স্বামী বিবেকানন্দ ও দেশনায়ক সুভাষচন্দ্রের হিন্দুত্ববাদী স্বদেশচেতনা #NetajiSubhasChandraBose

“যদি এই পৃথিবীতে এমন কোন দেশ থাকে, যাকে ‘পুণ্যভূমি’ নামে বিশেষিত করা যেতে পারে, যদি এমন কোন স্থান থাকে…..যেখানে মানুষের ভেতর ক্ষমা, দয়া, পবিত্রতা, শান্তভাব প্রভৃতি সদ্ গুণের বিকাশ সবচেয়ে অধিক পরিমাণে হয়েছে, যদি এমন কোন দেশ থাকে, যেখানে সর্বাপেক্ষা অধিক আধ্যাত্মিকতা ও অন্তর্দৃষ্টির বিকাশ হয়েছে, তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি সে আমাদের মাতৃভূমি এই ভারতবর্ষ। ” (স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা,৫ম খণ্ড)

“ভারতবর্ষের ইতিহাস,ঐতিহ্য,পরিবেশ ও সংস্কৃতির বুনিয়াদে গড়ে তুলতে হবে আজিকার ভারতের জীবনবেদ। আমাদের জীবন গড়ে তুলতে হবে আধুনিককালে এবং আধুনিক পরিবেশে। কিন্তু আমি তাদের দলভুক্ত নই যারা আধুনিকতার উৎসাহে অতীতের গৌরবকে ভুলে যায়। অতীতের বুনিয়াদে আমাদের দাঁড়াতে হবে। ভারতের একটি নিজস্ব সংস্কৃতি আছে,যাকে ভারতের নিজস্ব ধারায় বিকাশোন্মুখ করে তুলতে হবে। এককথায় আমাদের একটি সমন্বয়ে আসতে হবে। একদিকে আমাদের বেদের যুগে ফিরে যাওয়ার আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে,অন্যদিকে আধুনিক ইউরোপের অর্থহীন বিলাস ও পরিবর্তনের লালসার প্রতিরোধ করতে হবে। ….আমাদের অতীত সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে আমরা একটি নূতন ও আধুনিক জাতি গড়ে তুলতে চাই। “
-নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ( #NetajiSubhasChandraBose )

পরাধীন ভারতবর্ষে তখন প্রয়োজন ছিল এক নবজীবনের উদ্দীপনা। দেশ ও জাতি যখন নিজের গৌরবময় অতীত বিস্মৃত হয়ে নির্লজ্জ পরমুখাপেক্ষিতে ও অন্ধ অনুকরণে আসক্ত হয়, তখনই নতুন করে জাতির সত্তাকে নাড়া দেওয়ার প্রয়োজন হয়, দিয়ে যান কোন মহাপ্রাণ। উনবিংশ শতাব্দীর অন্তিম লগ্নে গোটা বিশ্বের বুকে হিন্দুধর্মের জয়ধ্বজা স্থাপন করে এলেন বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। স্বামীজীর হিন্দুধর্মের প্রচার, প্রসার ও পুনরুজ্জীবনের মূল ভিত্তিই ছিল পরাধীন ভারতবাসীর ভাবের দৈন্যতাকে সরিয়ে দেওয়া; গৌরবময় অতীতকে স্মরণ-মনন। হিন্দুধর্মের চিরন্তন আদর্শগুলিকে সামনে নিয়ে এসে তিনি তাঁর স্বাদেশিকতার নবমন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন আপামর যুবসমাজকে। তাঁর অসংখ্য গুণমুগ্ধের মধ্যে পরবর্তীকালে যিনি ভারতবর্ষের রাজনৈতিক মানচিত্রে অনন্যসাধারণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন, তিনি হলেন দেশনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। স্বামী বিবেকানন্দকেই তিনি তাঁর গুরুজ্ঞানে আজীবন পুজো করে গেছেন। সুভাষের কথায়, “আমার সময়ের ছাত্রসমাজ স্বামীজীর রচনা ও বক্তৃতার দ্বারা যেরূপ প্রভাবিত হইয়াছিল, সেরূপ আর কাহারো দ্বারা হয় নাই — তিনি যেন সম্পূর্ণভাবে তাহাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষাকে ব্যক্ত করিয়াছিলেন। …স্বামীজীর বাণীর মধ্য দিয়াই বর্তমান মুক্তি আন্দোলনের ভিত্তি গঠিত হইয়াছে। “প্রকৃতপক্ষে দেশনায়ক সুভাষ তাঁর সমগ্র জীবনব্যাপী বিভিন্ন লেখায়,চিঠিতে,বক্তৃতায় বারংবার এইকথা স্বীকার করেছেন যে,রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ জীবনদর্শন ও মতাদর্শই তাঁকে একজন প্রকৃত চিন্তাশীল,কর্তব্যনিষ্ঠ,বীর,নির্ভীক,মানবদরদী,বাস্তববাদী দেশনায়ক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। নিজের আত্মজীবনী “ভারতপথিক”-এ সুভাষ বলছেন:

