ? কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কেন তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হলো? কেনই বা প্রায় তিনমাস ধরে শাহিনবাগ ধরনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হলো? কেনই বা ধর্মীয় উস্কানিমূলক ভিডিয়োগুলির সম্প্রচারে বাধা দেওয়া হলো না? কেন আজও পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘুরা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনগুলিকে? কেনই বা আরও বৃহত্তর প্রচারে নামছেন না রাজ্যভিত্তিক বিজেপি নেতৃত্ব ও কর্মীরা? আশা করা যায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যথাসময়ে এই প্রশ্নগুলির জবাব দেবেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটা বিষয়ে স্থির এবং অবিচল যে গোটা দেশ জুড়েই নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগ হবে যথাযথভাবেই এবং ঠিক সময়েই শুরু হবে নাগরিক পঞ্জীকরণের কাজ। যে অনুপ্রবেশকারী এবং তাদের সমর্থনকারীরা দাঙ্গা বাঁধিয়েছে পরিকল্পিতভাবেই এটা প্রমাণ করতে যে তাদের নাগরিকত্বের সমস্ত প্রমাণপত্রগুলি দাঙ্গায় নষ্ট হয়ে গেছে, তারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, কেউ ই ক্ষমা পাবেন না। অনুপ্রবেশকারীরা প্রত্যেকেই চিহ্নিত হবেন এবং তাদের ভারতবর্ষ ত্যাগ করতে হবে। কারণ ভারতবর্ষ কোনো ধর্মশালা নয়।
সুজিত রায়
2020-03-13