১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। প্রতি বছরই বিজয় দিবস হিসেবে দিনটি মহা সমারোহে পালিত হয়ে আসছে। এই দিনে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে ঢাকার সোরাবউদ্দিন ময়দানে (রেসকোর্স) আত্মসমর্পণ করে। ভারত সরকার স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিকরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এই দিনই স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় দিবস যা একটা দীর্ঘ ইতিহাস। এই ইতিহাস সৃষ্টির পিছনে রয়েছে তৎকালীন যেমন পূর্ববঙ্গের হিন্দুজনগোষ্ঠীর গৌরবের ইতিহাস তেমনই রয়েছে অপমান ও বঞ্চনার করুণ ইতিহাস, যে ইতিহাস বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের পাতায় আঁচড় কাটেনি। পূর্ব-পশ্চিমের কোনো বাংলা সাহিত্যে, নাটকে সিনেমায় এই ইতিহাস স্থান পায়নি। এপার-ওপার কোনো বাঙ্গলার রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে উঠে আসেনি। রাজনৈতিক সেমিনার সভাসমাবেশে আলোচনা বা চর্চার বিষয় হয়ে ওঠেনি, এমনকী চায়ের কাপেও ঝড় তোলেনি। এটাই পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের বঞ্চনা ও অবহেলার করুণ ইতিহাস। ৪৮তম বিজয় দিবস স্মরণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙ্গালি হিন্দুদের বিস্মৃতপ্রায় অমূল্য আত্মত্যাগ ও অবদানের কিছু কথা তুলে ধরছি।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ করে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই পূর্ব পাকিস্তানের তথা পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক দল বা নেতাদের পাকিস্তান শাসকদের পূর্ববঙ্গের প্রতি বিমাতৃ ও প্রভুসুলভ আচরণের জন্য পাকিস্তান প্রীতির মোহভঙ্গ ঘটে। তৎকালীন পাকিস্তান আন্দোলনের যুবনেতা কুখ্যাত সোরাবউদ্দিনের ভাবশিষ্য শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম লিগ ত্যাগ করে আওয়ামি মুসলিম লিগ রাজনৈতিক দল তৈরি করেন এবং পাকিস্তানের শাসককুলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। উর্দু নয়, বাংলা হবে পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রভাষা— এই দাবিতে পাকিস্তানের সংসদে প্রথম প্রতিবাদে সোচ্চার হন পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য বাঙ্গালি হিন্দু নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ফলস্বরূপ, ১৯৫২ সালের বাঙ্গালির গর্বরক্তক্ষয়ী ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পূর্ববঙ্গে বাঙ্গালি। জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়। গ্রাম, শহর, বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে বাঙ্গালি সংস্কৃতি চর্চার তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণ, শারদীয়া উৎসব, নবান্ন, পৌষপার্বণ ও বসন্ত উৎসবের মতো বাঙ্গালি সংস্কৃতি চর্চা ও উৎসব। দেশাত্মবোধক সংগীত,নাটক, যাত্রাপালা গ্রামগঞ্জের স্কুল কলেজগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে, যার পুরোভাগে ছিল হিন্দু ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকবৃন্দ। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে হিন্দু শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাগত আধিক্যের কারণে সমস্ত বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীরা ছিল পথপ্রদর্শক ও অগ্রগণ্য। কারণ তৎকালীন মুসলমান সমাজে সংগীতচর্চা, গানবাজনা, নাটক, নৃত্যকলা চর্চা খুবই নগণ্য ছিল। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রভাবে শেখ মুজিব আওয়ামি লিগ থেকে। ‘মুসলমান’ শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামি লিগ নামক ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল হিসেবে অচিরেই ইসলামি পাকিস্তানের রাজনীতিতে আলোড়ন ও প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে পাকিস্তানি শাসককুল ও পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমান জনগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালিদের উপর অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববঙ্গের বাঙ্গালিদের উপর নির্যাতন, নিপীড়ন অবজ্ঞা ও বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে। তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আপামর বাঙ্গালি ছাত্র যুব-সমাজ সঙ্ঘবদ্ধ হয় এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ধারা ক্রমাগত সারা পূর্ববঙ্গ ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং এক বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে স্মারকবেদি গড়ে ওঠে। