কৈলাস ছেড়ে মা দুর্গা মর্ত্যধামে এসে সাময়িক আশ্রয় নেন পৃথিবীতে ‘শিবের ফ্ল্যাটবাড়ি’-তে; সেটা হল বিল্ববৃক্ষ। দুর্গাপূজার বোধনে সায়ংকালে সেই বেলগাছের সামনে গিয়ে বিল্বতরুকে আহ্বান করা হয় — “ওঁ মেরুমন্দর-কৈলাস-হিমবচ্ছিখরে গিরৌ। জাতঃ শ্রীফলবৃক্ষ ত্বমম্বিকায়াঃ সদা প্রিয়ঃ। শ্রীশৈলশিখরে জাতঃ শ্রীফলঃ শ্রীনিকেতনঃ। নেতব্যোহসি ময়গচ্ছ পুজ্যো দুর্গাস্বরূপতঃ।।” শিবের সঙ্গে বিল্ববৃক্ষের যোগ বৃক্ষপূজার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
বাংলায় একটি প্রচল কথা হল: “ধান ভানতে শিবের গীত।” শিব কৃষি দেবতা বলেই ফসল পাবার পর ধান ভানার অবসরে শিবকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলে না লোকসমাজ।
ত্রয়োদশ বা চতুর্দশ শতকের বাংলা সাহিত্য রামাই পণ্ডিতের শূণ্যপুরাণ; সপ্তদশ শতকের কবিচন্দ্র রামকৃষ্ণ রায় এবং অষ্টাদশ শতকে লেখা রামেশ্বর ভট্টাচার্য রচিত ‘শিবায়ন’-এ শিব কৃষকরূপে কল্পিত।
শূণ্যপুরাণে রয়েছে —
“আহ্মর বচনে গোসাঞি তুহ্মি চষ চাস।
কখন অন্ন হএ গোসাঞি কখন উপবাস।”
শিবকে ভিক্ষে করে খেতে হয়, এ বড় বিড়ম্বনা; ভিক্ষা করে কোনোদিন কিছু জোটে আবার কোনোদিন নিরম্বু উপবাস। তার চেয়ে শিব বরং ধান চাষ করুন, ধান ভানুক, শিবের কষ্ট দূর হবে —
“ঘরে ধান্ন থাকিলেক পরভু সুখে অন্ন খাব।
অন্নর বিহনে পরভু কত দুঃখ পাব।। ”
শিব প্রায় উলঙ্গ, তাকে বাঘছাল পরে কাটাতে হয়; তারচেয়ে বরং শিব কাপাস বুনুক, তুলো থেকে সুতো করে কাপড় বুনুক; তবে শিব সুখী হবে।
ভক্ত তার আরাধ্যকে আরও উপদেশ দিচ্ছে —
“সকল চাষ চস পরভু আর রুইও কলা।
সকল দব্ব পাই জেন ধম্মপূজার বেলা।”
শিবায়ন কাব্যে শিবের চাষের সজ্জা, বীজধান সংগ্রহ, শিবের চাষের জমিতে যাত্রা, ফসলোৎপাদন অংশের বর্ণনা আছে।
“দিন সাত বরষিয়া দিলেক ঈশানে।
হৈল হাল-প্রবাহে শিবের শুভক্ষণে।।”
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী