সকল ভারতীয়ই হিন্দু

রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের প্রধান ডা. মোহন ভাগবত একাধিক বার বলেছেন, “All people living in India are Hindu by identity.” সভী ভারতীয় হিন্দু হ্যায়। RSS regards 130 crore population of Indian as Hindu Society. আরও বলেছেন, Muslims in India happiest in the world, courtesy Hindu Culture. বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায়, সকল ভারতীয় মুসলমানও হিন্দু। পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র ভারতবর্ষেই মুসলমানেরা সবচাইতে সুখী।

‘সংস্কৃতি সমন্বয়: কিছু ভাবনা’ গ্রন্থে রেজাউল করীম লিখছেন, “ভারতীয় মুসলমানের মধ্যে এত বেশী হিন্দু প্রভাব প্রবেশ করিয়াছে যে, আমরাও বলিতে পারি, উই আর দি চিলড্রেন অব দি হিন্দু এরিয়ান্স। আমরাও আর্য হিন্দুদেরই সন্তান।…নির্দিষ্ট কতিপয় পরিবার, কিছু সংখ্যক সৈন্য সামন্তদের বংশধর, আর কতক কতক শাসক শ্রেণীর আত্মীয় স্বজনের অধস্তন পুরুষ ব্যতীত ভারতের কোটি কোটি মুসলমানের অধিকাংশই এদেশের সন্তান।”
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায়ও একই কথা লিখে গিয়েছেন, “এখন তো দেখিতে পাই, বাঙ্গালার অর্ধেক লোক মুসলমান। ইহার অধিকাংশই যে ভিন্ন দেশ হইতে আগত মুসলমানদিগের সন্তান নয়, তাহা সহজেই বুঝা যায়। কেন না, ইহারা অধিকাংশই কৃষিজীবী। রাজার বংশাবলী কৃষিজীবী হইবে, আর প্রজার বংশাবলী উচ্চশ্রেণী হইবে, ইহা অসম্ভব। দ্বিতীয়, অল্পসংখ্যক রাজানুচরবর্গের বংশাবলী এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বিস্তৃতি লাভ করিবে, ইহাও অসম্ভব। অতএব দেশীয় লোকেরা যে স্বধর্ম ত্যাগ করিয়া মুসলমান হইয়াছে, ইহাই সিদ্ধ।”

ভারতীয় মুসলমানের উপর হিন্দু প্রভাব তাদের সাংস্কৃতিকভাবে হিন্দু করেছে। বহু ধর্মান্তরিত ভারতীয় মুসলমান কয়েক প্রজন্ম আগে হিন্দুই ছিলেন। তাই তারা পুনরায় হিন্দুত্বে ফিরে আসতে চাইলে ভারতবর্ষের কাছে তা অভাবনীয় হবে না। ইরান/আরবের মুসলমান এবং ভারতবর্ষের মুসলমান সমাজে বিস্তৃত ব্যবধান আছে বলেই এই প্রক্রিয়া সাধিত হতে পারে। বরং বর্তমান ভারতবর্ষে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বলপূর্বক আরবী-সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হলে এবং ভাষায় আরবী সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন হলে অনেক ভারতীয় মুসলমান হিন্দুধর্মে পুনরায় ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত হবেন। যে আওরঙ্গজেবের মতো অনুদার মোঘল শাসকের পন্থা খাঁটি ইসলাম রক্ষার চেষ্টা করেও পারেন নি, তা বর্তমানে চেষ্টা করে সফল হবার নয়। ভারতীয় মুসলমান মায়েরা এখনও যারা গৃহে লক্ষ্মী ভাবনাকে টিকিয়ে রেখেছেন কুলুঙ্গির গোপন মানসলোকে, সাংস্কৃতিক মনোভূমিতে — তারাই এই সাংস্কৃতিক প্রত্যাবর্তনকে ত্বরান্বিত করবেন। এমনকি কোনো সমীক্ষা আছে যে ভারতীয় মুসলমান নারী সাংস্কৃতিক আবহে ধর্মীয় চাপমুক্ত হলে কী চান? কোন্ ধর্মের প্রতি তার অন্তরের টান? ভারতবর্ষে কখনই জোর করে হিন্দুত্বে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয় নি, আগামী দিনে হবেও না। কিন্তু এই আবহ থাকা দরকার, ভারতে বসবাসকারী বা প্রতিবেশী দেশে বসবাসকারী অহিন্দু স্বেচ্ছায় স্বধর্মে ফিরতে চাইলে হিন্দুরা অন্তরের সঙ্গে গ্রহণ করবেন কিনা। পরিস্থিতি যা, তাতে এই ঘটনা অহরহ সংঘটিত হতে পারে।