“আমাদের এক আত্মীয়(সুহৃৎচন্দ্র মিত্র)নতুন কটকে এসেছিলেন। আমাদের বাড়ির কাছেই থাকতেন। একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাঁর ঘরে বসে বই ঘাঁটছি হঠাৎ নজরে পড়ল স্বামী বিবেকানন্দের বইগুলোর উপর। কয়েক পাতা উল্টেই বুঝতে পারলাম এই জিনিসই আমি এতদিন ধরে চাইছিলাম। বইগুলো বাড়ি নিয়ে এসে গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম। পড়তে পড়তে আমার হৃদয়মন আচ্ছন্ন হয়ে যেতে লাগল। প্রধান শিক্ষকমশাই আমার মধ্যে সৌন্দর্যবোধ,নৈতিকবোধ জাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন-জীবনে এক নতুন প্রেরণা এনে দিয়েছিলেন কিন্তু এমন আদর্শের সন্ধান দিতে পারেননি যা আমার সমগ্র সত্তাকে প্রভাবান্বিত করতে পারে। এই আদর্শের সন্ধান দিলেন বিবেকানন্দ। দিনের পর দিন কেটে যেতে লাগল,আমি তাঁর বই নিয়ে তন্ময় হয়ে রইলাম। আমাকে সবচেয়ে বেশী উদ্বুদ্ধ করেছিল তাঁর চিঠিপত্র এবং বক্তৃতা। তাঁর লেখা থেকেই তাঁর আদর্শের মূল সুরটি আমি হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলাম। “আত্মন: মোক্ষার্থম্ জগদ্ধিতয়া”-মানবজাতির সেবা এবং আত্মার মুক্তি-এই ছিল তাঁর জীবনের আদর্শ। আদর্শ হিসেবে মধ্যযুগের স্বার্থসর্বস্ব সন্ন্যাসীজীবন কিংবা আধুনিক যুগের মিল ও বেন্থামের “ইউটিলিটারিয়ানিজ্ম” কোনোটাই সার্থক নয়। মানবজাতির সেবা বলতে বিবেকানন্দ স্বদেশের সেবাও বুঝেছিলেন। তাঁর জীবনীকার ও প্রধান শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতা লিখে গেছেন,”মাতৃভূমিই ছিল তাঁর আরাধ্য দেবী। দেশের এমন কোনো আন্দোলন ছিল না যা তাঁর মনে সাড়া জাগায়নি। “একটি বক্তৃতায় বিবেকানন্দ বলেছিলেন,”বল ভারতবাসী,ভারতবাসী আমার ভাই,মূর্খ ভারতবাসী,দরিদ্র ভারতবাসী,চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই। “তিনি বলতেন যে ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য,একে একে সকলেরই দিন গিয়েছে,এখন পালা এসেছে শূদ্রের-এতদিন পর্যন্ত যারা সমাজে শুধু অবহেলাই পেয়ে এসেছে। তিনি আরো বলতেন,উপনিষদের বাণী হল,’নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্য:’-চাই শক্তি,নইলে সবই বৃথা। আর চাই নচিকেতার মতো আত্মবিশ্বাস। অলস

প্রকৃতির সন্ন্যাসীদের তিনি বলতেন,”মুক্তি আসবে ফুটবলখেলার মধ্য দিয়ে,গীতাপাঠ করে নয়। “বিবেকানন্দের আদর্শকে যে সময়ে জীবনে গ্রহণ করলাম তখন আমার বয়স বছর পনেরোও হবে কিনা সন্দেহ। বিবেকানন্দের প্রভাব আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিল। তাঁর আদর্শ ও তাঁর ব্যক্তিত্বের বিশালতাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করার মতো ক্ষমতা তখন আমার ছিল না-কিন্তু কয়েকটা জিনিস একেবারে গোড়া থেকেই আমার মনে চিরকালের জন্য গাঁথা হয়ে গিয়েছিল। চেহারায় এবং ব্যক্তিত্বে আমার কাছে বিবেকানন্দ ছিলেন আদর্শ পুরুষ। তাঁর মধ্যে আমার মনের অসংখ্য জিজ্ঞাসার সহজ সমাধান খুঁজে পেয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষকমশাইয়ের আদর্শকে তখন আর খুব বড় বলে মনে করতে পারছিলাম না। আগে ভাবতাম প্রধান শিক্ষকমশাইয়ের মতো দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করব,তাঁর আদর্শে জীবনকে গড়ে তুলব। কিন্তু এখন স্বামী বিবেকানন্দের পথই আমি বেছে নিলাম। “

