১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ ঠা জানুয়ারি মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিরক্ষর আকবর তৃতীয় মোগল সম্রাট হিসেবে দিল্লির (Delhi) মসনদে বসেছিলেন। পিতৃব্য বৈরাম খাঁ ছিলেন নাবালক বাদশাহ আকবরের অভিভাবক। ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে বৈরাম খাঁকে (Vairam Khan) সরিয়ে নিজের হাতে শাসনভার তুলে নেন আকবর এবং ৪৯ বছর রাজত্ব করে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে মারা যান তিনি।
ধর্ম বিষয়ে জানতে ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে আকবর ফতেপুর সিক্রিতে তৈরি করেন একটি উপাসনা ঘর। জেসুইট পাদ্রীসহ অন্যান্য সব ধর্মের পণ্ডিতদের ডেকে এনে তিনি এখানে ধর্মসভা বসাতেন। দেশ শাসন করার পাশাপাশি আকবরের মনে মনে ধর্মগুরু হবার সাধ জাগে ।
এরপর ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে আকবর তৈরি করে ফেললেন “ঈশ্বরের ধর্ম”—“দীন-ই-ইলাহি।” উচ্চারণ ভেদে “দ্বীন-এ-এলাহী।”
আকবরের রাজসভার মধ্যে এই ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন—
১) বীরবল,
২) যুবরাজ সেলিম,
৩) আবুল ফজল ইবন মুবারক,
৪) যুবরাজ মুরাদ,
৫) কাশিম খান,
৬) আজম খান,
৭) সেখ মুবারক,
৮) আবদুস সামাদ।
আকবর তাঁর প্রবর্তিত “দীন-ই-ইলাহি” ধর্মের মধ্যে কী কী নিয়ম রেখেছিলেন, সেগুলো উল্লেখ করছি :
১) “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ”—ইসলামের এই মূল মন্ত্রের বদলে বলতে হবে :
“লাইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবর খালিফাতুল্লাহ।”
২) দাড়ি রাখা চলবে না।
৩) বোরখা দিয়ে মেয়েদের মাথা ঢাকা যাবে না।
৪) মুসলমান বালকদের খৎনা বন্ধ করতে হবে।
৫) ঈদুল আজহায় গোরুর ব্যবহার চলবে না।
৬) কুকুর ও শুয়োরের মাংস বৈধ বা হালাল করা।
৭) কিয়ামত ও পরকালে বিশ্বাস না করা।
৮) রাজদরবারে সাজদা অর্থাৎ প্রণিপাত বৈধ করা এবং “আসসালামু আলাইকুম” বলা বন্ধ করতে হবে।
৯) মাদ্রাসা শিক্ষা ও মসজিদে উচ্চস্বরে আজান দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
১০) অসংখ্য মসজিদকে ক্লাব ও সরকারি গুদামে পরিণত করা।
১১) কোরাণে আস্থা না রাখা।
১২) দু’চারদিনের জন্য অস্থায়ী বিয়ে করে তাকে তালাক দিতে হবে।
১৩) যৌন সংসর্গের পর বাধ্যতামূলক স্নানের বদলে আগেই স্নান করার আইন চালু করে শরিয়ৎ প্রথা বাতিল করতে হবে।
১৪) সুদ ও মদকে বৈধ গণ্য করতে হবে।
১৫) জুয়া খেলাকে বৈধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
১৬) পুরুষদের জন্য রেশমি পোশাক বৈধ হিসেবে ঘোষণা করা।
১৭) হিজরি সাল ব্যবহার বন্ধ করে নতুন সাল চালু করা।
১৮) মৃতদেহ জলে ডুবিয়ে তারপর কবর দিতে হলে পা দুটি কাবা বা পশ্চিমদিকে রাখতে হবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে “Mujaddid’s conception of Tawhid, Page 12-14, 2nd edition, 1943 গ্রন্থে। এখানে স্পষ্ট লেখা ,
“The Emperor ( Akbar ) had ceased to belive in the Quran, he did not believe in life after death, nor in the day of Judgement. He had gone further. He had determined publicly to use new formula :
“there is no god, but Allah and Akbar is God’s Representative.”
এখানে স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে, আকবর মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত খৎনা বন্ধ, মেয়েদের বোরখা বন্ধ, দাড়ি না রাখা, ঈদুল আজহায় গোরুর ব্যবহার বন্ধ রাখা থেকে শুরু করে কেয়ামতের দিনে বিশ্বাস না রাখার কথা বলেছিলেন। শুধু তাই নয়, শেষে নিজেকে “ঈশ্বরের প্রতিনিধি” হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।
কিন্তু উলেমা সমাজ আকবরের “দীন-ই-ইলাহি”-কে মেনে নেননি। তাই শেষ পর্যন্ত আকবরের “ধর্মগুরু” হবার সাধ অপূর্ণই থেকে যায় ।