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদদিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। সেই উপলক্ষ্যে শহিদ বেদিগুলি ফুলে ফুলে ও বিভিন্ন রঙের আলপনায় সাজানো হয়। পাকিস্তান বিরোধী নাটক, কবিতা, সংগীতে ও পাকিস্তান বিরোধী স্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত ও আন্দোলিত হয় যা হিন্দু বাঙ্গালি সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত ছিল। ফলস্বরূপ ৫৮, ৬২, ৬৬ ও ৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান। উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। প্রতি আন্দোলনের ক্ষেত্রেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী আন্দোলনকে বিপথগামী ও ভণ্ডুল করতে হিন্দুদের চক্রান্তকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করে
জেহাদি মুসলমানদের হিন্দুদের উপর হিংস্র বাঘের মতো লেলিয়ে দেয়। হিন্দুদের বিষয় সম্পত্তি লুট, অগ্নি সংযোগ, হিন্দু গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কারারুদ্ধ করা, হত্যা করা, ব্যবসা বাণিজ্য এমনকী সরকারি চাকুরি সমূহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, শত্রু সম্পত্তি আইন করে হিন্দু বিষয় সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়া এবং পূর্ববঙ্গ ছাড়তে বাধ্য করা পাকিস্তানি শাসককুলের প্রধান কাজ হয়ে যায়। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন যত তীব্র হয় ততই হিন্দুদের উপর পাকিস্তানি শাসককের অত্যাচার ও নির্যাতন তীব্রতর হয়। হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর এই নির্যাতন নিপীড়ন, হিন্দু বিষয় সম্পত্তি লুঠতরাজ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ঘটনা সারাবিশ্বে পাকিস্তান শাসকদের বাঙ্গালিদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন হিসেবে বিবেচিত ও প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৬৯ সালের গণভোটের দাবিতে গণ-অভ্যুত্থানের ফলস্বরূপ ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে প্রথম গণভোট অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাত কোটি। যার মধ্যে হিন্দুরা ছিল ২৭ শতাংশ। ভোট ছিল প্রায় তিন কোটি। ভোটদাতার সংখ্যা ছিল প্রায় দুই কোটি। ১০০ শতাংশ হিন্দু ভোট শেখ মুজিবের আওয়ামি লিগ দল পেয়েছিল। ফলে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামি লিগ পাকিস্তানের রাজনীতিতে ১৬০টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হতে সক্ষম হয়েছিল। উল্লেখ্য, পূর্ব পাকিস্তানে মুসলমান ভোট বিভাজিত হয়ে পাকিস্তানপন্থী জামাত ইসলাম, মুসলিম লিগ পেয়েছিল প্রায় ৭০ লক্ষ ভোট। সুতরাং আওয়ামি লিগের পক্ষে ভোটদাতার অনুপাত ছিল হিন্দু মুসলমান ৫০ : ৫০। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাঙ্গালি হিন্দু ভোট পাকিস্তানের রাজনীতিতে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী ক্ষমতায়নে ক্যাটালিস্ট হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খাঁ শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে। বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক জনসভায় বাংলাদেশের দাবিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেয় পরবর্তীতে যা স্বাধীনতা যুদ্ধের রূপ নেয়।
বাঙ্গালির স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্তব্ধ করতে পাক শাসককুল সামরিক বাহিনী হিন্দু বাঙ্গালিদের উপর লেলিয়ে দেয়। শুরু করে অগ্নি সংযোগ ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা। এই গণহত্যায় রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ডাক্তার, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সমাজসেবী, ছাত্র-যুবা, শিশু-নারী-পুরুষ কোনো বাদ বিচার ছিল না। বাঙ্গালিদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিভেদ তৈরি করার জন্য স্বাধীনতা আন্দোলনকে ভারতের চক্রান্ত হিসেবে অপপ্রচার করে এবং কিছুটা সফল হয়। পাকিস্তানপন্থী জামাতও মুসলিম লিগের মতো ইসলামি দলগুলির বাংলাভাষী মুসলমান ছাত্র শিবির ও যুব সমাজ শহর ও গ্রামে রাজাকার, আলবদর ও আলসামের মতো সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলে।
