পুলিশ প্রমাণ করল তারা হিন্দুবিদ্বেষী‌

যেকোনো রাজ্য বা দেশে যদি পুলিশ, প্রশাসন এবং সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে তাহলে সেই রাজ্য বা দেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা। হয়। সম্প্রতি কলকাতা বইমেলার শেষ দিনে পুলিশ সেই কাজটি করে বুঝিয়ে দিল এরাজ্যে হিন্দুদের গণতান্ত্রিক অধিকার বলে কিছু নেই। যা আছে তা শুধুই তোষণ।

গ্রন্থাগার নিয়ে কবিগুরু মন্তব্য করেছিলেন যে—“এখানে দীর্ঘপ্রাণ ও স্বল্পপ্রাণ পরম ধৈর্য ও শান্তির সহিত জীবনযাত্রা নির্বাহ করিতেছে, কেহ কাহাকেও উপেক্ষা করিতেছে না।” সেই রকম গ্রন্থমেলায় যাঁরা আসেন, গ্রন্থ কেনেন, পড়েন এবং উপহার দেন তাদের মনে আনন্দের অনুভূতি ও প্রশান্তি আসা স্বাভাবিক। সেখানে কেউ কাউকে উপেক্ষা করেন না। এরকম একটা মানব সংস্কৃতির পীঠস্থানে পুলিশ যখন কারো অঙ্গুলি হেলনে গ্রন্থ বিতরণে শুধুমাত্র হিন্দুদের বাধা দেয় তখন আশঙ্কা হয় রাজ্যের সংস্কৃতির ধ্বংসসাধনে আর বিলম্ব নেই। খবরে প্রকাশ, গত ৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার কলকাতার বইমেলার শেষদিনে ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সংস্কৃতির পীঠস্থান পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা বইমেলায় হনুমান চালিশা বিতরণে। বাধা দিয়েছে পুলিশ। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বইমেলার শেষ দিনে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে। এদিন বিকেলের পর থেকে বিশ্বহিন্দু পরিষদের স্টল থেকে বইমেলায় আগত সকলকে হনুমান চালিশা বিলি করা হচ্ছিল। পুলিশ তাতে বাধা দেয়। কেন হনুমান চালিশা বিলিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে পুলিশের সঙ্গে প্রথমে বচসা এবং পরে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন মেলায় আগত হিন্দুত্বপ্রেমী মানুষরা। অথচ এই মেলাতেই অন্য স্টল থেকে সম্প্রদায় বিশেষে বাইবেল ও কোরান বিতরণ করা হয়েছে। তাতে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো রকম বাধা দিতে দেখা যায়নি।

আমার মনে হয়, পুলিশ ভালো কাজই করেছে। কেননা এরাজ্যে হিন্দুরা সঙ্ঘবদ্ধ নয়। তাই পুলিশ সেই সঙ্ঘবদ্ধ হওয়াতে মদত জুগিয়েছেমাত্র। ভারতের অন্য কোনো রাজ্যের পুলিশ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের মতো এতবড়ো বিপ্লব দেখাতে পারেনি। ইতিপূর্বে আমরা পুলিশের বহু বিপ্লবী কর্ম দেখে অভ্যস্ত হয়েছি। যেমন—হাওড়ার তেহট্ট হাইস্কুলে সরস্বতী পূজার দাবি জানাতে গেলে পুলিশ বীরত্ব প্রকাশ করে প্রিয়া বাগ নামে এক কিশোরী ছাত্রীর মাথা ফাটিয়ে রক্ত ঝরিয়েছিল। এরাজ্যে মর্যাদাপুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রের নামে কেউ জয়ধ্বনি দিলে পুলিশ তাকে জেলে পুরে দেয়। বাঙ্গালি হিন্দুর শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গাপূজার বিসর্জন পুলিশ আটকে দেয়। সরস্বতী পূজা ও অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব পালনের জন্য পুলিশ অনুমতি দেয় না। আদালত থেকে সেই অনুমতি নিয়ে আসতে হয়। কাজেই এহেন বীরপুঙ্গব পুলিশ যে হনুমান চালিশা বিতরণে বাধা দেবে এতে আশ্চর্য হওয়ার কোনো কারণ নেই। পক্ষান্তরে পুলিশের বিপ্লবীয়ানা কোন্ কোন্ স্থানে। নেতিয়ে পড়ে সেগুলিও একটু দেখে নেওয়া যাক। যেমন—২০১৩ সালে হেরোভাগ, নলিয়াখালি, গোপালপুর, গলাডহরা প্রভৃতি গ্রামে হাজার হাজার হিন্দুদের ঘরছাড়া করছিল প্রশাসনের অত্যন্ত প্রিয় সম্প্রদায়ের লোকেরা। অথচ পুলিশ সেসময় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বীরত্ব দেখাতে পারেনি।

২০১৫ সালে উস্থি, মন্দির বাজার, ডায়মন্ডহারবার প্রভৃতি থানার প্রশাসনের কাছের এবং প্রিয় লোকেরা হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করে হিন্দুদের ঘরবাড়ি, মন্দির। প্রভৃতিতে ধ্বংসলীলা চালানোর সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন খোদ রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা। তখনও পুলিশ তাদের কাজে বাধা দেয়নি, কারণ তাহলে ওরা পুলিশের কোমর ভেঙে দেবে এবং পুলিশ এদের কাছ থেকে যে মাসোহারা পায় তা বন্ধ হতে পারে সেই ভয়ে। ২০১৫ সালে নদীয়ার কালিগঞ্জ ব্লকে চারজনকে হত্যা করা হয়। নদীয়ার জুরানপুর গ্রামে হিন্দুদের শোভাযাত্রায় মুসলমানদের পরিকল্পিত হামলার সময়ে পুলিশ নীরব দর্শক সেজে ছিল।

২০১৬ সালে মালদা জেলার কালিয়াচকে হিন্দুদের দেবস্থান অপবিত্র করা, ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া এবং শেষে খোদ পুলিশ থানা আক্রমণ করে থানার বাড়ি, গাড়ি, নথি পোড়ানো এবং পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র পর্যন্ত লুঠ করেছিল শাসকদলের আদরের ভাইয়েরা। সেদিন পুলিশ বীরদর্পে পশ্চাদপসরণ করে প্রাণ। বাঁচিয়েছিল। আবার কখনও কখনও দেখা গেছে মারের ভয়ে পুলিশ টেবিলের নীচে বা আলমারির পাশে লুকিয়ে পড়েছে। কাজেই দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে দেশি-বিদেশি। সন্ত্রাসবাদী, পুলিশ-প্রশাসন এবং সরকার। একজোট হয়ে হিন্দুবিদ্বেষী কাজে জান-প্রাণ দিয়ে লড়তে নেমেছে। সুতরাং বইমেলায় যা ঘটেছে তাতে অবাক হবার কিছু নেই।‌

মণীন্দ্রনাথ সাহা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.