২১শে ফেব্রুয়ারির চর্বিতচর্বণ

২০১২ সালে একবার বাংলাদেশে গিয়েছিলাম একটি কবিতা উৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে। শেষ রাতে ঢাকা পৌঁছে বিশ্রাম না নিয়েই হাড় কাঁপানো শীতে সাত সকালে উঠে তৈরি হয়ে সংস্কৃতিমনা বাঙালির তীর্থক্ষেত্র ঢাকায় স্থাপিত সাভার বা শহিদ-স্মৃতিস্তম্ভে সৌজন্যমূলক (বাধ্যতামূলক) হাজিরা দিয়ে দেখলাম সশ্রদ্ধায় খোদিত ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ রফিউদ্দিন অহমেদ (জন্ম ১৯২৬), মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন (২৬), আবদুল জব্বার (৩০), আব্দুল বরকত (২৫), শফিউর রহমান, সালাম, এমনকি আবদুল আওয়াল নামে এক রিকশা চালককের নামও। অবশ্য না গেলেও অসুবিধা ছিল না। নামগুলো এই বাংলায় বসেই শুনে শুনে পড়ে পড়ে মুখস্থ হয়ে গেছে। বরকের ভিটে যে পশ্চিমবঙ্গের মর্শিদাবাদে সেটাও সাহিত্য-ভ্রমণ-বিলাসীদের জানা হয়ে গিয়েছে।
আমরা জানি বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের উপলক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে নিজ়াউদ্দিনের একটি উক্তি, “উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা”। ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকার পল্টন ময়দানের এক জনসভায় এই ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ ধ্বণিত হতে থাকে। এর আগে ১৯৪৮ সালেই ‘বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি’র উদ্যোগে ৩০শে জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয় ও ধর্মঘট পালিত হয়। ঐদিন বার লাইব্রেরির হলে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’ নামে একটি কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি প্রথম সভাতেই স্থির করে ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ হিসাবে পালন করবে। অমনি জারি হয় ১৪৪ ধারা। আন্দোলনে গতি প্রবল হয়। একদিকে আইন, পুলিস-প্রশাসনের বল প্রয়োগ, আমলাতন্ত্রের দুর্নীতি অন্যদিকে মুসলিম লীগের হামলা, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ, মানবাধিকার হরণ। এই পরিস্থিতিতে কৃষক, ছাত্র, শ্রমিকদের লাগাতার আন্দোলন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে চরম নির্যাতনে পূর্ব পাকিস্তান বিধ্বস্ত ছিলই। তার ওপর জোর করে বাংলাভাষীদের ওপর উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার সরকারি ঘোষণায় পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠল। ১৯৫২-র ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থান আসলে বিগত চার বছর ধরে জমাট বাঁধা ক্ষোভেরই বিস্ফোরণ। তীব্র সরাকারি দমননীতি সত্ত্বেও ভাষা আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তানিদের জয় উর্দুপন্থী পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে ছিল এক বড় ধাক্কা। যদিও মুষ্টিমেয় সুশিক্ষিত ছাড়া অধিকাংশ পশ্চিম পাকিস্তানির ভাষা হয় খড়িবোলি হিন্দী নয় পাঞ্জাবী, তবু ভারতীয় সেনা শিবিরে তৈরি ভারতীয় ভাষার কাঠামোয় আরবি-ফারসির অলংকার লাগানো ভারতীয় ভাষাই তাদের কাছে ইসলামিক সংস্কৃতির পরিচায়ক, ন্যায্য উত্তরাধিকারী। ‘বঙ্গালী’ আবার মুসলমান নাকি? ভাষাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমের মূলত পাঞ্জাবি মুসলমান ও পূর্বের বাঙালি মুসলমানদের পারস্পরিক বিদ্বেষ বাড়তেই থাকে। এই বাংলাভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই পরবর্তীতে জন্ম নিয়েছে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। সংক্ষেপে এই পর্যন্ত মোটামুটি সর্বাধিক আলোচিত ও অনেকেরই জানা।
কিন্তু এর আগেও একটা ভূমিকা ছিল যেটা অধিকাংশ জানি না। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ তথা স্বাধীনতার কিছুদিন পরেই পরেই করাচিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্রে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহারের সুপারিশ করে প্রচারমাধ্যম ও বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র উর্দু ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তৎক্ষণাৎ সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের দাবি উত্তাল হয়। কিন্তু পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন বাংলাকে তাদের অনুমোদিত বিষয়তালিকা থেকেই বাদ দেয়। সেই সঙ্গে মুদ্রা ও ডাকটিকিট থেকেও বাংলা অক্ষর বিলুপ্ত করে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজ়লুর রহমান মালিক উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বানানোর তড়িঘড়ি বিশাল প্রস্তুতি নিলে, তাতে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ১৯৪৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি বিশাল ছাত্র-সমাবেশে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের আনুষ্ঠানিক দাবি উত্থাপিত হয়। এই লক্ষ্যে ঢাকায় চলে ছাত্রদের মিছিল ও সমাবেশ।
