নাগরিকত্ব আইনের পর দিল্লিতে আসন বাড়াল বিজেপি

নাগরিকত্ব আইনের পর; দিল্লিতে আসন বাড়াল বিজেপি। দিল্লিতে ফের ফিরছে আপ সরকার। এখনও পর্যন্ত ভোটের ফলাফল অনুযায়ী; চিত্রটা দেশবাসীর কাছে পরিস্কার। কেজরিঝড় বইছে রাজধানীতে। উল্লাসে আবীরে শুরু হয়েছে সেলিব্রেশন। দ্বিতীয়বার জনসমর্থন পেয়ে; মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন কেজরি। আবারও হারের মুখ দেখবে বিজেপি। তবে যে বিষয়টা সবথেকে বেশি ভাবাচ্ছে; তা হল গেরুয়া রং রাজধানীর রাজনীতিতে ফিকে হচ্ছে ঠিকই; কিন্তু আসন সংখ্যা যে গগনচুম্বী। বিরোধীরা বিজেপি হারে যতই তালি বাজাক; একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না বিজেপির আসন সংখ্যা ৩ থেকে ১৩-এ ছুঁয়েছে। বিরোধী সব মহলে বিজেপির হারে কানাঘুষো শুরু হয়েছে; তুলনায় উঠে আসছে মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডে বিজেপির ধুলিষ্যাৎ হয়ে যাওয়ার কথা। হরিয়ানায় হারতে হারতে গেরুয়াদের জেতার গল্পও উঠে আসছে। কিন্তু গেরুয়াদের বিশাল সংখ্যক আসন জেতাটা কারও চোখেও পড়ছে না। রাজধানীতে মোদীর এই হারে; বাংলার একুশের নির্বাচন নিয়ে যে আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হয়েছিল; তাতে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন মা মাটি মানুষের সরকার।

বিজেপির হারকে কি আদও হার বলা যায়, নাকি এটা এরকম জিত; গতবারের তুলনায় গেরুয়াদের আসন যে আকাশচুম্বি, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। বিগত দিনে গোটা দেশ উত্তাল হয়েছে মোদীর আনা আইনের প্রতিবাদে। এনআরসির প্রথম ধাপ হিসেবে সিএএ চালু করে বারংবার দেশবাসীকে দেশ ছাড়া করার অভিপ্রায় নিয়ে; যেভাবে ধর্ম ধর্ম খেলায় নেমেছে মোদী-অমিত শাহ; মানুষের ক্ষোভ তখনই জানান দিয়েছিল; এবার আর দেশের কোনও প্রান্তে গেরুয়া নয়; একরকম মুছে ফেলতে হবে এই রং। সেক্ষেত্রে আসন এভাবে বেড়ে যাওয়াটা খুবই অপ্রত্যাশিত। ভারতীয় মুসলমান নয়; শুধু অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের তাড়ানো হবে প্রথমে দেশবাসীর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে; সেই ক্ষতে মলম লাগানোর চেষ্টা করেছে মোদী-অমিত শাহরা।

সিএএ কার্যকর হতেই ভিটে মাটি হারানোর ভয় তাড়িয়ে বেড়িয়েছে; মুসলিম তো বটেই হিন্দুদেরই। সব কাজ ছেড়ে মানুষ লাইন দিয়েছে; আধার-ভোটার সংশোধনে। এতদিন ধরে দেশে নাগরিক হিসেবে থেকে পুনরায় কেন নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে; সেই প্রশ্নে পথে নেমেছে শাহিনবাগ। অস্তিত্ব রক্ষায় কলকাতায় পার্কসার্কাস ময়দান রাতারাতি শাহিনবাগের চেহারা নিয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছে, জামিয়া মিল্লিয়া, জেএনইউ, আলিগড় থেকে কলকাতার জেএনইউ। এখনও শাহিনবাগের আন্দোলন অব্যাহত। দেশের মানুষ যেভাবে মোদীর এই নয়া আইনে বিতশ্রদ্ধ; তাতে গেরুয়ারা যে একে একে সব রাজ্য থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মহারাষ্ট্র; ঝাড়খণ্ডে তা প্রমাণিত। রাজধানীতর ভোটের একই ফলাফলের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেরকমটা হলেও স্বস্তি নেই।

কারণ যে সরকার দেশবাসীকে নাগরিকত্ব নিয়ে নাকানি-চোবানি খাওয়ালো; তাদের ঝুলিতে কিভাবে এত সংখ্যক আসম এল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলের একাংশে। গত বিধানসভা ভোটে (২০১৫ সালে) দিল্লির ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৭টিতেই জিতেছিল (আপ)। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩ টি। কিন্তু ২০১৯-এ অর্থাৎ গত লোকসভা ভোটে; চিত্রটা একদম উল্টে যায়। লোকসভার ভোটে বিধানসভা হিসাব অনুযায়ী; ৭০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬৫টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। পাঁচটিতে কংগ্রেস। আপ একটিতেও নয়। লোকসভার সাতটি আসনের সাতটিতেই জেতে বিজেপি।

২০১৪ সালের লোকসভা ভোট, যে ভোটে জিতে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী; সেই ভোটেও বিজেপি দিল্লিতে সাতে সাত জিতেছিল। কিন্তু পরের বছরই বিধানসভা ভোটে কেজরির আপ স্রোতে ভেসে গিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এবার বিজেপির ভোট ধাক্কাটা আরও জোরালো হতে পারত; কারণ সিএএ এনে নিজের কবর নিজেই খুঁড়িছিল তারা। তা আর হল কই। হারলেও একরকম জিতই হল বিজেপির। তাই এখনও যারা আপের জয়ে উল্লাসিত; একবার বিজেপির দিকে তাকিয়ে দেখুন, ধর্মের নামে দেশকে ভাগ করে যদি তাদের ঝুলিতে ১৯ টি আসন চলে যায়, তাহলে একটু সেফ গেম খেললে হয়তো কেজরির দলকে ঝাটা দিয়ে ঝেটিয়ে পরিস্কার করতে তাদের সময় লাগত না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.