বিদেশের মাটিতে স্বাধীনতার ৪০বছর আগে দেশমাতৃকার পতাকা তুলে ব্রিটিশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন এক ভারতীয় নারী

২২ আগস্ট, ১৯০৭, অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতালাভের ৪০ বছর আগের একটি দিন। একজন ভারতীয় নারী, যার বয়স ৪৬, বিদেশে প্রথমবারের মতো পতাকা উত্তোলন করেছিলেন দেশমাতৃকার এবং ব্রিটিশদের দিয়েছিলেন কঠিন চ্যালেঞ্জ । জার্মানির (Germany) স্টুটগার্টে সপ্তম আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেসে পতাকা উত্তোলন করা হয়। যদিও ত্রিভুজাকৃতি পতাকাটি আজকের পতাকার মতো ছিল না। পতাকাটি ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তৈরি হওয়া বেশ কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক পতাকাগুলির মধ্যে একটি ।

এই মহীয়সী নারীর নাম ভিখাজি রুস্তম কামা (Vikaji Rustam Kama)। তিনি ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত পার্সি নাগরিক যিনি লন্ডন থেকে জার্মানি এবং আমেরিকা ভ্রমণ করেছিলেন ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরি করার জন্য। প্যারিস থেকে তাঁর প্রকাশিত ‘বন্দে মাতরম’ পত্রিকাটি প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয় ।

ভিখাজি পতাকা উত্তোলন করে দেশের বিভিন্ন ধর্মের অনুভূতি এবং সংস্কৃতিকে একীভূত করার চেষ্টা করেন। ইসলাম, হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের প্রতিনিধিত্ব করতে সবুজ, হলুদ এবং লাল ব্যবহৃত হত। এছাড়াও, পতাকার মাঝামাঝি ‘বন্দে মাতরম’ লেখা ছিল দেবনাগরী লিপিতে ।

স্বাধীনতার পূর্বে বিদেশের মাটিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন যে মহীয়সী নারী আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেসের ভাষণে কামা বলেছিলেন, ‘ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ধারাবাহিকতা মানবতার নামে কলঙ্ক। এটির মাধ্যমে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ ভারতের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি সভায় উপস্থিত লোকদের ভারতকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে ভারতীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, “এগিয়ে যাও, আমরা হিন্দুস্তানী এবং হিন্দুস্তান হিন্দুস্তানের অন্তর্গত” ।

১৮৬১ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন বোম্বাই (Bombay) (মুম্বই) -এ জন্মগ্রহণ করা ভিখাজির মনে জনগণকে সাহায্য ও সেবা করার চেতনা দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। !১৮৯৬ সালে, বম্বেটে (Bombay) প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার পরে, ভিখাজি রোগীদের সেবা করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। যদিও পরে তিনি নিজেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তবে চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তিনি স্বাধীনতার অনেক বছর আগে ১৯৩৬ সালের ১৩ আগস্ট ৭৪ বছর বয়সে মারা যান ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.