রাজা সীতারাম রায়ের মা বীরাঙ্গণা দয়াবতীর ডাকাত বধ

সময়কাল : খ্রিস্টিয় সপ্তদশ শতাব্দী।
স্থান : বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলার মধুমতী নদীর তীরে শ‍্যামপুর গ্রাম।
ফিরিঙ্গিসহ অন‍্যান‍্য দস্যুদল মধুমতীর স্রোতে নৌকো ভাসিয়ে এলাকায় লুটপাট চালিয়ে এলাকাকে অস্থির করে রেখেছে সব সময়।
চারপাশে বাঁশবন, জঙ্গল। আর তার মাঝে গ্রাম শ‍্যামপুর। গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি দীঘির পাড়ে এলাকার জমিদার উদয়নারায়ণের বাড়ি। পরিখা দিয়ে ঘেরা। পরিখায় জল থৈ থৈ। তার বাইরে পাঁচিল। সামনে রাস্তা। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি গাছ। বাড়ির সামনে কাছারি বাড়ি ও বরকন্দাজদের থাকার বাড়ি। সব মিলিয়ে ধনী, সাহসী, তরবারি ও ঘোড়া ছোটানোয় দক্ষ জমিদার উদয়নারায়ণ রায়ের নামডাক চারদিকে ।

এই রাজা উদয়নারায়ণের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে এলাকার দুর্ধর্ষ ডাকাত রহিম খাঁ তাঁর এলাকায় ডাকাতি করতে পারে না। কিন্তু তক্কে তক্কে থাকে।
আফগান সৈনিক রহিম খাঁ গোপনে ডাকাতি করতো। শেষে জানাজানি হতেই তাকে নবাব সরকার থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর রহিম পুরোপুরি প্রকাশ‍্যেই ডাকাতি করতে থাকে।
একবার রাজা উদয়নারায়ণ কাজে গেলেন দূর দেশের কাছারি বাড়িতে। রহিম খবর পেল, ফিরতে ২/৩ মাস দেরি হবে। সুযোগ বুঝে তৈরি হলো রহিম।
এক অমাবস্যার রাতে ছোট্ট ডিঙি নৌকো বেয়ে পার হলো রাজা উদয়নারায়ণের বাড়ির পরিখা। তারপর কেউ গাছ বেয়ে, কেউ বা পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢুকলো। তাদের হাতে জ্বলন্ত মশাল। শুরু হলো উদয়নারায়ণের পাইক-বরকন্দাজদের সঙ্গে ডাকাতদলের লড়াই।
শিশু সীতারামকে নিয়ে পরিচারিকাসহ নিজের ঘরে শুয়েছিলেন জমিদার উদয়নারায়ণের স্ত্রী দয়াময়ী। চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাঁর। জানালা দিয়ে দেখলেন, ঘরে ডাকাত পড়েছে।
অমনি শিশুকে পরিচারিকার হেফাজতে রেখে কোমরে তরবারি গুঁজে বল্লম হাতে ছুটলেন।
সিঁড়িতে নামার মুখেই দেখা গেল ডাকাতদলকে। ছুঁড়লেন বল্লম। এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গেল সামনে থাকা এক ডাকাত।
এরপর দয়াময়ী ছুটলেন দেউড়ির দিকে। ইতিমধ্যে গ্রামের লোকজন এসে জড়ো হয়েছে সামনে। তাঁদের বাড়ির বরকন্দাজ সর্দার রঘুনাথ সামনে দাঁড়িয়ে। দয়াময়ী তাদের সকলের মধ্যমণি হয়ে রণরঙ্গিণী মূর্তি ধরে শুরু করলেন তুমুল লড়াই ।

ওদিক থেকে ছুটে এলো দীর্ঘদেহী ডাকাত রহিম খাঁ। এক নিমেষে দয়াময়ীর হাতের বল্লম বিঁধে গেল রহিমের বুকে। মাটিতে চিৎ হয়ে পড়ে গেল সে। অমনি দয়াময়ী তরবারির এক কোপে কেটে দিলেন তার মাথা।
ডাকাতদলের কেউ পালালো, যারা পালাতে পারলো না, তারা ধরা পড়লো।
সর্বাঙ্গে রক্তমাখা দয়াময়ীর রণমূর্তি দেখে অবাক হলো সবাই ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.