বালকবয়স থেকে স্বামী বিবেকানন্দকেই মনে মনে তাঁর মন্ত্রগুরু মেনে নিলেন সুভাষ। শান্ত,ভদ্র,অনুশাসনবদ্ধ,অনুগত সুভাষের মন আর মানতে পারলো না শাসন-বাঁধনের বেড়াজাল। ছাইচাপা আগুনকে কি আর বেশীদিন লুকিয়ে রাখা যায়!বয়ঃসন্ধির ক্ষণে স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য সুভাষকে মানসিক,শারীরিক,ও আধ্যাত্মিক বলে বলীয়ান করে তুলল। বিবেকানন্দের গুরুদেব পরমহংস রামকৃষ্ণদেবের বাণীও সুভাষকে সঠিক দিশা দেখাতে সম্ভব হয়,এই বিষয়ে তিনি বলছেন:

“বারবার তিনি বলেছেন,আত্মসংযম বিনা আধ্যাত্মিক উন্নতি অসম্ভব,একমাত্র অনাসক্তির মধ্য দিয়েই মুক্তি আসতে পারে। রামকৃষ্ণ অবশ্য নতুন কিছু বলেননি-হাজার হাজার বছর আগে উপনিষদই প্রচার করেছে,পার্থিব প্রলোভন ত্যাগই অমরত্ব লাভের একমাত্র উপায়। রামকৃষ্ণের উপদেশাবলী এত জনপ্রিয় এবং হৃদয়গ্রাহী হবার কারণ,রামকৃষ্ণ যা উপদেশ দিতেন নিজের জীবনেও তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। তাঁর শিষ্যদের মতে তিনি এইভাবে আধ্যাত্মিক উন্নতির চরম শিখরে উঠেছিলেন। “

আমরা বিষয়টি এইভাবে দেখতেই পারি,ভারতবর্ষের অধ্যাত্মবাদ,ধর্ম ও জীবনদর্শন এবং পূর্ব সমস্ত মহাপুরুষদের বাণী মূর্তরূপ লাভ করেছিল শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মধ্যে। রামকৃষ্ণদেব সেই আদর্শে সঞ্জিত করে গড়ে তোলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় শিষ্য যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দকে। স্বামীজী আলস্যমগ্ন ভারতবর্ষকে এক আধ্যাত্মিক মহাবিস্ফোরণে জাগিয়ে তোলেন,অনাগত স্বাধীনতার বীজমন্ত্রও তিনিই রোপন করে যান,আর তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য জীবনপাত করেন দেশনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। “বীর-সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ” বইতে মোহিতলাল লিখেছেন:

“নেতাজী যে এক অর্থে স্বামীজীর মানসপুত্র তাহাতে সন্দেহ নাই;একজনের হৃদয়ে যাহা বীজরূপে ছিল আর একজনের জীবনে তাহাই বৃক্ষরূপ ধারণ করিয়াছে। তত্ত্বজ্ঞান বা মুক্তিতত্ত্বকেও গৌণ করিয়া যে সাক্ষাৎ-মুক্তি স্বামীজীর অন্তরে একটি প্রবল শক্তিরূপে বিরাজ করিত,নেতাজীও সেই মুক্তিকে অন্তরে লাভ করিয়াছিলেন-দুইজনের প্রেমও সেই মুক্ত-প্রাণের পরার্থ-প্রীতি। স্বামীজীর যে হৃদয়-সঙ্কুচিত নয়-আপনাকে দমন করিয়া,যে-কামনাকে চরিতার্থ করিতে চায় নাই,সেই বিশাল হৃদয়ের নিপীড়িত কামনাই নেতাজীর মধ্যে অকুণ্ঠ আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। স্বামীজী যদি গেরুয়া ত্যাগ করিতেন তবে সে আর কিছুর জন্য নয়-ঐ আজাদ-হিন্দ্-ফৌজের “নেতাজী” হইবার জন্য। সেই প্রেম তাঁহারও ছিল,কেবল সেজন্য জ্ঞানের তপস্যাকে সংবরণ করিয়া কিছুকাল প্রেমের সমাধিতে সংজ্ঞাহারা হইতে হইত। অতএব স্বামীজীর মধ্যে আমরা যেমন নেতাজীর ঐ প্রেমের মূল দেখিতে পাই,তেমনই নেতাজীর মধ্যে স্বামীজীর সেই বাণীকেই মূর্তিমান হইতে দেখি-সেই একমন্ত্র-“Believe that you are free,and you will be.”

