নামটা সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে গেলেও তার সতীর্থরা প্রতি নিয়তই তাঁর অভাব বোধ করেছেন | অবসরের প্রান্তে এসে ২৭মাসের সাসপেনশনের এই যন্ত্রণার কথা বোধ হয় তাঁর জীবদ্দশাতে আর ভুলতে পারবেন না বারাসাত হাসপাতালের ততকালীন ডাক্তার অরুণাচল দত্ত চৌধুরি | শেষ পর্যন্ত ডাক্তার অরুণাচল দত্ত চৌধুরীর উপর থেকে ২৭মাস পর তোলা হল সাসপেনশন । ৩১ জানুয়ারী, ২০২০র দুপুর । বারাসত জেলা হাসপাতালের বড়বাবু ফোন করলেন ডাক্তার অরুণাচল দত্ত চৌধুরীকে । আসুন সরকারের হুঁশ ফিরেছে ।
জানান,রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে। ৩১ মে,২০২০ অবসর নেবেন এই ডাক্তার | মাত্র তিনমাস আগে সরকারের হুঁশ ফিরেছে| কাজে ফিরছেন তিনি | কিন্তু কেন এতদিন তাঁকে এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হল? পিছনে ফিরে একবার দেখা যাক | বারাসাত জেলা হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিনের স্পেশালিস্ট মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার অরুণাচল দত্ত চৌধুরী সাসপেন্ডেড হয়েছিলেন ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে । পরপর দুবছর বারাসাত,বসিরহাটে ডেঙ্গির থাবায় জেরবার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা | বলাবাহুল্য আচমকা হানায় স্বল্প পরিকাঠামোতে সামাল দেওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছিল সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের |
সেই অসুবিধের কথাই অরুণাচল বাবু তুলে ধরে ছিলেন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লাইভের মাধ্যমে | অপ্রতুল স্বাস্থ্য কাঠামোর সমালোচনাও উঠে এসেছিল তার পোস্টের মাধ্যমে | তাঁর অজান্তেই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায় । এতেই মান যায় স্বাস্থ্য দপ্তরের । ফেসবুক পোস্টিং-এর কারণে ১লা নভেম্বর ২০১৭, ডাক্তার অরুণাচল দত্ত চৌধুরী সাসপেন্ডেড হন । বসে যায় তদন্ত কমিশন । মাঝে ২৭ মাস চলে গেলে কমিশনে কখনও হাজির হতে হয়নি তাঁকে | উল্টে কমিশনের কাছে তাঁর সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য প্রায় প্রতি মাসে ডাক্তার অরুণাচল দত্ত চৌধুরী কড়া নাড়তেন কলকাতার স্বাস্থ্য ভবনে । স্বাস্থ্য দফতরের তৎকালীন সচিব রাজীব সিনহা (এখন চিফ সেক্রেটারি) স্বাস্থ্য ভবনে বসে ডাক্তার অরুণাচল দত্ত চৌধুরীকে জানান তার ফাইল নবান্নে আছে ।
এরপর ওই আমলার পদোন্নতির পর মুখ্য সচিব হয়ে নবান্নে আসীন হন | নতুন বছরে শেষবারের জন্য একটা চিঠি দিয়েছিলেন সরকারকে । তাতেই নড়েচড়ে বসে সরকার | অবসর গ্রহণে এর আগে তদন্তের রায় না দিলে, ডাক্তার অরুণাচল দত্ত চৌধুরি আদালতে গেলে মুখ পুড়তে পারে সরকারের । সেটা বুঝেই কি তবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত উঠছে প্রশ্ন | কমিশনের তদন্তে কি আদৌ দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ওই ডাক্তার | নাকি শুধু শুধু ২৭মাসের এই যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে বেরোতে হল তাঁকে | প্রশ্ন কিন্তু উঠছে |