শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা করা পদ্ম পুরস্কারের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে তাঁর নাম। পাঁচ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। আনন্দের স্রোত বয়ে গিয়েছে বাগবাজারের বাড়িতে। কিন্তু ৮১-বছরের বৃদ্ধ, যাঁর আঙুলে এখনও মূর্ছনা ওঠে সেতারের তারে, সেই মণিলাল নাগ রবিবার সকালেও রেওয়াজে। সঙ্গে রুটিন মেনে ছাত্র-ছাত্রীদের তালিম দেওয়া। দ্য ওয়াল-এর তরফে তাঁর সঙ্গে যখন ফোনে যোগাযোগ করা হলে, অভিনন্দন জানানোর পরই উল্টোদিক থেকে বলা হল, “এটা আমার স্বীকৃতি নয়। সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের বিষ্ণুপুর ঘরানার ধ্রুপদী সঙ্গীতের স্বীকৃতি।”
২০১৫ সালেও মণিলালবাবুর নাম মনোনীত হয়েছিল পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্য। কিন্তু সেবার হয়নি। এবার হয়েছে। নিজের পুরস্কারের খবরে আনন্দিত মণিলাল নাগ। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা তাঁর গুণমুগ্ধদের শুভেচ্ছার বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
৪০০ বছরের পুরনো বিষ্ণুপুর ঘরানা। মণিলালবাবু বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই ঘরানার সঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন। একাধিক সম্মান পেয়েছেন জীবনে। সেই মুকুটে নতুন পালক পদ্মশ্রী। মণিলালবাবু নিজেকে বাংলা ধ্রুপদী সঙ্গীতের উত্তরাধিকার বহনকারী হিসেবেই পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। বলেন নয়ের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে অনুষ্ঠিত এক কনসার্টের কথা। সেই কনসার্ট শুরুর আগে উদ্যোক্তারা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন কী বলে তাঁকে সম্বোধন করা হবে? জবাবে মণিলাল নাগ বলেছিলেন, “বাংলা ধ্রুপদী গানের উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে চলা সেতারবাদক। আর কিচ্ছু না।”
সঙ্গীতের পরিবেশেই বড় হওয়া মণিলালবাবুর। বাবা ছিলেন সঙ্গীতাচার্য গোকুল নাগ। মেয়ে মিতা নাগও সেতার শিল্পী। ১৪ বছর বয়স থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে সেতার বাজাতেন মণিলাল নাগ। রেডিওতে কেটেছে পাঁচদশক। সারা পৃথিবীতে অন্তত পাঁচ হাজার কনসার্টে বেজেছে তাঁর সেতার। বাগবাজারের নাগ পরিবারের বক্তব্য, অনেক সম্মান পেয়েছেন তিনি। কিন্তু পদ্মশ্রী একেবারেই অন্যমাত্রার।
পণ্ডিত কিষাণ মহারাজ, পণ্ডিত কানাই দত্ত, পণ্ডিত মহাপুরুষ মিশ্রের মতো দুনিয়া কাঁপানো তবলাবাদকরা ছুটে আসতেন মণিলালবাবুর বাগবাজারের বাড়িতে। তাঁর সঙ্গে রেওয়াজ করবেন বলে। এহেন সঙ্গীতজ্ঞের পদ্মশ্রী সম্মান পাওয়াকে জাতীয় মঞ্চে বাংলা ধ্রুপদী গানের স্বীকৃতি হিসেবেই দেখছেন সাংস্কৃতিক মহলের অনেকে। এই প্রথম এত বড় সম্মান পেলেন বিষ্ণুপুর ঘরানার কোনও শিল্পী।