এই প্রসঙ্গে আরেকটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে,নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু কমিউনিজম দ্বারা প্রভাবিত হলেও আদ্যন্ত ভারতীয় অধ্যাত্মবাদ জারিত ছিলেন,কমিউনিস্ট ছিলেন না। ভারতবর্ষে কমিউনিজমের প্রথম প্রবক্তা এবং প্রখ্যাত বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায় লিখেছেন:”বাংলাদেশের রাজনীতিক্ষেত্রে অরবিন্দ এবং বিপিনচন্দ্র বিপ্লবাত্মক স্বাদেশিকতার প্রবর্তন করেছিলেন,কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার উৎস ছিল স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা। বিবেকানন্দের আধ্যাত্মিক স্বদেশভাবনা সেযুগের শিক্ষিত যুবক-সম্প্রদায়কে একেবারে উদ্বেল করে তুলেছিল,তাদের অন্তরে স্বদেশপ্রেমের তীব্র বিদ্যুৎপ্রবাহ সঞ্চারিত করেছিল। “স্বামী বিবেকানন্দের স্বদেশচেতনা কখনোই ধর্ম,আধ্যাত্মিকতা বা হিন্দুত্ব,সনাতনী ভারতীয় আদর্শকে বাদ দিয়ে ছিলনা। স্বামীজী বলেছিলেন-ভারতের চিরন্তন সনাতনী ঐতিহ্যই তার প্রাণের রসদ এবং তার ভিত্তিপ্রস্তর নির্মিত হয়েছে ত্যাগ,ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার ওপর। যুগে যুগে বিদেশী শক্তির দ্বারা আক্রান্ত,লুণ্ঠিত হয়েও যে ভারত সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে,তার কারণ এই জীবনদায়ী শক্তি,এই জীবনদর্শন। ভারতবর্ষের মাটিতে তাই যে আদর্শকেই স্হাপন করার চেষ্টা হোক,তা সনাতনী ভারতীয় ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে,হেয় করে কখনোই সম্ভব নয়। স্বামীজী স্পষ্টভাবে বলেছেন:
“Do you want that the Ganga should go back to its icy bed and begin a new co

urse?Even if that were possible,it would be impossible for this country to give up her characteristic course of religious life and take up for herself a new career of politics or something else…this religious line…is the line of life,this is the line of growth,and this is the line of well-being in India.”

এই প্রসঙ্গে আরেকজন মানুষের কথা অনিবার্যভাবেই এসে পড়ে,ঋষি অরবিন্দ। তিনি বিশ্বাস করতেন,ভারতবর্ষ ও সনাতনধর্মকে আলাদা করা যায় না। শ্রীঅরবিন্দ বিশ্বাস করতেন, ভারতবর্ষ এবং সনাতনধর্ম এক এবং অভিন্ন। এ বিষয়ে উত্তরপাড়া অভিভাষণে তাঁর দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য আমরা পেয়েছি এবং সে বক্তব্য আদতে ভগবান কৃষ্ণের বলে তিনি অভিহিত করেছেন।
“When…it is said that India shall rise, it is the Sanatan Dharma that shall rise, it is the Sanatan Dharma that shall rise. When it is said that India shall be great, it is the Sanatan Dharma that shall be great. When it is said that India shall expand and extend herself, it is the Sanatan Dharma that shall expand and extend itself over the world. It is for the Dharma and by the Dharma that India exists. To magnify the religion means to magnify the country.”
(যখন বলা হয় যে, ভারত উঠবে, তার অর্থ এই যে, সনাতন ধর্ম উঠবে। যখন বলা হয় যে, ভারত মহান হবে, তার অর্থ এই যে, সনাতন ধর্ম মহান হবে। যখন বলা হয় যে, ভারত নিজেকে বর্ধিত ও প্রসারিত করবে, তার অর্থ এই যে, সনাতন ধর্ম নিজেকে বর্ধিত ও প্রসারিত করবে। এই ধর্মের জন্যে এবং এই ধর্মের দ্বারাই ভারত বেঁচে আছে। ধর্মটিকে বড় করে তোলার অর্থ দেশকেই বড় করে তোলা। “ঋষি অরবিন্দের ভাষণেও অনুরণিত হয়েছে ভারতবর্ষের ধর্মপ্রাণতার কথা। তবে তার বেশ কিছু বছর আগে স্বামী বিবেকানন্দ চিকাগোতে বিশ্বধর্মমহাসম্মেলনে হিন্দুধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ববাসীকে প্রকৃত আত্মবিশ্বাস ও মুক্তির পথ দেখালেন। আমরা সেই নিয়ে একটু আলোচনা করব এখন এই পরিসরে।

