DNA টেস্টের রিপোর্টে নতুন প্রশ্ন, গুমনামী বাবার পরিচয় নিয়ে বাড়ছে রহস্য

উত্তরপ্রদেশে থাকতেন গুমনামী বাবা। আর নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন নেতাজি। রহস্য এর মাঝখানে। অনেকে মনে করেন গুমনামী বাবাই আসলে নেতাজি। কেউ কেউ আবার সেই সব দাবি খারিজও করে দিয়েছেন। তবে এরই মাঝে উঠে এক এক অদ্ভুত তথ্য।

কলকাতার ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’ জানিয়েছে যে গুমনামী বাবার দাঁতের ইলেকট্রোফেরোগ্রাম পাওয়া যায়নি। কোনও কিছুর ডিএনএ পরীক্ষা করার সময় এই ইলেকট্রোফেরোগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। আর সেটাই নাকি ছিল না বলে জানা গিয়েছে।

সায়ক সেন নামে এক ব্যক্তি এই সংক্রান্ত একটি আরটিআই করেছিলেন। আর তার উত্তরে ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’-র চিফ পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার বিপি মিশ্র জানিয়েছেন, ”সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’ , কলকাতায় এই সংক্রান্ত ইলেকট্রোফেরোগ্রাম নেই।’

এদিকে, এই ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’, কলকাতার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই বিষ্ণু সাহাই কমিশন বলেছে গুমনামী বাবা মোটেই নেতাজি নন। আর সেই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে কলকাতার এই সংস্থার ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই।

গুমনামী বাবার তিনটি দাঁতের ডিএনএ পরীক্ষা করেছিল এই ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’। দুটি দাঁতের পরীক্ষা হয় ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’, হায়দরাবাদে। আর আর একটির পরীক্ষার ফল অসম্পূর্ণ থাকে ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’, কলকাতায়। ডিএনএ টেস্টের পর বলা হয় নেতাজির সঙ্গে ওই ডিএনএ-র কোনও মিল নেই।

সায়ক সেনের কথায়, যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল, তাতে ইলেকট্রোফেরোগ্রামই ছিল না, যেটা ডিএনএ টেস্টের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে সংস্থার কর্ণধারের কথায়, ইলেকট্রোফেরোগ্রাম ছিল না মানে এই নয় যে তার কোনও অস্তিত্বই নেই।

বিচারপতি বিষ্ণু সহায় কমিশন পর্যবেক্ষণের ফলে যে উপসংহারে এসেছে তাতে বলা হচ্ছে- গুমনামী বাবা এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এই দুই জন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি। কমিশন সেই রিপোর্টও জমা দিয়েছে৷

কমিশন রিপোর্টে সব শেষে এই পরিসমাপ্তিতে আসে যে গুমনামী বাবা ওরফে ভগবানজি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী সুভাষচন্দ্র বসু আলাদা ব্যক্তি । যদিও ওই রিপোর্টে এটাও উল্লেখ করা হয় গুমনামী বাবার সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর গলার স্বরের বহু মিল পাওয়া গিয়েছে এবং তিনি ছিলেন নেতাজির অনুগামী।

৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে গুমনামী বাবা-ই নেতাজি এমন জল্পনা হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গুমনামী বাবা মারা যান ১৯৮৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। দুইদিন বাদে অযোধ্যার গুপ্তার ঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
এরপর থেকেই জল্পনা তুঙ্গে ওঠে গুমনামী বাবা-ই নেতাজি হিসাবে।

রিপোর্ট অনুযায়ী গুমনামী বাবা বাংলা,ইংরাজি, এবং হিন্দিতে পারদর্শী ছিলেন। এরসঙ্গেই তৎকালীন রাজনীতি সম্বন্ধেও তাঁর অগাধ জ্ঞান ছিল। ২০১৩ সালে ৩১ জানুয়ারি এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় কমিশন গড়ার তারই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২৮জুন বিচরাপতি সহায়ের নেতৃত্বে এক সদস্যের তদন্ত কমিশন করা হয়৷ ওই কমিশন ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রিপোর্ট জমা করে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.