রোজ রবিবার আছরের নামাজের পর সহসপুর চৌরঙ্গী বাজারের সংলগ্ন সহসপুর চৌরঙ্গী মহাশ্মশানের নবনির্মিত কালী মন্দির ও সমাধিস্থল ভাংচুর করে একই গ্রামের জনৈক মোঃ মান্নান(৬০), জনৈক ইসকান্দার মির্জা(৫৫)ও সহসপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জনৈক মোঃ শফিকুল ইসলাম(৩৫) নেত্রীত্বে দু শতাধিক দৃর্বত্ত মন্দির ভাংচুর করার সময় এলোপাথাড়ি ইট পাটকেল ছুড়লে ঘটনাস্থলে ৭জন সংখ্যালঘু আহত হয়। তাদের মধ্যে জনৈক গান্ডী রাম(৫০) গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে দিনাজপুর এম রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বোচাগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও বোচাগঞ্জ থানার কর্মকর্তা আব্দুর রৌফ মন্ডল উপস্থিত হয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরের দিন অভয় চন্দ্র রায় বাদী হয়ে বোচাগঞ্জ থানায় সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মন্দির ভাংচুর অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের একদিন পরেই আসামি দিনাজপুর আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন।
অতঃপর আসামি পক্ষের মসজিদের ইমাম জনৈক আমানুল্লাহ সরকার(২৫) বাদী হয়ে ৬টি দোকানে পেট্রোল দিয়ে অগ্নিসংযোগে দশ লক্ষ টাকা মালামাল পুড়িয়া গিয়েছে এবং মসজিদের জমি দখলের চেষ্টায় দন্ড বিধি ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩০৭/৩২৬/৩৭৯/৩৮৫/২৯৭/৪৩৬/৫০৬/১১৪ ও ৩৪ বিধিমালার ধারায় জামিন অযোগ্য ৪০ জনকে চিহ্নিত করে অজ্ঞাত ৫০ জনের বিরুদ্ধে দিনাজপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতে স্থানীয় হিন্দু জনগোষ্ঠীর মাঝে চরমভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, সনকাই চৌরঙ্গী মৌজার খতিয়ান নং সিএস১ও২,২৪৪৮ দাগের বৃস্টিস ও পাকিস্তান আমলে শ্মশান হিসেবে দলিল রেকর্ড থাকলেও ৭৬-৭৭ সালে ৯০ বছরের জন্য লিজ নেন মোঃ আব্দুল্লা(বাচ্চু মিয়া) ২০১৩তে শ্মশান কমিটি নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের করলে ২০১৫ সালে শ্মশানের পক্ষে রায় পায়, আব্দুল্লা(বাচ্চু) রায় না মেনে নিয়ে জজকোর্টের আপিল করেন। যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এমতাবস্থায় স্থানীয় জনসাধারনের অভিযোগের ভিত্তিতে বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন চৌধুরী ইগলু ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উৎপল কুমার রায় বুলু শ্মশানের জমিটি উদ্ধার করে শ্মশান কমিটির কাছে হস্তান্তর করেন। ইতিমধ্যেই এই মহাশশ্মানে স্বর্গীয় কেশব চন্দ্র রায় বাবু সহ বেশ কয়েক জনের শবদেহ সৎকার করা হয়েছে।
হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী শ্মশান কমিটি একটি শ্মশানকালী মন্দিরগৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নিলে মোঃ আব্দুল্লা (বাচ্চু মিয়া) ভাইস্তা শরিফুল ইসলাম, সিএসসি মোঃ মান্নান ও ইস্কান্দার মির্জা ইসলাম ধর্ম অনুভূতি জাগিয়ে তুলে বাধা সৃষ্টি করে এবং মন্দির তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা জারীর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ এজাহারুল হক ২৪/২/১৯ তারিখ রবিবার তদন্তে এসে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাগজপত্র দেখে মন্দির তৈরির কাজ অব্যাহত রাখার মৌখিক ভাবে নির্দেশ প্রদান করেন।
অভিযোগ জানিয়েও অবৈধ দখল বহালে ব্যর্থ হয়ে রবিবার (২৪ ফেব্রুঃ) মোঃ আব্দুল্লাহর ভাতিজা সহসপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বাবু গং দুরদূরান্ত থেকে সন্ত্রাসী লোকজন ভাড়া করে এনে নবর্নিমিত সার্বজনীন কালী মন্দির ও সমাধিস্থল ভাংচুর ও বাজারের নিরীহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্টান ইত্যাদিতে নির্বিচারে সশস্ত্র হামলা এবং ভাঙচুর চালায়।
এ ব্যপারে বোচাগঞ্জ থানার মামলা দায়ের করা হয়েছে।