স্বামী বিবেকানন্দ চিকাগোতে বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেছিলেন এবং তিনিই হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য কীর্তনীয়া। যদিও সেই সময় ভারতবর্ষ থেকে বিবেকানন্দের পুরাতন বন্ধু ও ব্রাহ্মসমাজের প্রতিনিধি প্রতাপচন্দ্র মজুমদার বোম্বাই-এর নগরকরের সঙ্গে ভারতীয় আস্তিকদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। থিওসফিক্যাল সোসাইটির প্রতিনিধিত্বও ছিল, এসেছিলেন অ্যানি বেসান্ত। অন্যান্য ধর্মের সমস্ত প্রতিনিধিকে ছাপিয়ে একক ভাস্বর হয়ে ওঠেন তরুণ সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর জ্ঞান-ঋদ্ধ ভাষণে লক্ষ লক্ষ আত্মায় নবজীবনের সন্দীপন প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠলো। তিনি পৃথিবীর সর্বপ্রাচীনতম ধর্মসম্প্রদায়ের, বৈদিক সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের নামে পৃথিবীর নবীনতম জাতিকে অভিনন্দন জানালেন; উদাত্ত ও আন্তরিক কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, “আমেরিকাবাসী ভাই ও বোনেরা”। বক্তৃতার প্রারম্ভে এই সুভাষণ শুনে সমবেত দর্শক আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ করতালিতে অভিবাদন জানালেন তাঁকে। তারপর ১০-১২ দিন ধরে একের পর এক বক্তৃতায় ঘোষিত হল হিন্দুধর্মের জয়গান। বিপ্রতীপে দেখা গেল, পরাধীন ভারতবর্ষের মানুষ তথা সমগ্র বিশ্বমানব আত্মগ্লানি ভুলে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার বীজমন্ত্রও পেলো। এর পরে একবার ডেট্রয়েটে কথাপ্রসঙ্গে স্বামীজী বললেন,”আমি ভারতের ভিত্তিমূল কাঁপিয়ে দেব। জাতির ধমনীতে স্তিমিত রক্ত আবার অগ্নি-চঞ্চল হয়ে উঠবে। দেখিবে ভারতের মূলগ্রন্থি পর্যন্ত নড়িয়া উঠিবে,তাহার শিরায় শিরায় বিদ্যুৎ ছুটিবে,বিজয়োল্লাসে ভারতবাসী আমায় বুকে তুলিয়া লইবে। “

হিন্দুধর্মের বিজয়গাঁথার সঙ্গে সঙ্গে খ্রিষ্টধর্মের আগ্রাসী মনোভাব সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দ সরোষ আক্রমণ না করে পারলেন না, “তোমরা যতই আস্ফালন কর, কোথায় তোমাদের খ্রীষ্টান ধর্ম তরবারির বিনা সাহায্যে সফল হইয়াছে? তোমাদের ধর্ম এমন যে, তাহা বিলাসের নামে প্রচারিত হইয়াছে। আমি এখানে আসিয়া যাহা কিছু শুনিয়াছি, তাহা সমস্তই ভণ্ডামি মাত্র। তোমাদের এই ঐশ্বর্য খ্রীষ্ট হইতেই আসিয়াছে বটে। যাহারা খ্রীষ্টের নাম লয়, তাহারা অর্থ সঞ্চয় করা ছাড়া আর কিছুই করে না। “

১৮৯৩ সালের ২০ শে সেপ্টেম্বর শিকাগোতে খ্রীষ্টানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “তোমরা খ্রীষ্টানেরা পৌত্তলিকদের আত্মাকে উদ্ধার করবার জন্য তাদের কাছে ধর্মপ্রচারক পাঠাতে খুবই উৎসাহী; কিন্তু বল দেখি অনাহার ও দুর্ভিক্ষের হাত থেকে দেহগুলো বাঁচাবার জন্য কোনো চেষ্টা কর না কেন? ভারতবর্ষে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের সময় হাজার হাজার মানুষ খিদের মৃত্যুমুখে পড়ে, কিন্তু তোমরা খ্রীষ্টানেরা কিছুই করনি। “