প্রশ্ন, ভারতের হিন্দু সমাজ ধর্মান্তরিত মুসলমানকে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নিতে কতটা প্রস্তুত? কী আয়োজন রেখেছে হিন্দুসমাজের পৌরোহিত্য, তা তারা হয়তো সযত্নে লক্ষ্য করছেন। হয়তো সাগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন, আমন্ত্রণ আসুক। “কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া,/ আমার ভাই ধনরে কইয়ো, নাইওর নিতো বইলা/ তোরা কে যাস, কে যাস ?” যারা প্রকৃত অর্থে ভারতবর্ষকে মাতৃভূমি বলে গ্রহণ করেছেন এমন মানুষ আর ভারত-বিরোধী সাম্প্রদায়িক মুসলমান এক নয়, তবে এ দরজা খোলা রইবে না কেন?

ভারতীয় মুসলমান সমাজের ভেতরে হিন্দু ভাবধারার প্রবেশ ঘটেছে সাংস্কৃতিক ক্রমবিবর্তনের মধ্যে দিয়ে, সে এক দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া, কখনও এই প্রভাব এসেছে জ্ঞাতসারে আবার কখনও অজ্ঞাতসারে। হঠাৎ করে পূর্ববঙ্গের/পূর্ব পাকিস্তানের গ্রামের পর গ্রাম হিন্দু যখন ইসলাম কবুল করতে বাধ্য হলো, গৃহের ধর্মনিষ্ঠ ব্রতিনী নারীরা তখন গৃহলক্ষ্মীকে দীর্ঘ দিনের সংস্কারে ছুঁড়ে ফেলতে পারলেন না, বরং স্বামী ও পুত্র সন্তানেরও অগোচরে কাপড়ে জড়িয়ে মা লক্ষ্মীকে তুলে রাখলেন অন্ধকার কুলুঙ্গিতে। এভাবেই বহু হিন্দু দেবী মুসলমান পরিবারে ঘর করছেন সুদিনের আশায়; হয়তো ঠাকুমা, মা চলে গেছেন, মেয়েও জানেন না তাতে কোন হিন্দু সংস্কৃতি লুকিয়ে রয়েছে। মা-মেয়ে-নাতনীকেই হয়তো সেই হিন্দু উত্তরাধিকারের গোপন কথাটি হস্তান্তর করা যায়, হয়তো এ একমাত্রই ইসলামী মেয়েলী ব্রত। সনাতনী হিন্দু ধর্মের বৈশিষ্ট্য এমনই যে, পাশাপাশি সনাতনী সংস্কৃতি বিরাজ করলে তার আবেশ মুসলমান সমাজের পরতে পরতেও প্রবেশ করে, বা প্রবেশের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। আর এটা সম্ভব বলেই বিস্তৃীর্ণ এলাকা মুসলমানীকরণের দিকে দ্রুত নিয়ে যাবার প্রচেষ্টা করেন অত্যাচারী শাসক।

এখন প্রশ্ন, হিন্দুধর্মে পথভ্রষ্ট হিন্দুদের স্বধর্মে ফেরার ব্যবস্থা কি আছে? থাকলে কী! কারা কারা এই চেষ্টায় সাহস জুগিয়েছেন! নিবেদিতা একবার এ ব্যাপারে স্বামীজির মত জানতে চেয়েছিলেন। স্বামীজি বলেছেন, “অবশ্যই। তারা ফিরতে পারেন এবং তাদের গ্রহণ করাই উচিত।” বিপথগামী হিন্দু কারা সে বিষয়ে স্বামীজি বলেছেন, বিশাল সংখ্যক ভারতীয় যারা তরবারির আঘাতে ইসলামধর্মে বা খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন, তারা বা তাদের উত্তর পুরুষেরা। বলেছেন, প্রত্যাবর্তন বা ঘর-ওয়াপসিতে প্রায়শ্চিত্তের অনুষ্ঠান করা উপযুক্ত যারা স্বেচ্ছায় নিজস্ব ধর্মে প্রত্যাবর্তন করতে চান। যারা যুদ্ধের ফলে বলপূর্বক ধর্মান্তরিত হয়েছেন, অচেনা-অজানা বিধর্মী ব্যক্তি তাদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত হবে না, জানিয়েছিলেন স্বামীজি। আরও বলেছেন, প্রত্যাবর্তনকারীরা নিজেদের জাত ফিরে পাবেন আর নবাগতেরা নতুন জাত তৈরি করে নেবেন। নতুন করে তাদের হিন্দু নামকরণ করা হবে, জাত অনুযায়ী নামকরণের কথাই সেক্ষেত্রে বলেছিলেন স্বামীজি। নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিজেরাই বেছে নেবেন, কে শিবকে ইষ্ট দেবতা করবেন, কে কালীকে, অথবা কে গণপতি বাপ্পাকে।

কল্যাণ গৌতম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.