কলকাতা, ২৭ জানুয়ারি: দেশজুড়ে চলা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনে ১২০ কোটি টাকা খরচ করছে ইসলামিক সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রকাশিত এক চিঠিতে এই তথ্য উঠে আসার পর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
শুধু তাই নয়, এই চিঠিতে দেখা পিএফআইয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বড় অঙ্কের টাকা গিয়েছে কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী কপিল সিবাল, আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং এবং দুষ্যন্ত এ দাভের কাছে। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য, এনআইয়ের হাতে আটক আইএস জঙ্গি আবদুল সামাদকেও টাকা দিয়েছে পিএফআই। আবার এই বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস খুঁজতে গিয়ে গোয়েন্দারা বিদেশি অর্থ সাহায্যেরও হদিশ পেয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, ‘এ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। নির্দিষ্ট তিন দিনে বেশি টাকা তোলা হয়েছিল। তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, এই টাকা দিল্লির শাহিনবাগের আন্দোলনেও ব্যবহার হচ্ছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। শাহিনবাগে সাাতটি পিএফআই কার্যালয় চালু করাকে কেন্দ্র করে এই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের।
ওই তিন আইনজীবী এবং জঙ্গি সামাদের কাছে কেন টাকা পাঠানো হয়েছিল, তাও এখন গোয়েন্দাদের নজরদারিতে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, এই টাকা ব্যবহার করেই হিংসা ছড়ানো হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি সহ দেশের বিভিন্ন অংশে।
যদিও পিএইচআইয়ের বিরুদ্ধে অতীতেও কেরল-সহ একাধিক রাজ্যে অভিযোগ হয়েছে। ঝাড়খণ্ড সরকার জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগে রাজ্যে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করেছে। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা দিলি, উত্তরপ্রদেশ, মণিপুর, কেরল-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য অভিযোগ করেছিলেন, পিএফআই দেশবিদ্ৰোধী কাজে লিপ্ত। এখন পিএফআই-এর সব ব্যাংক অ্যাকাউট সম্পর্কে তদন্ত করে সেই তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করছেন গোয়েন্দরা।
সিএএ বিক্ষোভ চলাকালীনই উত্তর প্রদেশে যোগী সরকার অভিযোগ করেছিল, এই আন্দোলন করতে বিদেশি টাকা পেয়েছে পিএফআই। প্রাথমিক তদন্তে তাও উঠে এসেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। উল্লেখ্য, এর আগে পিএমআই-এর বিরুদ্ধে ২০১৮তে এআইয়ের করা অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলায় সংগঠনটির অর্থের উৎস খোজার তদন্ত শুরু করে ইডি।
জানা গিয়েছে, সিএএ বিরোধী হিংসা ছড়ানোর দাটনায় যোগী সরকারের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পিএফআইয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দর। ইডির প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, দেশজুড়ে পিএফআই এবং তার অঙ্গ, শাখা সংগঠনগুলি এবং যুক্ত ব্যক্তিদের ৭৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১২০,৫ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে পিএআইয়ের নিজস্ব অ্যাকাউট ২৭টি। সংগঠটির অঙ্গ সংগঠন বিহাৰ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের “টি, পিএফআইয়ের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ব্যাক্তির ১৭টি এবং সংগঠনটির শাখা সংগঠনগুলির ৩৭টি অ্যাকাউন্ট থেকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে আরবের দুবাইয়ের পিএমএ ইন্টার ন্যাশনাল এলএলসির কাছ থেকে ২ লাখ টাকা এসেছে রিহ্যাব ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে।
এই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠির সূত্রে জানা যাচ্ছে, পিএফআইয়ের কেরলের কোকিকড়ের । সিন্ডিকেট ব্যাংকের মাভর ব্রেডেরশাখার অ্যাকাউন্ট থেকে কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী কপিল সিবালকে দেওয়া হয়েছে ৭৭ লাখ টাকা। সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংকে চার লাখ এবং দূষ্যত এ দাভকে ১১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি দিন পুলিশের হাতে ধরা পড়া আইএস হাসি অবল সামাদের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে ৩.১০ লাখ টাকা। এছাড়াও ১.৬৫ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে। পিএফআই কাশ্মীর শাখায় এবং ১,১৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে তামিলনাড়ুর নিউ জ্যোটি গ্রুপকে।
আরও জানা যাচ্ছে, সিন্ডিকেট ব্যাংকের নয়াদিল্লির নেহরু প্লেস শাখার পিএফআইয়ের অ্যাকাউন্টে উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের বিজলুর, হাপুর, বাহারকাইচ, সামলি, দাসনা থেকে নগদ টাকা জমা পড়েছে ৪১.৫ কোটি টাকা। এছাড়াও আরটিজিএস, নিফটি এবং আইএমপিএসের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করা হয়েছে। খুব কম চেকের ব্যবহারের রের্কড় পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ৪ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫ থেকে ৪৯ হাজারের মধ্যে টাকা লেনদেন করা হয়েছে, যাতে পরিচয় গোপন রাখা যায় কারা টাকা দিচ্ছেন। এভাবে ১.০৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে ১০ পিএফআই এবং ৫ রিহ্যাব ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে। আবার টাকা জমা পড়ার পর সামান্য অংশ অ্যাকাউন্টে রেখে দু-একদিনের মধ্যে সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে ১.৩৪ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে বার বার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে। ১২ ডিসেম্বর ৯০ বারেরও বেশি এবং ২১ ডিসেম্বর ৮০ বারেরও বেশি টাকা তোলা হয়েছে অ্যাকাউন্ট থেকে।
রক্তিম দাশ, যুগশঙ্খ