এদেশে হিন্দুধর্মের মাহাত্ম্য বর্ণন করতে গিয়ে স্বামীজী বলেছিলেন, “… সেই বুড়ো শিব ডমরু বাজাবেন, মা কালী পাঁঠা খাবেন আর কৃষ্ণ বাঁশি বাজাবেন এ দেশে চিরকাল। যদি না পছন্দ হয়, সরে পড় না কেন। “
স্বামীজীর হিন্দুত্বের ধারণা বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধের সঙ্গে সঞ্জাত ছিল, ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ — এই ধারণায় তিনি বিশ্বাসী ছিলে

ন, কারণ চিরন্তন হিন্দুত্বের এটাই বাণী। এই হিন্দুত্বেরই পুনঃপ্রতিষ্ঠা তিনি চেয়েছিলেন। হিন্দু শুধুমাত্র একটি ধর্মসম্প্রদায় নয়, ভারতবর্ষে বসবাসকারী সমস্ত ভারতীয়রা যে জীবনদর্শনে বিশ্বাসী, সেই সাংস্কৃতিক পরিচয়ে তারা হিন্দু। বামপন্থী ও সেকুলারদের উদ্দেশ্য-প্রণোদিত অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে তাই আমাদের হিন্দুত্বের সঠিক অর্থ অনুধাবন করতে হবে। হিন্দুত্বের ধারণা ব্যাপক ও বহুধা বিস্তৃত। একজন প্রকৃত হিন্দু বিশ্বের আপামর মানুষকেই তার আত্মীয় বলে মনে করেন, বিশ্বাস করেন সকলেই অমৃতের পুত্র। খ্রীষ্টানধর্মের আরোপিত ‘পাপিত্ব’ থেকে এই ‘অমৃতত্ব’ ভাবে-বৈভবে একেবারেই আলাদা, অনন্য এবং অতুল্য। এজন্যই বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন স্বামীজী। আজ আমাদের দেশে কিছু ভিন্ন মতাদর্শী মানুষ যে নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির জন্য হিন্দুত্বের অপব্যাখ্যা করছেন, সনাতনী সংস্কৃতির নিন্দা করছেন, তা আসলে ক্ষমতার লোভে, বিদেশি শত্রুদের লালসায়। বিবেকানন্দের বাণী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ভারতবর্ষের মেরুদণ্ড হল তার ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা। যেদিন থেকে এই ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতাকে জাতীয় জীবন থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে, ভারতীয় যুবসমাজকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, তবে থেকে নতুন করে জাতীয় অবক্ষয় শুরু হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের যুগে আমরা দেখতে পেয়েছি, গীতার বাণী কীভাবে বিপ্লবীদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। বিপ্লব ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতায় পরিপুষ্ট হওয়ার দরুণ তা যথার্থ বিপ্লবে পরিণত হতে পেরেছে। অধুনাতন লোকদেখানো অন্তঃসারশূন্য প্রতিবাদের নামে যে প্রহসন নিরন্তর চলছে তার থেকে এ একান্তই ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে অধ্যাত্মিকতা, সনাতনী-হিন্দুত্ব ভারতীয় চিন্তা-চেতনা থেকে বাদ দিলে ভারতবর্ষের আপন মৌলিক অস্তিত্বই এক বিরাট প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে পড়বে।

ভারতীয় জীবনে ধর্ম কতটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত সেই বিষয়ে স্বামীজী কলম্বোয় এক ভাষণে বলেন, “অন্যান্য জাতির পক্ষে ধর্ম সংসারের অন্যান্য কাজের মতো একটা কাজ মাত্র। রাজনীতি-চর্চা আছে, সামাজিকতা আছে, ধন ও প্রভুত্বের দ্বারা যাহা পাওয়া যায় তাহা আছে, ইন্দ্রিয়নিচয় যাহাতে আনন্দ অনুভব করে, তাহার চেষ্টা আছে, এই সব নানা কার্যের ভিতর এবং ভোগে নিস্তেজ ইন্দ্রিয়গ্রাম কিসে একটু উত্তেজিত হইবে — সেই চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে একটু আধটু ধর্মকর্মও অনুষ্ঠিত হয়। এখানে — এই ভারতে কিন্তু মানুষের সমগ্র চেষ্টা ধর্মের জন্য; ধর্মলাভই তাহার জীবনের একমাত্র কার্য। ” বিবিধের মাঝে ঐক্য-ভারতবর্ষের এই চিরন্তন ঐতিহ্যও হিন্দুধর্মের দান, স্বামীজী এই বিষয়ে বলছেন, “এই ভারতে আপাতবিরোধী বহু সম্প্রদায় বর্তমান, অথচ সকলেই নির্বিরোধে বাস করিতেছে। এই অপূর্ব ব্যাপারের একমাত্র ব্যাখ্যা-পরধর্ম-সহিষ্ণুতা। তুমি হয়তো দ্বৈতবাদী, আমি হয়তো অদ্বৈতবাদী। …সেই মহাবাক্য পাঠ কর,….’একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি’ — সৎস্বরূপ এক, ঋষিগণ তাহাকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করেন। “

