ইউরোপ-এশিয়ার ১৪টি দেশে চিন সীমান্ত, করোনা ভাইরাসের নাগালে অর্ধেক দুনিয়া

বিরাট লাল ড্রাগন থরথর করে কাঁপছে। তার গায়ে বাসা বেঁধেছে করোনা ভাইরাস। সেই হামলায় নিস্তেজ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। এটা যদি চিনের ছবি হয়, তবে দেশটির সীমান্ত লাগোয়া এশিয়া ও ইউরোপের মোট ১৪টি দেশও ভাইরাস হানার নাগালে।

শুধু চিন স্থল সীমান্তের এই ১৪টি দেশের কথা ধরলেই হবে না। এই দেশের রয়েছে বিপুল সমুদ্র সীমান্ত। সেই হিসেবে হামলাকারী করোনা ভাইরাসের নাগালে আরও কিছু দেশ।

এক নজরে চিন সংলগ্ন ১৪টি দেশ: একমাত্র ইউরোপের রাশিয়া। বাকি সব এশিয়ার। চিনের সীমান্ত মিশে রয়েছে মঙ্গোলিয়া, তাজিকিস্তান, কিরঘিজস্তান, কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম এবং উত্তর কোরিয়ায়। এর পাশাপাশি রয়েছে হংকংয়ের মতো অতি জনঘনত্বের এলাকা ও ম্যাকাও স্বশাসিত দ্বীপ।

এই ১৪টি দেশের সঙ্গে চিনের স্থল সীমান্ত তাদের নিয়েই চিন্তা বেশি। কারণ, অতি জনসংখ্যা বা জনঘনত্বের দিক থেকে এই দেশগুলির অন্তত ১২টি বিশেষ আলোচিত। সেখানে করোনা ভাইরাসের হামলা শুরু হলে অর্ধেক বিশ্ব মহামারির কবলে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। একমাত্র ভুটানের ক্ষেত্রে কিছুটা আলাদা পরিস্থিতি। সেখানে জনসংখ্যা কম। কিন্তু বাকি দেশগুলি ও রাশিয়ার জনসংখ্যার কথা ধরলে চিন্তা বাড়ছে বিশেষজ্ঞদের।

আশঙ্কা যদি এই সব দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ভয়াবহ অবস্থা হবে। ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-হু জানিয়েছে চিনের সাম্প্রতিক ভাইরাস হানা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। ভবিষ্যৎ আরও ভয়ঙ্কর।

এবার আসা যাক চিনের জল সীমান্তের দিকে। পূর্বে পীত সাগর বা হলুদ সাগরের তীরে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো দেশ, আর, দক্ষিণ চিন সাগরের উল্টো দিকে আছে ফিলিপাইন্স। ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেইয়ের সঙ্গেও চিনের সমুদ্র সীমানা ও যোগাযোগ।

এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার সামুদ্রিক এবং আকাশপথ বাণিজ্য পথের অন্যতম দুই দেশ মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর চিনের অতি নিকটে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর, চিনের পর করোনাভাইরাসের সবথেকে বড়সড় হামলার মুখে পড়ছে ভিয়েতনাম। সীমান্ত বন্ধ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করেছে দেশটির সরকার। এর বেশি কিছু জানতে দেওয়া হয়নি।

জাপানে ক্রমে ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। মালয়েশিয়ায় মারা গিয়েছেন অন্তত দু জন। এদের একজন ভারতীয়। জাপান উপকূলে নোঙর করে রাখা প্রমোদ জাহাজটির ক্রু ও যাত্রীদের মধ্যে এখন করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে।

চিনে করোনা ভাইরাসের হামলায় মৃতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই আসছে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির তালিকায়। এই অবস্থায় গোটা দুনিয়া থেকেই প্রায় বিচ্ছিন্ন চিন।

বিবিসি, রয়টার্স, চিনা সংবাদ সংস্থা জিনহুয়ার খবর, করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর খবর এসেছে জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন্স থেকে। হংকংয়েও চিহ্নিত হয়েছে সংক্রামিত রোগী।

বিবিসি জানাচ্ছে, প্রবল আতঙ্কে চিনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করেছে প্রায় সবকটি দেশই। তবে চিনেরই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশ উত্তর কোরিয়া একেবারেই নীরব। তাদের সরকারের কোনও বিবৃতি না থাকায় সেখানকার পরিস্থিতি নিয়েও বাড়ছে রহস্য। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয়েছে উত্তর কোরিয়ার একনায়ক শাসক কিম জং উন বাস্তব পরিস্থিতি উপেক্ষা করে সব কিছু লুকিয়ে রাখছেন। কিন্তু দেশটি নীরব।

চিনের সঙ্গে সীমান্ত থাকা সর্বাধিক জনবহুল দেশ ভারত। যদিও ভারতে কয়েকজনের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে, তবে সরকারের দাবি- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। আর নেপালেও নতুন করে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। নেপাল-চিন সীমান্ত বন্ধ। কাঠমাণ্ডু থেকে জানানো হয়েছে, আরও কিছুদিন দেখার পর দুই দেশের সীমান্ত পথ ফের খুলে দেওয়া হবে।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের সীমান্ত এলাকাতেও আতঙ্ক প্রবল। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই দুই দেশের দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কারণে প্রবল বিপদের সম্ভাবনা। তবে আফগানিস্তানে সন্দেহজনক রোগীদের রক্ত ভারতে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

রাশিয়া ও মঙ্গোলিয়া আগেই তাদের সীমান্ত সিল করে দেয়। কিন্তু চিনের উইঘুর প্রদেশ লাগোয়া কিরঘিজস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তানে ভাইরাসের ছোবল মারাত্মক আকার নিতে চলেছে বলেই আশঙ্কা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, চিনের সর্বত্রই এখন করোনা ভাইরাসের ছোবল।

ভয়ে বিশ্ব বিচ্ছিন্ন হয়েছে চিন থেকে। আর দেশটির গায়ে লেগে থাকা অন্য দেশগুলি আতঙ্কে কাঁপছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.