লোককথায় গ্রামদেবী ঘাগর বুড়ি

জেলা বর্ধমানের (Bardhaman) শহর আসানসোল থেকে তিন মাইল পূর্বদিকে স্টেশন কালীপাহাড়ি (Kalipahari)। এই কালীপাহাড়ির পশ্চিমে নির্জন মাঠে রয়েছেন গ্রামদেবী “ঘাগর বুড়ি।” একসময় একটি বুনো গাছের নিচে শিলামূর্তিরূপে বিরাজিতা ছিলেন। বর্তমানে মন্দিরে তাঁর অবস্থান।
পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট্ট নদী—নুনিয়া।
“ঘাগর” শব্দের অর্থ, ঝাঁজ বাদ‍্য ও ঘুঙুর। পুরাণে বিভিন্ন পুজো পদ্ধতির মধ্যে নাচ-গান-বাজনা বাজিয়ে পুজো পদ্ধতির উল্লেখ আছে। এখানে তিনটি শিলামূর্তিরূপে দেবী চণ্ডী রয়েছেন। কাছাকাছি এলাকাটি আদিবাসী অধ‍্যুষিত।
দেবী ঘাগর বুড়িকে নিয়ে রয়েছে লোককথা। দেবীরা সাত বোন। সবাই কাছাকাছি গ্রামের গ্রামদেবী। এর মধ্যে এক বোন ঘাগর বুড়ি বেশি প্রচারের আলোকে ।

স্থানীয় লোককথা অনুসারে, একবার এই পথ দিয়ে এক বরযাত্রীর দল বর নিয়ে যাচ্ছিল কনের বাড়ি। নুনিয়া নদীর তীরে আসতেই দেখা গেল, নদীতে কানায় কানায় বান।
এদিকে বিয়ের লগ্ন বুঝি বয়ে যায় ! এই অবস্থায় সবাই ঘাগর বুড়ির কাছে মানত করলে, লগ্নের মধ্যেই যদি তারা কনের বাড়িতে পৌঁছে যায়, তবে ঘাগর বুড়ির পুজো দেবে।
অমনি দেখা গেল, বন‍্যা উধাও। বরযাত্রীর দল যথাসময়ে কনের বাড়ি পৌঁছে গেল। নির্বিঘ্নে বিয়েও হয়ে গেল। খাওয়া-দাওয়াও হলো। কিন্তু সবাই ভুলে গেল, ঘাগর বুড়ির পুজো দেওয়ার কথা
এরপর দেবী গেলেন রেগে। ফলে ফেরার পথে বরযাত্রীর দল ভেসে গেল নুনিয়া নদীর হড়পা বানে। কারো কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না।
চারদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল। ছড়িয়ে পড়লো দেবী ঘাগর বুড়ির নাম ।

প্রতি বছর ১ লা মাঘ সূর্যের উত্তরায়ণের দিনে মেলা বসে দেবীর থানে। আসানসোলসহ চারপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন এসে ভিড় করেন এই মেলায়।
এই গ্রামদেবীর নিত্য পুজো হয়। এজন্য “চক্রবর্তী” ব্রাহ্মণ আছেন।
এছাড়াও বিয়ের মরশুমে বহু বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এই ঘাগর বুড়ির মন্দিরে।
১৬২০ সালে এখানে প্রতিষ্ঠা হয় ঘাগর বুড়ি মন্দিরের। তখন থেকেই ১ লা মাঘ তারিখে মা চণ্ডীর বিশেষ পুজো এবং সেই সঙ্গে মন্দির এলাকায় মেলা বসে আসছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.