হিন্দুধর্মের সহিষ্ণুতা বিষয়ে স্বামীজীর এই পরবর্তী কথাগুলি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, তিনি বলছেন, “জগতে যতটুকু পরধর্ম-সহিষ্ণুতা ধর্মভাবের প্রতি সহানুভূতি আছে, কার্যত: তাহা এইখানেই — এই আর্যভূমিতেই বিদ্যমান, অপর কোথাও নাই। কেবল এখানেই হিন্দুরা মুসলমানদের জন্য মসজিদ ও খ্রীষ্টানদের জন্য গির্জা নির্মাণ করিয়া দেয়, আর কোথাও নহে। যদি তুমি অন্য কোন দেশে গিয়া মুসলমানদিগকে বা অন্য ধর্মাবলম্বীগণকে তোমার জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করিয়া দিতে বল, দেখিবে তাহারা কিরূপ সাহায্য করে! তৎপরিবর্তে তোমার মন্দির এবং পারে তো সেই সঙ্গে তোমার দেহমন্দিরটিও তাহারা ভাঙিয়া ফেলিবার চেষ্টা করিবে। “
স্বামীজীর হিন্দুধর্মকে নিয়ে চিন্তাভাবনা তাঁর স্বদেশপ্রেমকে আরো বলিষ্ঠ করেছে। ভারতবর্ষের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি তখনই সম্ভব যখন হিন্দুত্বের চেতনায় পরিপুষ্ট হয়ে আমরা যথার্থ দেশপ্রেমিক হয়ে উঠতে পারবো, ঠিক যেমনটি স্বামী বিবেকানন্দ চেয়েছিলেন। উদাত্ত কণ্ঠে আমরা বলে উঠব, “ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ,ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ। “স্বামীজীর এই স্বদেশচেতনাকে নিজের জীবনের আদর্শ বানিয়ে যিনি স্বামীজীর সুপ্ত বাসনা,মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার বাসনাকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বলে স্বীকার করে এগিয়ে গেলেন সম্মুখসমরে,তিনিই দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু। বিবেকানন্দ বারবার বলতেন-“আমরা আনন্দের সন্তান,আমরা অমৃতের সন্তান। অন্তর্প্রকৃতি দ্বারা বহির্প্রকৃতিকে জয় করে আমরা সমুদয় পৃথিবীতে প্রাণের বন্যা বইয়ে দেবো। “বিবেকানন্দের আদর্শ অনুসরণ করে যথার্থ দেশপ্রেমিক হয়ে উঠতে সুভাষ আহ্বান জানিয়েছেন তরুণদের। রবীন্দ্রনাথের কবিতার উদ্ধৃতিও ব্যবহার করেছেন:
“যত দেব প্রাণ বহে যাবে প্রাণ
ফুরাবে না আর প্রাণ;
এত কথা আছে এত গান আছে
এত প্রাণ আছে মোর;
এত সুখ আছে,এত সাধ আছে
প্রাণ হয়ে আছে ভোর। “
স্বামী বিবেকানন্দ যেমন তাঁর ১৮৯৭ সালে মাদ্রাজে বক্তৃতায় নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন যে আগামী ৫০ বছর ভারতবর্ষের যুবসমাজের একমাত্র আরাধ্য দেবী হলেন ভার