এই বাহিনীর কাজ ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী ছাত্র যুবাদের খুঁজে বের করে নৃশংস ভাবে হত্যা করা, হিন্দুদের বিষয় সম্পত্তি লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, হিন্দু নারী অপহরণ ও ধর্ষণ করা। তাই হিন্দুরা জীবন ও নারীদের সন্ত্রম রক্ষার তাগিদে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে থাকে। মাইলের পর মাইল দিনের পর দিন একনাগাড়ে পায়ে হেঁটে কঠিন বিপদ সংকুল পথ অতিক্রম করে ভারতভূমিতে। আশ্রয় নেয়। পালাবার পথে অসংখ্য প্রাণ হারিয়ে গেছে পাকসেনা এবং রাজাকারদের গুলির আঘাতে। রাজাকার বাহিনী হিন্দু যুবতী ও নারীদের কেড়ে নিয়েছে, হিন্দু যুবক, সমাজসেবী, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে আর জীবন নিয়ে ফিরে আসেনি তারা। কোলের শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে পথে ফেলে পালিয়ে এসেছে পরিবারের আপনজনেরা। এই সবের কোনো ঘটনাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে জায়গা দেয়নি কেউ। তৎকালীন সাংবাদিকদের তোলা ফোটোচিত্রে অত্যাচারিত বাড়িঘর ছেড়ে পলায়নপর অসহায় পরিবারগুলির সত্য ছবিগুলি পর্যবেক্ষণ করলে সহজে বোঝা যায় তারা সবাই হিন্দু যারা নির্যাতিত ও অত্যাচারিত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। এই সব সত্য, জীবন্ত চিত্র ও ছবিগুলিকে হাতিয়ার করে অস্থায়ী বাংলাদেশের সরকার বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আনতে সক্ষম হয়েছিল এবং এই ছবিগুলির ভূমিকা ছিল অমূল্য।
এক কোটি নির্যাতিত ও বিতাড়িত হিন্দু শরণার্থী ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের আশ্রয় শিবিরগুলিতে দীর্ঘ ১০ মাস শোচনীয় অবস্থার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেছিল। এই সমস্ত শরণার্থী ভারত সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। তারা ভারতের অর্থনীতির উপর চরম আঘাত হানে। ফলে ভারত সরকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থনে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করতে শরণার্থী শিবিরের দুর্বিসহ অসহনীয় চিত্র ও ছবিগুলি বিশ্ব দরবারে প্রচার করে যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি । ভারতের যুদ্ধ এবং যুদ্ধে ভারতের জয় এবং বাংলাদেশের সাধের স্বাধীনতা ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে অর্জন। ফলস্বরূপ পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিবর্তনের ইতিহাসে দেখা যায়—
• ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পাকিস্তান গণপরিষদে রাষ্ট্র ভাষা উর্দুর প্রতিবাদে এবং বাংলার দাবিতে গর্জে ওঠা যা বঙ্গ জাতীয়তাবাদের চেতনায় অঙ্কুরিত হয়েছিল।
• ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হিন্দু ছাত্র-ছাত্রী প্রভাবিত বাঙ্গালি সাংস্কৃতিক আন্দোলন পরবর্তীতে সকল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল।
• তৎকালীন পূর্ববঙ্গের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে হিন্দু শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাধিক্য থাকায় সকল আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল। যার ফলে পাকসেনা ২৫ মার্চের কালরাত্রে ঢাকার হিন্দু ছাত্রাবাস জগন্নাথ হলের শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্র হত্যা দিয়ে তাদের বাঙ্গালি হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল।
• পাকসেনা ও রাজাকার বাহিনীর হিন্দু নারী অপহরণ, হিন্দু ছাত্র যুবা হত্যা এবং হিন্দু সম্পত্তি লুটপাট অগ্নি সংযোগ যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন বিশ্বদরবারে প্রামাণ্য চিত্র হিসেবে প্রচারিত হয়েছিল।
• পূর্ববঙ্গ ত্যাগী পলায়নপর অসহায় এক কোটি হিন্দু শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় শিবিরগুলির প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশ্বজনমত সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল।
সর্বোপরি, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থনে সক্রিয় সহযোগিতায় অর্থ সাহায্য, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শরণার্থীদের আশ্রয়, এমনকী যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের পুনর্গঠনে তাদের সহযোগিতা এবং অবদান কল্পনাতীত ও বিরল। বড়োই পরিতাপের বিষয়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, কারাবাস, আত্মত্যাগ, আত্মবলিদান ছিল আপোশহীন, অথচ তারা দেশ চ্যুত হলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে পূর্ববঙ্গের বাঙ্গালি হিন্দুরা পাকসেনা ও রাজাকার বাহিনীর নির্যাতন অত্যাচারে দেশত্যাগ করেও স্বাধীনতা আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে তরান্বিত করেছিল। তা সত্ত্বেও স্বাধীনতা-উত্তর বাঙ্গালি হিন্দুরা বাংলাদেশচ্যুত হয়েছে এবং ক্রমশ হিন্দুশূন্য বাংলাদেশে পরিণত হতে চলেছে। পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা রাষ্ট্রহীন জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে স্বীকৃতি লাভ করেছিল।
চন্দন রায়
2020-01-25