চিনের করোনা ভাইরাসের দাপট যেন ‘রেসিডেন্ট ইভিল’ সিনেমার বাস্তব প্রতিফলন। ইউক্রেন বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী মিলা জভোভিচ অভিনীত, পল অ্যান্ডারসন পরিচালিত হলিউডি সুপারহিট ছবিটির রয়েছে ছয়টি সিরিজ। মুক্তি পেয়েছিল ২০০২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দফায় দফায়।
জৈব রাসায়নিক অস্ত্র এবং জেনেটিক্যাল মিউটেশন কীভাবে মানব সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনবে তা দুর্দান্তভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে এই বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন এবং হরর থ্রিলার ছবিতে। রেসিডেন্ট ইভিলে দেখানো হয়েছে, গোপন গবেষণাগারে তৈরি ‘টি’ ভাইরাস ও ক্লোনিং প্রক্রিয়া বিভিন্ন নিরীহ প্রাণী ও মানুষের উপর প্রয়োগ করে প্রথমে তাদের জিনগত অভিযোজন ঘটাচ্ছে। তারপর তাদের হিংস্র দানবে পরিণত করে সাম্রাজ্য বিস্তারের চক্রান্ত করছে একটি বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত এই গবেষণা বুমেরাং হয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষ টি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জম্বিতে পরিণত হয় এবং গবেষকদের দোষেই মানব সভ্যতা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় দুনিয়া থেকে।
চিন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস ক্রমেই মহামারীর আকার নিচ্ছে। লাফিয়ে বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত হতে বাদ নেই ইউরোপ, আমেরিকাও। বিমানযাত্রীদের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে ভাইরাস। আতঙ্ক ছড়িয়েছে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও। এই ঘটনায় রেসিডেন্ট ইভিল সিনেমার ভয়ানক প্রতিফলনই দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। কারণ, দুটি দাবি ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দুনিয়া জুড়ে। প্রথমটি হল ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সন্দেহ করেছে, রহস্যময় ‘নোভেল করোনা ভাইরাসের’ চাষ করেছে চিনের গোপন সামরিক গবেষণাগার। দ্বিতীয় দাবি, মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট এই দাবিকেই সমর্থন করেছে।
ইজরায়েলের জীবাণু অস্ত্রের বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, এই ভাইরাসের জন্মদাতা ইউহানের জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা বায়ো-সেফটি লেভেল ৪ ল্যাবোরেটরি। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, অসাবধানতাবশত এই গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাসের সংক্রমণ। আসলে জৈব রাসায়নিক অস্ত্রের উপর গবেষণা করতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন চিনের বিজ্ঞানীরা। ইজরায়েলের সেনা গোয়েন্দাদের উদ্ধৃত করে সে দেশের দুটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর ব্যাপক আধুনিকীকরণ, ছাঁটাই প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়ন করছে চিন। চলছে জীবাণু অস্ত্র ও রাসায়নিক অস্ত্র নিয়েও গবেষণা। এরই অঙ্গ হিসাবে সার্স জাতীয় ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছে চিনের সামরিক বাহিনীর গবেষণাগার।
সার্সের পুরো নাম, সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম। জ্বর, হাঁচি, কাশি, শরীরে অসহ্য ব্যথার মতো উপসর্গ থাকে এই রোগে। পরিণতি ভয়ংকর মৃত্যু। সার্সের মতোই আরেকটি নয়া ভাইরাস হল নোভেল করোনা ভাইরাস। এটি আরও মারাত্মক এবং শক্তিশালী। মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট ও ইজরায়েলের মোসাদের দাবি, শত্রুদেশ দখল করতে, বিনা রক্তপাতে শত্রু সেনাদের খতম করতে অনেকদিন ধরেই জীবাণু অস্ত্র নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে চিনের লাল ফৌজ। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশেই এই গবেষণা চলছে। কিন্তু এই গবেষণা যে দুর্ঘটনাবশত বুমেরাং হয়ে যাবে এবং দেশজুড়ে মহামারীর আকার নেবে তা ভাবতে পারেননি গবেষকরা। ভাইরাসের দাপটে চিনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
নানা মহলের দাবি, রহস্যময় এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে উহান প্রদেশের গোপন গবেষণাগার থেকেই। কোনও কোনও মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, নাশকতা বা অন্তর্ঘাত করেই চিনের কোনও বিজ্ঞানী বা গুপ্তচর এই ভাইরাস ছড়িয়েছেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে স্পষ্ট জানিয়েছে, এই আরএনএ ভাইরাসকে চিন তৈরি করেছে মারণাস্ত্র হিসেবেই। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ছোবলে হাজার হাজার মানুষকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলা সম্ভব। উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরিতে অতি গোপনে এই জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল অনেকদিন ধরেই।
ইজরায়েলের দাবি, বিশ্বের সব দেশকে জব্দ করতে, চাপে রাখতে সবচেয়ে শক্তিশালী জীবাণু অস্ত্র বানাচ্ছে চিন। এজন্যই জিনগত অভিযোজন ঘটিয়ে করোনা ভাইরাসের মতো অনেক ভাইরাস তৈরি করছেন চিনের সামরিক বাহিনীর গবেষকরা। ইজরায়েলি সেনা গোয়েন্দা দপ্তরের প্রাক্তন প্রধান লেফটেন্যান্ট ড্যানি শোহাম জানিয়েছেন, ‘বায়ো-ওয়ারফেয়ার বা জীবাণু যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে চিন। জিনের কারসাজিতে এমন ভাইরাস তৈরি করা হচ্ছে যা মিসাইল, ড্রোন, বোমা বা সামান্য একটি পেন অথবা ঘড়ির মধ্যে দিয়েই ছড়িয়ে দেওয়া যায় শত্রুর ভূখণ্ডে। সেই ভাইরাসের দাপটে ২৫ দিনের মধ্যেই মৃত্যুমিছিলে উজাড় হয়ে যেতে পারে একটি বড় শহর বা একটি জেলা।’ মার্কিন সংবাদমাধ্যম ও ইজরায়েলের গোয়েন্দাদের দাবি ভিত্তিহীন জল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছে চিন। কিন্তু ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসাবে কোনও টিকা, ওষুধ বা ইঞ্জেকশন কাজ না করায় সন্দেহ তির রয়েছে চিনা গবেষণাগারের উপরেই।