তমাতা,সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে সুভাষচন্দ্র বললেন:
“বঙ্গজননী আবার একদল নবীন তরুণ সন্ন্যাসী চান। ভাই সকল,কে তোমরা আত্মবলির জন্য প্রস্তুত আছ,এসো। মায়ের হাতে পাবে তোমরা শুধু দুঃখ,কষ্ট,অনাহার,দারিদ্র্য ও কারাযন্ত্রণা। যদি এই সব ক্লেশ ও দৈন্য নীরবে নীলকণ্ঠের মত গ্রহণ করতে পার-তবে তোমরা এগিয়ে এসো,তোমাদের সবার প্রয়োজন আছে। ভগবান যদি করেন,তোমরা যদি শেষ পর্যন্ত জীবিত থাক-তবে স্বাধীন ভারত তোমরা ভোগ করতে পারবে। আর যদি শেষ পর্যন্ত জীবিত না থাক-তবে স্বাধীন ভারত তোমাদের উত্তরসূরীরা ভোগ করতে পারবে। যদি স্বদেশসেবার পুণ্য প্রচেষ্টায় ইহ-লীলা সংবরণ করতে হয়,তবে মৃত্যুর পর স্বর্গের দ্বার তোমাদের সম্মুখে উদ্ঘাটিত হবে। তোমরা যদি প্রকৃত বীর সন্তান হও তবে এগিয়ে এসো। “
সুভাষের এর পরবর্তী যে উক্তি গুলি এখানে উল্লেখ করা হবে,এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বামী বিবেকানন্দের স্বদেশচেতনার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়,সেই একই আন্তরিক মর্মভেদী আহ্বান:
“হে আমার তরুণ জীবনের দল,তোমরাই ত দেশে দেশে মুক্তির ইতিহাস রচনা করেছ। আজ এই বিশ্বব্যাপী জাগরণের দিনে স্বাধীনতার বাণী যখন চারিদিকে ধ্বনিত হচ্ছে তখন কি তোমরাই ঘুমিয়ে থাকবে?তোমরাই ত চিরকাল ‘জীবন-মৃত্যু’কে ‘পায়ের ভৃত্য’ করে রেখেছ-তোমরাই ত সকল দেশে আত্মদানের পুণ্য ভিত্তির উপর জাতীয় মন্দির নির্মাণ করেছ-তোমরাই ত যাবতীয় দুঃখ অত্যাচার সানন্দে গ্রহণ করে প্রতিদানে সেবা ও ভক্তি অর্পণ করেছ। লাভের আকাঙ্ক্ষা তোমরা রাখনি,ভয় তোমাদের হৃদয় স্পর্শ করেনি,স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বীর সৈনিকের মত তোমরা হাসতে হাসতে মরণকে আলিঙ্গন করেছ। “
গীতার নিষ্কাম কর্মযোগকে স্বাধীনতার মন্ত্রে প্রয়োগ করেন সুভাষ। ফলের আশা না করেই কতর্ব্যপথে অবিচল দৃঢ়তায় এগিয়ে চলেন। আজীবন শিব,কালী ও কৃষ্ণভক্ত,শ্রীশ্রীচণ্ডী ও শ্রীগীতার একনিষ্ঠ পাঠক সুভাষ ২৩ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে আসন্ন সঙ্কটমুহূর্তে একাগ্র ধ্যানে মগ্ন হয়েছিলেন রেঙ্গুন রামকৃষ্ণ মিশন সোসাইটিতে। এই বিষয়ে নরেন্দ্রনারায়ণ চক্রবর্তীর বর্ণনায়:”রেঙ্গুন ত্যাগের পূর্বাহ্ন। আজীবনের স্বপ্ন ও আদর্শের গোটা আলেখ্য নিজের চোখের সামনে ভেঙ্গে পড়ছে ঝুর ঝুর করে। সম্মুখে শুধু অন্ধকারের পারাবার। সেই চরম সঙ্কট মুহূর্তে,রেঙ্গুন ত্যাগের পূর্বক্ষণে….রামকৃষ্ণ মিশনের মন্দিরে। বসেছিলেন যুগঋষির মূর্তির সম্মুখে সমাহিত হয়ে। তদ্গত। তন্ময়। উজাড় করে দিয়েছিলেন নিজেকে। …মৃত্যুই যে মরা নয়,একথা কি তাঁর মনে জেগেছিল?-কে জানে?”

চিরকালই ছিলেন বৈরাগ্য-মনোভাবাপন্ন। স্বদেশের প্রয়োজনে দেশনায়ক রূপে আবির্ভাব ও রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ। স্বামীজীর আদর্শের মূর্ত জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত সুভাষের জীবন। স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও কি আমরা পেরেছি সেই উত্তরাধিকার ধরে রাখতে?আজ এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় হয়ে এসেছে। সময় হয়েছে আধ্যাত্মিক পুনরুজ্জীবনের।

তথ্যসূত্র:
১|প্রবন্ধ “যুগনায়ক ও দেশনায়ক:স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র”-স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ।
২|Reference : তাপস বসু, সুভাষচন্দ্রের ‘তরুণের স্বপ্ন’: তারুণ্যের দিগদর্শন, পশ্চিমবঙ্গ নেতাজী সংখ্যা, ১৪০৩, পৃ.২৩১-২৪১
৩|”ভারতে বিবেকানন্দ”
৪|”ভারতপথিক”-নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।
৫। প্রবন্ধ “স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুত্ব”-ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।

ডা. সন্দীপন নন্দন ঘোষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.