যেমন খুশি বানান লিখলেও মাফ মাধ্যমিকে, পর্ষদের নয়া নিয়মে অসন্তুষ্ট পরীক্ষকরা

 মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা যেমন খুশি বানান লিখলেও পুরো নম্বর পাবে। এমনকী বড় উত্তরের ক্ষেত্রে পূর্ণ নম্বর কেন দেওয়া হয়নি? তার লিখিত কৈফিয়ত দিতে হবে পরীক্ষকদের। ছোট থেকে বড় প্রত্যেকটি প্রশ্নে নির্দিষ্ট পড়ুয়া কত করে পেয়েছে তা খাতায় আলাদা আলাদা বক্স এঁকে উল্লেখ করতে হবে। ভগ্নাংশে নম্বর দেওয়া যাবে না। ছাত্র বা ছাত্রী কোনও নির্দিষ্ট উত্তরে শূন্য পেলেও তা বক্সের মধ্যে লিখতে বাধ্য পরীক্ষকরা। মাধ্যমিকের খাতা দেখার যে নিয়মাবলি পরীক্ষকদের পাঠানো হয়েছে তাতে এমন নির্দেশই দেওয়া হয়েছে। 

দিন দুয়েক আগেই পরীক্ষার্থীদের নম্বর কাটার কারণ উত্তরপত্রে লেখার নির্দেশিকা জারি হয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে। এবার বানানের ক্ষেত্রে নম্বর না কাটার নির্দেশিকা পড়ে শিক্ষকরা হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন। উত্তরপত্র মূল্যায়নের নিয়মকে তাঁরা ‘তুঘলকি নির্দেশ’ বলে মনে করছেন। কলকাতার এক পরীক্ষক জানিয়েছেন, “মাধ্যমিকে খাতা জমা দেওয়ার দিন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। উলটে প্রত্যেকটি প্রশ্নের জন্য আলাদা বক্স করে তার নম্বর লিখতে হবে। অতিরিক্ত সময় কোথায় পাব?”

পর্ষদের কর্তাদের বক্তব্য, “নম্বর নিয়ে এখন চ্যালেঞ্জ করার প্রবণতা বেড়েছে। আরও বেশি করে স্বচ্ছতার নিরিখেই প্রতিটি প্রশ্নের জন্য আলাদা করে বক্সে নম্বর লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” শিক্ষকদের বক্তব্য, প্রতিটি প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ নম্বর উল্লেখ করার পর সেই পাতাতেই মোট নম্বর লেখা হয়। তার পরেও যদি পর্ষদ মনে করে যে প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর আলাদা বক্সে উল্লেখ করতে হবে, তাহলে একটি ছাপানো কাগজ পাঠাতে পারত। 

এক প্রধান পরীক্ষক আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, “নতুন নির্দেশ পালন করতে গিয়ে শিক্ষকরা ভুল করে ফেলতে পারেন। নিজেদের হাতে বক্স এঁকে তাঁদের নম্বর লিখতে হবে। এক্ষেত্রে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপার আশঙ্কা থাকে।” ভুল বানানের জন্যও নম্বর না কাটার নির্দেশেও হতবাক সবাই। আগে প্রশ্নপত্রেই উল্লেখ করা থাকত, ভুল বানানের জন্য নম্বর কাটা হবে। তা এখন বন্ধ। কিন্তু তাই বলে ভুল বানান লিখলেও নম্বর না কাটার লিখিত নির্দেশ বাঞ্ছনীয় নয় বলে মনে করছে শিক্ষামহল। 

কোনও প্রশ্নের উত্তরে পরীক্ষক কেন পুরো নম্বর দেননি খাতাতেই এবার প্রথম তার লিখিত কৈফিয়ত দিতে হবে। শহরের এক স্কুটিনিয়ার জানিয়েছেন, এই বিষয়টি অত্যন্ত অবমাননাকর। এবারের মাধ্যমিকের উত্তরপত্র মূল্যায়নের নির্দেশিকার ফলে পড়ুয়াদের নম্বর যে আরও বাড়বে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু সর্বভারতীয় বোর্ডগুলির কাছে এমন মূল্যায়ন পদ্ধতি হাসির খোরাক তৈরি করবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এক ইতিহাসের শিক্ষক জানিয়েছেন, “আগে ৩ দফায় খাতা জমা দেওয়া যেত। এবার ২ দিন বরাদ্দ হয়েছে। চলতি মাসের ১৩ এবং ২৪ তারিখে সব খাতা জমা দিতে হবে। সব নিয়ম মেনে এত তাড়াতাড়ি কী করে খাতা জমা দেব তা ভেবে আতঙ্কে আছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.