নয়াদিল্লি, ১৩ ফেব্রুয়ারি। এখনই যথেষ্ঠ সতর্ক না হলে অদূর ভবিষ্যতে জলযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন নদী-বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিডি বক্সি। তাঁর এই মন্তব্যে সায় দিয়ে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ প্রতিমন্ত্রী রত্তন লাল কাটারিয়া বলেন, “চেন্নাইয়ের মত ঘটনা যাতে প্রতিটি শহরে না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি’-র এক সম্মেলনে এই সংগঠনের জলসম্পদ কমিটির চেয়ারম্যান বক্সি বলেন, দেশের নানা স্থানে সরস্বতীর মত অনেক নদী শুকিয়ে গিয়েছে। এতে কেবল চাষ নয়, মার খাচ্ছে প্রকৃতি-পরিবেশ। ইস্রায়েল যদি শুখা অঞ্চলে পর্যাপ্ত জলসিঞ্চন করতে পারে, ভারত কেন পারবে না? একসময় সরস্বতী যমুনা নদীতে এসে মিশত। ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের সঙ্গে এই নদীর গভীর ও প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে। এটিকে কেন্দ্র করে পর্যটনের প্রসার সম্ভব।
রত্তন লাল কাটারিয়া বলেন, “জল রাজ্যের বিষয়। কেন্দ্র পর্যাপ্ত অর্থ ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেয়। কোনও রাজ্য জাতীয় স্তরে নদীর জলের সুষম বন্টনে যথেষ্ঠ সহযোগিতা দেখায় না। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অটলবিহারি বাজপেয়ীও নদী-সংযুক্তিকরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তা বাস্তবায়িত হয়নি। সরস্বতীর মত বেশ কিছু নদী লুপ্ত হলেও ভূগর্ভে সেগুলোর প্রবাহ রয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর কেন্দ্র সাতটি রাজ্যে সেই ভাবনা রূপায়ণের কথা জানিয়েছে।“ এ দিন বক্সির লেখা ‘দি সরস্বতী সিভিলাইজেশন’ নামে একটি বইয়ের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।
পশ্চিমবঙ্গেও সরস্বতী নদী বাঁচানোর ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন হয়েছে। হুগলীর সপ্তগ্রাম ছিল প্রধান নদীবন্দর, প্রধান শহর, ত্রিবেণী হোল গঙ্গা ও তার দুই প্রধান শাখানদী যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থল। ষোড়শ শতকেও ত্রিবেণী থেকে দক্ষিণ পশ্চিম দিক ধরে সপ্তগ্রাম হয়ে বয়ে চলত সরস্বতী নদী। যমুনা নদী বইত দক্ষিণ পূর্ব দিক ধরে। যমুনা বর্তমানেও বইছে খালের আকারে, ইচ্ছামতী থেকে বেরিয়ে গোবরডাঙা-গাইঘাটা- হরিণঘাটা হয়ে কোথাও হারিয়ে গেছে,কোথাও আবার নালার আকারে ইতস্তত গঙ্গায় পড়েছে। সপ্তম শতাব্দী থেকে ধীরে ধীরে সরস্বতীর উৎপত্তিস্থলে পলি জমতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে ষোড়শ শতক নাগাদ প্রায় শুকিয়ে যায়। সেই সরস্বতীর অবশেষ এখন নিতান্তই খাল, ক্ষীণজলের ধারা, দূষিত জলাশয় আকারে ত্রিবেনী থেকে বেরিয়ে শঙ্খনগর, সপ্তগ্রাম পার করে হারিয়ে গেছে প্রবাহপথ। একটি মজে যাওয়া শাখা আন্দুল কলেজের পাশ হয়ে এখনও বইছে। তারপর বুজে গেছে অথবা আটকে গেছে জনবসতির চাপে, কচুরিপানায় কিংবা মাছের ভেরিতে, নদী গিলে ফেলা ইট ভাটায়। অতীতে সরস্বতী বাংলার নদী বন্দর নগরের উন্নয়ন ও পতন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্রাথমিকভাবে, প্রধান সমুদ্র বন্দর নগর তাম্রলিপ্তছিল, যার পতনের পর সপ্তগ্রাম আসে, এবং পরিশেষে কলকাতা।
বাংলার নদী সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ মনসামঙ্গল
কাব্যে। মনসামঙ্গল অনুসারে চাঁদ সওদাগর ছিলেন প্রভাবশালী বণিক। চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্যপোতের সাগরযাত্রার পথটি ছিল – সপ্তগ্রাম থেকে উজানে ত্রিবেণী হয়ে সাগর। বিশ্বাস করা হয় সরস্বতী অধুনা রূপনারায়নের খাত বরাবর বয়ে মোহনায় পড়ত তাম্রলিপ্ত (অধুনা তমলুক) হয়ে। তখন সরস্বতীর উপনদী ছিল রূপনারায়ন, দামোদর সহ অনেক ছোট নদনদী। তাম্রলিপ্ত আগে একটি সমৃদ্ধ সমুদ্রবন্দর ছিল
অশোক সেনগুপ্ত