ভাষাবিদ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, পাকিস্তানের কোনো অংশেই উর্দু স্থানীয় ভাষা ছিল না। তিনি আরও বলেন, “আমাদের যদি একটি দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয়, তবে আমরা উর্দুর কথা বিবেচনা করতে পারি।” সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমেদ চিন্তা ব্যক্ত করেন, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করলে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ ‘নিরক্ষর’ ও যাবতীয় সরকারি পদের জন্য ‘অনুপযুক্ত’ হয়ে পড়বে। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সমর্থনে প্রথম “রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ” গঠন করা হয়। তমদ্দুন মজলিশের অধ্যাপক নুরুল হক ভূঁইয়া এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে সংসদ সদস্য সামসুল হক আহ্বায়ক হয়ে নতুন কমিটি গঠন করেন।
অথচ এরপর ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান গণপরিষদে ‘গণপরিষদ’ (Assembly member ) সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যখন ইংরেজী ও উর্দুর পাশাপাশি সদস্যদের বাংলায় বক্তৃতা প্রদান এবং সরকারি কাজে বাংলা ব্যবহারের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং তাঁর ইংরেজিতে দেওয়া বক্তৃতায় পাকিস্তানের অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবি তোলেন ও সরকারি কাগজেপত্রে বাংলা অপসারণ করার কড়া প্রতিবাদ জানান, তখন শুধু পার্লামেন্ট সদস্য প্রেমহরি বর্মন, ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত এবং শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই তিন হিন্দু বাঙালি তাঁর এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। এই সমর্থন পূর্ব পাকিস্তানের জনমতেরই প্রতিফলন হওয়া সত্ত্বেও তমিজুদ্দিন খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান গণপরিষদের (Constituent Assembly of Pakistan) সকল মুসলমান সদস্য (মুসলিম লীগের) একযোগে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। খাজা নাজ়িমুদ্দিন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তৃতা দেন, “পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ চায় রাষ্ট্রভাষা উর্দু হোক”। এই নাজ়িমুদ্দিন অবিভক্ত ভারত তথা বাংলায় পাকিস্তান গঠনের উগ্র সমর্থক ছিলেন। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি বলার সুযোগ পেলেন, প্রস্তাবটি পাকিস্তানে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা। উর্দুকে লক্ষ কোটি মুসলমানের ভাষা হিসাবে উল্লেখ করে তাঁর বক্তব্য, “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কেবলমাত্র উর্দুই হতে পারে”। অনেক বিতর্কের পর সংশোধনীটি গণপরিষদ বা লেজিসলেটভ অ্যাসেম্বলির ভোটে বাতিল হয়ে যায়। সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে বাঙালি মুসলমানর সদস্যরা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উত্থাপিত সংশোধনীটিকে সমর্থন করতে পারেননি।
পেশায় আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের (১৯৫৫-র আগে পূর্ববঙ্গ বলেই পরিচিত ছিল) অর্থনৈতিক ও ভাষাগত বৈষম্যের লাগাতার প্রতিবাদ করে গেছেন। পরবর্তীকালে মুজিবরের অন্যতম সহায়ক ও আওয়ামী মুসলিম লীগের সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। ইয়াহিয়া খানের নির্দেশ মতো বাঙালি গণহত্যার শুরু হয় ২৫শে মার্চ। ঐ দিনই মুজিবরকে পাকিস্তানি সেনা গ্রেপ্তার করে ও পরে করাচিতে কারারুদ্ধ করে রাখে। এই ইতিহাসও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিবৃত্তের একাধিক সূত্রে সহজলভ্য। কিন্তু তার ৩ দিন পর ২৯শে মার্চ যে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তাঁর পু্ত্র দিলীপ কুমার দত্তকে তাঁদের কুমিল্লার বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি সেনা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের সেনা ছাউনিতে নৃশংস অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়েছিল, সে কথা আমিও এই প্রবন্ধটি লিখতে বসে পৃথক অনুসন্ধান করে জানলাম, ভাষা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই তথ্য পাইনি।
তখন তাঁর বয়স ৮৫ বছর। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারকগ্রন্থে আছে, চোখ-হাত-পা বেঁধে কীভাবে ব্রিগেড অফিসে আনা হত। মাথায় ব্যান্ডেজ, শরীরের ক্ষতে লাগানো তুলো। প্রত্যক্ষদর্শী রমণী শীল নামের এক ক্ষৌরকারের বয়ান থেকে জানা যায়, শেষ কয়েকটি দিন হাঁটার ক্ষমতা ছিল না, হামাগুড়ি দিয়ে তাঁকে চলাফেরা করতে হয়েছিল। তাঁর যে অপরাধের সীমা ছিল না। অবিভক্ত ভারতে দেশ ভেঙে পাকিস্তান গঠনের বিরোধিতা করেছিলেন, পাকিস্তানের জোর করে চাপানো ভাষা নীতির প্রতিবাদও করেছিলেন গোড়া থেকেই। প্রসঙ্গত মুজিবর রহমন অবিভক্ত ভারতে পাকিস্তানেরই প্রবক্তা ছিলেন এবং হিন্দু বাঙালিদের দলে টানতে ‘আওয়ামি মুসলিম লীগ’ নাম থেকে মুসলিম লীগ শব্দটি পরিহার করে ধর্মনিরপেক্ষতার ভান করলেও স্বাধীন বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র করারই পক্ষপাতী যা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ কতিপয় হিন্দু সহযোদ্ধাদের বিরোধিতায় সম্ভব হয়নি। অথচ ভাষা আন্দোলনের প্রচলিত আলোচনায় এইসব হিন্দু বাঙালির উল্লেখ কোথায়?
