পায়ে দড়ি বেঁধে রাস্তা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল শিক্ষিকাকে, অভিযোগ – তৃণমূল উপ-প্রধান অমল সরকারের বিরুদ্ধে

আমি-যে দেখেছি গোপন হিংসা কপট রাত্রিছায়ে

হেনেছে নিঃসহায়ে,

আমি-যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে

বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে…

শিক্ষা প্রদান করেন যিনি তিনিই শিক্ষক। তিনিই গুরু। পিতামাতার পর যদি কেউ সম্মানীয় হয়ে থাকেন তাহলে তিনি হলেন গুরু। তিনি সখা , তিনি অভিভাবক, তিনিই জীবনের ধ্রুবতারা। তিনি অন্ধকার হতে আলোকের দিকে পথ দেখান। এই সুপ্রাচীন ভারতের সংস্কৃতি গুরুকে, শিক্ষককে সদা ঈশ্বরের সমতুল্য মর্যাদা প্রদান করেছে। সেই শিক্ষকের মর্যাদা আজ বারংবার ভূলুণ্ঠিত হয়ে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ । আজ শিক্ষা ও শিক্ষক বার বার রাজনৈতিক যূপকাষ্ঠের বলি।

হ্যাঁ ,পুনশ্চঃ এক শিক্ষিকা রাজনৈতিক নেতার হাতে প্রহৃতা। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে মধ্যযুগীয় বর্বরতার অভিযোগ। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল পায়ে দড়ি বেঁধে দুই মহিলাকে হেনস্থার ভিডিও। অভিযোগ, স্থানীয় নন্দনপুর পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান অমল সরকারের বিরুদ্ধে। প্রথমে ঘটনায় যোগের অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূল জেলা সভাপতির। পরে সাসপেন্ড উপপ্রধান। গত শুক্রবার বাড়ির সামনে রাস্তা তৈরির প্রতিবাদ জানান দুই মহিলা। সেখানেই নিগ্রহের অভিযোগ।

শনিবার সোশাল সাইটে ভাইরাল এই ছবি।

ঘটনার সূত্রপাত একটি রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে। নন্দনপুর থেকে হাপুনিয়া পর্যন্ত রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। যে শিক্ষিকাকে হেনস্থা করার ভিডিয়ো সামনে এসেছে, তিনি জানিয়েছেন, ওই রাস্তার খানিকটা অংশ তাঁর ব্যক্তিগত জমির উপর দিয়ে তৈরি করতে চাইছিল পঞ্চায়েত। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ১২ ফুট চওড়া জমি ছাড়তে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম বাকি ১২ ফুট অন্য পাশ থেকে নিতে। কিন্তু পঞ্চায়েত ২৪ ফুট রাস্তাই আমার জমির উপর দিয়ে বানাবে। তাতে আমি বাধা দেওয়ায়, উপপ্রধান অমল সরকার এবং তাঁর লোকজন আমাকে আর আমার দিদিকে রাস্তায় ফেলে মারধর করল। পায়ে দড়ি বেঁধে রাস্তা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল।’’

ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি নির্মাণাধীন রাস্তায় দুই নারী বসে রয়েছেন। অনেকে তাদের ঘিরে রয়েছেন। এরপর একটি ট্রাক্টর নিয়ে এসে প্রথমে তাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাক্টর দেখেও তারা না ওঠায়, বেশ কয়েকজন মিলে চড়াও হন এক নারীর ওপর। তারপরই দড়ি দিয়ে তার পা বেঁধে ফেলা হয়। পরে চ্যাংদোলা করার ভঙ্গিতে দুই হাত ধরে রাস্তা দিয় টেনে নিয়ে একটি টিনের ঘরের সামনে বেঁধে রাখা হচ্ছে তাকে।

দ্বিতীয় নারীকেও টেনে-হিঁচড়ে সেখানে এনেই ফেলা হচ্ছে। এই দ্বিতীয় নারীকে বাঁধা হয়নি বলে তিনি ফের রাস্তায় নেমে যাচ্ছেন। তখন তাকে ধাক্কা মেরে রাস্তার ধারে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর লাঠি দিয়ে মারা হয়। অশ্রাব্য গালিগালাজও করা হয়।

আক্রান্ত শিক্ষিকার দাবি, পুলিশ প্রথমে তার অভিযোগ নিতে চায়নি। উল্টো শান্তি ভঙ্গের অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে তিনি ফের থানায় অভিযোগ করতে যান। দ্বিতীয়বারে পুলিশ তার অভিযোগ নিয়েছে।

সূত্রের খবর অত্যাচারিত দুই মহিলার নাম স্মৃতিকণা দাস এবং সোমা দাস। এলাকায় দুজনেই বিজেপি কর্মী হিসাবে পরিচিতা । স্থানীয় বিজেপি সমর্থকরা ছুটে এসে দুজনকে উদ্ধার করেন। তাদেরকে গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যদিও অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও শোনা যাচ্ছে tmc উক্ত উপপ্রধানকে সাসপেন্ড করেছে ,তবুও কতটা সত্য এবং কতটা আই ওয়াশ এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।

বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ওই শিক্ষিকা এবং তাঁর পরিবার বিজেপির সমর্থক। সেই কারণেই তাঁদের জমির দখল নিয়ে রাস্তা তৈরির চেষ্টা চলছে বলে বিজেপির অভিযোগ। সাংসদের কথায়, ‘‘নন্দনপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানাচ্ছে। মহিলাদের উপরে প্রকাশ্যে এই রকম নির্যাতন কোনও রাজনৈতিক দল কী ভাবে করতে পারে, আমার জানা নেই। মহিলাদের এই সম্মানহানিই বলে দিচ্ছে এ রাজ্যের শাসকের পতন আসন্ন।’’

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও তীব্র নিন্দা করেছেন গঙ্গারামপুরের ঘটনার। তিনি বলেছেন, ‘‘গোটা দক্ষিণ দিনাজপুরেই তো এই রকম চলছে। কিছু দিন আগেই কুমারগঞ্চে এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বার গঙ্গারামপুরে শিক্ষিকাকে রাস্তার উপরে হেনস্থা। পায়ে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আইনের শাসন বলতে কিছুই নেই। রয়েছে শুধু সিন্ডিকেট আর টাকার বখরা।”

গঙ্গারামপুরে মারধরের ঘটনা এবার উঠল কলকাতা হাইকোর্টে। এ ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন এক আইনজীবী।
অবিলম্বে জেলা আইন পরিষেবা কর্তৃপক্ষ DLSA ( District Legal Services Authority)- র রিপোর্ট তলব করেছে আদালত। ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.