আগে ঠিক ছিল বড়মা-র নাতি শান্তনু ঠাকুর প্রার্থী হবেন না। কিন্তু বড় মা বীণাপানি দেবীর মৃত্যুর পর পরই বদলে গেল মুকুল রায়-কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের কৌশল। কারণ, লড়াইটা এখন শুধু রাজনীতির নয়, ঠাকুরবাড়ির উত্তরাধিকার নিয়েও। বড় মা-র প্রকৃত উত্তরাধিকারী কে? বউমা তথা বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর, নাকি তাঁর ছেলে ও নাতি মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর ও শান্তনু ঠাকুর?
বনগাঁ লোকসভায় বিজেপি-র প্রার্থী হিসাবে মঙ্গলবার শান্তনু ঠাকুরের নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে দিল বিজেপি। সেই সঙ্গে আরও ন’টি আসনে এ দিন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয় বিজেপি সদর দফতর থেকে। সব মিলিয়ে বাংলায় ৩৯টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিল কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল।
এ দিন প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে গিয়ে কয়েকটি নামের উপর বিশেষ জোর দেন বিজেপি মুখপাত্র অরুণ সিংহ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, প্রবীণ সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত। তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে। রন্তিদেববাবু নাগপুর তথা আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের বিশেষ স্নেহধন্য ও ঘনিষ্ঠ বলেই সঙ্ঘ পরিবারে পরিচিত। ফলে লোকসভা ভোটে হাওড়ায় সঙ্ঘ পরিবার তথা আরএসএসের স্বয়ংসেবকরা যে এ বার সক্রিয় থাকবেন তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
বস্তুত বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপর বিজেপি-র নজর আগে থেকেই ছিল। এরই মধ্যে কাকতালীয় ভাবে শান্তনু ঠাকুর নিজেই যোগাযোগ করেন বাংলার বিজেপি পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে। সূত্রের মতে, মমতাবালা ঠাকুরকে সাংসদ করে তৃণমূল যে ভাবে ঠাকুরবাড়ির রাজনৈতিক দখল নিয়েছিল তা নিয়ে যারপরনাই অসন্তুষ্ট ছিলেন শান্তনু। ফলে তিনিই সম্প্রতি আমন্ত্রণ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে আসেন ঠাকুরনগরে মতুয়া বাড়িতে। তার পর সেখানে ধর্মসম্মেলনে বক্তৃতাও দেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর সেই সভায় বিজেপি-র পতাকা ছিল না। ছিল শুধু মতুয়া নিশান। আর তাতেই ঠাকুরনগরে সেদিন তিল ধারনেরও জায়গা ছিল না।
এর কিছুদিন পরেই মৃত্যু হয় বড়মা-র। তার পর থেকে মতুয়া ঠাকুর বাড়ির উত্তরাধিকার নিয়েও এখন দ্বন্দ্ব বেঁধেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টতই ইঙ্গিত করেন, যে হেতু মমতাবালা ঠাকুরই বড় মা-র দেখাশোনা করতেন, তাই প্রকৃত উত্তরাধিকারি তিনি। মমতার সেই মন্তব্যই এখন হাতিয়ার করে নিয়েছেন শান্তনু ও মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। তাতে হাওয়া দিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্বও। তাঁদের বক্তব্য, ঠাকুরবাড়ির অভ্যন্তরীণ বিষয়েও রাজনীতি ঢুকিয়ে দিতে চাইছে তৃণমূল। মায়ের মৃত্যুর পর ছেলেই উত্তরাধিকারী হবেন, সেটাই নিয়ম। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বড় মায়ের ছেলে-নাতির অধিকারও কেড়ে নিতে চাইছে তৃণমূল সরকার। এ কথা বলে, বনগাঁ, বসিরহাট, বারাসত, রানাঘাটে মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে তৃণমূল বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হই হই করে নেমে পড়েছেন তাঁরা।
দেখে নিন কোন কেন্দ্রে কে প্রার্থী-