ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে কুমিল্লার চান্দিনায় পাশাপাশি ২টি শিব মন্দির দাঁড়িয়ে আছে। মন্দিরটি প্রায় তিন শ বছর আগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্থাপত্য শিল্পকর্মের নিদর্শন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। কালের বিবর্তনে অনেকটা ধ্বংসের পথে ছিল ওই মন্দির দুইটির কাঠামো। স্থানীয়দের তৎপরতায় সংস্কার করে কিছুটা রক্ষা করা হয় পুরাকীর্তিটি। মন্দির দুইটিসহ রাজকালী বাড়ির পুরো এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা করা হলে স্থানটি হতে পারে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে একটি লাভজনক পর্যটন এলাকা।
চান্দিনা উপজেলা গেট থেকে একশ গজের মধ্যে পুরাতন গ্রেন্ড ট্রাংক রোডের পাশেই চান্দিনা রাজকালী বাড়ি মন্দির দুটির অবস্থান। ওই কালী মন্দিরের বাম ও ডান পাশে রয়েছে প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতার দুইটি শিব মন্দির। আর মন্দিরের ভিতরে শ্বেত পাথরের দুইটি শিব লিঙ্গ রয়েছে। মন্দিরের পিছনে রয়েছে প্রায় পৌনে ৩ একর বিশাল দীঘি। মন্দিরটির সামনের উভয় পাশে বহুতল ভবন নির্মিত হওয়ায় দূর থেকে মন্দিরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একমাত্র দীঘিটি পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্রের দখলে থাকায় মন্দিরের রাজ ঘাটটির ঐতিহ্য এখন আর নেই।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্যমতে, ১৬৭০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন মির্জা হুসাইন আলীর পৃষ্ঠপোষকতায় মন্দির দুইটি নির্মিত হয়। তাদের তথ্যমতে, মন্দির দুইটি ভারতের দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের আদলে নির্মিত হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কুমিল্লার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন সমতট রাজ্যের বরকামতার শেষ জমিদার ভূকৈলাশরাজ বরকামতার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্ষীর নদীর পাড়ে বরকামতা বাজার (বর্তমানে চান্দিনা বাজার) নামে বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। চান্দিনার বিশাল জলাশয়ের পারে বেশকিছু পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এ প্রত্নস্থল থেকে কিছুসংখ্যক বৌদ্ধ মূর্তিও (আবিষ্কৃত) উদ্ধার হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মন্দিরের অনেক ভূমি বে-দখল হয়ে গেছে। বর্তমানে ৭৪ শতাংশ ভূমিতে রয়েছে মন্দিরটির অবস্থান।
মন্দিরের সেবায়িত রতন ভট্টাচার্য্য জানান, মন্দির দুটির অবস্থা এতোই করুণ ছিল যে, মন্দিরের উপরে পরগাছা বট বৃক্ষের শিকড় গজিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছিল। ২০১০ সালে ভক্তবৃন্দের সহযোগিতায় কিছুটা সংস্কারের পর মন্দির দুইটি সুরক্ষা করা হয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে স্থানটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
এ ব্যাপারে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও চান্দিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তপন বক্সী জানান, প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতার শিব মন্দির দুইটির মাঝখানে কালী মন্দির রয়েছে। যে কারণে চান্দিনা রাজকালী বাড়ি হিসেবেই জায়গাটি বেশি পরিচিতি লাভ করেছে। মঠ আকৃতির মন্দির দুইটি মূলত ভারতের দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের আদলে নির্মিত হয়েছিল। চান্দিনা রাজকালী বাড়ির মন্দির দুটির মতো এতো পুরাতন স্থাপত্য শুধু চান্দিনায় নয়, বাংলাদেশেও দুর্লভ।