১৯৭১-এ পাকিস্তানেরসাধারণ নির্বাচনে আওয়ামি লীগের একচেটিয়া নির্বাচনী সাফল্যের পেছনে ছিল ১০০% হিন্দু ভোট। সে সময় পূর্ববঙ্গে হিন্দু বাঙালির জনসংখ্যা ছিল মোটামুটি ২৭%। “অপারেশন সার্চলাইট” (Operation Searchlight) নাম দিয়ে শুরু করে পৃথিবীর বৃহত্তম গণহত্যার [এশিয়া টাইমসের ভাষ্য অনুযায়ী] একচেটিয়া বলি হয়েছিল হিন্দু বাঙালিরা যেহেতু ভাষা আন্দোলনের সূচনা, অগ্রগতি ও সাফল্যের অন্যতম কাণ্ডারী ছিল হিন্দু বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র সমাজই। অবশ্য বাঙালি সাফাই অভিযানেরই অংশ হিসাবে সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যদেরও নিরস্ত্র করে হত্যা করা হয়। ছাত্র বুদ্ধিজীবীরা তো বটেই সারা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে চলা নির্বিচার গণহত্যার সবচেয়ে রোমহর্ষক অধ্যায় ছিল ধর্ষণ মহোৎসব ও নারী নিধনযজ্ঞ। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এই পুরো পরিক্রমাটাই ছিল ‘আরবি’ বাঙালিদের সাম্প্রদায়িক স্বার্থে ‘প্রকৃত’ বাঙালির রক্তে পিচ্ছিল।
সবচেয়ে বড় পরিহাস, বাঙালিদের শায়েস্তা করতে ‘রাজাকার’ নামে কুখ্যাত যেসব বিহারি মুসলমানরা নিয়োজিত হয়েছিল, তারা বাঙালি মুসলিমদের বিদ্বেষভাজন হয়ে কোথায় যাবে? কেন? “মেরা ভারত মহান”এ সবার জন্য দরজা তো খোলা। কাঁটাতার? সে তো লঙ্ঘনের জন্যই, মানবতার খাতিরেও, আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটাতেও। হিন্দু বাঙালি হত্যার ঘৃণিত খলনায়ক তুমুল সাম্প্রদায়িক সেইসব বিহারি মুসলিমদের নিরাপদ পুনর্বাসন হয়ে গেল হিন্দু বাঙালির নিজস্ব বাসভূমি পশ্চিমবঙ্গেই। ধর্মতলা চাঁদনি মল্লিকবাজার এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফুটপাথ জুড়ে ফুলেফেঁপে উঠল তাদের বাণিজ্য। গরীব দরদী কমিউনিস্ট সরকারের বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতায় এই ফুটপাত বেদখল করে রাখা বিহারি মুসলমানদের খুচরো পসারের পেছনে আড়ালে পড়ে গেল বড় দোকানগুলো। লোকসানের দায়ে জবরদখলকারী জঙ্গিদের হাতেই জলের দরে ব্যবসা বাণিজ্য দোকানঘর বিক্রি করে ক্রমশ শহরতলির দিকে সরে যেতে থাকে হিন্দু ব্যপারিরা। ওদিকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু শরণার্থীর জায়গা হল রেললাইনের ধারে, নোংরা বস্তিতে, দণ্ডকারণ্যে কিংবা মরিচঝাঁপির মতো বধ্যভূমিতে! অর্থাৎ প্রাণের ভয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা তাদের বাস্তুচ্যুত করা দস্যু অনুপ্রবেশকারীদের কাছে পুনরায় হেরে গেল এবং হেরেই র্ইল। অথচ তাদেরই উত্তরসূরীরা বামপন্থী ধর্মনিরপেক্ষতার অনুপম শিক্ষায় ‘সাম্প্রদায়িকতা ইজ় ইকোয়াল টু ওনলি হিন্দুত্ব’ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বছর বছর ‘অমর একুশের শহীদ’ হিসাবে আবুল, বরকতদের নাম মুখস্থ করছে ও ‘আ মরি বাংলাভাষার’ জন্য মুজিব ও বাংলাদেশী ভাইজানদের জেহাদ গদগদ চিত্তে স্মরণ করছে।

শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.